ক্রীড়া প্রতিবেদক ॥
ভারতের দেরাদুনকে হোম ভেুন্য হিসেবে ব্যবহার করা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান সেখানেই গড়ল নতুন ইতিহাস। আভিজাত্যের সাদা পোশাকে প্রথম টেস্ট জিতল মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানের দল। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে সিরিজের একমাত্র ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারাল আফগানরা। সেই সঙ্গে ‘বড়’ হওয়ার পথেও এগিয়ে গেল ‘ছোট’ আফগানিস্তান!
আইরিশদের ১৭২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর গড়ে আজগর আফগানের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ২৮৮ রানে গুড়িয়ে দেয়ার পর জয়ের জন্য ১৪৭ রানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। সোমবার চতুর্থ দিনে ৪৭.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা। ৯৮ ও ৭৬ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। স্ট্যাটাস পাওয়ার পর গত বছর প্রথম টেস্ট খেলা আফগানিস্তান তাদের দ্বিতীয় ম্যাচেই পেল ঐতিহাসিক এ সাফল্য।
গত বছরের জুনে বেঙ্গালুরুতে আফগানিস্তান তাদের অভিষেক টেস্টে ভারতের কাছে দুই দিনেই হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। ৯ মাস পর দ্বিতীয় টেস্টেই এল ঐতিহাসিক প্রথম জয়। আফগানিস্তানের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছে শুধু অস্ট্রেলিয়াই। অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্টই, ১৮৭৭ সালের ১৯ মার্চ মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আফগানিস্তানের মতো নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।ইংল্যান্ড প্রথম জয় পেয়েছিল অভিষেকের পরের মাসে, পাকিস্তানের অভিষেকের মাসেই। তালিকায় এরপর আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়রা প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ষষ্ঠ টেস্টে, সময় লেগেছিল দুই বছর। এরপর আছে জিম্বাবুয়ে (১১ টেস্ট ও ৩ বছর), দক্ষিণ আফ্রিকা (১২ টেস্ট ও ১৭ বছর), শ্রীলঙ্কা (১৪ টেস্ট ও ৩ বছর), ভারত (২৫ টেস্ট ও ২৪ বছর), বাংলাদেশ (৩৫ টেস্ট ও ৫ বছর)। প্রথম জয় পেতে সবচেয়ে বেশি ৪৫ ম্যাচ লেগেছে নিউজিল্যান্ডের। কিউইদের প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল অভিষেকের ২৬ বছর পর।
দেরাদুনের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার ১ উইকেটে ২৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল আরও ১১৮ রান। রহমত শাহর সঙ্গে শতরানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ইহসানউল্লাহ। নিজেদের জোনে বল পেলে তুলে নিয়েছেন বাউন্ডারি। এক-দুই নিয়ে সচল রেখেছেন রানের চাকা। দুই ব্যাটসম্যান চেপে ধরতে দেননি আইরিশ বোলারদের। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়ার চেষ্টায় জেমস ক্যামেরন-ডাউয়ের বলে রহমত স্টাম্পড হয়ে গেলে ভাঙে ১৩৯ রানের জুটি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়া এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবার ১২২ বলে ১৩ চারে করেন ৭৬ রান। রান আউট হয়ে ফিরে যান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার হাঁকিয়ে আফগানিস্তানকে ইতিহাস গড়া জয় এনে দেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। দলের জয়কে সঙ্গে নিয়ে ফেরা ইহসানউল্লাহ করেন ৬৫ রান। টেস্ট অভিষেকে ফিফটি পাওয়া এই ওপেনারের ১২৯ বলের দায়িত্বশীল ইনিংস গড়া আট চার ও দুই ছক্কায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১৭২/১০ (৬০ ওভার; পোর্টারফিল্ড ৯, স্টার্লিং ২৬, কেভিন ও’ব্রায়েন ১২, ডকরেল ৩৯, ক্যামেরন-ডাউ ৯, মারটাঘ ৫৪*; ইয়ামিন ৩/৪১ নবি ৩/৩৬, রশিদ ২/২০, ওয়াকার ২/৩৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৮৮/১০ (৯৩ ওভার; স্টার্লিং ১৪, বালবার্নি ৮২, ম্যাককলাম ৩৯, ও’ব্রায়েন ৫৬ ডকরেল ২৫, ম্যাকব্রায়ান ৪, ক্যামেরন-ডাউ ৩২*, মারটাঘ ২৭; আহমেদজাই ৩/৫২, রশিদ ৫/৮২, সালামখেলি ২/৬৬)
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস ৩১৪/১০ (১০৬.৩ ওভার; শাহজাদ ৪০, রহমত ৯৮, শাহিদি ৬১, আফগান ৬৭; ম্যাকব্রায়ান ২/৭৭, ক্যামেরন-ডাউ ২/৯৪, টম্পসন ৩/২৮, ডকরেল ২/৬৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ১৪৭) ১৪৯/৩ (৪৭.৫ ওভার; ইহসানউল্লাহ ৬৫*, রহমত ৭৬, শাহিদি ৪*;, ম্যাকব্রায়ান ১/৩৫, ক্যামেরন-ডাউ ১/২৪)
ফল ॥ আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা ॥ রহমত শাহ (আফগানিস্তান)