| 28 মার্চ 2024
Categories
ইতিহাস লোকসংস্কৃতি

চৈতন্যোত্তর যুগের উপধর্ম সম্প্রদায়

আনুমানিক পঠনকাল: 9 মিনিট

ষোড়শ শতকে মুসলিম শাসকদের অত্যাচার, ধর্মান্তকরনের সর্বত্মক প্রচেষ্টা, শুদ্রবর্ণের উপর আচারনিষ্ট ব্রাহ্মনের অত্যাচার বন্ধের জন্য শ্রীচৈতন্য ধর্ম সাধনায় নিয়ে এলেন সরলতম পথ। প্রাচীন বৈষ্ণব ধর্ম সমন্বয়বাদী ধর্মের রূপ পরিগ্রহ করল। তার ‘হরে নাম কেবলম’-বৈষ্ণবধর্মের চলার পথকে মসৃন করে তোলে এবং বেগবান হয় এর গতি। কিন্তু শ্রীচৈতন্যের মৃত্যুর পর বৈষ্ণবধর্মে আবার ভেদবাদ তৈরী হয়। চৈতন্যতত্ত্বে শাস্ত্রের পর শাস্ত্র রচিত হয় সংস্কৃত ভাষায়। এ প্রসঙ্গে সুধীর চক্রবর্তী বলেন- ‘সাধারণ বৈষ্ণব মানুষ আর মুক্তিদূত শ্রীচৈতন্যের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো রাশি রাশি শাস্ত্র আর পুঁথি। অসহায় শূদ্ররা তখন ভ্রষ্টাচারেমগ্ন হল।”১

এই ভ্রষ্টাচার থেকে আবার মুক্তির পথ দেখতে এগিয়ে এলেন শ্রীচৈতন্যের প্রধানতম শিষ্য নিত্যানন্দের ছেলে বীরচন্দ্র বা বীরভদ্র। বীরভদ্র তান্ত্রিক ও বৌদ্ধসহজিয়াদের পুনরায় বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দিলেন। কিন্তু তন্ত্রসাধকদের প্রভাবে বৈষ্ণবধর্মে প্রবেশ করল- লৌকিক গুহ্যসাধনা, তন্ত্রাচার ও গোপন জপতপ। এদের নাম হল সহজিয়া বৈষ্ণব। বীরচন্দ্র হয়ে উঠলেন এদের নেতা। বীরচন্দ্র তাই চৈতন্যের অবতার হিসেবে এদের নমস্য হয়ে উঠেন। আর এভাবে আঠারো শতকের বাংলায় শাস্ত্রিয় ধর্মের সব কিছু খারিজ করে দিয়ে অসংখ্য উপধর্মের উদ্ভব ঘটে। এসব উপধর্মে লোকধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য লুকিয়ে আছে যাকে সংস্কৃতি বলা হয়। এই সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে কোন শাস্ত্রীয় শুদ্ধধর্ম এদেশের মানুষ গ্রহণ করতে পারেনি কখনও।আর এর প্রমাণ এইসব উপধর্ম সৃষ্টিরহস্যে লুকিয়ে আছে। আঠারো শতকের বাংলায় ঠিক কতগুলো উপধর্ম সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও বৈষ্ণব ব্রতদিন নির্নয় বইয়ে উদ্ধৃত সেই তালিকা এই রকম বাউল, ন্যাড়া, দরবেশ, সাঁই, আউল, সাধ্বিনীপন্থী, সহজিয়া, খুশি বিশ্বাসী, রাধা শ্যামা, রামসাধনীয়, জগবন্ধু ভজনীয়া, দাদুপান্থী, রুইদাসী, সেনপান্থী, রামসনেহী, মীরবাঈ, বিঙ্খলভক্ত, কর্তাভজা, স্পষ্টদায়ীক বা রুপ কবিরাজী, রামবল্লভী, সাহেবধনী, বলরামী, হজরতী, গোবরাই, পাগলনথী, তিলকদাসী, দর্পনারায়নী, কাড়ী অতীবাড়ী, রাধাবল্লভী, সখিভাবুকী, চরনদাসী, হরিশ্চন্দ্রী, সাধনপন্থী, চুহড়পন্ধী, কুড়াপন্থী, বৈরাগী, নাগা, আখড়া, দুয়ারা, কামধেন্বী, মুটকধারী, সংডোগী, বারসম্প্রদায়, মহাপুরুবীর, ধর্মসম্প্রদায়ী, জগমোহনা, হরিবোলা, রাতভিখারী, বিন্দুধারী, অনন্তকুলী, সঃকুলী, যোগী, গুরুদাসীবৈষ্ণব, খন্ডিত বৈষ্ণব, করণ বৈষ্ণব, গোপ বৈষ্ণব, নিহঙ্গ বৈষ্ণব, কালিন্দী বৈষ্ণব, চামার বৈষ্ণব, হবিব্যাসী, রামপ্রসাদী, বড়গল, নস্কারী, চতুভূজী, ফারারী, বার্ণশয়ী, পহলধুনী, বৈষ্ণব তপস্বী, আগরী, মাগী, পল্টুদাসী, আপাপন্থী, সৎনামী, দারিয়াদাসী, বুনিয়াদদাসী, অহমদপন্থী, বীজম্যাগী, অবধূতী, ভিঙ্গল, মানভাবী, কিশোরী ভজনী, কুলিগায়েন, টহলিয়া বা নেমো বৈষ্ণব, জোন্নী, শাউন্মী, নরেশপন্থী, দশামার্গী, পাঙ্গুল, বেউড়দাসী, ফকির দাসী, কুম্ভপাতিয়া, খোজা, গৌরবাদী, বামে কৌপীনে, কপীন্দ্র পরিবার, কৌপীনছাড়া, চূড়াধারী, কবিরপন্থী, খাকা ও মুলুক দাসী।’২

এখানেই শেষ নয়, এছাড়া আরো অনেক উপসম্প্রদায় আছে যেমন,দারী-সন্ন্যাসী, শিষ্যা বিলাসী, ভজন খাজা, শাউড়ীর দল, গৃহী বাউল, বর্ণবিরাগী, আশ্রম রোধী, ধামাপরাধী, নামাপরাধী, উলই চন্ডীবাদ, বংশীধর, নাথ-ভায়া, দাদা ও মা, ঘরপাগলা, ক্ষেপাবামা-ইত্যাদি।৩

শাস্ত্রীয় বৈষ্ণব ধর্মে তথা শ্রোত বৈষ্ণব ধর্মে বিষ্ণু আদি এবং যজ্ঞরূপ আর তার নাম হল চৈতন্যস্বরূপ ফলে বিষ্ণুর নামকীর্তনের মাধ্যমে তার অনুগ্রহ বা কৃপালাভ করা যায়। বিষ্ণুকে কেন্দ্র করে তার উপসনাপদ্ধতি ও সাধনার প্রাচীনতম রূপকে বলা হয় শ্রোত বৈষ্ণব ধর্ম। এই ধর্মে ভক্তিরসের বিশেষ কোন সম্পর্ক নেই।৪ মহাভারতের যুগে এটি পরিবর্তিত হয়ে নাম হয় ভাগবতধর্ম এবং বিষ্ণুর পরিবর্তে এ ধর্মের উপাস্য দেবতা হন বাসুদেবকৃষ্ণ’ আর এভাবেই কৃষ্ণ হয়ে ওঠেন বিষ্ণুর অবতার। বাহ্মন্যবাদের কঠোর শাস্ত্রীয় পূজাপদ্ধতি যাদের মনোপুত হয়নি তারা ভক্তিবাদের তত্ত্ব উপস্থাপন করে কৃষ্ণপ্রেমের গভীর ভক্তিমূলক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। ভক্তিবাদের ধারাকে শ্রীচৈতন্য (১৪৮৬-১৫০৩) জনগনের মনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম আবার ভাঙ্গতে শুরু করে। এই ভাঙন শুরু হয়েছিল বৌদ্ধ সহজিয়াদের বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত করার মাধ্যমে। শ্রীবিষ্ণু যেমন পৌরানিক বৈষ্ণবদের অবতার। শ্রীকৃষ্ণ যেমন ভাগবত ধর্মের অবতার, শ্রীচৈতন্য যেমন গৌড়িয় বৈষ্ণবদের অবতার তেমনি সহজিয়া বৈষ্ণবদের অবতার হয়ে ওঠেন নিত্যানন্দের ছেলে বীরচন্দ্র বা বীরভন্দ্র। তাঁরা তার নামে জয়ধ্বনি দেয়-
বীরচন্দ্ররূপে পুনঃ গৌরঅবতার
যে না দেখেছে গৌর সে দেখুক এবার।

মূলবৈষ্ণব ধর্মকে ধীরে ধীরে লোকসাধকেরা টুকরো টুকরো করে নানা উপ-ধর্মসম্প্রদায়ের জন্ম দিলেন। বিষয়টি হল- শ্রীচৈতন্য হলেন কৃষ্ণের অবতার আর চৈতন্যের অবতার হলেন বীরচন্দ্র বা বীবভদ্র। আর এভাবে সাধারণ মানুষের মনে ধর্মীয় সূত্রের অনুসরন বার বার দেখতে পাই।

চৈতন্যেদেবের মহা প্রয়ানের পর বৈষ্ণব ধর্মকে কেন্দ্রকরে যে সব উপধর্ম তৈরী হল তার মধ্যে কর্তভজা ধর্ম অন্যতম।
‘কর্তভজা’ নামকরণ নিয়ে একেক জন একেক রকম মত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলছেন ঘোষপাড়ার ধর্ম, সহজ ধর্ম কেউ বলছেন একমনী ধর্ম বা কর্ত্তাভজা। মনুলাল মিশ্র একে সত্যধর্ম্ম বলে উল্লেখ করেন তার সম্পাদিত ভাবের গীত গ্রন্থে। পঞ্চানন অধিকারী একে ‘সত্যতত্ত্ব’ বলে উল্লেখ করেন। লোক সমাজে এটি সতীমার ধর্ম নামেও পরিচিতি লাভ করে। আঠারো শতকে কলকাতা ও তার নিকটবনর্তী অঞ্চলে এই সম্প্রদায়টি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। এই সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দের বিশ্বাস এই ধর্মের প্রবর্তক আউলেচাঁদ পুরীধামে অন্তহিত শ্রীচৈতন্য। আর এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে কর্তাভজাদের ত্রিত্ববাদের ঘোষণা ছিল: কৃষ্ণচন্দ্র, গৌরচন্দ্র ও আউলেচন্দ্র, তিনে এক একই তিন।
অর্থাৎ কৃষ্ণের অবতার শ্রী গৌরঙ্গ, গৌরাঙ্গের অবতার আউলেচাঁদ। সহজিয়া বৈষ্ণব বিশ্বাসীদের বীরভদ্র বা বীর চন্দ্রের স্থানে কর্তাভজা সম্প্রদায় আউলে চাঁদকে ঠাঁই দিয়ে তৈরী করেছে একনতুন বৈষ্ণব বিশ্বাসী উপধর্ম। এবার প্রশ্ন কে এই আউলেচাঁদ?
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মত বাংলাদেশে ভাগবানিয়া সম্প্রদায়ের আদি প্রবর্তক আউলেচাঁদ। ভাগবানিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব সংক্রান্ত কিংবদন্তি বা লোকশ্রুতিতে আউলেচাঁদ হলেন স্বয়ং চৈনত্যদেব। চৈতন্যদেবই আত্মগোপন করে গৃহীর জন্য নতুন নতুন ধর্মমতের প্রবর্তন করেন।
এ প্রসঙ্গে সুধীর চক্রবর্তী বলেন, ‘খোঁজ করলে দেখা যায় অখন্ড বাংলায় যত উপধর্ম সম্প্রদায় গজিয়ে উঠেছিল তাদের বেশির ভাগেরই প্রবর্তক একজন কর্তাভজাদের স্রষ্টা আউলেচাঁদ।’৫
কিংবদন্তি অনুসারে চৈতন্যদেব নীলাচলে সহসা আত্মগোপন করার ১৬১ বছর পর অর্থাৎ ১১০১ সালে আউলেচাঁদ রূপে আবির্ভূত হন।
লোকশ্রুতি অনুসারে একদিন চৈতন্য মহাপ্রভু সন্ন্যাসী হয়ে নবদ্বীপ পরিত্যাগ করেন। এর ফলে তাঁর অনুপস্থিতিতে বৈষ্ণব সমাজে নানরকম অন্যায় অবিচার অনাচার দেখা দেয়। এতে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিষ্য অদ্বৈতাচার্য হতাশ ও ব্যথিত হন। একদিন তিনি মহাপ্রভুর সাথে দেখা করে তাকে প্রহেলিকার সমাধান করতে বলেন।
‘শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতমৃত’ গ্রন্থের প্রহেলিকাটি নিম্নরূপ-
বাউলকে কহিও লোকে হইল আউল
বাউলকে কহিও হাটে না বিকায় চাউল
বাউলকে কহিও কাজে নাহিক আউল
বাউলকে কহিও ইহা কহিয়াছে বাউল।
অর্থাৎ তোমার প্রচারিত ধর্মমত লোকসমাজে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, হাটে চাল বিক্রি হচ্ছে না, অর্থাৎ জীবাত্মার কোন লাভ হচ্ছে না, তারা বামাচারী হয়ে যাচ্ছে তারা স্বাভাবিক কাজ কর্ম করছে না অর্থাৎ গৃহকর্মও ব্যহত হচ্ছে অতএব এখন করণীয় কী?
অদ্বৈতাচার্যের এই প্রহেলিকার মর্মার্থ বুঝতে পারলেন। ‘কর্তাভজা ধর্মের আদিবৃত্তান্ত বা সহজ তত্ত্ব প্রকাশ’ গ্রন্থে মনুলাল মিশ্র এ সম্পর্কে বলেন-
“মহাপ্রভু দেখিলেন যে, তিনি সব করিলেন, কেবল সংসারীদের নিমিত্ত কোন ধর্ম রাখিলেন না। অদ্বৈতের প্রহেলিকা শুনিয়া তাহার প্রাণ কাঁদিয়া উঠিল। সংসারী সংসারে থাকিয়া কিসে সহজে ধম্মের উপাসনা করিতে পারে তাহারই উপায় স্থির করিলেন। ‘সংসারীর মধ্যে সত্য ধম্মের প্রচার করিবার জন্য নীলাচল হইতে গোপনে পলায়ন করিলেন।’৬

শ্রী চৈতন্যদেব শেষ দিকে সন্ন্যাসী বেশে আনোয়ারপুর পরগণার ‘ঘোড়াদুবলী’ নামক স্থানে কিছুদিন কালযাপন করেন পরে সেখান থেকে উলা গ্রামে মহাদেব বারুই এর পান বরজেব বালক বেশে আবিভর্‚ত হন।
এই বালকটি পরবর্তী কালে আউলেচাঁদ ঠাকুর নামে বা ফকির ঠাকুর নামে পরিচিত হন।
এ সকল কিংবদন্তি সূত্রে কর্তাভজা সম্প্রদায়ভূক্তরা বিশ্বাস করেন “কৃষ্ণচন্দ্র, গৌরচন্দ্র, আউলে চন্দ্র, তিনেই এক একেই তিন।’ অর্থাৎ যিনি কৃষ্ণ, যিনি চৈতন্য, তিনিই আউল চাঁদ।’ এভাবে শ্রী চৈতন্যের সাথে আউল চাঁদের সংযোগ ও ঐক্য স্থাপন করে নিয়ে কর্তভজা সম্প্রদায় তাদের ধর্মমতকে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। একইসাথে আউল চাঁদের মাধ্যমে প্রবর্তিত শিবরামপন্থী ভগবানিয়ারাও আউল চাঁদকে সমান সমীহত করে থাকেন, কেননা আউল চাঁদের এক শিষ্য রামশরণ পাল যেমন কর্তভজা প্রবর্তন করেন তেমনিভাবে বাংলাদেশে শিবরাম মোহন্ত প্রবর্তন করেন ভাগবানিয়া সম্প্রদায়ের। কেউ কেউ অবশ্য নফর চন্দ্র বিশ্বাসকে ভাগবানিয়া সম্প্রদায়ের কর্তা বলতে চান। কিন্তু সে যাই হোক না কেন
চৈতন্য পরবর্তীকালে আউলে চাঁদ প্রবর্তিত ধর্মমতে ব্যভিচারহীন যোগাভ্যাসের মাধ্যমে সঠিক ধর্মমত পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাওয়ায় এবং চৈতন্য নির্দেশিত সহজ সাধনারীতি সঠিক মনে করায় চৈতন্যদেবই আউলের চাঁদ রূপে মান্যতা পেয়ে যান ভক্তদের কাছে।
লোকধর্মের বিবর্তন লক্ষ করলে দেখা যায় উচ্চ ধর্মের দেবতাকে আশ্রয় করে নিম্নকোটির দেবতার কৌলিন্য বৃদ্ধির চেষ্টা সবসময় রয়েছে। সেভাবে আদিম সমাজের কালারুদ্র বিবর্তিত হয়ে হয়েছেন শিব। সেইভাবে সুফি সাধক আউলচাঁদ বিবর্তিত হয়েছে শ্রীচৈতন্যে। আমরা করি আউলচাঁদ ইসলাম ধর্মে বজরুক বা দৈবশক্তি বিশিষ্ট লোক। তার মতাদর্শ শ্রীচৈতন্যের সাথে অভিন্ন হাওয়ায় তার অনুসারীরা তাঁকে চৈতন্যের অবতার হিসেবে মনে করে ও বিশ্বাস করে। আর এভাবেই কর্তভজার মতো ভাগবানিয়া সম্প্রদায়ের আদি প্রবর্তক হিসেবে তিনি স্বীকৃত পেয়ে যান।

চৈতন্যের অবতারাংশ হিসেবে আউলেচাঁদ বা ফকির ঠাকুর কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্মমত রামশরণের মাধ্যমে কর্তাভজা ও কানাই ঘোষের মাধ্যমে গুপ্ত কর্তভজা বা সত্য স্রোত নামে এবং শিশুরাম বা শিবরামের মাধ্যমে (মতান্তরে নফর চন্দ্র) ভাগবানিয়া নামে পরিচিতি পায়। এদের কাছে আউলেচাঁদ হয়ে যান ফকির ঠাকুর বা কর্তাঠাকুর। ফকির ঠাকুরে প্রত্যক্ষ যোগসূত্রে সৃষ্ট এই ধর্মমত স্বতন্ত্র ধর্মমত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বলে মেনে নেয়া যায়। অর্থাৎ কর্তাভজা থেকে ভগবানিয়া নয় বা কর্তাভজা থেকে সত্য স্রোত নয়।
কর্তভজার সাদৃশ্য লক্ষ করা গেলেই ভগবানিয়াকে কর্তভজার ‘উপ’ শাখা বলা অনুচিৎ কেননা ভারতে কর্তভজার প্রবর্তক আউলে চাঁদের শিষ্য রামশরণ। এদিকে বাংলাদেশে ভগবানিয়া প্রবর্তক আউলে চাঁদের অন্য শিষ্য শিশুরাম বা শিবরাম মতান্তরে নফর চন্দ্র। ফলে একটিকে অপরটির উপবলার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে ফকির ঠাকুর কে কর্তাবাবা জ্ঞানে প্রচারিত সাহেব তলার সাহেব ধনী,দোগাছিয়ার মুনীরামের দিনদয়াল’ ধর্মমতকে কর্তভজার উপশাখা বলা যায় কেন না সেখানে প্রবর্তকগণ কর্তাভজার সংস্পর্শে এসে কর্তভজার জ্ঞান লাভ করে নিজ নিজ নামে ধর্মমত প্রবর্তন করেন । এদের সাথে আউলে চাঁদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা নেই।

আমাদের ক্ষেত্র সমীক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থিত ভাগবানিয়া সম্প্রদায়গুলো নিয়ে বর্তমানে মতান্তর পরিলক্ষিত হয়েছে।
সাতক্ষীরা অঞ্চলের ভাগবানিয়া সম্প্রদায় বলে লোক সমাজে পরিচিতজনদের মধ্যে একটি অংশ নিজেদের নফর চন্দ্রের অনুসারী বলে দাবি করে। এমন একটি পরিবার এডভোকেট কিনুলার গাইনের পরিবার। তিনি মহাশয়ের দায়িত্ব ও পালন করেন। তিনি জানান নফর চন্দ্র বিশ্বাস এর অনুসারীরা কর্তভজা নামেই পরিচিত। তাদের ধর্মমত সত্যধারা বা সত্য ধর্ম। তিনি মনুলাল মিশ্রের বই “কর্তভজন ধর্মের আদিবৃত্তান্ত বা সহজ তত্ত্ব প্রকাশ”-থেকে তাদের ধর্মের উদ্ভবতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। নফর চন্দ্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি সেখান থেকেই আউলে চাঁদের দেহান্তরের বর্ণনা করে বলেন…
‘নফর চন্দ্র ছিলেন তার অন্যতম প্রিয় শিষ্য। তার বাড়ি ছিলো বোয়ালিয়ায়। মৃত্যুর আগে তিনি নফর চন্দ্রের বাড়িতেই শেষ যাত্রা করেন এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যান্য শিষ্যদের চাপে তাকে সেখানে সমাধিস্থ করা যায়নি। অবশেষে বোয়ালিয়ায় তার গায়ের কাঁথা সমাধিস্থ করা হয়। একে ‘কাঁথার সমাধি’ বলে। এরপর ভক্তরা ফকির ঠাকুরের মৃত দেহ নিয়ে বোয়ালিয়া থেকে ঘোষপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে (চাকদহ থানা, নদীয়া) নিকট একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে মৃত দেহটি রেখে ভক্তরা বিশ্রাম করেন। পরে মৃতদেহটি তুলতে গিয়ে দেখেন যে অত্যধিক ভারী হয়ে গেছে। এদিকে পড়াবি গ্রামের এক ধনী ব্যক্তি দাতা রাম মন্ডল রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হন এবং দাতারাম ফকির ঠাকুরের নির্দেশে তাঁর মৃতদেহ তার বাড়িতে সমাধিস্থ করেন।’
ফকির ঠাকুরের মৃত্যু বিষয়ের সাথে উল্লেখিত ঘটনা ছাড়া নফর চন্দ্র বিশ্বাস সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। বাংলাদেশে যারা নিজেদের নফর চন্দ্র বিশ্বাসের অনুসারী বলে দাবি করেন তারা নিজেদের ভগমেনে বা ভগবানিয়া বলে পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন। অন্যদিকে ক্ষেত্র সমীক্ষা দেখা গেছে যারা শিশুরাম বা জগদানন্দ কাঠির শিবরামের অনুসারী তারা নিজেদের ভগবানিয়া বলেন। তাদের বসবাসের অঞ্চল ভগবানিয়া পাড়া নামেই পরিচিত। কিন্তু নফর চন্দ্রের অনুসারীরা এদেরকে আবার আশ্চর্যরকম হেয় জ্ঞান করে। তারা কর্তাভজাদের সাথে সংস্রব রাখলেও ‘ভারের গীত বা শ্রীযুতের পদ থেকে গান করে না ,তার বদলে তাদের রয়েছে কিছু মহাজনি পদ। বাংলাদেশে নফর চন্দ্রের অনুসারীদের সাথে ভগবানিয়াদের ওঠা বসা থাকলেও তাঁরা বরং কানাই ঘোষের কাচড়াপাড়া, সতীমায়ের ঘোষ পাড়া কেন্দ্রিক মতবাদের অনুসারী। তারা নিজেদের সাধন ভজন পদ্ধতির অনেক কিছুই গোপন রাখতে পছন্দ করেন। এতে সন্দেহ করার অবকাশ হয়ে যে নফর চন্দ্র কানাই ঘোষের সাথে গুপ্ত কর্তভজার মতাবাদ প্রচার করে ছিলেন কিনা?
সে যাই হোক ড.রতনকুমার নন্দী তার গবেষণা গ্রন্থে বলেন ‘আউলচাঁদ যশোরের বোয়ালিয়ার নফর চন্দ্র বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। এই নফরের অনুগামীরাই পরবর্তীকালে ভগবানিয়া বা ‘ভগবেনে’ সম্প্রদায় নামে পরিচিত হয়।’
অথচ ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে, আউলে চাঁদের ২২ শিষ্যের এক শিষ্য শিশুরাম বা শিবরাম ঠাকুর ফকির ঠাকুরের নির্দেশে বাংলাদেশে নিজস্ব ধর্মমত প্রচার করেন। শিবরাম ঠাকুরের অনুসারীরাই বাংলাদেশে ভগবানিয়া বা ভগবেনে নামে পরিচিত।
বোয়ালিয়ার নফর চন্দ্র বিশ্বাসের তুলনায় জগদানন্দ কাঠির শিবরাম মহন্ত ধামের মাহত্ম্য সর্বজন বিদিত। এছাড়া ফকির শিবরাম ঠাকুরের উপরও আরোপিত হয়েছে দেবত্বশক্তি যা নফর চন্দ্রের বেলায় লক্ষ করা যায় না। ফলে নফর চন্দ্রের অনুসারীরা যে ভগবানিয়া তা মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আমরা ক্ষেত্র সমীক্ষায় পাওয়া একটি বড় অংশের মতাদর্শকে মেনে নিয়ে একথা বলতে চাই যে বাংলাদেশের ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব আউলে চাঁদের অন্যতম শিষ্য শিশুরাম বা শিবরাম ফকিরের মাধ্যমে।

কর্তাভজন ধর্মের আমি বৃত্তান্ত বা সহজতত্ত্ব প্রকাশ’ নামক গ্রন্থে এই বাইশজন শিষ্যের যে বর্ননা আছে তা নিন্ম রূপ-
শুন সবে ভক্তিভাবে নামমালা কথা।
বাইশ ফকিরের নাম ছন্দেতে গাঁথা
জগদীশ পুরবাসী বেচুঘোষ নাম।
শিশুরাম কানাই নিতাই নিধিরাম
ছোট ভীমরায় বড় রমানাথ দাস।
দেদো কৃষ্ণ গোদাকৃষ্ণ মনোহর দাস
খেলারাম ভোলানাড়া কিনুব্রহ্মহরি
আন্দিরাম নিত্যনন্দ বিশুপাঁচ কড়ি
হটু ঘোষ গোবিন্দ নয়ান লক্ষী কান্ত
ইহারাই ভক্তি প্রেমে অতিশয় শান্ত।
পূর্বের অনুসঙ্গী এই বাইশজন।
এরাই করিল আসি হাটের পত্তন।৭
সমসাময়িক কাহিনীতে এই বাইশ শিষ্য ছাড়া আউলে চাঁদের আরো শিষ্যের সন্ধান পাওয়া যায় যাদের নাম এই নাম মালাতে অন্তভুর্ক্ত হয়নি। এদের মধ্যে আছেন- রামশরন, সতীমা, মাগুরার কেচুয়াডুবির রামমোহনচাঁদ’ দাতা তোতা কিংকর প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।৮

আউলে চাঁদের তিরোধান ঘটলে কর্তাভজাদের কান্ডরী হন দুলাল চন্দ্র পাল। তার বাবা রামশরন পাল ও মাতা স্বরস্বতী দেবী। দুলাল চন্দ্র পাল দুলাল চাঁদ নামেই খ্যাত হন। তার সময় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে ব্যাপক প্রসার লাভ করে। দুলাল চাঁদ একই সাথে সংস্কৃতি, বাংলা, ইংরেজী ও ফার্সিভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন বলে জানা যায়। কর্তাভজাদের মধ্যে দুলাল চাঁদের খ্যাতি এতটাই বেড়ে গিয়েছিলো যে শেষপর্যন্ত ভক্তরা তাঁদের জয়ধ্বনিতে আউলেচাঁদের পরিবর্তে দুলাল চাঁদের নাম বসাতে কুন্ঠাপর্যন্ত করেনি।
তিনে একরূপ।
শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র শ্রীগৌরচন্দ্র ও শ্রীদুলাল চন্দ্র
এই তিন নাম বিগ্রহস্বরূপ।৯

দুলাল চাঁদের মাও চৈতন্যের মায়ের মতই শ্রদ্ধা ও ভক্তির আসনে স্থান পেয়ে যেয়ে হন সতী মা বা শচী মা। নদীয়ার ঘোষপাড়ায় তিনি কর্তামা নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। দুলাল চাঁদের অকাল মুত্যুর পর তিনি হন সম্প্রদায়ের কর্ত্রী অর্থাৎ কর্তামা।

কর্তাভজা সম্প্রদায় একটি লোকায়ত ধর্ম সম্প্রদায় যারা শাস্ত্রের ঈশ্বরকে নয়, কোন কাল্পনিক মূর্তির পূজা নয় বরং ব্যক্তির পূজা করেন, গুরুর পূজা করেন। শুধু তাই নয় বৈদিক শাস্ত্রে স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে স্ত্রী তার মানতগুলো পূরণ করতে পারে, হোম, ব্রত ইত্যাদি সম্পন্ন করতে পারে।’১০ কিন্তু তান্ত্রিক শাস্ত্র অনুসারে, নারী শুধুমাত্র মন্ত্রগ্রহণই নয়, গুরু হিসেবে মন্ত্র প্রবর্তন ও প্রদানও করতে পারে। তাকে গুরুর স্ত্রী ও গুরু উভয় হিসেবেই ভক্তি করা হয়।’১১ কর্তাভজা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। সতীমা গুরু মা হিসেবে পূজিত হন। তার নামেও শ্লোগান বা জয়ধ্বনি দিতে শুনি ভক্তদের মুখে।
দিলে সতীমায়ের জয়, দিলে কর্তামায়ের জয়
আপদখন্ডে বিপদখন্ডে খন্ডে কালের ভয়।
দিলে মায়ের দোহাই ঘোচে আপদ বালাই
ছুঁতে পারে না কাল শমনে।১২
তবে যা-ই হোক-বৈষ্ণবধর্মের ছত্রছায়ায় প্রধানত যতগুলো উপধর্ম সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছে কর্তাভজা তাদের অন্যতম। নদীয়ার ঘোষ পাড়া কেন্দ্রিক এই উপধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়বাদ লক্ষ করার মত। কোন জাতপাতের বালাই এখানে নেই, নেই ধনী গরীব, পন্ডিত মুর্খের ব্যবধানও। বাংলাদেশের জগানন্দ কাঠীকে ঘিরেও অনুরূপ একটি উপধর্ম রয়েছে। কর্তাভজাদের মতই এদের ধর্মদর্শন তবে সংস্কৃতিতে রয়েছে বৈসাদৃশ্য। বাংলাদেশে এই ধর্মটির নাম ভগবানিয়া। ভক্তরা নিজেদের বলে ভগবেনে বা ভগমেনে সম্প্রদায়।
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রবর্তক ফকির আউলেচাঁদের অন্যতম শিষ্য শিশুরাম বা শিবরাম ঠাকুর এই উপধর্মের প্রবর্তক। শিবরাম আউলেচাঁদের সাথে সার্বক্ষনিক থাকতেন। হলিশ্বর থেকে বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমনের সময় শিবরাম তার একান্ত অনুরাগীর মত থাকতেন। ফলে আউলেচাঁদের ধর্মদর্শন দ্বারাই পরিচালিত হয় শিবরামের ধর্ম সম্প্রদায়।তাই ঘোষ পাড়ার কর্তাভজা সম্প্রদায় আর জগদানন্দকাঠির ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নজরে আসে না অনেক গবেষকদেরই। কেননা- ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের ভক্তরা প্রায়ই বলেন-‘যা কর্তাভজা তা-ই ভগবানিয়া। ফকির ঠাকুরই আমাদের সার।’ কিন্তু ভগবানিয়াদের ফকির ঠাকুর আাউলে চাঁদ যেমন, শিবরাম বা শিবিরাম ঠাকুরও তেমনই। ভগবানিয়াদের কাছে শিবিরাম বা শিবরাম ঠাকুর ফকির ঠাকুরের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছেন। বাংলাদেশে শিবরাম হয়ে উঠেছেন আউলে চাঁদের অবতারাংশ। তাই তারা তাদের পদেও গানে গায়- ‘ঠাকুর দয়া করে আলেন জগদানন্দকাঠি, চাইনা তার ডালিম তলার মাটি।’ বলা বাহুল্য জগদানন্দকাঠি শিবরাম ফকিরের জন্মস্থান।
আর এভাবে ফকির আাউলেচাঁদ এক বিশেষ মহিমায় শিবরামরূপে ধরা পড়েছেন ভগবানিয়াদের কাছে। ফলে কর্তাভজার সাথে, সতীমায়ের ধর্ম, আউলিয়া ধর্ম, ভগমেনে বা ভগবানিয়া ধর্ম, সত্য ধর্ম , ঘোষ পাড়ার ধর্ম, সহজ ধর্ম, একমনী ধর্ম ইত্যাদি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। তাই বলে কোথাও কি পার্থক্য নেই? কিংবা বৈবসাদৃশ্য?
মুশকিল হলো বাংলাদেশে ভগবানিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে তেমন কোন পুঁথি
পাজি নেই। ফলে এই সম্প্রদায সম্পর্কে জানতে হলে তাদের গানেই সম্বল।
সম্প্রতি ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের সত্য সদানন্দ সরদার কতৃক দুটি বই প্রকাশিত হযেছে –যথা ‘ সত্য ধর্মেও সত্য আইন’, এবং ‘ফকির শিবিরাম ঠাকুর ও কর্তাভজাধর্ম’ । প্রথম বইটিতে প্রায় তিন শতাধিক গান রয়েছে যা আইন নামে খ্যাত। অপরটিতে শিবিরাম ঠাকুর , আউলেচাঁদ, দুুলাল চাঁদ, ফতে মাহমুদ ও সতী মা এর সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এ বইটিতে ভগবানিয়া সম্পর্কে উল্লেখ যোগ্য তথ্য নেই যতটুকু আছে তা কর্তাভজা সম্পর্কে। ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গেছে বেশির ভাগ জেলা শহরের ভগবানিয়া পাড়ার ভগবানিয়ারা শিক্ষিত। তারা নিজেদেও কর্তাভজা বলে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। অন্যদিকে গ্রাম্য ভক্তরা নিজেদের ভগবানিয়া বলেই পরিচয় দেয়। অথচ বাংলাদেশে এদের পাড়াগুলো ভগবানিয়া পাড়া নামেই বেশি পরিচিত। তুষার চট্টপাধ্যায় তাঁর ‘লালন সাহিত্য দর্শন’ গ্রন্থে কর্তভজা সম্প্রদায় থেকে ভগবানিয়া সম্প্রদায়কে আলাদা বা ভিন্ন বলে উল্লেখ করেন। অথচ ভগবানিয়া সম্প্রদায়ের ভক্ত সদানন্দ সরদার সে কথা স্বীকার করেন না। তিনি বলেন-‘ না, কর্তাভজা সম্প্রদায় ভিন্ন নামে প্রচার হলেও এর মূল অভিন্ন।’১৩
কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকাচার, ধর্মাচার ও দর্শনের দিকে নজর দিলে এটা প্রমানিতহয় যে, বাংলাদেশের ভগবানিয়া সম্প্রদায় সম্পুর্ণ স্বতন্ত্র একটি লোক ধর্ম।

তথ্যসূচী:
১. সুধীর চক্রবর্তী, গভীর নির্জন পথে, পৃ: ২৩।
২. প্রাগুক্ত, পৃ: ১৯-২০।
৩. ননীগোপাল গোস্বামী, চৈতন্যোত্তর যুগের গৌন সম্প্রদায়,(প্রবন্ধ) রায়হান রাইন
৪. ( সম্পা:) প্রাগুক্ত, পৃ: ৩১৬- ১৭।
৫. প্রাগুক্ত, পৃ: ৩১১।
৬. সুুধীর চক্রবর্তী, প্রাগুক্ত, পৃ: ৫২।
৭. রতনকুমার নন্দী, প্রাগুক্ত,পৃ: ৪৬।
৮. ননীগোপাল গোস্বামী, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩১২।
৯. সত্য সদানন্দ সরদার, সত্য ধর্মেও সত্য আইন, শিবরাম মহন্ত নিত্যধাম-২০০৬, পৃ: ১০০-১০১।
১০. সুধীর চক্রবর্তী, প্রাগুক্ত পৃ: ২৩।
১১. এডওয়ার্ড সি ডিমক, জাত, নারী ও সহজিয়া আন্দোলন, ভাষান্তর: সাহিদ সুমন,তানজীম আল বায়জীদ, রায়হান রাইন( সম্পা: ), প্রাগুক্ত, পৃ: ২৯৭।
১২. প্রাগুক্ত, পৃ: ২৯৭।
১৩. সুধীর চক্রবর্তী, প্রাগুক্ত, পৃ: ৫৮-৫৯।
১৪. সত্য সদানন্দ সরদার, ফকির শিবিরাম ঠাকুর ও কর্তাভজা ধর্ম, শিবরাম মহন্ত নিত্যধাম,পৃ: ২১।

 

 

 

.

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত