| 20 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

দেবপ্রসাদ তালুকদারের একগুচ্ছ অসমিয়া কবিতার বাংলা অনুবাদ 

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

এক সময় অসমের নাম ‘কামরূপ’ ছিল। আরও প্রচীনকালে কামরূপ ছিল ‘প্রাগজ্যোতিষ’ নামে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্য দ্বারা অসম বেষ্টিত এবং অসম সহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সংকীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অসমের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য অসম বিখ্যাত। অসমিয়াদের প্রধান উৎসব হলো বিহু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অসমিয়ারা বিহু পালন করে। বিহু তিনটি- ব’হাগ (রঙালি) বিহু, মাঘ (ভোগালী) বিহু আর কাতি (কঙালি) বিহু। অসমীয়া সাহিত্য অন্য সমস্ত ভাষার মতো অসংখ্য উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এবং অন্য অন্য বিষয়ক গ্রন্থে পূর্ণ। অসমীয়া সাহিত্য ভাষাটির বর্তমানের সাহিত্য সম্ভার ছাড়াও এর ক্রমবিবর্তনের সময়ে সৃষ্টি হওয়া পুরানো অসংখ্য সাহিত্যের সম্ভারে পরিপূর্ণ, যে ধারার আরম্ভ ৯ম-১০ম শতকের চর্যাপদ থেকে আরম্ভ হয়েছিল বলে ধরা হয়। অজিৎ বরুয়া, অনন্ত কন্দলী,অনিরুদ্ধ কায়স্থ, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, আনন্দরাম বরুয়া , ইমরান শাহ, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য, জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা, ভোলানাথ দাস, মফিজুদ্দিন আহমদ হাজারিকা, মহেন্দ্র বরা, মাধবদেব, রবীন্দ্র সরকার, রমাকান্ত চৌধুরী, বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা, স্নেহ দেবী, হরিবর বিপ্র, হীরেন ভট্টাচার্য সহ আরো অনেক অসমীয়া ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি আছেন। এই সময়ে অসমীয়াতে কি রকম কবিতা লেখা হচ্ছে কারা লিখছেন, এই সময়ের কবি দেবপ্রসাদ তালুকদারের কবিতা নিয়ে আজকের আয়োজন। ইরাবতীর পাঠকদের জন্য মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন অনুবাদক বাসুদেব দাস


Debprashad talukder, irabotee.com

অসমের বিশ্বনাথ চারালিতে ১৯৬০ সনে কবি দেবপ্রসাদ তালুকদারের জন্ম হয়।কবিতা সংকলন গুলি যথাক্রমে ‘শব্দর জোনাকত’, ‘খুলি দিলো আন এখন খিরিকি’, ‘কারোতো অহার কথা নাই এই বাটে’, ‘অলপ পিছতে এরা এরি হম’,জুনুকা ইত্যাদি।দেবপ্রসাদের কবিতার একটি ইংরেজিতে অনূদিত সংকলনও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।


 

 

 

আমি হাসছি

 

 চূড়ান্ত অবহেলার পরেও আমি হাসছি

 যেভাবে চিত্রকর ভাবার মতো  এ়ঁকে রাখে

একটি মেয়ের মুখ, হেসে থাকা অবস্থায়

 

আমাকে হেসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে 

মা-বাবা যেভাবে হাসতে শিখিয়েছিল 

ঠিক সেভাবে নয় 

 

এই সমাজের একজন হয়ে বেঁচে থাকতে হলে

কথাগুলি, তাদের মতো হেসে হেসে 

অনুসরণ করতে হবে

 

 ভালোলাগা কোথায় ,যন্ত্রণা কোথায় ,সুখ কোথায়

দুঃখ কোথায় ,এই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রিত হবে 

তারা চাওয়ার মতো করে 

 

যে সমস্ত কারণে সত্যি জীবনের সমাজটা 

পঙ্গু হতে চলেছে ,এইসব 

তারা বোঝানো ধরনে বুঝতে হবে

 

প্রতিদিন দেখতে থাকা সূর্যটা, চাঁদটা 

এই আকাশ 

এই বাতাস

 আমার অনুভূতি দিয়ে অনুভব করলে চলবে না

মানুষটা মরল

ঘরগুলি জ্বলল

আমার চোখের সামনে, কীভাবে মরল

কীভাবে জ্বলল

 তারা দেখানো মতে দেখবে 

লাগবে ,বুঝতে লাগবে 

শিখতে হবে, এগিয়ে

যেতে হবে,সাজাতে হবে 

সাজতে হবে,

আর ও  যে কোথায় কত কিছুই  নালাগবে।

 

 

 

 

কাহিনি

 

কাহিনি একটা বলব বলে, তিনি

একটা স্বপ্নের মায়াজালে আবদ্ধ হলেন

 

স্বপ্নের বীজ ভেতরে অঙ্কুরিত হয়

ভেতরে ভেতরে

আর নিজের অজান্তে

কখনও জীবন্ত হয়ে উঠে

 বলতে চাওয়া কাহিনিটা

 

 ছুঁয়ে যাওয়া কাহিনি একটা

আমার স্মৃতিতে সজীব হয়ে থাকে

 

স্বপ্ন স্মরণ করায় স্মৃতি

স্বপ্নের হাত ধরে সামনের দিকে তাকাই

 

কাহিনি একটা শোনার, আগ্রহ যত

কাহিনিটার চরিত্রগুলিতে

নিজেকে খুঁজে দেখার আগ্রহও কম নয়।

 

দুঃখের কাহিনি শিরায় শিরায় প্রবেশ করে

আমাকে ধুয়ে পরিষ্কার করে ,আর

হৃদয়ের কন্দরে মায়ার ঘর সাজায়

 

ভালো কাহিনি যে বলে

আমরা নিজের অজান্তেই তাকে মনে রাখি

সে হয়তো কাহিনিটার চরিত্রের সঙ্গে

তিলমাত্র জড়িত থাকে না

কাহিনি একটা বলব বলে, তিনি

 কীভাবে স্বপ্ন একটার আবেষ্টনীর 

মধ্যে ঢুকে পড়ল।

 

 

 

বয়স

 

হিসাবের খাতা খুলে, জীবন বৃত্ত 

আউরে  থাকার প্রয়োজনই বা কোথায়

কত প্রয়োজন বন্ধুত্বের 

আসা যাওয়া সীমানায় মুখোমুখি সাহসের

 

 দাগ কেটে যত্নে রাখার প্রয়াস সামলে

 ভুলে যাওয়া, জন্ম তারিখ ,সন 

 

ঋতু গুলি আসবে আলগোছে, জড়িয়ে ধরবে

 আনন্দ ফুর্তি করে দিনগুলি কাটাবে

 

কর গুনে গুনে হিসেব করলে, বয়স

 নিজের অজান্তে তুমি ভারাক্রান্ত হবে 

এই হিসেব বার্ধক্য ডেকে আনবে 

সময়ের সীরলুতে ফুল ফোটা পথে 

মনগুলি গড়বে

নষ্ট না হওয়া গলে না যাওয়া কথার পথরোধ করে 

সুরেলা কন্ঠের উঠোনটা  আদর করবে

কত বিশ্বাসে শিকড় গুলি লালন করলে

যুক্তির দুর্গ সেজে যুদ্ধজয় করার আনন্দের চেয়ে

মন জয় করার আনন্দ লাভ কর

 

কত বসন্ত অতিক্রম করলে

তার হিসেব না নিয়ে

কীভাবে আদর করলে তার কথা ভাব।

 

 

 

 

প্রেমের কবিতা

কত কাছে বা রয়েছেন আপনি 

আমিই বা কত কাছে রয়েছি  আপনার 

আপনি ভাবা মতে আছি কি 

আপনার কাছে 

সেভাবে আপনি 

শেষ রাতের আঁচলের আড়ালে সকালবেলাটা

যেভাবে অপেক্ষা করে থাকে 

সেভাবে যাই যাই করা বিকেলটার কাছে 

অপেক্ষা করে থাকে গোধূলি

 ছুঁয়ে দেখতে পারে কি নদীর এই পার 

অন্য পারকে 

‌যদিও আদি থেকে দুটি পার

জড়িয়ে থাকে স্রোতের ধার গভীরে

কে মাপতে পারে প্রেম আছে

কার অন্তরে কত

সাগর দেখেছে কি

কত নীলা ঢেকে  আছে তার বুক

দূরে থাকলেও সূর্য 

ছাড়তে পারে কি পৃথিবীকে

আকাশের কালো মেঘ বৃষ্টি হয়ে 

চুম্বন করে থাকে না কি 

গাছ লতা ঘাস 

আপনার প্রতিটি কথাই

 ছুঁয়ে থাকে আমার আকাশ বাতাস 

প্রতিটি পরতে

 যদিও আপনি কাছে নেই ।

 

 

 

কবিতা

খুলে দিলাম অন্য একটি জানালা

সেই সেদিনের বকুলের ফুরফুরে গন্ধটা

অকস্মাৎ নাকে এসে লাগে বলে মনে হয়

 

কোথা থেকে বনগীতের একটি সুর

আসব আসব না করে এসে ছুঁয়ে যায় আমাকে

নগরটা গ্রামকে অনুসরণ করা

রাজপথের বাঁকে

আজও তোমার সঙ্গে দেখা হয় বলে মনে হয়

 

নিথর একটি দুপুরবেলা

আমার কাছে হাত গুটিয়ে বসে আছে

তোমার প্রতীক্ষায়

 

পদুলিমুখে

ঝরা পাতা কিছু বলতে চাইছে

ঘাসগুলিকে ।

 

টীকা-

সীরলু-লাঙল খনন করা লোহা।

পদুলি-মানুষের বাড়িতে প্রবেশ করা পথের সামনের ভাগ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত