Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,dhaka-article-irabotee-gitaranga-special

সাপ্তাহিক গীতরঙ্গ : ঢাকা ঢাক । শুভ আহমেদ

Reading Time: 2 minutes

বিক্রমপুর থেকে তখন ঢাকায় ঢুকতে দুইটি নদী পাড়ি দিতে হতো, সম্ভবত তিনটি। এখন যে চল্লিশ পাঁচ চল্লিশ মিনিট সময় যায় পথে, তখন তা ছিলো আরো দীর্ঘ। তবে তা খারাপ লাগতো না, বরং একটা উপভোগ্য বিষয় ছিলো। কী বিষয়? বিষয় ছিলো সামান্য। তবে আজকের দিনে এসে আমার ভাবনায় তা অসামান্যই মনে হয়।

একটি গাড়ির কল্পনা দেখতাম সব সময়। যে গাড়িটি আমি চালাচ্ছি। গাড়িতে অন্য কোনো যাত্রি থাকতো না আমার চেনা মুখ ছাড়া। সবাই চুপচাপ করে বসে থাকতো। যেনো আমিই ওদের গার্জেন অথবা আমি যেই দেশে যাবো তারাও সেই দেশে যাবে। আর আমার হেলপারের হাতে থাকতো পিস্তল বন্দুক। যেনো আমাদের পেছনে অগনিত শত্রুর গাড়ি বা কার রেসিং চলছে। চলতে চলতে আমার সেই গাড়িটি মাঝে মাঝে আস্ত একটি বিমান হয়ে যেতো। সব গাড়িকে আরও পেছনে ফেলে দু’পাশে দুটি ডানা গজিয়ে উড়াল দিতো আকাশে। সেই বিমান কিছুক্ষণের মধ্যে আবার কি করে যেনো হেলিকাপ্টার হয়ে যেতো।

ঢাকা যাবার কথা শুনলে পূর্বের রাত দিনগুলো আমার এমন হতো। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে এর লেশমাত্র ছিলো না। বাস্তবিক জীবনে ছিলো একটি লক্কর ঝক্কর মার্কা লোকাল গাড়ি। এই গাড়িটিতে কোনো ডানা ছিলো না। গাড়ি ভর্তি অচেনা মুখে ছিলো ভরপুর। আর দরজার কাছে নিরস্র যেই টিনটিনে কিশোরটি ছিলো সে শূন্য হাতেই খানিক বাদে বাদে গাড়ির দেয়াল চাপড়ে বলত, ‘ঢাকা ঢাক, ঢাকা ঢাক’ আর আমার মন ওর কথার সঙ্গে চুপি চুপি বলে যেতো, ‘ফেরি ঘাট, ফেরি ঘাট’ গাড়ি আরো দ্রুত ছুটে চলত। যেনো আর দেরি হয়ে গেলে ঢাকা হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে। তখন পাশ থেকে কোনো যুবক কিংবা গাঢ় বয়সী কেউ একজন চেচিয়ে বলত, ‘ওস্তাদ আস্তে চালান! মারা পড়ব নাকি’ ইয়া গোঁফওয়ালা ওস্তাদ পান চিবুতে চিবুতে বলতো, ‘আল্লা খোদার নাম লন! চিন্তার কাম নাই আমি পাক্কা ডাইবার’ গাড়ি ফেরিতে উঠে এলে ওস্তাদ নামের লোকটি আস্তে করে লুঙ্গি ঝেড়ে অল্প সময়ের জন্য নিচে নেমে যেতো। উঠে আসত কয়েকটি হকার। ওদের মুখে নিজ ভঙ্গিতে নিজ পণ্যের বিজ্ঞাপন শোনা যেতো। সুন্দর লাগতো সে ডাক “এই ডিমমম, এই ডিমমম। এই শসাআআ, আমড়া। লজেন্স, এই লজেন্স। আদা লাগবে আদা” এর ভেতর দুটো জিনিসে আমার দারুণ লোভ ছিলো আদা এবং কমলা রঙের লজেন্স। বিশেষ করে লজেন্সটাই। কী ভালো ছিলো খেতে! অবিকল কমলালেবু। এগুলো আমি পকেট ভরে নিতাম। তারপর সারা পথ জানালা দিয়ে চলমান দৃশ্য দেখতাম আর সুখ অনুভব করতাম।

জেমস এর গানের মতো, “এই তারপরে তে দেখা ভালো ঢাকার সহর চলে, দালান কোঠা দেখা গেলো। দালান কোঠা দেখা গেলো, বিজলি বাতি চলে এলো রঙবিরঙের মানুষও এলো” তাজ্জব এক জায়গা পেয়ে যেতাম এখানে। সব ধরনের মানুষ মিলতো। ধনী গরীব, লুঙ্গি পরা, প্যান্ট পরা, মটর গাড়ি, ঠেলা গাড়ি, রিক্সা, সুপার মার্কেট আবার ফুটপাত।

এখানে দেখা যেতো লোকে বাজারে যায়, আবার বাজার লোকের কাছে আসে। হাসপাতাল আর ঘর একই পাড়ায় যেনো। পেটে ব্যথা হলেই যাওয়া যায়। আদা আর লজেন্স খেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। হাত বাড়ালেই আরও ভালো কিছু চকলেট আইসক্রিম পাওয়া যায়। অই বিমানের মতো উড়াল বাক্স প্রথম দেখেছি এখানে। ওর নাম ছিলো লিফট্। আমি দানবের মতো দালানের নিচে এসে নামলে ও আমায় হুরহুর করে নিয়ে যেতো আকাশের দিকে আর মূহুর্তেই পৌঁছে যেতাম গন্তব্যে। কী আশ্চর্য ঠেকত এসব! সারা রাত যেন হয়ে যেত দিন রঙে বেরঙের আলোয়। আর রিক্সাগুলো তারই এলার্ট দিয়ে যেতো হরহামেশাই। তারপর চাঁদ এবং আমি পাশাপাশি ঝুলে থাকতাম বারান্দায়।

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>