চৌধুরী ফাহাদ-এর একগুচ্ছ কবিতা

Reading Time: 2 minutes

ওঙ্কার

ক)
ইজিচেয়ার থেকে আমি উঠার পর
সেই ভোরে, 
বাবাকে দেখিনি আর…

ইজিচেয়ারটা এখনও বাবার…

খ)
মা’য়ের সাথে সেই দক্ষিণ যাত্রার পর
কতবার ডাকলাম তাকে- ‘মা’

মা ডাকে নাই আর…

এখনো বাড়ি ফিরছি সেই থেকে
রক্তের ছায়াডোরে- জন্মগ্রাম।

সহোদরও সেই একই ফেরা ফিরে…

গ)
যাত্রা নামক এক মহীশুর উঠানে
ঝুলে আছে থোকা থোকা রাতের পতাকা
বাড়ির সীমানায় বাড়ি নাই!

মা ডাকে কোথায়?
আকাশের কেন শব্দ নাই!

নীরবতায় প্রবোধ খুঁজি, এই রাতে…

ঘ)
পথ, হে পথ! ছায়া ফেল- আকাশে উঠে যাই,
বারুদগন্ধবুকে ঘর নাই-
মাটির মতন এই বুকে মাখি না কতদিন- মা!

 

 

 

 মানুষ মরে গেলে

মানুষ মরে মরে ধর্মের নামে—
মানুষ মেরে মেরে অবশেষে একদিন 
পৃথিবীতে পড়ে থাকবে অজস্র ধর্ম!

একদিন ভালোবাসার সব চিহ্ন মুছে যাবে
পঁচে গলে যাওয়া মাংসের গন্ধে বিব্রত হবে সবুজ
উচ্ছিষ্টহারীর অভাবে মাটিতে মাটিতে জমবে হাড়ের স্তুপ।
ন্যাপথেলিন মুড়ানো হৃদয়ে থাকবে না স্পন্দন
একদিন হৃদয়ের জন্য থাকবে না ক্ষরণ 
মানুষের জন্য আর কাঁদবে না মানুষ 
কোনো পারাপার- ব্যথাবিদ্ধ আঁধার
প্রাণের শূন্যতায় থাকবে না কোনো সন্তাপ, অভিশাপ।

একদিন থাকবে না কোনো বাদ-বিবাদ
মানুষ মরে মরে— মানুষ মেরে মেরে 
শেষ হয়ে যাবে বিভেদ, হিংসা-দ্বেষ
বুকের সমান আকাশ
অক্সিজেনের অণু-পরমাণুতে ভর করবে শূন্যতা।

কোনো হুলিয়া; পলায়নপর জীবন—
থাকবে না কোনো ঘৃণায়োজন
শব্দেরা স্তব্ধ হবে! 
ভাষাদের থাকবে না বাহন,
বেকার হয়ে যাবে আড্ডামুখর রাস্তার মোড়
কফি হাউজের চেয়ার, গলির মুখের টং
রদ হয়ে যাবে প্রেমাষ্পদ অনুরণন
শুকিয়ে যাবে অপেক্ষার রঙ; প্রতীক্ষা দহন! 
একদিন থাকবে না কোনো বুকে জড়ানো বুক
খুব গোপনে কেউ ডেকে উঠবে না হৃদয়ের ডাক…

মানুষ মরে মরে— মানুষ মেরে মেরে 
কোথাও কোনো প্রতিবাদের ঝড় উঠবে না
হবে না কুশপুত্তলিকাদাহ
প্রেমব্যূহে জন্মাবে ক্যাকটাস- বিদ্বেষ ফেটে সবুজ ঘাস
থেমে যাবে ছায়াদের অনুসরণ
ওঠে যাবে সীমান্ত সংরক্ষিত কাঁটাতার
থেমে যাবে ভৌম সংঘাত 
একদিন থাকবে না শ্রেষ্ঠত্বের অধিকার
পৃথিবীর পথে পথে পড়ে থাকবে অজস্র ধর্ম!
মানুষ মরে মরে— মানুষ মেরে মেরে 
মানুষ বিয়োগে
ধর্মের নামে সেদিন তোমাকে পাঠ করবে কে!

 

 

 

 হেঁটে চলি আবার

বিরক্ত আকাশ আজ তোমার অকস্মাৎ সবুজ আর লাল প্রেমে। 
ত্যক্ত শব্দের সমস্ত উপমা নিজের নামের সাথে সেঁটে নিয়ে 
প্রতিনিয়ত গন্ধবিলাসের মাদকতায় এখনও শুয়ে আছো অন্যের পৃষ্ঠায়! 
বিষাক্ত মালায় জর্জরিত শহর,
সেই কবে প্রত্যাখ্যান করেছে বেইলি রোডের সদ্যবিধবা গোলাপ
তবু চিৎকার করে বলছ পাপ নেই- পাপ নেই!
তবুও বকে যাচ্ছ ভ্রম ও ষড়যন্ত্রের প্রলাপ! 
অবমুত্র্যায়নে নিজস্ব কিছু না থাকলেও তোমার 
ধৃত কাকের স্বরে গোত্রের প্রতি ডাক ছেড়ে যাও অহর্নিশ 
এক নিঃশ্বাস মনোযোগের আশায় 
এখনও তুমি ট্রমা হয়ে ঘুরছ মানুষে মানুষে
নির্লজ্জতার সমূহ ধাপ পার করে ফেলে এখনও ভাবছ ভালোবাসা! 
আমার একা থাকায় যে মেসমিরেইজিং ট্রল তার অপরপাশে তুমিই ছিলে। 
জানো তো,
গন্ধের দিকে যাওয়া নেই, গায়ে মাখবো না বলে…
তোমার আস্ফালন চিৎকারে হাসি, আর
হেঁটে চলি আবার… 
অতএব, 
স্মৃতি বিনাশের রোগ মগজে বাসা বেধেছে 
এবং কবি বেঁচে থাকে প্রতি কবিতার অজস্র মৃত্যুতে
প্রতি মৃত্যুতে তুমি’ই বিধবা হও প্রতিবার!
আমি হেঁটে চলি আবার…

 

 

 

 

বনসাই

পতনের ধাপ চড়ে তোমার ঈশ্বর হয়ে উঠাকে প্রণামে রাখি..

ঈশ্বর! 
তাঁর সর্বময় এক ব্যথার সর্বনাম আমাকে গচ্ছিত রেখে
দূরে সরে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়ে পড়েন!

ঈশ্বর প্রণামে আর আমি; ছুরির নিচে নিজের নাম খুঁজে পাই-
‘বনসাই’..

 

 

 

প্রেম

একাকীত্বের নিজস্ব কোন ভাষা নেই জেনেও 
বোকাবাক্সের ভেতর তোলপাড় করে বেরঙ শব্দদল!

সাদাকালো ফ্রেমে নিজেকে আটকে নিলেও 
স্বীকারোক্তিতে, 
কবি কখনওই নিজের নাম সই করেন না!

 

 

.

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>