ইরাবতী,ইরাবতী.কম,বিতস্তা ঘোষাল,irabotee.com,bitasta ghoshal,copy righted by irabotee.com

দিল্লির ডায়েরি (পর্ব-৬)

Reading Time: 2 minutes

দিল্লির কথায় আবার ফিরে আসব। আপাতত চলেছি হরিদ্বার। দুদিকের কোথাও সবুজ, কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত আখের ক্ষেত, আবার কোথাও বা শু়ধুই রূক্ষ মাঠ একা পড়ে। ডিভাইডার ভরে আছে নাম না জানা হলুদ গোলাপি ফুলে। ইচ্ছে করছে নেমে ওগুলোকে ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু হাইরোডে হঠাৎ গাড়ি থামাতে রাজি নয় আমাদের ড্রাইভার পবন ভাইয়া।
পবনের আসল বাড়ি বিহারের দেওঘর থেকে ৫০ কিমি দূরে। সেখানে তার পুরো পরিবার। এখানে সে একা বৌকে নিয়ে থাকে। একমাত্র মেয়ে মেডিক্যাল ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। আসামে থাকে মামার কাছে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। পবন ২২ বছর হল করলবাগে আছে। মোঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবের উপর তার দারুণ রাগ। ভারতের যা কিছু মন্দির সবই নাকি সে একাই ধ্বংস করেছে। আর আকবরের থেকে ভালো শাষক ভারতে জন্মায়নি।
আমি আর তাকে বলিনি সেই ১২০০ শতাব্দী থেকেই বৈদেশিক নানা শক্তি ভারত আক্রমণ করেছে ও মন্দির ভেঙেছে। সে মহম্মদ ঘুরি বা তৈমুর লং বা আর যেই হোক। কারণ মন্দির ভেঙে যেমন হিন্দুদের ধর্মে আঘাত দেওয়া যেত তেমনি প্রচুর সোনা দানা দিয়ে সজ্জিত ঠাকুর ও অন্দর সজ্জা লুঠ করা যেত।দ্বিতীয় কারণ টাই অনেক সময় মূখ্য ছিল। সে তুলনায় মোঘলরা যেহেতু এ দেশ শাসন করতে এসেছিল মন্দির তারা অপেক্ষাকৃত কম ভেঙেছে।
এ হেন পবন ভাইয়া আমরা বাঙালি শুনে খুব খুশি।কারণ তার বড় ভাবী এমনকি চাচী সহ আরও সবাই বাঙালি। আকাশি রঙের সাফারি পরে সে সকালে হাজির।

আমাদের এই হরিদ্বার সফর একেবারেই হঠাৎ করেই ঠিক হল দিল্লি আসার পর। হোটেল পাওয়া দুষ্কর এই সময় ।কিন্তু সনাতনের কল্যানে এসব নিয়ে আমাকে ভাবতে হয় না।এবারও শুধু জানতে চাইলাম কবে কখন বেরোতে হবে। সে বলল, বেরিয়ে পড়লেই হল।আমি রেডি হয়ে নিলাম। ভোরাই আমাদের দুজনের এই চটজলদি সিদ্ধান্তে খানিক অসন্তুষ্ট হয়।কিন্তু সে জানে তার মা বাবা এমনই পাগল। ফলে রেডি হয়ে নিল। এই নিয়ে তিনবার যাচ্ছি হরিদ্বার। প্রথম যখন এসেছিলাম ভোরাই তখন ১বছর ন মাস। বাসে করে শীতের রাতের সেই জার্নি আজও মনের মনিকোঠায় জ্বলজ্বল করছে।সারা রাস্তা পেছনের সিটে বসতে খুব কষ্ট অতটুকু বাচ্চা নিয়ে। কিন্তু ভোরাই এর কোনো ক্লান্তি বা কান্না নেই।পুরো পথটাই প্রায় সে কাটিয়ে দিল অন্য যাত্রীদের কোলে ঘুরে। একটা ধাবায় দাঁড়িয়ে ছিল বাস। রুমালি রুটি আর তরকার স্বাদ এখনো মুখে লেগে। পরের বার এসেছিলাম দিল্লি থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেসে।মনে আছে আমি ভোরাইকে আর ল্যাগেজ নিয়ে উঠে পড়েছি ট্রেনে, সনাতন ওঠার আগেই ছেড়ে দিল ট্রেন। ভোরাই বাবা বাবা বলে কাঁদছে, আমি নেমে যাব কিনা ভাবছি। নামবই বা কিভাবে? এসব ভাবনার মাঝেই দেখলাম লোকেদের ধাক্কায় ভেতরে ঢুকে গেছি। রিসার্ভেসন করা কামরায় যে এত ভিড় হতে পারে কল্পনার বাইরে ছিল। যাহোক মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেদের সিট খুঁজে ভোরাইকে বসালাম। ল্যাগেজগুলো উদ্ধার করলাম এক এক করে। তারা এতক্ষণ বেওয়ারিস হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এখন যেন মালিকের স্পর্শে সেগুলো প্রাণ ফিরে পেল। কিন্তু মনের মধ্যে সনাতনকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। সে বেচারা উঠেছে কিনা কে জানে! যদি না ওঠে কী করব, এসব ভাবতে ভাবতে দেখি ভোরাই বাবা বাবা করে কোল থেকে নেমে যাবার চেষ্টা করছে। ওর চোখ অনুসরণ করে দেখি তিনি আসছেন। ভিড়েতে উঠতে পারেনি।পেছনের দিকের এক কম্পার্টমেন্টে উঠে গেছিল।এখন ভেস্টিউলের মধ্যে দিয়ে নিজের কক্ষে ফিরে আসছে। সেই দুবারে চষে ফেলেছিলাম হরিদ্বার ও তার আশপাশ সর্বত্র। আর প্রচুর সোয়েটার, চাদর কিনেছিলাম সকলের জন্য। তারপর কেটে গেল এতগুলো বছর। আবার চলেছি সেই হরিদ্বারের পথে।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>