Categories
গোয়েন্দা গল্প: দুর্দান্ত গোয়েন্দাকাহিনী । আশাপূর্ণা দেবী
আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট
তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে দারুণ অন্ধকার ঘুটঘুট করছে, গোবর্ধন পোদ্দার লোডশেডিং-এর আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন। নিচে একটি শুটকী মাছের দোকান। সেখান থেকে দারুণ উকট একটা উগ্র গন্ধ বেরিয়ে কাঠের দোতলা পর্যন্ত আমোদিত করছে। কারা যেন গোপন পদক্ষেপে দিনরাত ঘোরা-ফেরা করছে। নিশ্চয়ই ওরা নেংটি এবং ধেড়ে ইঁদুর। উট যে নেই ঘরে এমন কথা বলা যায় না। তবে ইঁদুরের ব্যবহারের সঙ্গে কার তুলনা?
গোবর্ধনবাবু বা হাতের করাতের মত আঙ্গুল দিয়ে খুচ খুচ করে দাদ চুলকোলেন। একবার নিজের নখগুলোর দিকে তাকালেন। পুলিশের চোখে যদি তার এই হাত দুখানা দেখান হতো তবে নির্ঘাত তিনি অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার হতেন। কিন্তু না, পুলিশ তার হাত দেখবার সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত। গোবর্ধনবাবু নিজের ভুঁড়ি এবং গোঁফ নিয়েও একটু বিব্রত হলেন। অন্ধকার নামলেই ভুড়ির ওপর মশার দল দারজিলিং-এর পাহাড়ে চড়বার মত করে চড়ে বসে। এত বড় পেটটার ওপর কোথায় যে কে বসে তার হিসেব রাখাও শক্ত। তার দোকানের কর্মচারী ভোজুয়া বলে, তার গোঁফে নাকি উকুনে বাসা করবে। তা এত জায়গা থাকতে তার গোঁফের ওপর সবার নজর কেন? না! আবার সেই খুট খুট শব্দ। উই আর ইঁদুরের দুর্ব্যবহারের কথা মনে করতেই তার মন বেদনায় ভরে গেল। উই আর ইঁদুর যদি খারাপ না হবে তবে কেন কবিরা বলবেন “উই আর ইঁদুরের দেখ ব্যবহার, যাহা পায় তাই কেটে করে ছারখার।”
গোবর্ধনবাবু বাইরে বেরিয়ে এলেন। দোতলা কাঠের বাড়ী। যেমন নড়বড়ে তেমনি হালকা, মনে হয় একটু ঝড়ের হাওয়া লাগলেই একেবারে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।
কিন্তু পড়েনি এখনো। গোবর্ধনবাবুদের তিন পুরুষের শুটকী মাছের ব্যবসা এই এখানে এই বাড়ীতেই।
অনেকদিন থাকতে বাড়ীটার ওপর কেমন যেন মায়া বসে গেছে গোবর্ধনবাবুর। ইঁদুর ঊই আর চোরের উৎপাতে মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ভাবেন চলেই যাব। এই পুরানো ঝরঝরে বাড়ী আর শুটকী মাছের ব্যবসাও ছেড়ে দেব। এ বাজে মাছের ব্যবসার চেয়ে ঝোলাগুড়ের ব্যবসাও ভাল। কিন্তু কার্যকালে আর ছাড়া হয় না। কেমন যেন বাধ বাধ লাগে তিন পুরুষের ব্যবসা ছাড়তে, ছাড়বো বললেই কি ছাড়া এত সহজ?
খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন গোবর্ধন। অন্ধকার নেমে এসেছে। রাস্তা-ঘাটে লোক ঘরমুখো ছুটছে। বাদুড় আর চামচিকে দারুন ব্যস্ত হয়ে কোথায় যেন রওনা দিল। কতগুলো চামচিকে ঘুরে ঘুরে শুটকী মাছের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে গোল হয়ে ঘুরতে লাগলো।
গোবর্ধন চামচিকাকে খুব ভয় করেন, কে যেন তাকে বলেছিল চামচিকের ইংরিজি “ব্যাটলেট” – মানে ছোট বাদুড়। ওরা নাক কামড়ে নেয়। তাই ছুটে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলেন। তারপর শুটকী মাছের স্টক করা বাকসের ওপর লাল খাতা আর সুতোয় বাধা পেনসিলটা দিয়ে হিসেব লিখতে বসলেন।
ছত্রিশ টাকা ছাপ্পান্ন পয়সার হিসেব আর কিছুতেই মিলছে না। মিলবে কী? যতবার হিসেব শুরু করেন ততবার মাথার ওপর দিয়ে গোল হয়ে ঘুরতে থাকে সেই হতচ্ছাড়া চামচিকেটা।
কিছুতেই আর হিসেবটা আজ মিলবে না। গোবর্ধন সটান বাক্স-কাম-খাটের ওপর লম্বা হয়ে পা ছড়িয়ে দিলেন। কিন্তু তাতেও বিপদ— মশা। তারা গান করে ওঁকে ঘিরে ধরলো যেন ওরা সমবেত সঙ্গীত ঘুরে ঘুরে গাইছেঃ “মাধবী হঠাৎ কোথাও হতে এলে ফাগুন দিনের স্রোতে।”
না! শিবু খাবারটা দিয়ে গেলেও তো পারে। খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়বেন, কিন্তু সে তো দশটার আগে কিছুতেই খাবার দেবে না। দেবে তো ছাই পঁয়ত্রিশখানা রুটি, খানিকটা ছোলার ডাল আর একটা ঘ্যাট, গোবর্ধন হাঁক দিলেনঃ
ওরে শিবু আজ একটু তাড়াতাড়ি খাবার দিবি।
নীচের থেকে শিবুও হাঁক দিলোঃ আচ্ছা— আচ্ছা। আজ রান্না তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।
গোবর্ধন এপাশ ওপাশ করতে করতে একটু ঘুমিয়ে গিয়েছেন। শিবু কখন খাবার দিয়ে বলে গেছে,বাবু খাবার রইলো।
গোবর্ধন ঘুমের চোখে উঠে খাবার খেতে গিয়ে একটা ধেড়ে ইঁদুরকে চেপে ধরলেন ঘাটের বাটিতে। গোবর্ধনের অবর্তমানে সে খানিকটা ঘাট খেয়ে কমিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু গোবর্ধন বাদ সাধলেন।
ঘন্টাখানেক ধরে বেশ তরিবৎ করে খাওয়া শেষ করে গোবর্ধন একটা পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুললেন। তারপর একটা খালি র্যাগ গায়ে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।
খাওয়ার পর আজ গোবর্ধনের মনটা খুবই ভাল হয়ে গেছে কারণ আজ সনাতন ঠাকুর ঘাটটা খুব ভালই বেঁধেছে— তাই খাওয়ার পর খুব খোস মেজাজে বিছানায় শুয়েই ঘোরতর বেগে নাক ডাকতে লাগলেন তিনি।
রাত গভীর হতে লাগলো। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগলো, শুটকী মাছের বস্তার ওপর দিয়ে বেঁড়ে নেংটি নানা মাপের ইঁদুর ঘোরাফেরা শুরু করে দিল।
গোবর্ধনের নাক কখনও মিহি—কখনও মোটা সুরে ডাকতে লাগলো।
হঠাৎ মনে হলো গোবর্ধনের কাঠের জানালার মধ্যে দিয়ে কে বা কারা হুড়মুড় করে চটে জড়ানো একটা কিছু যেন অন্ধকারের মধ্যে দুম করে ওর মেঝেয় ফেলে দিয়ে যেমন তড়িঘড়ি এসেছিল তেমনি তীর বেগে নেমে চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল, তোমার ছোট কাকীর মরদেহ অনেকদূর থেকে বয়ে নিয়ে এলাম। তিনি আজই সকালে বাগুইহাটি নামে এক ঘোরতর জঙ্গলের মধ্যে খুন হয়েছেন।
অ্যাঃ! গোবর্ধন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন— যেন তিনি হরিপদ ময়রার দোকানে গিয়ে বসেছেন। বহুদিন পর আবার তাঁদের দুজনের দেখা। হরিপদ ময়রা তাকে দেখেই ভুঁড়ি নাচিয়ে নাচিয়ে অনেকক্ষণ হাসলেন তারপর বললেনঃ কতদিন পর এলেন। বাড়ীর সবাই ভালো তো?
-হা, সবাই ভাল আছে। গোবর্ধন তার বত্রিশটি হলদে হলদে দাঁত বের করে হাসলেন।
-তারপর কী খাবেন? লবঙ্গলতিকা না ছানার পায়েস না মিহিদানা? যা আপনার ইচ্ছে।
মনে মনে গোবর্ধন বললেনঃ ইচ্ছের কথা যদি বলেন তবে তো সবই খেতে ইচ্ছে করে, আবার ওখানে কী ক্ষীরমোহন— ওটা আমার খুব প্রিয়-লোভী বেড়ালের মত ঠোট চাটতে লাগলেন গোবর্ধন।
-এই যে দাদা–ঠোট চাটছেন কী, মরা কাকীমা রইলো মেঝের ওপর। আমরা চল্লাম– বিদায়—বলতে না বলতে লোকগুলো ঝুপঝুপ করে জানালা দিয়ে নেমে পড়লো অন্ধকারের মধ্যে তারপর কোথায় হাওয়ায় মিশে গেল।
-অ্যা! এ সব কী শুনছি। বলে চোখ কচলাতে লাগলেন গোবর্ধন। নিজের চোখকে যেন তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সত্যিই কি ওরা মেঝের ওপর কাকীমার মৃতদেহ ফেলে দিয়ে চলে গেল নাকি? ওরা সব পারে। যেমন ষন্ডা মার্কা লোকগুলো, ওদের অসাধ্য কী আছে?
বিছানার ওপর বসে ভয়ের চোটে পৈতে দিয়ে পিঠ চুলকোতে চুলকোতে পটাস করে পৈতেটা ছিড়ে গেল গোবর্ধনের কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটা এমন ভয়াবহ যে গোবর্ধন থর থর করে কাঁপতে লাগলেন। বিছানা থেকে নেমে এসে দেখতে সাহস পেলেন না যে সত্যই ওরা কি দিয়ে গেল।
বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে কাটলো। ঘরের মধ্যে একটা ফরসা ধবধবে সাহেব আরশোলা প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তে গোবর্ধনের পিঠে এসে পড়লো।
গোবর্ধন চীৎকার করতে লাগলেন- বিচ্ছ বিচছু তাড়াতাড়ি আয় দেখ ঘরের মধ্যে কি?
বাড়ীর নিচের তলার হোটেলের বয়- গোবর্ধনের ডাক শুনে সে প্রথম ঠিক করলোঃ উঠবো না। ও আলুর বস্তা রোজ রাতে জ্বালায়, হয় স্বপ্ন দেখে চেঁচায়, নয় ওকে বোবায় ধরে, নয় ধেড়ে ইঁদুর নাক কামড়ে দিচ্ছে। আমি উঠবো না, কিন্তু যখন একেবারে চীৎকারে শুরু করলেন গোবর্ধনঃ পুলিশ। পুলিশ-ইধার আও? তখন আর না এসে পারা গেল না কিছুতেই, ছুটে এসে হাতের টেমি তুলে ধরে ছেলেটা বলল, ও কী হয়েছে বাবু?
ওই দেখ মেঝের ওপর আমার ছোট কাকীমার লাশ। আমি পরিস্কার দেখলাম কতগুলো লোক জানালা দিয়ে ঢুকে এসে একটা চট জড়ান মড়া ধপাস করে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বললঃ এই নাও তোমার কাকীমার লাশ—-বাগুইহাটির জঙ্গলে কে বা কারা একে খুন করে ফেলে রেখে গেছে। আমি ধড়মড় করে উঠে দেখি চটে জড়ান একটা যেন কী মেঝের ওপর আছে। তুই আলো ধরে দেখ।
ছেলেটা চারদিকে খুব ভাল করে খুঁজে খুঁজে দেখে বললেঃ না তো, কিছু নেই।
-মানে?– গোবর্ধনবাবু হতবাক! এই তো দেখলাম এখানে পড়ে আছে। চট দিয়ে শক্ত করে জড়ান গোবর্ধনের মাথা যেন ঘুরতে লাগলো বাই-বাঁই করে। একটু আগেই তো তিনি বেশ মন দিয়ে রুটি তরকারী, পুদিনার চাটনটুকু বেশ তরিৎ করে চেটে চেটে খেয়ে দিব্যি খোস মেজাজে ঘুমোচ্ছিলেন, এক হাজার এনোফিলিস আর কিউলেকস্ মশার গানও তার শান্তি ভঙ্গ করতে পারেনি। আর ঠিক যখন একটা ভাল স্বপ্ন দেখবো দেখবো করছে ঠিক তখন গোটাকতক লোক ছুটে এসে তার ঘরের মেঝেয় চটে জড়ানো একটা মড়া ধপাস করে ফেলে দিয়ে জানালা দিয়ে গলে বেরিয়ে যাবার সময় বললেঃ বাগুইহাটির জঙ্গলে তোমার ছোট কাকীমাকে – কে বা কারা খুন করে বেমালুম চলে গেছে। এই নাও তার লাশটা।
আর এরই মধ্যে লাশ-টাশ সব বেমালুম ভ্যানিস, একি পি.সি সরকারের ম্যাজিক না কি? তার সঙ্গে ঠাট্টা মসকরা করতে শুরু করেছে লোকে?
ছেলেটা ঢুলু ঢুলু চোখ করে বললেঃ রাতে একটু বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছিল বোধ হয় তাই হয়তো আপনি স্বপ্ন-টপ্ন দেখেছেন।
-তুই আর গজদন্ত (হাতীর দাঁত) বের করিস না বলে দিলাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবো কেন? জেগে দেখলাম–লোকগুলোর সঙ্গে কথা বললাম। মেঝেতে চোখ রেখে চটে জড়ান মড়া দেখলাম। তুই খবর দে বরং, আমার ব্যাপারটা খুব ভাল লাগছে না।
পুলিশকে খবর আমি দিতে পারি কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে কিন্তু এসব লাশ-টাশের ব্যাপারে জড়াবেন না বলে দিলাম।
গোবর্ধন কাঁদ কাঁদ হয়ে বললেন- ও তোকে এসব ব্যাপারে জড়াব আমি কি তাই বলেছি? আস্ত মানুষটা নির্বিকার চিত্তে মরে গেল। আমি নিজের চোখে সব দেখলাম আর আমার চোখের সামনে একেবারে ভ্যানিশ? আমি পুলিশে খবর দেব না- বলিস কিরে? যদি শেষে কিছু-টিছু হয় তখন হ্যাপা সামলাবে কে? তুই থানায় যা-– এই টাকাটা নে। চলে যা—
-বিচ্ছু ছুটলো পুলিশের খোজে থানায়। আর গোবর্ধন নড়বড়ে তক্তপোষটার ওপর বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলেন।
আচ্ছা এতলোক থাকতে ছোট কাকীকেই বা লোকে খুন করলো কেন? তিনি তো কোন গোলমালেই নেই। খান-দান বাঁশী বাজান-পরমানন্দেই তো ছিলেন তার দমদমের বাড়ীতে। সঙ্গে থাকতো হাজারীলাল। সে তো বেশ তেলতাগড়া লোক ছিল আর অনেক দিনের পুরানো লোক। ধরতে গেলে তিন পুরুষ তাঁরা এ বাড়ীতে কাটিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট কাকীরও তো যে খুব ধন-সম্পত্তি আছে বা তিনি কোন গুপ্তধনের খোঁজ পেয়েছেন এমন তো মনে হয় না। তবে তাকে খুন করার কারণ কি? কিংবা অকারণ পুলকেই তাকে কে বা কারা মেরে বসলো? কিংবা হাজারীলাল ভেবেছিল ছোট কাকীর অনেক টাকা পয়সা লুকানো আছে তাই ওকে খুন করেছে টাকা পয়সা কব্জা করবার জন্যে।
ভাবতে ভাবতে গোবর্ধনের মাথাটা কেমন টিপটিপ করতে লাগলো। ঝাটা গোঁফের ভেতরে দারুণ কুট কুট করতে লাগলো যেন গোঁফে গুঁফো উকুনে বাসা বেঁধেছে।।
হঠাৎ ঘরের ভেতরে আলো দেখে একটা চামচিকে পাই পাই করে ঢুকে এসে ঘুরে ঘুরে যেন সার্কাস দেখাতে লাগলো। অন্য দিন হলে গোবর্ধন ছাতা নিয়ে এসে চামচিকেকে তাড়াতেন কিন্তু আজ তিনি ভয়ে ভয়ে ঘামতে ঘামতে যেন অস্থির হয়ে পড়লেন। যত গোলমাল তিনি এড়িয়ে চলতে চান ততই গোলমাল তাকে চেপে ধরে–যত সব ইয়ে—দরজায় ভারি জুতোর আওয়াজ হচ্ছে। পুলিশ আসছে নিশ্চয়ই। গোবর্ধন উঠে দাঁড়ালেন। হ্যা, ঠিকই পুলিশই আসছে। বেশ তেলতাগড়া এক পুলিশ আর শুটকে একজন দারোগা এসে হাজির হলেন। এ বাড়ীতে নাকি খুন হয়েছে? বাটার ফ্লাই গোঁফ চুমড়ে তিনি পিট পিট করে গোবর্ধনকে কথা ক’টা ছুঁড়ে দিলেন।
গোবর্ধন পুলিশের এক টোকায় যেন কেন্নর মত গোল হয়ে গেলেনঃ হ্যা স্যার, হয়েছিল বটে।।
-হয়েছিল বটে মানে? পুলিশের লোকের সঙ্গে চালাকি! বলুন সে লাশ কোথায়?
কাঁচুমাচু হয়ে গোবর্ধন বললেনঃ স্যার—-
-স্যার ট্যার ছাড়ুন। এখন কাজের কথা বলুন। ব্যাপারটা খুবই জটিল এবং সিরিয়াস্।
-মানে, আমি রাতের খাওয়া খেয়ে ওই বাক্সটার ওপর ঘুমাচ্ছিলাম, তখন মাঝরাত। চারদিকে অন্ধকার। কতগুলো লোক হুড়মুড় করে জানালা দিয়ে আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে মেঝের সামনে চটে জড়ানো একটা কী যেন আমার সামনে ফেলে দিয়ে বললঃ এই নাও তোমার ছোট কাকীর লাশ।
দারোগাবাবু হাতের ওপর ব্যাটানটা ঠুকতে লাগলেনঃ তারপর?
তারপর-গোবর্ধন ঢোক গিললেনঃ তারপর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম মেঝেতে পড়ে আছে কী একটা! আমি ভয়ে কাঁটা হয়ে খাটের ওপর বসে রইলাম।
-নিচের তলার ছেলেটাকে ডাকলেন কখন? পুলিশ সাহেব ভ্রুকুটি করলেন।
-তখনই স্যার তখনই। তখনই ডেকে আপনাদের খবর দেবার জন্যে ওকে পাঠালাম কিন্তু আশ্চর্য কে বা কারা ওই মড়াটা আবার তুলে নিয়ে পালিয়ে গেছে। বলেই গোবর্ধন ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেললেন।
-মড়াটা কি রসগোল্লা যে তুলে নিয়ে গেলেই হলো।
পুলিশ অফিসারের গোঁফজোড়া সূচের মত খাড়া হয়ে রইলো। মনে হলো তিনি রাগে হুলো বেড়ালের মত রোয়া ফুলিয়ে রয়েছেন। এবং বেশ খানিকক্ষণ এভাবে থাকবার পর তিনি কপালের ওপরকার ভুরু জোড়া নাচাতে লাগলেন। দেখে মনে হলো ভুরু জোড়া যেন আর এক জোড়া গোঁফের মত নাকটাকে ব্যালান্স করে রেখেছে কিন্তু আর হয়তো বেশীক্ষণ রাখতে পারবে না।
-মড়াটা কার?
-আমার ছোট কাকীর—ছোট কাকী আমাকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছে। খুব ভাল লোক। মাথায় একটা তরমুজের বোঁটার মত টিকিই হয়তো তাঁর এই নির্মম মৃত্যুর কারণ।
-মানে?—পুলিশ অফিসার এবার পকেট থেকে একটা ছোট খাতা বের করলেন। বলুন— বলুন—তাহলে এর মধ্যে রহস্য আছে। আপনি বলে যান আমি ব্যাপারটা নোট করছি।
-ছোট কাকী মানুষ হিসেবে তো খুবই ভাল কিন্তু ঝগড়ায় তার দক্ষতা অসাধারণ। তার ঝগড়ার খ্যাতি এতো বেশী এবং দিন দিন তাঁর ঝগড়ার দক্ষতা এত বেড়ে যেতে লাগলো যে তিনি ইদানিং কালে ঝগড়ার ভাড়া খাটতে লাগলেন। ধরুন আপনার আমার মধ্যে ঝগড়া বাঁধলো। আপনি যদি ছোট কাকীকে টাকা পনেরো দিয়ে ভাড়া করে এনে শুধু লেগে যান বলে লড়িয়ে দেন-তাহলে আর দেখতে হবে না। ছোট কাকী নিজস্ব প্রতিভায় ঝগড়া শুরু করে দিলেন। তারপর খাওয়া দাওয়ার সময়ে বা খুব হাঁপিয়ে গেলে খেলোয়াড়রা যেমন জল খাওয়ার বিরতি দেন তেমনি ঝগড়ার বিরতি ঘোষণা করে ঝগড়ার যাতে খেই না হারিয়ে যায় তাই ধামা চাপা দিয়ে ঝগড়াকে বন্ধ করে রেখে বেরিয়ে গেলেন। খাওয়া সেরে আবার ধারাবাহিক উপন্যাসের মত যেখান থেকে ঝগড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেইখান থেকে শুরু করে দিলেন। আজকাল ঝগড়ার গুরুত্ব হিসাবে কনশেসন রেটেও ঝগড়া করতেন। ঝগড়ার দক্ষতা তাঁর এতদূর পৌছেছিল যে বার দুই অলিম্পিকেও ডাক এসেছিল। কিন্তু ছোট কাকী টিকিতে গাঁদা ফুল বেঁধে বিজয়িনীর মত বলেছিলেন “না”। কিন্তু বিপদ ঘটালো টিকি নিয়ে।
-টিকি? কেন?
-কেন আবার জিজ্ঞেস করেছেন? বেল মাথা, তাতে এক লম্বাটিকি! একবার ট্রেনে হরিদ্বার যাচ্ছেন ছোট কাকী। ঠান্ডার মধ্যে কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন শীতের বাতাসে আমলকী ডালের মত টিকি দোল খাচ্ছে। এক ভদ্রমহিলা গাড়ীতে উঠে ওকে সমান ঠেলতে লাগলেন ছেলেদের গাড়ীতে যাবার জন্যে। শেষে ছোট কাকীকে দেখে তো অবাক! এ কেমন জানানা।
-কিন্তু এর সঙ্গে ওঁর মৃত্যুর যোগ কোথায়?
-কোথায় কি স্যার? সর্বত্র। হয়তো কোথায় ভাড়াটে লড়িয়ে হয়ে ঝগড়া করতে গিয়ে টিকি কাটা গেছে এবং সেই বেণীর সঙ্গে মাথার মত আততায়ী কোন উঠতি ঝগড়ুটের টিকি কাটতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ধ্বংস করবে বলে একেবারে মাথা কেটে বসে আছে।
-আপনি কি চেনেন কে বা কারা এ কাজ করছে? পুলিশ অফিসার উদাসীনভাবে জানতে চাইলেন।
এবার গোবর্ধন যেন একটু সাহস সঞ্চয় করেছেন মনে হলো। একটু মুচকি হেসে তিনি বললেনঃ আপনি তো আচ্ছা লোক মশায়? কেউ যখন খুন করে তখন কি লোকজনকে ডেকে সাক্ষী-সাবুদ রেখে-জনতার সামনে দাঁড়িয়ে সকলকে ডেকে বলেঃ ওগো মশায়রা, আপনারা কি শুনছেন আমি অমুক লোককে খুন করব? তারপর বেশ ধীরে সুস্থে হিন্দী সিনেমার নায়িকাকে খুন করার মত কুচ করে গলাটা কেটে দেবে আর সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ঝমঝমাঝম বাজনা বেজে উঠবে এবং সঙ্গে সঙ্গে কাটা গলার ভেতর দিয়ে তারস্বরে চীৎকার করে নায়িকা গান ধরবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নাচ। যারা এতক্ষণ খুন দেখেও না দেখার ভান করে জঙ্গলের মধ্যে কচু-গাছতলায় ইট পেতে বসেছিল তারা গলাকাটা নায়িকার গান এবং নাচ দেখে দলে দলে কচুগাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নাচের দলে যোগ দেবে।
-ঠাট্টা রাখুন। এতক্ষণ তো বেশ ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদছিলেন। এখন তো দেখছি বেশ সাহস হয়েছে। যাকগে-আপনার ছোট কাকীর টিকি কত ইঞ্চি লম্বা এবং তাতে ক’গাছা চুল ছিল? যদি তিনি টিকিতে ফুল বাধতেন তবে কী ফুল তিনি বেশী পছন্দ করতেন, মালসাভোগ পছন্দ করতেন না অন্যকিছু খাওয়া ভালবাসতেন? মুখের ভেতর ক’টা দাঁত ছিল এবং কটা বাঁধানো ছিল না। মালা জপের সময় সাধারণভাবে তিনি কী ভাবতেন এবং ঝগড়ায় ক’টি মেডেল পেয়েছিলেন এবং অলিম্পিকের ঝগড়ার ব্যাপারে ডাক পড়াতে এতবড় সম্মান প্রত্যাখ্যান করার মূলে কি মনোভাব কাজ করেছে—এই সব প্রশ্নের জবাব লিখে আমার কাছে সাতদিনের মধ্যে দিয়ে আসবেন। যদি আততায়ীর খবর পান তাকে বসতে বলে আমাকে খবর দেবেন। পুলিশ অফিসারের মুখে আত্মপ্রত্যয়ের হাসি। হঠাৎ যাবার বেলায় যেন পিছু ডাকলো গোবর্ধনের কাচ ভাঙা আলমারীতে থরে থরে সাজানো আচার। সুড়ুৎ করে মুখে জল টেনে পুলিশ অফিসার আলমারীর দিকে করুণ দৃষ্টি ফেলে বললেনঃ তবে যাই এখন!
-ছিঃ দাদা–যাই বলতে নেই। বলুন আসি!–গোবর্ধন গোঁফের মত ভুরু দুটো নাচিয়ে নাচিয়ে বললেনঃ কিন্তু পুলিশরা চলে গেলেও বিপদ কাটলো না। লোকে বলে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর পুলিশের ছুঁলে আটত্রিশ ঘা। গোবর্ধন দারুণ চিন্তায় পড়লেন। যিনি মারা গেছেন তার কটা দাঁত বাঁধান ছিল—বা মালা জপের সময় তিনি কী ভাবতেন এসব কথার সদুত্তর শুধু কাকীমার প্রেতাত্মাই দিতে পারে! গোবর্ধনের পক্ষে দেওয়া তো সম্ভব নয় কিছুতেই। কিন্তু কথায় বলে খুনের “কেস”– এখন এসব খবর না দিতে পারলে যদি তার আটটা আচারের বয়াম লোপাট হয়—আর যদি এসব লোপাট হয়েও ফাঁড়া না কাটে এবং পুলিশের যা কারবার যদি তাকেই খুনের মামলার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলে। না—– আর ভাবতে পারা গেল না,গোবর্ধনের মাথা ঘুরতে লাগলো। চোখের সামনে হাজার হাজার সর্ষে ফুলে ভরা ক্ষেত ভেসে উঠলো এবং তাতে ভুত তাড়াবার জন্যে যেন অজস্র সর্ষে ধরে আছে মনে হলো।
পুলিশের কারবারই তো আলাদা। তারা কি শুনবে যে ছোট কাকী তার নিজের কাকী নয়। তাকে গোবর্ধন কাকী বলে ডাকতো এইটাই মাত্র। আর তাঁর কাছে গোবর্ধন খুবই কৃতজ্ঞ ছিল কারণ তিনি আচার-সদাচার কদাচার ইত্যাদি বানাতেন এবং প্রভূত পরিমানে গোবর্ধনের সেবার জন্য সরবরাহ করতেন। তাই বলে ছোট কাকীর সবরকম খবর রাখতে হবে এর কী মানে আছে? আরে নিজের কাকী কী ভাবছে তাই বোঝাই দায় তার ওপর ছোট কাকীর চিন্তা। তার চিন্তার খেই রাখে কার সাধ্য? যখন তুমি ভাবছো ছোট কাকী তোমাকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবে নিশ্চয়ই তাঁর মুখখানা এই মুহূর্তে ঠিক ভালমন্দ বেঁধে খাওয়াবার মত হয়েছে—ঠিক তখনই দেখবে হাতে পুঁটলি – ছোট কাকী ঘাটের পথে চললেন ১৭/এ বাসে চেপে। সুতরাং ছোট কাকী সম্পর্কে কোন কথা ভাবা বা বলা কারুর পক্ষেই সম্ভব নয়। আর জীবিতকালেই যখন সম্ভব ছিল না- মরলে তো আরো অসম্ভব হয়ে গেছে।
গোবর্ধন আর ভাবতে পারলেন না। তাঁর চিন্তা করতে করতে যেন মাথায় টাক পড়বার উপক্রম হয়ে গেল।
পুলিশরা চলে গেছে সেই সকাল এগারটায়, এখনও পর্যন্ত তার চান খাওয়া তো দূরের কথা চা পর্যন্ত খাওয়া হয়নি। চা-এর কথা মনে পড়তেই গোবর্ধনের নিজের ওপর দারুণ বিতৃষ্ণা জাগলো। বর্তমান সভ্য জগতে কোন লোক সকাল থেকে এগারটা পর্যন্ত চা না খেয়ে থাকে বা থাকা উচিত?
-বিচ্ছ—বিচ্ছু, গোবর্ধন হাঁক দিলেন।
-বলুন স্যার।
-বলুন স্যার, (গোবর্দ্ধন ভেংচি কেটে উঠলেন) আর মস্করা করতে হবে না। যা শিগগীর দৌড়ে গিয়ে আমার জন্যে এক কাপ ভেলীগুড়ের চা আর খানচারেক নেড়ী বিস্কুট নিয়ে আয়। ক্ষিদেয় যেন পেটের মধ্যে পাঁচশো ইঁদুরের নাচ শুরু হয়ে গেছে। একটুও দেরী করবি না কিন্তু, আমি ততক্ষণে মুখটা একটু ধুয়ে-টুয়ে নি।
মুখ ধুতে ধুতেই চায়ের কাপ এবং নেড়ী বিস্কুট সমেত বিচ্ছু এসে হাজির। ঠ্যাং ভাঙা প্যাকিং বাক্সটার ওপর খাবারটা রেখে ছেলেটা চলে যেতেই প্রায় ছুটে এসে গোবর্ধন চা আর বিস্কুট গোগ্রাসে খেলেন। তারপর লম্বা হয়ে নড়বড়ে তক্তোপোষের ওপর শুয়ে পড়লেন।
মনের মধ্যে হাজার রকমের চিন্তা। ছোট কাকীর হত্যার মূলে কারা কারা থাকতে পারে। কে কে তার শত্রু ছিল। এ সব প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া আগে দরকার।
হঠাৎ গোবর্ধনের মনে হলো ছোট কাকীর তো জমানো টাকা পয়সা লুকানো ছিল না। ছোট কাকী সারা জীবনই তো তাদের বাড়ীতে কাটালেন। নিজের খরচ বলতে তো কিছুই ছিল না। তার ওপর ঝগড়া করে ইদানিং বেশ দু’-পয়সা রোজগারও হতো। ছোট কাকী ঝগড়ার ব্যাপারে দলাদলি করতে গিয়ে কালো টাকাও হয়তো কিছু নিতেন-—অবশ্য এ সবই আন্দাজ এবং তাতে কত জমা হয়ে রয়েছে কে জানে। হয়তো হাজার বারোশোই হবে এবং সেই টাকার লোভে কেউ তাকে হত্যা করেছে।
গোবর্ধন উঠে বসলো। এ কথা এতক্ষণ তার মনেও হয়নি যে তাদের বাড়ীর ছোট কাকীর ঘরটা একবার দেখা উচিত, হয়তো কোন খুনের নিশানা পাওয়া যেতে পারে।
দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে গোবর্ধন রাতের অন্ধকারের জন্যে অধীরভাব প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। দিনের বেলায় যাওয়া ঠিক নয় কারণ যদি ঘরে টাকা পয়সা থাকে বা সোনার গয়না থাকে তবে তার ভাগিদার জুটতে পারে।
সুতরাং রাতের অন্ধকারেই যাওয়া সবচেয়ে ভাল, নিরাপদ এবং সঙ্গত। মাথা ভর্তি চিন্তা মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ নিয়ে গোবর্ধন এবার খাবার জন্য তৈরী হতে লাগলেন। কালো রাত তাতে কালো মুখে একটা বিকট মুখোস পরে তিনি হাতে ঘড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাস্তা ধীরে ধীরে নিরালা হয়ে আসছে। চেনা চেনা মুখগুলো আস্তে আস্তে বাড়ী ফিরে গেছে–এবার বাড়ী থেকে বেরোনো যাক।
গোবর্ধন বাড়ী থেকে বেরিয়ে টিলটাতা পায়ে সেই গলির মোড়ে গিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন— তারই পোষা কুকুর, রাঙ্গা, কালু আর ভালু তাঁকে চারদিকে থেকে ঘেউ ঘেউ করে তাড়া করলো। ভেবেছে হয়তো চোর চোট্টা ডাকু। কোন ভাল লোক হলে এত রাতে কি নিরালা পথে বেরোয়।
গোবর্ধন মিনতি করে বললেঃ তোরা তো আমার আপনার—কত এটোকাটা খাইয়েছি। অমন বেইমানী করিস না, তোদের শুটকি মাছের দোহাই।
ঠিক তখনই কান্ডটা ঘটে গেল অর্থাৎ তদন্তের কাজে লেগে গেলেন ও.সি.নিজে। ছোট কাকী নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছিল। কর্ণের যেমন সহজাত কবচ- কুন্ডল ছিল ছোট কাকীর তেমনি কবচ-কুন্ডলের মত একটি জিনিস ছিল সেটা তার টিকি। এই টিকি নিয়ে তাকে অনেক হেনস্তা সহ্য করতে হলেও তার টিকির একটা গুণ ছিল সেখানে দিয়ে ইলেকট্রিক স্পার্ক দিত। রাতে চুরি করতে এসে চারজনের মধ্যে একজন বেজায় জখম হয়ে ঠিক করল ছোট কাকীকে খুন করবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ছোট কাকীর বদলে যা খুন হলো তা তার কোল বালিশ। এবং যেটি ওরা চটে জড়িয়ে এনে ধপাস করে ঘরের মেঝেতে ফেলেছিলো সেদিন। কোল বালিশের শবদেহ ছোট কাকীর নয়।
সমস্ত ব্যাপারটার জট ছাড়িয়ে প্রসিদ্ধ ডিটেকটিভ মহীন্দ্র রায় একটা সিগারেট ধরালেনঃ না, গোবর্ধনবাবু আপনার কাকীর কোন দোষ নেই তবে তার যা গুণ আছে তাও সবার থাকে না। এমন বলিহারী টিকির কথা কেউ কখনও শুনেছেন? আপনার ছোট কাকী হত্যাকান্ড করলেন।
মহীন্দ্র রায় উঠে দাঁড়িয়ে লাঠি ঘোরাতে লাগলেন। এই জন্যে আমরা ছোট কাকীকে পুরস্কার দিতে চাই।
শুনে গোবর্ধনের সুঁচের মত গোঁফ আনন্দে নাচতে লাগলো আর কুকুরের দল চীৎকার ভুলে গিয়ে ছোট কাকীকে অভিনন্দন জানাবার জন্যে তেড়ে এলো।
ঘরের মধ্যে তখন কাঁথার তলায় শুয়ে শুয়ে মালা জপ করছিল ছোট কাকী। কুকুরের চীৎকারে বিরক্ত হয়ে হাঁক দিলেনঃ বাইরে এত গন্ডগোল কেনরে গোবরা! ব্যাপার কি?
গোবর্ধন বললেঃ পুলিশ পিসি। তোমার টিকির তরে পেরাইজ দিতে চায়। পিসি বললে, মরণ!
পুলিশ ইন্সপেক্টর দারুণ খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো।