ক্লাসে ঢুকেই বাংলার স্যর বটুক বাবু বললেন , “আজকে আমি তোদের সন্ধি বিচ্ছেদ পড়াব “… এই ভোলা বলত ,” দম্পতির সন্ধি বিচ্ছেদ কি হয় ?ভোলা লাস্ট বেঞ্চে বসে একমনে হিজিবিজি আঁকি বুকি কাটছিল আর পেন্সিলের পেছনটা চিবুচ্ছিল এক মনে , এরকম অতর্কিত প্রশ্নবাণে যার -পর-নাই ঘাবড়ে গিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল , “আ… আ…আমি জানি না স্যর । ” বটুক বাবু সমবেত ক্লাসের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন , “আর কেউ জানিস ? এনি ওয়ান ?” ক্লাসের সবচেয়েফোক্কড় ছেলে চঞ্চল বলে উঠল , ” জানি স্যর … দম + পতি= দম্পতি , মানে যে পতির দম আছে সেই দম্পতি ; নিজের উত্তরের সপক্ষে যুক্তি বাৎলায় চঞ্চল … ছাত্রদের এ হেন উত্তরে রীতিমত উৎফুল্ল বোধ করেন বটুক স্যর ।মানে ঠিক কি রকম দম ? চঞ্চলের কাছে বিশদ ব্যাখ্যা চান তিনি ।দম মানে সলমন খানের মত দম … দ্যাখেন নি স্যর হিন্দি সিনেমায় … নায়িকাকে পাঁজা কোলা করে নিয়ে দে ছুট … দম লাগাকে হঁইয়্যাসা…দমদার বলতে তো এখন সলমন খান … ওই বলিউডে আর কি ! বিশদে ব্যাখ্যানা দেয় চঞ্চল । ছাত্রদের এই ব্যাখ্যা থুড়ি ব্যাখ্যানায় চমকৃত বটুক স্যর ক্লাস তো শেষ করেন কিন্তু তার মাথায় কেবলিই ঘুরতে থাকে , ‘ দম আছে যে পতির ‘ কথাটা । ইদানীং বটুক বাবুর ইস্ত্রি মাঝে মধ্যেই খোঁটা দেন তাকে ক্রমবর্ধমান ভুঁড়ির জন্য । এমনিতেই বটুক বাবু তার স্ত্রীর থেকে বয়েসে বেশ বড় । সুন্দরী তরুণী ভার্যাকে ধরে রাখার জন্য দমদার পতি হওয়ার চেয়ে বেটার অপশন আর এই মূহূর্তে মাথায় আসে না বটুক বাবুর ।বটুক বাবুর স্ত্রীর বক্তব্য খেয়ে খেয়ে আর ঘরের কাছে ইস্কুলে মাস্টারি করে বটুক বাবু একটা নেয়াপাতি ভূঁড়ি বাগিয়েছেন । এই ভুঁড়ি বিসর্জন দিয়ে ইস্ত্রিকে পাঁজাকোলা করে তোলার জন্য রীতিমত মরিয়া হয়ে ওঠেন বটুকবাবু … যেমন ভাবা তেমনি কাজ ।বাড়ির কাছাকাছি জিম নেই ! তাতে কুছ পরোয়া নেই … বেশ খানিকটা দূরে একটা জিমে ভর্তি হন তিনি ।
নৈহাটির এইদিকটা এখনও মফঃস্বল, শহুরে হয়ে ওঠে নি পুরোপুরি । হাই রোডের ধারে একটা বডি জিমে ভর্তি তো হলেন বটুক বাবু কিন্তু সেই জিমে এসি নেই । ফলে মেশিনে প্র্যাক্টিস করে গলদঘর্ম বটুকবাবু যে শরীরের ঘামটুকু শুকোবেন তার উপায় নেই! জিমের দেওয়ালে অক্ষয় কুমার আর সলমন খানের জিম চর্চিত সিক্স প্যাকস অ্যাবসের ছবি দেখে প্রথম দিনই শিহরিত হন বটুক বাবু ।জিমের ট্রেনার একটা ইয়ং ছোকরা; বটুক বাবুর নেয়াপাতি ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে দাঁত কেলিয়ে জিজ্ঞেস করে তা মাস্টার মশাই বউদির গুঁতোয় শেষ অবধি জিম মুখো ? বটুক বাবুর মুখে এসে যাচ্ছিল তাতে তোর কি রে হতচ্ছাড়া ? কিন্তু অনেক কষ্টে মুখে লাগাম দেন তিনি ! এটা তার ইস্কুল নয় ! আর ছোকরা তার ট্রেনার ! যাই হোক হই হই করে শুরু হয়ে যায় ট্রেনিং । ভোরবেলা উঠে জিমে যাওয়ার আগে একমুঠো ছোলা চেবাতে চেবাতে যান বটুকবাবু । স্ত্রী মনোরমা খোঁটা দেন বুড়ো বয়েসে ঘোড়া রোগ ! ভীমরতি দেখে আর বাঁচি নে ! মনোরমার কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বার করে দেন বটুক বাবু … গেরাহ্যি করেন না … হুঁ হুঁ বাবা যখন দেখবে না সিক্স প্যাকস অ্যাবস , পুরো বমকে যাবে ! জিমের পাশাপাশি প্রোটিন ডায়েট শুরু করেছেন বটুক বাবু । প্যারালাল বার করার পর বা রিং ধরে ঝোলার পর পেশী তৈরী করার জন্য প্রোটিন ডায়েট মাস্ট । আর প্রতি সপ্তাহে রবিবার নিয়ম করে ওজন নেন ও ফিতে দিয়ে হাতের বাইসেপস ও ট্রাইসেপস মাপেন বটুক বাবু…ট্রেনার কার্তিক তাকে আশ্বস্ত করেছে ঘাবড়াবেন না স্যর বউদির জন্মদিন তো মার্চে তার আগেই আপনাকে সলমন খানের মতো দমদার পতি করে তোলার দায়িত্ব আমার … সেই ভরসাতেই আছেন বটুকবাবু …
মার্চ মাস পড়ে গেছে ; বসন্ত কাল , বাতাসে হালকা গরমের ছোঁয়া । মন ভালো করা শিরশিরে বাতাস বইছে … বটুক বাবুর মনটাও বেশ খুশি খুশি … মনোরমার জন্মদিনের আর বেশি বাকি নেই ; বটুক বাবুর অ্যারেঞ্জমেন্টও প্রায় সারা … এবারের জন্মদিনে মনোরমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার আনন্দে তার মনটা একেবারে মশগুল হয়ে আছে । বেশ একটা ফুলশয্যার দিনের মতোই রোমাঞ্চ ফিল হচ্ছে তার … জিমের পাশাপাশি ওয়েট লিফটিং ও করেছেন মনোযোগ দিয়ে বটুক বাবু শেষ কয়েক মাসে … এখন দেখা যাক …
ইদানীং একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন বটুক বাবু … পেটানো চেহারা আর জিম চর্চিত গ্ল্যামারের জন্য তার চেহারায় একটা হীরো হীরো ভাব এসেছে … ফলে পাড়ার কলেজ পড়ুয়া উঠতি যুবতী থেকে পাড়াতুতো বউদি সবাই যে সুযোগ পেলেই তার দিকে এক ঝলক তাকায় তিনি ভালোই বুঝতে পারেন … জয় বাবা বজরংবলী কি জয় ! চাইলে দু একটা মেয়ে পটানো তার কাছে এখন জলভাত !
এদিকে নির্দিষ্ট দিনের আর দুদিন বাকি … দীঘার ট্রেনের টিকিট কাটা , হোটেল বুকিং সব কমপ্লিট বটুক বাবুর … বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাংলা ক্লাস নিচ্ছিলেন তিনি এমন সময় বজ্রাঘাত … বাড়ির কাজের মেয়েটির ফোন , ” দাদাবাবু গো তুমি শিগগির একবার ছুইট্যে এস… বউদি মণির কি হাল হয়েছে নিজের চোখে দেখ এসে …”
অতঃপর যা আবিষ্কার হল তা হল তেতলার ঠাকুর ঘরে পুজো দিয়ে নামতে গিয়ে মনোরমার কোমরের হাড় ভেঙ্গেছে … এখন অপারেশান এবং মাস ছয়েক বিছানায় শোয়া … মনোরমাকে পাঁজাকোলা করে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন বটুক বাবুর … মনোরমার ওজন নেহাত কম নয় … বাহাত্তর কেজি তো হবেই … নিজেকে এখন প্রকৃত অর্থেই সলমান খানের মতো দমদার পতি লাগে বটুক বাবুর … দম লাগাকে হঁইয়্যাসা… ভাগ্যিস সময় থাকতে জিমে ভর্তি হয়েছিলেন !!