ইরাবতী,ইরাবতী.কম,বিতস্তা ঘোষাল,irabotee.com,bitasta ghoshal,copy righted by irabotee.com

দিল্লির ডায়েরি (পর্ব-৪)

Reading Time: 2 minutes

আমি যে জায়গায় থাকি সেটার নাম কোটলা মুবারক পুর।থানা থেকে দুপা এগিয়েই ।এই অঞ্চলটা দক্ষিণ দিল্লির এক্সটেনশন । রাস্তার একদিকে অভিজাত ডিফেন্স কলোনি অন্যদিকে এই ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।এদিকের বাড়িগুলো দেখলে মনে হয় উওর কলকাতার পুরনো বাড়ির মতো।পরপর কোনো ফাঁক না দিয়ে একটার গায়ে আরেকটা বাড়ি। এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে অবলীলায় চলে যাওয়া যায় ।কত যুগ ধরে এমন ভাবেই এগুলো দাঁড়িয়ে আছে।কত ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে কে জানে! হয়তো একসময় এই পারস্পরিক লেগে থাকা বাড়িগুলোর মালিক একজনই ছিলেন ।যৌথ পরিবার ছিল তখন।তারপর কালের স্রোতে ভাঙতে ভাঙতে নিউক্লিয়ার পরিবারের ধাক্কায় বাড়ির মালিকানাগুলো এক থেকে অনেকের হয়ে গেছে ।
বাড়িগুলোর মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে।ঘরগুলো বিশাল, সিলিং প্রায় দোতলা ফ্ল্যাটের সমান।আর প্রতিটি জানলা দরজার মাথায় রোদ যাতে ঘরে ঢুকতে পারে সেভাবে বেলজিয়াম কাচ লাগানো ।
আমাদের এই নতুন বাড়ির মালিক সুমন ভাবী।অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে শাশুড়ি ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার সংসার ।ছেলে অবশ্য বিদেশে থাকে ।বাড়ির নিচে অনেকগুলো টেলারিং এর দোকান, প্রথম তলায় একজন, দ্বিতীয় তলাটায় ভাবী। সংসার,অর্থনৈতিক চাপ, একা হাতে জেরবার ভাবী সনাতনকে পেয়ে যেন কিছুটা সাহস পেলেন তার প্রাত্যহিক লড়াইয়ে।
তৃতীয় তলাটা পুরোটাই আমাদের ।৩ টে বেডরুম, কিচেন, বাথরুম। ছাদটাও ব্যবহার করতে পারি।ছাদেও বেশ কয়েকজন ভাড়াটে থাকেন।তারা সবাই একা।আর থাকে দর্শনা , ও তার দুই ছেলেমেয়ে আস্থা ও অভি।আস্থা ভোরাইয়ের বয়সী ।এক ক্লাস ।ফলে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
ভাবীর দেখাশোনার পাশাপাশি দর্শনা আমাদের রান্না, বাসনমাজা , ঘর মোচা সবই করে।অবশ্য আমি তো আসি হাতে গোনা কদিনের জন্য।সে কদিন ভাবীও আলু পরোটা, পনির, মুলো, মেথি, যখন যেমন পারেন তাই দিয়ে পরোটা বানিয়ে দেন।
ভাবীর সঙ্গে সুখ দুঃখের কথা হয়। বেশী কথা উনিই বলেন, আমি শুনি।
তুমি কখন অফিস যাও?
আমি বলি ১১ টা।
উনি বলেন, নাস্তা কে বানায়? মেড আছে নিশ্চয়ই।
আমি বলি, না, নিজেই বানাই।
উনি অবাক হয়ে বলেন, তুমি, দেখে তো মনে হয় না ঘর গোছানো বাদে তুমি কোন কাজ পারো!
আমি হাসি ।আসলে এখানে এলেই আমি তিনটে ঘর সুন্দর করে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি ।সনাতন একা ব্যাচেলর লাইফ কাটায় এখানে ।চূড়ান্ত অগোছালো ও নোংরা থাকে তার ঘর।আমি আবার উল্টো ।ফলে যখন আসি পরিস্কার করতেই সময় চলে যায় ।
দর্শনা রান্না করে দেয় ভেন্ডি ভাজা, আলু ভাজা , ডাল আর ভাত ।কিংবা ডিমের কারি।খাওয়া নিয়ে ঝামেলা না থাকায় তাই রোজ খেয়ে নিই।ভাবী ভাবে, রাঁধতে পারি না।
ভাবী জানতে চান, তোমাদের ওখানে মেডের রেট কত?
উত্তর শুনে বলেন, তিনজনের জন্য এতগুলো টাকা বাইরে দাও কেন? নিজে করে নিতে পারো না?
আমি উত্তর দিই না।ভাবীর কথা শুরু হয় মেড নিয়ে, শেষ ও মেডেই।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভাবী খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে ।তারপর বলে, চা খাবে?
ভাবী এই কয়েক বছরে জেনে গেছে এই মেয়ে কেবল চা খায়।
প্রথম প্রথম বলতেন, শাড়ি কেন পরো না? এখন আর বলে না।তবে মাছ, মাংস খাই না, তাই রান্না হয় না বলে ভাবী ভারি খুশি । সুযোগ পেলেই বোঝান, নিরামিষ খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো ।ভাবী পাঞ্জাবী হয়েও কেন নিরামিষ খান তা বুঝতে পারি না।
অথচ স্বভাবে, তাগড়াই চেহারা, দুধে আলতা গায়ের রং এ ভাবী একেবারেই পাঞ্জাবী। মিনিমাম ছ ফুট লম্বা তো হবেই ।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে।
যাহোক কলকাতা বাদে যে শহরটা আমাকে ভীষণ টানে তা হল দিল্লি।আর দিল্লি মানেই আমাদের এই বাড়ি, যা আমাকে অদ্ভুত এক শান্তি দেয় ।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>