সেরা নারী দার্শনিক
শাফিনূর শাফিন
সক্রেটিস থেকে জিজেক- আপনি হয়তো ভাবেন দর্শনশাস্ত্র কেবলই পুরুষদের একচ্ছত্র অধিকারের। একদমই ভুল ধারণা। সবসময়ে বিভিন্ন নারী দার্শনিকের দেখা পাওয়া যায় যাদের তত্ত্ব অন্য তাত্ত্বিক, দার্শনিক এবং সাহিত্যিকদের প্রভাবিত করেছে। তাঁদের মধ্য থেকে ইতিহাসের সেরা কয়েকজন দার্শনিকদের নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
গ্রীক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী হাইপেশিয়া অভ আলেক্সান্দ্রিয়াকে (৩৭০-৪১৫) গণ্য করা হয় তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে অন্যতম সেরা। সেই সময়ে আলেক্সান্দ্রিয়াতে তাঁর মতো এতবড় গণিতজ্ঞ কেউ ছিল না। তাঁর জনপ্রিয়তা এতো ছড়িয়েছিল যে দূর দূরান্ত থেকে ছাত্ররা শুধুমাত্র তাঁর কথা শোনার জন্য চলে আসতো। হাইপেশিয়া তাঁর বাবা গণিতবিদ থিওনের সাথে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তিনি ছিলেন ইতিহাসের শেষ প্যাগান বিজ্ঞানী যাকে ক্রিশ্চান মৌলবাদীরা হত্যা করে।
নারীবাদের প্রাথমিক সূচনা হয় মেরি ওলফস্টোনক্রাফটের (১৭৫৯-১৭৯৭) অ্যা ভিন্ডিকেশন অভ দ্য রাইটস অভ উইমেন প্রকাশের পরপর। এই বইতে তিনি নারীশিক্ষার উপর জোর দেন এবং এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তাকে প্রথম নারীবাদী দার্শনিক ধরা হয়। আজীবন তিনি সমালোচিত হন পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে পুরুষের তৈরি বিভিন্ন নিয়মকে তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছাধীন জীবনযাপনের কারণে।
সিমন দ্য বুভোয়ায়ের (১৯০৮-১৯৮৬) সময়ে তাঁর মতো জনপ্রিয় খুব কমই ছিল। এমনকি তাঁর কাছাকাছি যাবার মতোও বলতে গেলে হাতে গোনা কজন ছিল। অথচ একজন ফ্রেঞ্চ এক্সিস্টেনশিয়ালিস্ট, মার্ক্সিস্ট এবং সেকেন্ড ওয়েভ নারীবাদের প্রধান সূত্রধর হবার পরেও সিমন নিজেকে দার্শনিক ভাবতেন না। এক ডজন বই লিখেছেন সিমন, যার মধ্যে দ্য সেকেন্ড সেক্স বইটিকে সমসাময়িক নারীবাদের বাইবেল ধরা হয়। এছাড়াও এথিক্স অভ অ্যামবিগুইটি বইটির কথাও না বললে নয়।
তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি,
‘বিয়ে ব্যাপারটা অভিশাপে পরিণত হয় যখন ব্যক্তিমাত্র নিজেদের শক্তিশালী দিকের পরিবর্তে দুর্বলতার দিকে ঝুঁকে পড়ে, আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে কেবল নিতেই শুধু পছন্দ করে।’
সিমনের মতো হান্নাহ অ্যারেন্দৎ (১৯০৬-১৯৭৫) নিজেকে দার্শনিক মনে করতেন না। যদিও ইতিহাস তাকে চিনে দার্শনিক হিসেবেই। জার্মান এই দার্শনিক নিউ ইয়র্কেই মূলত থাকতেন। এবং এখানেই তিনি লিখেন অরিজিনস অভ টোটালাটারিইয়ানিজম যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন একনায়কতান্ত্রিক সরকার কীভাবে এবং কেন ক্ষমতায় আসে। একইরকম তাঁর এইখম্যান ইন জেরুসালেমে তিনি আলোচনা করেন কীভাবে সাধারণ মানুষ অনুকূল পরিস্থিতিতেও খারাপ কাজ বা শয়তানী করে। তিনি মূলত ফ্রেঞ্চ বিপ্লব এবং আমেরিকান সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি নিয়েই বেশিরভাগ তত্ত্ব দিয়েছেন। এমনকী তিনি তথাকথিত মানবাধিকারের যেসব ধারণা সেসবকেও তীক্ষ্ন সমালোচনা করতেন।
ফিলিপিয়া ফুট (১৯২০-২০১০) এবং জি ই এম আন্সকম্ব (১৯১৯-২০০১) দুজনেই ব্রিটিশ দার্শনিক এবং দুজনেই একসাথে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। দুজনেরই মূল কাজের ক্ষেত্র ছিল নীতিবিদ্যা। আন্সকম্ব তাঁর বিখ্যাত বই ইনটেনশনে বিভিন্ন প্রবন্ধে দেখান মানুষের নৈতিকতা এবং ইচ্ছা কীভাবে পরিস্থিতিভেদে বদলায়। তবে দর্শনজগতে তাঁর যে বইটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তা হলো মডার্ন মুর্যাল ফিলজফি যেখানে তিনি আধুনিক নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেছেন।
উত্তর আধুনিক আরেক বিখ্যাত দার্শনিক এবং সাইকোএনালাইস্ট হলেন অ্যান দ্যুফোখমন্তেল (১৯৬৪-২০১৭) যার জন্ম ফ্রান্সে। তাঁর দার্শনিক কাজগুলো মানুষের ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা নিয়ে যেখানে তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষ ঝুঁকি তখন নেয় যখন সে নিশ্চিত থাকে ঝুঁকির বিষয়ে যা আবার নিজের অস্তিত্বের সাথেও জড়িত।
ক্যারল গিলিগান (জন্ম ১৯৩৬)কেয়ার এথিক্স নামে নতুন এক ধারার সূচনা করেন। তিনি মূলত নৈতিকতা এবং নীতির বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন। ক্যাথরিন জিনস (জন্ম ১৯৭৮) মূলত আফ্রিকানা ফিলজফি, ব্ল্যাক ফেমিনিজম নিয়ে কাজ করেন। ক্যাথরিন বর্তমানে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ান।
কৃতজ্ঞতা: আজাদী