যুগলবন্দী প্রেক্ষণে স্ববিরোধী বাণী (পর্ব-১) । রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়
বহুদিন পর ইরাবতীর এই অনুবাদ বিভাগে আবার লিখতে বসেছি। আসলে এক নতুনের স্বাদ পেয়েছি, যা আমার প্রিয় পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। দ্বান্দ্বিকতা আমাকে চিরকালই টানে, তা সে জীবনের বা সময়ের দ্বান্দ্বিক সংঘর্ষ হোক কিংবা ভাষার বা সাহিত্যের দ্বান্দ্বিক দর্শন হোক। Aphorism অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ব্যঞ্জনাময় ভাবগর্ভ উক্তি,
যাকে আমরা সচরাচর বাণী বলি, তা নতুন কিছু নয়। এখানে যেটা নতুন তা হল স্ববিরোধী বাণী, অর্থাৎ দ্বান্দ্বিকতা, মার্কিন কবি নিক পিওম্বিনোর Contradicta:Aphorisms.[1]আরো যেটা বিস্ময়ের তা হল শুধু বাণী নয়, বাণীর সঙ্গে সঙ্গত দিচ্ছে মার্কিন পেইন্টার ও কোলাজিস্ট টনি সাইমনের কোলাজ, যা তৈরি করে এক তীব্র ভিজ্যুয়াল শ্লেষ, বসত করে হাস্যরসে।√ঈক্ষ্ ক্রিয়ামূলে জাত প্রেক্ষণ মনঃশ্চক্ষুর মাধ্যমে দেখে, বিচার করে ও পর্যালোচনা করে। প্রেক্ষণের ‘প্র’ হল সেই সত্তা যে নিজের ভেতর আধার আধেয় ধারণ ক’রে নিজে দ্বৈত হয়েও অদ্বৈত রূপে বিরাজ করে। তাই কোলাজের দৃশ্যময়তা এবং বাণীর বৈজ্ঞানিক শ্রাব্যতা একে অপরের এমন পরিপূরক হয়ে উঠেছে, যেন বা প্রেক্ষণের যুগলবন্দী—একজন কবি এবং একজন পেইন্টারের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতাজাত এক অনির্বচনীয় রসসৃষ্টি।
Aphorism সংস্কৃতে সূক্ত—সু+উক্ত, সু সেই সত্তা, যা নবরূপে উত্তীর্ণ হয়। আর উক্ত—√বচ্ক্রিয়া মূলে জাতব্যক্ত।যা দেখা বা বোঝা যায়, মানুষের সেই অভিজ্ঞতার প্রকাশ করাই অক্ত করা। কিন্তু অক্ত ক্রিয়াটি যখন সোজা পথ ছেড়ে বিপথ ধরে, তখন বি-অক্ত->ব্যক্ত। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ কখনই অক্ত করতে পারে না। তার সমস্ত প্রকাশই ব্যক্ত বা উক্ত। তাই সূক্ত অন্তর্নিহিত সত্যের প্রকাশ।সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলো সূক্তের আকারে লেখা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মনীষীর মনীষায় এই সূক্ত আবির্ভূত হয়েছিল। বৈদিক মনীষী ছিলেন মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি, তাঁরা মানসনেত্রে মন্ত্রদর্শন ও স্বরসংযোগে এইসব সূক্ত প্রকাশ করতেন। একজন মানুষের আত্মজ্ঞান, বৈদিক ভাষায় যার নাম ব্রহ্মজ্ঞান, এবং অন্যদিকে চারপাশের পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতার নিরন্তর মিথস্ক্রিয়া, আর এই দুয়ের ফলশ্রুতি হল সূক্ত। এই উদ্ভাবন এক চলমান প্রক্রিয়া।ব্যক্তির নিজস্ব আবিষ্কারক সত্তা পুরোনো সত্যকে নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোয় নতুনরূপে অনুভব করে এবং ক্রমবিকশিতমান জ্ঞান দিয়ে তার পুনর্নবীকরণ করতে থাকে।ব্যক্তির আত্ম জ্ঞান ও বাহিরের অভিজ্ঞতার ভেতর যে যোগ, তা অনুরূপতার যোগ নয়, বরং স্ববিরোধিতার যোগ, অথচ এক অনির্বচনীয় মিল। এই স্ববিরোধিতাই নিক পিওম্বিনোর Contradicta.সংস্কৃতের সূক্ত আবার√বণ্ ক্রিয়ামূলে জাত বাণী, মনীষীদের উক্তি বা বচন, যেগুলো মানুষের শত্রুদের চোখে বাণ হয়ে দেখা দেয়। এ কোনো দৃশ্য অস্ত্র নয়, মানুষের মুখের কথা, কিন্তু সেই কথার মার, যার অদৃশ্য ধার আঘাত করে মানুষের মর্মমূলে। এ এক অম্লমধুর শব্দশ্লেষ, যেখানে টকের টকত্ব নেই, আছে শুধু টকের তীব্রতা, মিষ্টির মিষ্টত্ব নেই, কিন্তু রয়ে যায় মিষ্টির মাধুর্য্য। সেই তীব্র মাধুরীর টঙ্কারিত উচ্চারণই পিওম্বিনোর Contradicta: Aphorisms.
বইটির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য কবিতা ও কোলাজের যুগলবন্দী, নিক পিওম্বিনোর কবিতা ও টনি সাইমনের কোলাজের কোলাবোরেশন। একদিকে একজোড়া সূক্ত একে অপরকে প্রতিফলিত করছে দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে; আবার অন্যদিকে সেই সূক্তের জোড় নিজেরই প্রতিফলন দেখছে টনি সাইমনের তৃতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা কোলাজের আয়নায়। প্রতিটি কোলাজের অন্তরমহলে সাইমনের হাস্যরস ও অন্তর্দৃষ্টির অভিনব প্রকাশ, যার ডায়নামিক্স ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে, ফলত কোলাজ ও কবিতার জোড় পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় বিশ্বরূপ দর্শনের সামনে। এমন একটা স্পেস খুলতে থাকে, যা পাঠককে দেয় উপলব্ধির স্বাধীনতা। তাই পিওম্বিনোর বাণীগুলো কোনো চূড়ান্ত বিবৃতি হয়ে ওঠেনি, বরং জীবনকে ছুঁয়ে দেখার এক অপরূপ মিথস্ক্রিয়া—আনকোরা, বিস্ময়কর, ভিন্নধর্মী, সংকেতপ্রধান। দুজন শিল্পী, দুটি ভিন্ন মাধ্যম, ভিন্ন অভিজ্ঞতার আপেক্ষিকতা, তবু জোড়ে নির্মিত হয় জীবনসত্য উপলব্ধির এক নতুন পথ, নতুন আবিষ্কার, যেখানে পিওম্বিনোর দ্বান্দিক দৃষ্টিকোণে দেখা জীবন আর সাইমনের ভিজ্যুয়াল দৃষ্টিকোণে তার সরস ও সহমর্মী বোঝাপড়া, যার সংবেদনশীল স্পার্ক ট্রিগার করে পাঠকের কল্পনাকে, হৃদয় ও মেধার সমন্বয়ে বোধের সম্প্রসারিত পরিসরে খোঁজ করে শুভবোধের।
প্রত্যক্ষ রূপ যখন নিজেকেই চরম বলিয়া আমাদের কাছে আত্মপরিচয় দেয় তখন যদি সেই পরিচয়টাকেই মানিয়া লই তবে সেই জড় পরিচয়ে আমাদের চিত্ত জাগে না।…কারণ, এই পৃথিবীর অন্তরতর অপরূপতাই আমাদের চিত্তের সামগ্রী…কবিরা গুণীরাআমাদের অভ্যস্ত রূপটির অনুসরণ না করিয়া তাহাকে খুব একটা নাড়া দিয়া দেন।…তাঁহারা এক রূপকে আর-এক রূপের মধ্যে লইয়া গিয়া তাহার চরমতার দাবিকে অগ্রাহ্য করিয়া দেন।…তাঁহারা দেখাইয়াছেন জগতে রূপ জিনিসটা ধ্রুব সত্য নহে, তাহা রূপকমাত্র; তাহার অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিলে তবেই তাহার বন্ধন হইতে মুক্তি, তবেই আনন্দের মধ্যে পরিত্রাণ।[2]
রবীন্দ্রনাথের এই ‘অন্তরতর অপরূপতা’ সেই অন্তর্নিহিত সত্যের অনুরণন, যেখানে প্রকাশিত হয় সংস্কৃত সাহিত্যের সূক্ত বা পিওম্বিনোর aphorism.পিওম্বিনো অভ্যস্ত রূপটিকে নিয়ে গেছেন অরূপে, সন্ধান করেছেন রূপকের বন্ধনমুক্তি,বেঁধে রাখা দৃষ্টিতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা কল্পনা স্বপ্ন আর জীবন সম্পর্কে মূল্যবোধের নিরিখে। মনঃসমীক্ষক পিওম্বিনো জগতের বহিরঙ্গ দেখার দেহভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তে অন্তরঙ্গ দেখার আত্মাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গীর কথা বলেন—“At the heart of some poems there is no meaning but at the heart of every meaning there is a poem.”অর্থ আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে তাকে আমরা জানতে পারি, আর এই জানার শুরু হয় যখন শব্দের অর্থ হঠাৎই প্রতীয়মান হয়, যা বিদ্যুৎচমকের মতো এক স্পার্ক, আমাদের মনে এক আকস্মিক অনুরণন তোলে, এক সেন্সেশন, যার স্থায়িত্ব কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তাই ব্যক্ত অংশে অনেকটাই থাকে অব্যক্ত, যেখানে পিওম্বিনোর গভীর অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতাজাত মনঃসমীক্ষণ অব্যক্ত অংরূপিণী আত্মার কথা বলে, সে যেমন সুরে বাজে তেমনি বিদ্ধও করে “What hasn’t been said in what is said is the part that sings—or stings.”(পৃ:৩৪)। এ সেই অংরূপিণী, যেখানে বিন্দুতেই সিন্ধুদর্শনের কথা বলে ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র। এই অংরূপিণী আমাদের বাস্তবজগৎ আধার-আধেয়(actor-action)রূপে বিরাজ করে—কাল, শক্তি, শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ প্রভৃতির মূলে থাকা সেই ক্ষুদ্রতম(micro)সত্তা, যা বহন করে সমগ্রের নির্যাস। আরসেই সমগ্রহল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বৃহত্তম(macro)সত্তা, ভারতীয় দর্শনের পরমাপ্রকৃতি। এই রহস্যময়ী অংরূপিণীর আধা-ব্যক্ত সত্তা দৃশ্যত পরস্পরবিরোধী, যেখানে অনুরণিত হয় পিওম্বিনোর স্ববিরোধী বাণী, অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের লীলাময় ব্যঞ্জনা। এই বিন্দুরূপিণী পুরুষ-প্রকৃতির অদ্বৈত রূপ, যা আবির্ভূত হয় বিন্দুর(.) চারপাশে।√বিদ্ ক্রিয়ামূলে জাত বিন্দু, বিদ্ধ করে, হৃদয়ে প্রবেশ ক’রে আত্মাকে উদ্দীপিত করে, নিউরনকে উত্তেজিত ক’রে অনুরণন তোলে ব্রহ্মের ওঁ ধ্বনিতে। ঋক্ ও সাম, বাক্য ও সুর, সত্য ও প্রাণ যেখানে ঐক্য লাভ করে, সেই পরিপূর্ণতার সংগীতই কবিতা, পিওম্বিনোর স্ববিরোধী বাণী, যার প্রকৃত অর্থ প্রকৃত মূল্য আত্মার উদ্দীপনার অনুপাতে নির্ধারিত হয়, যা এক ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তের ঝলক, এক অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা, কবির সুখদুঃখ আনন্দবেদনায় সংপৃক্ত।
পিওম্বিনো Contradiction এর ভেতর দিয়ে একজোড়া বাণীকে একত্রে সংযুক্ত করেছেন যারা প্রায়শই ঠিক পরস্পরবিরোধী নয়, বরং বলা যায় হেগেলীয় দ্বান্দ্বিকতার স্বরূপ, অথচ হেগেলীয়দের মতো কালাপাহাড়ি ঔদ্ধত্য নেই বরং সমালোচনার এক দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া, যা মনে পড়ায় ঊনবিংশ শতাব্দীর অস্ট্রেলিয়ান লেখক ও সাংবাদিক কার্ল ক্রাউসের বিদ্রুপাত্মক সমালোচনা Dicta and Contradicta, পিওম্বিনোর বইটির এপিগ্রাফে যাঁর উল্লেখ পাই। পিওম্বিনোসন্ধান করেছেনসেই বিকল্প অবস্থান, যা প্রচলিতের সঙ্গে পার্থক্যগুলোর পর্যালোচনা করে। এই পার্থিব পার্থক্যের অভিজ্ঞতা এমন এক অপার্থিব অভ্যন্তরীণ পার্থক্যের বোধ তৈরি করে, যেখানে জন্ম নেয় নতুন অর্থবোধ নতুন মূল্যবোধ। তাই একজোড়া সূক্ত একে অপরের বিরোধিতা করে না, বরং একে অপরকে প্রতিফলিত করে। এই জোড় সত্যকে উপস্থাপন করার জোড় নয়, বরং সত্যকে দেখার দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণের জোড়, যেখানে একটি সত্য অন্য একটি সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়।বইটির এপিগ্রাফে প্যাসকেলের বাণী—স্ববিরোধ মিথ্যার লক্ষণ নয়, স্ববিরোধের অভাব সত্যের লক্ষণ নয়। জীবনসত্যকে উপলব্ধি করার এই দ্বান্দ্বিকতাই পিওম্বিনোর aphorism এর অন্তর্নিহিত সত্য।
পিওম্বিনো ঐতিহ্যের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক ঐশ্বর্য্য উপলব্ধির কথা বলেন। কিন্তু একইসঙ্গে আভাস দেন সেই ঐতিহ্যের,যে গতানুগতিকতার একঘেয়েমিতে ক্লিশে হয়ে আসে, চক্ষুকর্ণ ডানায় ঢেকে চিত্রপটে আঁকা ছবির মতো ঝিমোয় অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায় যেমন বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এবং তখন সেই ঐতিহ্য প্রভাবশালী সংস্কৃতির আরোপিত ও স্বীকৃত সূত্র মেনে চলা রক্ষণকামী সমর্থকদের নিষ্ঠা ও ঠান্ডা ভক্তির খাঁচায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে,যার বিশ্লেষণ পিওম্বিনোর সূক্তে—“Traditions harden into conventions when memory and empathy are replaced by reverence and the cold devotion that supports it.”এই বাঁধারীতির বন্ধনে আবদ্ধশ্রেণীর চাপে, পঙ্ক্তিপূজক সমাজের তাড়নায় ব্যক্তিরূপের প্রকাশ সংকুচিত হয়ে ওঠে। তাই প্রয়োজন রীতির বিপরীতে বিকল্প রীতি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে অস্বীকার না করে বহুবাচনিকতার মাধ্যমে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার উদ্যাপন। কিন্তু একইসঙ্গে তিনি সাবধান করেন রীতিবিরোধিতা যেন ভয়ানক বিকৃতির কবলে না পড়ে—“There can be a useful tradition of unconventionality but conventional unconventionality is a travesty that subverts its entire aim.”(পৃ:১০১)।প্রয়োজন সেই বিকল্পের খোঁজ যা প্রচলিত আদর্শ ও মাননির্ধারণের বিরুদ্ধে এক দ্বান্দ্বিক সংগ্রাম। কবি সমগ্রের সঙ্গে প্রত্যেক মানুষের যোগের কথা বলেন, সেই যোগ যত ব্যাপ্ত হয় ততই প্রত্যেকের বিকাশ, কারণ সামাজিক হলেও মানুষ মাত্রই মিথস্ক্রিয়ার চলমান প্রসেস। দ্বন্দ্ব অবশ্যম্ভাবি, সমস্ত সৃষ্টিযজ্ঞই দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়েই বিকাশিত হয়। এ হল পূর্ববিধান ও স্বাধীনতার দ্বৈরাজ্য, মার্কসবাদের ডায়ালেকটিক্স্, দোদুল্যমান দ্বান্দ্বিকতা।পূর্বজ্ঞান আহরণ ও নতুনকালের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনভাবে নিজস্ব অভিজ্ঞতায় জ্ঞানার্জন এবং দুয়ে মিলে কর্মযজ্ঞের হোমাগ্নি প্রজ্বলন। যেখানে প্রচলিত প্রবণতার বিরুদ্ধে এক টানাপোড়েনের চিহ্ন, এক সময়গত স্পন্দন, যা কবির অভিজ্ঞতার আলোয় সত্যকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে, চালিত করে সেই অপরিসীম বৈচিত্র্যের দিকে যেখানে প্রতিমুহূর্তে খুলে যায় অনন্ত সম্ভাবনার দিগন্ত—এই দ্বৈরাজ্য নীতির অনুরণন পিওম্বিনোর Contradicta: Aphorism, স্ববিরোধী বাণী।
পুরোনো চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্যের ছায়াকে অস্বীকার করে তাকে নতুন ক’রে সৃষ্টির মধ্যেই একজন শিল্পীর আনন্দ। ধ্বংস না হলে নির্মাণ নেই, পূর্বতন রূপকে ধ্বংস করেই নতুন রূপের সৃজন। কবির কল্পনাশক্তির দুর্লভ গুণে, স্বকীয় বিশেষত্বের মধ্যে যা ব্যক্ত হয়, সেই হল ওই ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য, তা স্পষ্ট হতে পারে, অস্পষ্টও হতে পারে। পিওম্বিনো তাই মনে করিয়ে দেন—“Truth cloaks itself in paradox, lies in deception, poetry in obscurity, love in self-effacement. Everything important remains masked.” সত্য যেমন প্যারাডক্সের আড়ালে মুখোশিত, তেমনি কবিতাও অস্পষ্টতার আড়াল তুলতে পারে, কিন্তু প্রয়োজন নিরন্তর নতুনের উদ্যাপন, কারণ নতুনের গর্ভেই জন্ম নেয় কবিতার সত্য। বাকপটুতা নয়, চাই অবাক হওয়ার আর অবাক করার পটুতা, কারণ—“Those that can no longer be surprised lose the capacity to surprise. By being predictably astonishing, some console themselves.”(পৃ:২৯)।অদ্ভুত রসের স্থায়ীভাব বিস্ময়, যা আমাদের আত্মার ক্ষণিক উত্তরণের অভিব্যক্তি, এমন অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর যে তার তাৎক্ষণিক বোধগম্যতা নেই, আছে কেবল আত্মার ক্ষণিক উদ্দীপনা। এই আত্মা মানুষের আমিত্ববোধ উপলব্ধি বা আত্মোপলব্ধি, ভারতীয় অধ্যত্মবাদের ইন্দ্রদেবতা। এই উপলব্ধিজাত রস সৃষ্টিরূপ দক্ষ কবির‘আমি’র কৃষ্ণবর্ণ অহং-এ নিঃশেষে শোষিত হয় না, বরং অপরূপের আলোয় দীপ্যমান হয়ে অশেষ হয়ে শুরু করে প্রকাশের উৎসব। সে নিয়মের সীমায় সংহত হয় কিন্তু চিরআবদ্ধ থাকে না। অন্তরমহলের নান্দনিক বিক্ষোভ সেই নিয়মকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায় গুণগত উৎকর্ষ সাধনে। এই ডায়নামিক অস্তিত্বের জন্যই কবির চিরকালীন গান ওঠে, আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসী।
চলুন পাঠক, এবার পড়া যাক কিছু কবিতার অনুবাদ। বইটিতে মোট দুশো জোড়া বাণী আছে, সঙ্গে আছে সাইমনের কোলাজ। প্রথম পর্বে তিরিশ জোড়া অনুবাদ রইল।
১।
একজন শিল্পী হওয়া মানে অনাস্বাদিতপূর্ব জিনিসের জন্য চিরকাল ক্ষুধার্ত থাকা, তোমার অদৃষ্টপূর্ব বা অবোধ্য জিনিসের জন্য নিরলস অনুসন্ধান করা, তোমার নিজের ও বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বিভ্রান্ত, নিঃসঙ্গ ও অসংগত অংশটিকে বারংবার সাদর স্বাগত জানানো। কিছু পাওয়ার একমাত্র আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারো শুধুমাত্র তাকে মুক্তি দিয়ে।
✺
পরিত্যক্ত আশা ও বিস্মরিত স্বপ্নকে জাগরিত করে অবিস্মরণীয় সঙ্গীত।
২।
যা তুমি বুঝতে পারো না তা নিয়ে ভাবার জন্য এত বেশি সময় প্রয়োজন যে তোমার যা নেই বা অপছন্দের জিনিস তার জন্য ভাবার সময় খুব কম।
✺
পকেটভরা টিকিট নিয়ে নাগরদোলায় আমি ঘুমোলাম আর একমুঠো রসিদ নিয়ে রোলার কোস্টারে জাগলাম।
——–
৩।
স্বার্থপরতার প্রতি তোমার প্রতিক্রিয়া দিয়ে নিজের উদারতা পরিমাপ করো।
✺
বিভ্রান্তি জাগিয়ে তোলে; সন্তুষ্টি অবশ করে।
৪।
সত্য প্যারাডক্সে, মিথ্যা প্রতারণায়, কবিতা অস্পষ্টতায়, প্রেম আত্মবিলোপে আত্মগোপন করে। যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সকলই মুখোশিত।
✺
যারা আর অবাক হতে পারে না তারা অবাক করতেও পারে না। অনুমেয় বিস্ময়ে কেউ কেউ নিজেকেই সান্ত্বনা দেয়।
————–
৫।
কিছু কবিতার অন্তরে কোনো অর্থ থাকে না কিন্তু প্রতিটা অর্থের অন্তরে একটা কবিতা থাকে।
✺
ব্যক্ত অংশে যেটুকু অব্যক্ত সেখানেই গান ওঠেঅথবা হুল ফোটে।
৬।
বন্ধুরা দেবদূতের মতো, আশ্চর্যজনকভাবে নমনীয় ও সহৃদয়, তবে বেশিরভাগই অদৃশ্য অথবা কোথাও ছিটকে যায়।
✺
অন্যদের কাছে আমাদের প্রয়োজন যদি জানতাম তাহলে আমরা নিজেদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় হতে দিতাম।
—————
৭।
যখন আমি সুন্দর কিছু দেখি তখন কবিতার কথা না ভাবার চেষ্টা করি; যখন কবিতায় থাকি তখন ভাবার চেষ্টা করি না।
✺
কখনও মূল্যবিচার কোরো না, নিমজ্জিত হয়ো না, অতিভোজন কোরো না, নিঃশেষে পান কোরো না,অন্যকে পরিবর্তনে প্ররোচণা দিও না, থামিয়ে দিও না, কখনই কিছু কোরো না।
৮।
জীবনে তিনটি জিনিসের জন্য অপেক্ষা করা ভালো—দুর্দান্ত প্যাশন, উত্তম ভোজ আর অনুপ্রাণিত আইডিয়া। একটা ভালো বইয়ের জন্য আমি এখন এটাই ধার্য করি।
✺
পরিপক্কতা মনের এমন এক অবস্থা যাতে বন্ধু লেখার তারিফ না করলেও তাকে ভালোবাসা যায়।
—————–
৯।
কখনো সুর শব্দকে ছাপিয়ে যায়, কখনো কবি কবিতাকে ছাপিয়ে যায়।
✺
যখন এক হাত অন্য হাতকে ঈর্ষা করে তখন আর কিছুই ধরে রাখা যায় না।
১০।
আমাদের গল্পগুলো হাতের মতো জীবনসত্যকে মনের গভীরে ধারণ করে আর বাহুর মতো তাকে কাছে ধরে রাখে।
✺
মনের সত্যর প্রয়োজন কাল্পনিক গল্পের মুখ।
———————
১১।
সমসাময়িক জীবনের প্রলুব্ধকর লৌকিকতাবর্জন হল সমসাময়িক শিল্পের শ্লেষাত্মক রূপবাদের অনুরূপ।
✺
আমি কীভাবে চিন্তা করি তা দিয়ে আমাকে সংজ্ঞায়িত করো, আমি যা জানি তা দিয়ে আমাকে বর্ণনা করো, আমি কীভাবে অনুভব করি তা দিয়ে আমাকে জানো।
১২।
চিন্তায় আনন্দ পাওয়া এক সূক্ষ্ম ব্যাপার, কিন্তু অন্যান্য বহু জিনিস নিয়েই আমরা অত্যল্প বা অত্যধিক ভাবতে পারি। সীমিত হলে মানসিক মানবমূর্তি আর অপর্যাপ্ত হলে অনর্থক বকবককারী পুতুল তৈরি হয়।
✺
আমরা কী ভাবছি তা কখনই জানতে পারি না যতক্ষণ না আমরা সেটা নিয়ে ভাবি।
————–
১৩।
সুচতুর প্রাণী যেমন মৃত্যুর নকল ক’রে শিকারজীবী প্রাণীদের প্রতারণা করে, তেমনি কিছু শিল্পী অনুকরণকারীদের এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ব্যর্থতার ভান করে। তবে এই ফন্দি সুযোগসন্ধানীদের নিরুৎসাহ করে না।
✺
উদাসীনতার আবহে কেউ তার উদারতা গোপন করতে পারে, কারণ দয়া যেখানে দুর্বল হিসেবে প্রতিপন্ন সেখানে নিঃসঙ্গতা প্রবল হয়।
১৪।
ঠক জোচ্চরে আকণ্ঠ ডুবে আছো, তবু এখনও তুমি অন্যের নিরুত্তাপ ও নির্দয় শব্দ নিয়ে ভাবছো…
✺
জীবনের ওষুধ নির্মাণ তালিকায় কর্ম হল অমৃত আর সুখ হল মলম।
১৫।
রাগ এক মরিয়া বাঘ যাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন—বন্ধু্ত্ব করো অথবা কবলিত হও।
✺
নিরলস সমালোচক ক্ষুধার্ত থাকেতোমার গর্বের জন্য—উৎকর্ষের জন্য নয়।
—————–
১৬।
অন্যদের বলা বিষয় যা আমরা স্পষ্ট করে তুলি, আমাদের বক্তব্যে সেগুলোই একমাত্র বোঝার যোগ্য।
✺
কবিতার সত্য হল খাঁচা খোলার চাবিকাঠি। পাখিওড়া দেখার জন্যই তুমি সেখানে এবং তারা চলে গেলে সত্য চাবি বা খাঁচা নিয়ে তুমি আর দ্বিতীয়বার ভাবো না।
১৭।
যারা শোনে না তারা সাধারণত শোনানোর জন্য সবচেয়ে বেশি মরিয়া এবং কেউ শুনছে কিনা সে সম্পর্কে মাথাব্যথা সবচেয়ে কম।
✺
সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে যা পড়ে থাকে তা-ই চিন্তাভাবনা।
১৮।
জীবন এক ষড়যন্ত্র—সম্ভবত আকাঙ্ক্ষার ছায়া—অপূর্ণতার এক অদম্য আভা।
✺
যা তুমি করছো তার খাঁচায় ভরা তোতাপাখিই তোমার ভাবনা।
—————-
১৯।
শক্তিশালী অনুভূতিগুলো নিজেদের চিরস্থায়ী করে একটা কৌশলের মাধ্যমে—তারা প্রতিশ্রুতি বা হুমকি দেয় যে অসীম অনন্তকাল প্রসারিত হবে। মেজাজের মাধ্যমে তারা অনির্দিষ্টকাল নিজেদের স্থাপন করার চেষ্টা করে। কিন্তু মেজাজ হল আবেগের প্রতিরূপ, যা অনুভূতিজাত পণ্যমাত্র।
✺
তিনটি জীবনকালের জন্য এক ঘণ্টার আক্ষেপই যথেষ্ট।
২০।
বর্তমানের উপন্যাস গল্প কবিতা প্লট বাদ দিলেও তারা কখনই ঘটনাক্রমের আকস্মিক বাঁকগুলো নির্মূল করে না।
✺
আমার মনে হয় আমি যা খুঁজছিলাম তা পেয়েছি : খোঁজ।
২১।
ঐতিহ্যগুলো প্রচলিতের ভেতর কঠিন হয়ে ওঠে যখন স্মৃতি ও সহমর্মিতা প্রতিস্থাপিত হয় সমর্থকদের নিষ্ঠা ও ঠান্ডা ভক্তি দিয়ে।
✺
রীতিবিরোধিতার কার্যকরী ঐতিহ্য থাকতে পারে কিন্তু প্রচলিত রীতিবিরোধিতা এমন এক ভয়ানক বিকৃতি যা এর পুরো লক্ষ্যকেই ধ্বংস করে।
————————–
২২।
ভালোবাসা আশার, আশা কল্পনার, কল্পনা স্মৃতির, স্মৃতি আবেগের, আবেগ গানের পুনরুদ্ধার করে।
✺
সত্য এক সোপান, বেদনাদায়ক ধাপে গ্রথিত, তবে শীর্ষদেশে তুমি আকাশ থেকে দেখো।
২৩।
লেখকরা যখন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে তখন তাদের অনুভূতিগুলো ঝেড়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ, যেহেতু মেঘগুলো নীচে থেকে সারগর্ভ দেখালেও ওপর থেকে নীরস ও নিঃসঙ্গ দেখায়, কারণ সেখানে কেবল একজনের জায়গা থাকে। এ এক উভয়সঙ্কট সেইসব পাঠকদের জন্য, যারা পাঠকৃতিটি যথেষ্ট বাস্তব কিনা তা নিশ্চিত করতে সেগুলো অনুভব করার প্রত্যাশা করে।
✺
বন্ধুত্ব হল এক দাবা খেলা, যা সময়ের সাথে সাথে আরও ধীরে ও সমাদরে খেলা উচিত। নাহলে প্রতিপক্ষ তাদের সেইসব জুড়িদের থেকে নিজেদের বঞ্চিত করবেযারা তাদের নিরন্তর অনুপ্রাণিত করেছে।
———————
২৪।
লেখক ও তস্করের মধ্যে সাধারণ মিল হল—সফলতার জন্য প্রমাণসকল বিলুপ্তিকরণ।
✺
তুমি মাস্টারের কাছে যাও সঠিক কৌশলের জন্য নয় বরং ফলপ্রসূ মনোভাবের জন্য।
২৫।
কোনও কবিতা বারবার পড়ার সময় প্রতিবার পাঠের সঙ্গে সঙ্গে যাদুকরী কৌশলগুলো তোমার আরও বেশি বোধগম্য হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ে তুমি কবিতার চেয়ে কবিকেই বুঝতে চাও, কারণ কবিতার চেয়ে কবির থাকেঅন্তহীনগোপন পরিকল্পনা।
✺
স্বীকার করোতুমি ভুল করেছিলে এবং প্রীতি অর্জন করো—দাবি করোতুমি সঠিক ছিলে এবং প্রীতি হারাও।
————————-
২৬।
লোকেরা অবিরত একে অপরকে অল্পবিস্তর পাগল করে তোলে এবং তারপর ভাবতে বসে ও তর্ক তোলে অন্যদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত।
✺
অধিকাংশ মানুষ এক দিনে কী ভাবে ও অনুভব করে তা বর্ণনা করতে গেলেতুমি অভিধানকে হাজার দিয়ে গুণ করলেও যথেষ্ট শব্দ খুঁজে পাবে না৷
২৭।
আমি অনুভূতি বোঝার জন্য পড়ি।
আমি চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য লিখি।
কখনও কখনও কথাবার্তা আমাকে বুঝতে সাহায্য করে আমার কী জানা বা করা প্রয়োজন। কিন্তু আমি যদি শুধু বুঝতে চাই তবে চুপচাপ থাকি।
✺
বোঝাপড়া হল সেই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে আনন্দের সঙ্গে পৌঁছনোর মতো, যে বইটি তুমি সম্পূর্ণ নিমগ্ন হয়ে পড়ছিলে, কিন্তুএখনই শেষ করতে চাও না৷
২৮।
তুমি যখন জীবনের সেই মুহূর্তে পৌঁছোও যখন অন্য সবকিছুর থেকে সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন শুধুমাত্র অন্য উপায় না পেয়ে দর্শনের শরণাপন্ন হতে প্ররোচিত হও।
✺
আশায় প্রলুব্ধ অথবা হতাশার কাছে পরাজয়, কর্মশক্তিতে প্রাণবন্ত অথবা স্বভাবনৈপুণ্যে আচ্ছাদিত।
———————-
২৯।
সব কবিতাই আমাকে একই কথা বলছে—“এ সবই একটা কবিতা। তুমি বেঁচে আছো, বুঝলে?”
✺
আহা কবিতা!এমন এক পাওয়ার আনন্দ, যা বোঝার দাবি করে না যেখানে নিঃসন্দেহে বোঝার কণামাত্র আর অবশিষ্ট নেই।
৩০।
তুমি যত অতীতে যাবে হামেশাই দেখবে লেখকেরা বেশিরভাগই আশাবাদী তথাপি একান্ত আন্তরিক; তুমিযত বর্তমানের কাছাকাছি আসবে ততই দেখবে তারা বেশিরভাগই হতাশ কিন্তু বেপরোয়াভাবে কৌতুকপ্রিয়।
✺
জানা ও অজানার মধ্যবর্তী পরিসর মাপতে চিন্তা ও কথিতের মধ্যে ব্যবধান দিয়ে শুরু করো।
———-
ক্রমশ…
পরিচিতি :
নিক পিওম্বিনো মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, এবং পেশায় সাইকোথেরাপিস্ট। জন্ম ১৯৪২, বাস ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক। তিনি যেমন ১৯৬০ সালে্র নিউইয়র্ক স্কুল কবিদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তেমনি ১৯৭০ সালের ভাষাকবিতারও অনুসঙ্গী ছিলেন। বর্তমানে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক, পোস্টগ্র্যাজুয়েট সাইকোঅ্যানালিটিক সোসাইটি এবং সোসাইটি অফ ক্লিনিক্যাল সোশ্যালওয়ার্ক সাইকোথেরাপিস্টের সদস্য। পুরস্কার পেয়েছেন নিউইয়র্ক ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্ট ফেলোশিপ ইন পোয়েট্রি ফর ১৯৯০-১৯৯১ এবং ১৯৯২ সালে পেয়েছেন পোস্টগ্র্যাজুয়েট সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথ অথর রেকগনিশন অ্যাওয়ার্ড। প্রকাশিত বহু গ্রন্থ—Mnemomic Trains(পেনটারাক্ট প্রেস, ২০২৩), Poems (সান অ্যান্ড মুন প্রেস, ১৯৮৮), Light Street (জাস্টারলে প্রেস, ১৯৯৬), এবং fait accompli (ফ্যাক্টরি স্কুল, ২০০৬)। কবিতা বইয়ের পাশাপাশি কোলাজ উপন্যাস Free Fall (ওটোলিথস প্রেস, ২০০৭), চ্যাপবুক Hegelian Honeymoon (চ্যাক্স প্রেস, ২০০৪), প্রবন্ধের সংকলন The Boundary of Blur (রুফ বুকস, ১৯৯৩) এবং Theoretical Objects (গ্রিন ইন্টিজার প্রেস, ১৯৯৯) ইত্যাদি। তাঁর জনপ্রিয় ব্লগhttps://nickpiombino.blogspot.com/
টনি সাইমন মাল্টিমিডিয়া শিল্পী ও লেখক। বাস ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক। তাঁর ভিজ্যুয়াল দৃষ্টিকোণে আঁকা কোলাজগুলি ধ্যানলব্ধ ও কল্পনাশ্রয়ী।একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টার প্রকৃত আবেগময় সুরে কোলাজগুলো বাজতে থাকে অমোঘ ভবিষ্যবাণীর মতো।এ হল নিরন্তর বিকশিতমান চেতনার উপলব্ধি, যেখানে প্রাচ্যের স্বজ্ঞালব্ধ দর্শনের ভিত্তি। রূপদক্ষ শিল্পী যখন কাজ করেন লেখক হিসেবে তখন ধ্যানের মধ্যে জেনে নেন অতীতের যা কিছু দৃষ্টিগোচর এবং ভবিষ্যতের যা কিছু দর্শ, তারপর স্বজ্ঞালব্ধ জ্ঞানের আলোয় বর্তমানের দর্শটির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করেন, আত্মার প্রেরণায়, কল্পনার ঐশ্বর্য্যে সৃষ্টি করেন সম্ভাবনার। এভাবেই রচিত হয়েছে সচিত্র বই, অ্যানিমেটেড ভিডিও এবং পরীক্ষামূলক গদ্য কবিতার বই EarthAfter Earth(লুনার শ্যান্ডেলিয়ার প্রেস, ২০১২) এবং Telescope Highway(স্পাইটেন দাইভিল, ২০২২)। বর্তমানে খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর দার্শনিক মেনিপাসকে ঘিরে একটি সংলাপমূলক কাজ করছেন। নিউইয়র্কের Drawing Center এ তাঁর পেইন্টিং প্রদর্শিত হয়েছে। বিশদ বিবরণ: https://tonisimonart.blogspot.com/
[1]Contradicta:Aphorisms— নিক পিওম্বিনো, ইলাসট্রেশন করেছেন টনি সাইমন, প্রকাশনা: গ্রিন ইন্টিজার প্রেস, লসএঞ্জেলস্, ক্যালিফোর্নিয়া, ২০১০
[2]গদ্য: “অন্তর বাহির”, গ্রন্থ: পথের সঞ্চয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী, কলকাতা, ইন্ডিয়া, ১৯৪৭