গীতরঙ্গ: মায়ানগরী ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সিনেমা হল । নুসরাত জাহান
হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দেশ-বিদেশের পছন্দের সিনেমা এখন দেখা যায় যেকোনো সময়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে। অথবা আধুনিক স্মার্ট টিভির এই যুগে টিভিতেই ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে ঘরেই বানিয়ে ফেলা যায় মিনি সিনেমা হল। কিন্তু তার পরও সিনেমা দেখার জন্য হলের বড় পর্দার আবেদন এতটুকুও ফুরায়নি। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সিনেমা হলের আধুনিকায়ন হয়েছে। আর এই আধুনিকতাই সিনেমা হলের অতীত জানার আগ্রহ বাড়িয়েছে মানুষের। কেমন ছিল অতীতের সিনেমা হলগুলো?
১৯১৫ থেকে ১৯৭০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের স্মৃতিতে গেঁথে আছে এদেশের সিনেমা আর সিনেমা হলের মধুর যত অভিজ্ঞতা। ১৮৯৮ সালের ১৭ ই এপ্রিল সদরঘাটের পটুয়াটুলি এলাকার ক্রাউন থিয়েটারে ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। তারও পরে জগন্নাথ কলেজ, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন উপলক্ষে সিনেমা প্রদর্শিত হয়।
সময়ের সাথে সাথে বদলেছে মানুষের রুচিও। সিনেমা নির্মাণে তার প্রভাব বিস্তর। আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণেও সেই প্রভাব রয়েছে সমানভাবে। কিন্তু অতীতে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও মানুষ হলমুখী ছিল বেশি। সুস্থ পারিবারিক বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বড় পর্দা তখন বেছে নিত রুচিশীল মানুষরা। সময়ের সঙ্গে সেই হলমুখী মানুষের সংখ্যা কমেছে মহামারী আকারে।
নব্বইয়ের দশকের শেষ প্রান্তে এসে দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পে মন্দা শুরু হয়। তার প্রভাব পড়ে সিনেমা হলের ব্যবসায়। গত আড়াই দশকে ঢাকায় কয়েকটি সিনেপ্লেক্স হলেও নতুন কোনো সিনেমা হল তৈরি হয়নি। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় অর্ধশত সিনেমা হল থাকলেও কমতে কমতে হলের সংখ্যা এখন ২৬-এ এসে ঠেকেছে।
তবুও স্মৃতি ও ইতিহাস বলতে কিছু রয়ে যায়। ঢাকার সিনেমা হলের ইতিহাস শত বছরের পুরানো। সেটা জানার আগ্রহ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে, এটাই আশা। অতীতের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের
কেমন ছিল অতীতের সিনেমা হলের অবস্থা? মহানগরীর এই বিনোদনের জায়গাটার অতীত সম্পর্কে আজ চলুন জানি!
পিকচার হাউজ
ঢাকার প্রথম প্রেক্ষাগৃহ ছিল পিকচার হাউজ। পুরানো ঢাকার আর্মানিটোলার গির্জার পাশে ঢাকার নবাব ইউসুফ খানের গোরস্তানের জন্য রাখা জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সিনেমা হল। ১৯১৩-১৪ সালের দিকে এখানে নিয়মিত বায়োস্কোপ প্রদর্শনী করা হত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ল্যাজারাস নামের এক আর্মেনিয় ব্যক্তি এটা কিনে এখানে পাটের গুদাম করেছিল। যুদ্ধের সময় ল্যাজারাস ঢাকা ছেড়ে চলে যায়। পরবর্তীকালে যুদ্ধ শেষে উদ্ভমী ঠাকুর নামের এক মাড়োয়ারী এটা কিনে নিয়ে সিনেমা হলে রূপান্তরিত করেন। পরে এই একতলা প্রেক্ষাগৃহটি শাবিস্তান নামে পরিচিতি পায়।
গ্রেটাগার্বোর একটি ছবি দিয়ে এই সিনেমা হলের যাত্রা শুরু হয়। হারিকেন আর লণ্ঠন দিয়ে সিনেমা প্রদর্শন করা হত প্রথম দিকে। প্রতিদিন দুটি সিনেমা দেখানো হত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারে দেখানো হত তিনটি করে সিনেমা।
আলাউদ্দিন ও আশ্চর্য প্রদীপ, দ্য কিড, মাই ড্যাডি, মহব্বত এমন সব বিখ্যাত সিনেমা দেখানো হয়েছিল শাবিস্তানে। একুশ শতকের শুরুতে এই হল বন্ধ হয়ে যায়।
সিনেমা প্যালেস
১৯২৪ সালে সদরঘাটের চিত্তরঞ্জন এ্যাভিনিউতে স্থাপিত হয় ঢাকার দ্বিতীয় প্রেক্ষাগৃহ সিনেমা প্যালেস। জানা যায়, বাংলাবাজারের জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের জমি ইজারা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহটি নির্মাণ করা হয়। কারো মতে, এই হলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রূপলাল দাস, কেউ বলেন ধীরেন দাশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরেই এর মালিকানা চলে যায় এক মারোয়াড়ী ব্যবসায়ীর কাছে। সিনেমা প্যালেসের নাম বদল করে রাখা হয় ‘মোতিমহল’।
এর অল্প কিছুদিন পর প্রেক্ষাগৃহটি চলে যায় মুকুল ব্যানার্জীর ‘ঢাকা পিকচার্স প্যালেস কোম্পানী’র হাতে। এসময় আবারো নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘রূপমহল’। প্রেক্ষাগৃহটি টিকে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত এ নামই পরিচিত ছিল।
এই রূপমহলেই ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। সেসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এই সিনেমাটির প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
সিনেমা হলটি নিয়ে নানা ঝামেলাও হয়। ১৯২৯ সালে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে রোষের দাবানলে পরে প্রেক্ষাগৃহটি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি পরিচালিত ‘দুর্গেশ নন্দিনী’ প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা দেখা দেয়। চলচ্চিত্রটির কয়েকটি অংশ নিয়ে উত্তেজিত মুসলমানরা প্রেক্ষাগৃহটি পুরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। চলচ্চিত্রটির দুটি দৃশ্য কেটে বাদ দিয়ে প্রদর্শন করা হলে উত্তেজনা কমে।
প্রেক্ষাগৃহটি বর্তমানে আর নেই। বিশ শতকের শেষের দিকে এই ঐতিহাসিক সিনেমা হল ভেঙে পরিণত করা হয় বহুতল ভবনে।
প্যারাডাইস টকিজ
১৯৩৮ সালে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় জেলখানা এলাকার আলী দেউড়ির সাতরওয়াজায় স্থাপিত হয় প্যারাডাইজ টকিজ সিনেমা হল। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে পরিচিতি পায় ‘প্যারাডাইস’ সিনেমা হল নামে। ফয়েজুদ্দীন নামের এক ব্যক্তি ছিলেন এই হলের প্রতিষ্ঠাকালীন মালিক।
১৯৫৪ সালে আবার হলের নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় নিউ প্যারাডাইস। এই হলে প্রদর্শিত প্রথম ছবি ছিল ‘জেলার‘। বর্তমানে হলটি আর নেই।
গুলিস্তান সিনেমা হল
ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের (পরে এই স্টেশন কমলাপুর স্থানান্তর হয়) উত্তরে ঢাকা জেলা ক্রীড়া মিলনায়তন ও পল্টন মাঠের পাশে স্থাপিত হয় গুলিস্তান সিনেমা হল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলকাতার চিত্র ব্যবসায়ী খান বাহাদুর ফজল আহমেদ দোশানি ঢাকায় চলে আসেন এবং এই প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সালে আগা খান এই হলের উদ্বোধন করেন।
এটি ছিল ঢাকার প্রথম শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ। প্রথমে হলটির নাম ছিল লিবার্টি। পরে গুলিস্তান করা হয়। এখানে দেশি-বিদেশি সব সিনেমা দেখানো হতো।
শুধু এই হলের নামের কারণেই এলাকাটি পরিচিত হয় গুলিস্তান নামে এবং তারই সাথে গড়ে উঠে এক জমজমাট চলচ্চিত্র ব্যবসা। মূলত এটি ছিল ঢাকার শিক্ষিত শ্রেণীর জন্য এক আকর্ষণীয় সিনেমা হল। ইংরেজি ছবি প্রদর্শন ছাড়াও অন্যান্য সব রুচিশীল সিনেমাও এখানে প্রদর্শন করা হতো।
১৯৫৩ সালে এখানে দেখানো হয় ডাচ ম্যান, বাবলা, রাজরানী; ১৯৫৪ সালে প্রদর্শিত হয় দ্য এনসার, আনমোল ঘড়ি; ১৯৫৫ সালে কুইন অব শিবা, অন্নদাতা, অপবাদ এবং ১৯৫৬ সালে প্রদর্শিত হয় পথের পাঁচালী।
১৯৫৯ সালে এফডিসির সহায়তায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় এই হলে।
লায়ন সিনেমা হল
মহারাণী ভিক্টোরিয়ার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার ইসলামপুরে ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লায়ন সিনেমা হল। প্রতিষ্ঠাকালীন এই হলের নাম ছিল ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটার।
১৯২২- ২৩ সালে ঢাকার মির্জা আবদুল কাদের সরদার ডায়মন্ড জুবিলী থিয়েটারের কর্তৃত্ব নেন। ১৯৩০ সালে সেখানে তিনি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করেন। সে সময় প্রেক্ষাগৃহটি পরিচিতি পায় লায়ন সিনেমা নামে। বিল্ডিংটির আকৃতি ছিল ইংরেজি এল অক্ষরের মতো।
১৯৩১ সালে এ প্রেক্ষাগৃহে সবাক চিত্রের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। এই প্রেক্ষাগৃহেই উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’-এর প্রিমিয়ার শো প্রদর্শিত হয়।
২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী লায়ন সিনেমা হল। যা ছিল পুরান ঢাকাবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ। তবে সুখবর হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়িই বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে চালু হচ্ছে নতুন চারটি সিনেপ্লেক্স।নাম ‘লায়ন সিনেমাস’। মূলত, লায়ন সিনেমা হল কর্তৃপক্ষই এটি চালু করছে।
ব্রিটানিয়া সিনেমা হল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুলিস্তান মাজারের পাশে নির্মিত হয় ব্রিটানিয়া সিনেমা হল। এখানে শুধুমাত্র ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত। যার কারণে ঢাকার শিক্ষিত শ্রেণীর চাহিদার তুঙ্গে ছিল এ হল।
খোলা প্রান্তরে প্রেক্ষাগৃহটি ছিল অনেকটা লম্বাটে। ছাদ ছিল টিনের। এ প্রেক্ষাগৃহে শুধু সন্ধ্যা ছয়টা আর রাত নয়টার শো প্রদর্শিত হত। ১৯৫০ এর দশকের মঝামাঝি এ হল বন্ধ হয়ে যায়।
তাজমহল
১৯২৯ সালে মোখলেসুর রহমান ও আরিফুর রহমান নামের দুই ভাই মিলে ঢাকার মৌলভীবাজারের কাছে চকবাজারে প্রতিষ্ঠা করেন তাজমহল সিনেমা হলটি। ১৯৮০’র দশকে এ হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়।
আজাদ সিনেমা হল
পুরনো ঢাকার জনসন রোডে, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে জীর্ণশীর্ণ এ হলটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজাদ সিনেমা হল প্রথমে পরিচিত ছিল ‘মুকুল টকিজ’ নামে। জমিদার মুকুল ব্যানার্জি প্রেক্ষাগৃহটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নাম অনুসারেই নাম দেয়া হয়।
১৯২৯ সালে ঢাকায় নির্মিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট কিস’ চলচ্চিত্রটি এ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ওই সিনেমা দিয়েই হলটির যাত্রা শুরু। এর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য ও বিশিষ্ট ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার (আরসি মজুমদার)।
১৯৬৪ সালে বোম্বের শের আলী রামজি এ হলটি মুকুল ব্যানার্জির কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি নতুন নাম দেন আজাদ সিনেমা। ভবনটির নাম আজাদ ম্যানশন। ১৯৭৪ সালে ঢাকার এক চলচ্চিত্রপ্রেমী এ ইউ এম খলিলুর রহমান আজাদ সিনেমা হল কিনে নেন শের আলী রামজির কাছ থেকে। খলিলুর রহমানের মৃত্যুর পর এখন তাঁর চার ছেলে এই হলের মালিক।
ঢাকা শহরের রুচিশীল দর্শক থেকে শুরু করে সব ধরণের দর্শকে সরগরম থাকত আজাদ সিনেমা হল। বিভিন্ন সময়ে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিরা এখানে সিনেমা দেখেছেন। এই তালিকায় আছেন শামসুর রাহমান, কাইয়ূম চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, সৈয়দ শামসুল হকসহ আরও অনেকে। তাঁরা এই সিনেমাহল নিয়ে বিভিন্ন সময় স্মৃতিচারণও করেছেন।
১৯৩০ সালে এই হলে দেখানো হয় চণ্ডীদাস, গোরা, ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, লরেল হার্ডি, চার্লি চ্যাপলিন, কপাল কুণ্ডলা, চণ্ডীদাস, সোনার সংসার, প্রহ্লাদ ইত্যাদি বিখ্যাত সব ছবি। বর্তমানে হলটি কোনরকমে টিকে আছে।
মধুমিতা সিনেমা হল
ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। বর্তমান হল মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের শিল্পপতি বাবা নিজের ভালোলাগা থেকে গড়ে তোলেন এ সিনেমা হল। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার আব্দুল জব্বার খান এই হলের উদ্বোধন করেন। এখানে প্রথম প্রদর্শিত ছবি হচ্ছে ‘ক্লিওপেট্রা’।
১৯৮১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ব্যাপী চলা ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয় মধুমিতা সিনেমা হলে। পঞ্চাশ বছর পার করে মধুমিতা হল এখন হারিয়ে ফেলেছে তার অতীতের আভিজাত্য ও জৌলুস।
মানসী সিনেমা হল
ঢাকার বংশালে অবস্থিত মানসী সিনেমা হল বিশ শতকের তৃতীয় দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মালিক ছিলেন বালিয়াটি জমিদার পরিবারের সদস্যরা। প্রায় বর্গাকার দোতলা এ প্রেক্ষাগৃহটির আয়তন খুব বড় না। বর্তমানে কোনোরকমে টিকে আছে এই হলটি।
নগর মহল
গত শতকের চল্লিশের দশকে ঢাকার নগর বাবু ইংলিশ রোডে একটি প্রেক্ষাগৃহ স্থাপন করেন। প্রেক্ষাগৃহটি পরিচিতি পায় ‘নাগর মহল’ নামে। পরে এ প্রেক্ষাগৃহটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় চিত্রমহল। দোতলা এ প্রেক্ষাগৃহটি কোনোমতে এখনো টিকে আছে।
মায়া সিনেমা
স্টার সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠাকালে পরিচিত ছিল মায়া সিনেমা নামে। প্রেক্ষাগৃহটি সম্ভবত বিশ শতকের চল্লিশের দশকে ওয়াইজঘাটে স্থাপন করা হয়। এ প্রেক্ষাগৃহটি এখন শুধুই অতীত।
অনুমান করা হয় অদূর ভবিষ্যতে হয়ত সিনেমা হলই থাকবে না! যত দিন যাচ্ছে সিনেমা হলের জায়গা দখল করে নিচ্ছে সিনেপ্লেক্স। অনেকে এটাও বলেন বছর দশেক পরে সিনেপ্লেক্সের অস্তিত্বও বিলীন হওয়া শুরু হবে। কারণ, ইন্টারনেটের যুগে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর বদৌলতে হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে নতুন সব সিনেমা। বহি:বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে যাত্রায় বাংলাদেশও দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
একটা সময় সেলুলয়েডের ফিতায় তৈরি সিনেমা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসহ দেখার একমাত্র জায়গা ছিল এই সিনেমা হল। তীব্র আশার কথা হলো অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে একটা চলচ্চিত্র বিপ্লব দেখা দিয়েছে। এখন আবার মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চায়। সিনেমা হলের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও ছড়িয়ে যাক, যেভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে সিনেমার প্রতি ভালোবাসা।
তথ্যসূত্র:
১. পুরনো ঢাকার সংস্কৃতি: নানা প্রসঙ্গ – অনুপম হায়াৎ
২. অতীত দিনের স্মৃতি- আবুল কালাম শামসুদ্দীন
ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। হস্তশিল্পের দিকে বেশি ঝোঁক থাকায় পড়াশোনা বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সৃজনশীল শিল্প বিভাগে। কিন্তু একইসাথে ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির নেশা থাকায় শেষ পর্যন্ত পেশা সেদিকেই যায়! নানান পত্রিকা, অনলাইন পোর্টালে ফিচার লেখক আর একটা টিভি চ্যানেলে ৪ বছর স্ক্রিপ্ট লেখক হিসেবে কাজ করার পর মনে হল ফ্যাশন ডিজাইনারও হয়ে দেখা দরকার! তাই আপাতত নিজের ছোট্ট বুটিক নিয়ে ব্যস্ত। আর পাশাপাশি চলছে লেখালিখিও।