| 25 এপ্রিল 2024
Categories
গীতরঙ্গ

গীতরঙ্গ: চেতনায় হানছে আঘাত । ইন্দ্রজিৎ ঘোষ

আনুমানিক পঠনকাল: 10 মিনিট

বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক এমিল দূর্খেইম ধর্ম তথা ধর্মের ঈশ্বর প্রসঙ্গে বলেছেন যে ,” নরমপন্থী সংশয়বাদীগণ , প্রত্যক্ষবাদী , অজ্ঞেয়বাদী অথবা নাস্তিকতাবাদী, যাই হোক না কেন, তারা সকলে মানেন যে, মানুষের ধর্ম আছে , ধর্মীয়ভাব আছে এবং ধর্মীয় মানুষের ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস আছে ৷ তারা শুধু একথাই বলেন যে , এই সব ভাব বা বিশ্বাসের ব্যখ্যার জন্য অতিপ্রাকৃত ঈশ্বর স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না , প্রাকৃত সমাজের নিয়মেই তাদের ব্যাখ্যা সম্ভব ৷ ” এ কথা মেনে নেওয়ার এবং যুক্তির পথ ধরে একে মান্যতা দেবার স্পর্ধা দিনে দিনে যত বৃদ্ধি পাবে ততই মানব সভ্যতার পক্ষে তা হবে কল্যাণকর ৷ ধর্মের ঈশ্বর মানুষের অবচেতনের এক কল্পিত সত্তা , এই সত্তাকে অত্যন্ত সুচারুভাবে এবং মনস্তত্ব সম্মত ভাবে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে কর্তৃত্ববাদী শক্তি সমাজ অন্তর্গত মানুষকে ধর্মীয় ঈশ্বরের প্রতি অনুগত করে মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা চালিয়েছে যুগ যুগ ধরে ৷ এ কথা মানতেই হবে যে , বিজ্ঞানের ক্রম অগ্রসরমাণ যাত্রা পথ যত অনিবার্য শক্তি অর্জন করেছে ততই ধর্ম জ্ঞানের রাজ্য থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যেতে যেতে ব্যক্তিগত বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে ৷
অনেকটা জ্যোতিষশাস্ত্রের ম’ত , আবহমান কাল ধরে চলে আসছে বটে, কিন্তু সে বিষয়ে আমাদের সকলেরই অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানের বিস্তৃতি নিতান্ত নগন্য ৷ ভারতীয় দর্শনের অন্যতম নাস্তিক সম্প্রদায় বৌদ্ধদর্শন , কিন্তু বৌদ্ধরা শেষ পর্যন্ত বুদ্ধদেবকে ঈশ্বররূপে মান্যতা দিয়ে তাঁকে ঈশ্বর রূপে কল্পনা করেছন এবং উপাসনা করেছেন ! তাই বলা যায় , ঈশ্বরই যেহেতু ধর্মের প্রাণকেন্দ্র , সে কারণে ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে ধর্মের অস্তিত্ব সুদীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারবে না ৷ এই টিকে থাকা এবং না থাকার মাঝখানেই প্রতি মুহূর্তে লালিত হয় ধর্মকেন্দ্রিক সংস্কার এবং কুসংস্কার ৷ অবশ্য ধর্মের ইতিহাসে ঈশ্বরবাদী এবং নিরীশ্বরবাদী উভয় সম্প্রদায়েরই অস্তিত্ব রয়েছে ৷ ঈশ্বর যেহেতু প্রত্যক্ষযোগ্য নয়,তাই ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্ব বিষয়ে যুক্তি-তর্কের অবসান কখনও মেটবারও নয় ! অধ্যাপিকা ডঃ কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত “ধর্ম সংস্কার ও কুসংস্কার” গ্রন্থটি নিয়ে কিছু কথা বলার আগে এই কথাগুলি ব’লে নেওয়া খুব জরুরি বলেই মনে করলাম , তাই বললাম ৷

ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে “ধর্ম সংস্কার ও কুসংস্কার” গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়৷ গ্রন্থটির ষষ্ঠ মুদ্রণ জানুয়ারী , ২০১৯৷ সুদৃশ্য প্রচ্ছদ সহ বইটির সামগ্রিক চেহারা যথেষ্ট নান্দনিক৷ এমন একটি উন্নত চেতনা সমৃদ্ধ গ্রন্থ পাঠের সুযোগ পাওয়ার জন্য অধ্যাপিকা ডঃ কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায় সহ প্রকাশনা সংস্থাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছিনা ৷

এমন একটি চেতনাঋদ্ধ গ্রন্থ রচনার পিছনে রয়েছে লেখিকার সুদীর্ঘ পরিশীলিত বৌদ্ধিক পরিচর্যা ৷ সকলের পক্ষে এজাতীয় গ্রন্থ রচনা সম্ভব নয় কো’ন ভাবেই ৷ এরজন্য দরকার ধারাবাহিক মুক্ত বুদ্ধির চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক নির্মোহতায় মননশীল হয়ে ওঠার সারস্বত সাধনা ৷ দরকার অপরিসীম সাহস ও নিজস্ব যুক্তিবোধের প্রতি অকৃত্রিম প্রত্যয় ও বৌদ্ধিক দায়বদ্ধতা ৷ কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এসবের সম্মেলক উপস্থিতি ছিল বলেই তাঁর পক্ষে এ গ্রন্থ রচনা সম্ভব হয়েছে ৷ কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ সালে ৷ ১৯৫৯ সালে মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপিকা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন ৷ অবশ্য পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভারত ও দঃ-পূঃ এশিয়ার অর্থনীতি এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সমস্যাবলী বিষয়েঅধ্যাপনা করেন ৷অধ্যাপনাকালে তিনি ভারত , চীন ও দঃ-পূঃ এশিয়ার অর্থনীতি এবং দঃ-পূঃএশিয়ার জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সম্পর্কে চারটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেন ৷ প্রফেসর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৫ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর ভারতীয় সমাজ , ধর্ম ও নারী বিষয়ে বাংলা ভাষায় তিনটি গবেষণাধর্মী পুস্তক রচনা ও প্রকাশ করেন ৷ মানবতা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতি এক সীমাহীন দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ উদ্ঘাটনের প্রবল আকুতি নিয়ে তিনি “ধর্ম , সংস্কার ও কুসংস্কার গ্রন্থটি রচনা করেন ৷

“The substratum of all religious belief lies in the idea of a mysterious impersonal force controlling life , and this sense of force is derived from the authority
of society over the individual ? (Philosophy of Religion . D. Miall
Edwards P.42) অর্থাৎ সকল ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি একটি রহস্যময় নৈর্ব্যক্তিক শক্তির ধারণার মধ্যেই নিহিত রয়েছে এবং ব্যক্তির উপর সামাজিক কর্তৃত্বের ধারণা থেকে কী শক্তির এই অনুভূতি উদ্ভূত ? এমন এক
প্রশ্নমনস্কতা এ গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতি মুহূর্তে জায়মান হয়ে উঠতে চায় ৷ হিন্দুধর্মের মৌল উপাদান হিসাবে সৃষ্টিকর্তা রূপে ঈশ্বরে বিশ্বাসের পাশাপাশি , আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং পরজন্মে বিশ্বাস বিশেষ ভাবে সক্রিয় ভূমিকা নেয় ধর্মের বিভিন্ন বয়ান নির্মাণে ৷ দেহাতিরিক্ত আত্মার অস্তিত্বের সঙ্গে পাপ ও পুণ্যের তথা কর্মফল ভোগ জনিত স্বর্গবাস ও নরকবাসের তত্ত্ব হিন্দু ধর্মের অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে ৷ বেদ-উপনিষদ , সূত্র সাহিত্য , স্মৃতিশাস্ত্র , ভাগবতগীতা , রামায়ণ , মহাভারত এবং বিভিন্ন পুরাণের মধ্যে দিয়ে পাপ-পুণ্য , স্বর্গ-নরক , কর্মফল , জন্মান্তর ইত্যাদির ধারণা জনমনে গভীর ভাবে প্রোথিত হয়েছে এবং এখনও তা ক্রমান্বয়ে হয়ে চলেছে ৷ ভারতীয় সমাজের যাবতীয় কুসংস্কারের উৎস হিসাবে উক্ত ধর্মীয় ধারণাগুলিকে চিহ্নিত করে লেখিকা তাঁর আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন—” এই তথাকথিত ধর্ম গ্রন্থগুলিতে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারাজীবন ধরে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে যে অসংখ্য পূজা-পার্বণ , শ্রাদ্ধ-তর্পণ , পিন্ডদান , তীর্থযাত্রা , ব্রত-উপবাস প্রভৃতি ধর্মীয় প্রক্রিয়া পালনের নির্দেশ দেওয়া আছে , তার প্রত্যেকটিই ইহজীবনের পাপপুণ্য অনুসারে আত্মার স্বর্গ-নরক বাসের তত্ত্বের সাথে জড়িত ৷ এমন কি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং নারীপুরুষের সম্পর্কের যেসব বিধান আমাদের ধর্মগ্রন্থে দেওয়া আছে, সেগুলিও পাপপুণ্য ও আত্মার স্বর্গনরক বাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ৷ শাস্ত্রমতে ধর্মীয় প্রক্রিয়াগুলি পালন করলে ইহজীবনে পাপের ফলে পরজীবনে নরকে পতনের পথ রুদ্ধ হয় এবং পুণ্য সঞ্চয়ের ফলে স্বর্গ গমনের পথ সুগম হয় ৷ প্রকৃতপক্ষে এসব তত্ত্ব ও এগুলির সাথে যুক্ত অসংখ্য ধর্মীয় ক্রিয়াকান্ডের বিধানই বর্তমান ভারতীয় সমাজের প্রায় যাবতীয় কুসংস্কারের উৎস ৷” কোন বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তি বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় যে , বাস্তব দুঃখ দারিদ্র্য , স্বাস্থ্যহীনতা বা অশিক্ষার জন্য পূর্বজন্মের পাপের ফল এবং মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের শিক্ষা , সুখস্বাচ্ছন্দ্য, বিত্ত, ভোগবিলাস ও সুস্বাস্থ্যের জন্য পূর্বজন্মে কৃত পুণ্যফলের চরম ভূমিকা রয়েছে ৷ এর পরিপ্রেক্ষিত হিসাবে লেখিকা অত্যন্ত ধারালো যুক্তিবোধের দ্বারা চালিত হয়ে যা বলতে চেয়েছেন তার মর্মকথা হ’ল , প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন ও মধ্যযুগে বিভিন্ন পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে সহজ সরল সাধারণ মানুষকে অজ্ঞানের অন্ধকারে তলিয়ে রেখে কায়েমী স্বার্থভোগী শাসক ও প্রতিক্রিয়াশীল ব্রাহ্মণ-পুরোহিত সম্প্রদায়ের শ্রেণিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্রয়োজনেই এইসব তত্ত্ব ও ধর্মীয় প্রক্রিয়ার বিধান রচিত এবং প্রচারিত হয়েছি’ল ৷ ব্রাহ্মণ-পুরোহিত কুলের জীবিকা নির্বাহের উপায়কে অনন্তকাল পরম্পরায় বংশাণুক্রমিক করে তোলার উপায় হিসাবে এ গুলি হয়ে উঠেছিল পুরোহিততন্ত্রের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ৷

পৃথিবীর নানা দেশে শ্রেণিবিভাজনের দৃষ্টান্ত থাকলেও ভারতের ম’ত এই বিভাজন কোথাও জন্মগত বর্ণবাদের আকার পায়নি ৷ আলোচ্য গ্রন্থের সবচেয়ে বড় গ্রহণযোগ্যতা এখানেই যে, লেখিকা অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় এবং ঐতিহাসিক ও সমাজমনবিজ্ঞান সম্মত দৃষ্টান্ত সহযোগে বোঝাবার এবং বিশ্লেষণ করবার চেষ্টা করেছেন যে , আত্মার অস্তিত্ব , ও তার অবিনশ্বরতার তত্ত্ব এবং পরজন্মলাভের তত্ত্ব, পাপপুণের ধারণা , স্বর্গনরক বাস ইত্যাদি ধারণাগুলি পুরোপুরি কল্পনা প্রসূত ৷ এগুলির কো’ন রকম বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব ভিত্তি নেই ৷ সেই সঙ্গে এ গ্রন্থের লেখিকা অসামান্য বিশ্লেষণ প্রয়োগে বুঝিয়েছেন , আধিভৌতিক শক্তিতে বিশ্বাস এবং জন্মান্তর বাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা জ্যোতিষশাস্ত্রের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই ৷ জ্যোতিষশাস্ত্র ও পূর্বজন্মের কর্মফলের বিশ্বাসের দ্বারা লালিত পালিত হওয়া সবর্ণ বিবাহ যে কতটা যুক্তি ও ভিত্তিহীন তাও এ গ্রন্থে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে অসবর্ণ বিবাহ যে সমর্থন যোগ্য তাও যুক্তিপূর্ণভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে ৷ সমগ্র গ্রন্থটি নয়টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত হয়েছে ৷ পরিচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়গুলি হ’ল—’আত্মার সন্ধান’ , ‘যমালয়’ , ‘ স্বর্গনরক’, ‘তীর্থমাহাত্ম্য’, ‘ব্রত উপবাস’ , ‘জীবন ও ফলিত জ্যোতিষ’, ‘সবর্ণ ও অসবর্ণ বিবাহ’, ‘দেব ও দাসীঃ দুই রূপে নারী’, ‘সংস্কৃতি ও কুসংস্কৃতি’ ৷

” অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহায়াং পুরোণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥ “

গীতার এই শ্লোক বলছে যে —ইনি(অত্মা) নিত্য , শাশ্বত ও অনাদি , শরীর হত হলেও ইনি (আত্মা) হত হন না ৷ আমরা জানি যে , উপনিষদের কাল থেকেই আত্মা পরমাত্মা ও জন্ম-জন্মান্তরের ধারণা প্রবল বেগে প্রচারিত হয়ে আসছে৷ লেখিকা মনে করিয়ে দিয়েছেন , ধর্মশাস্ত্রের যুগে মনুস্মৃতি, ভগবদগীতা এবং ধর্মশাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে পল্লবিত হয়ে ওঠা রামায়ণ ও মহাভারত-এর কাহিনিতে আত্মার অমরত্ব ও জন্মান্তরবাদের তত্ত্ব বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ৷ এ বিষয়ে লেখিকার যুক্তিনিষ্ঠ প্রশ্ন হ’ল—“তর্কের খাতিরে আত্মার অমরত্বের তত্ত্ব যদি স্বীকার করেও নেওয়া যায় , তাহলেও একটি প্রশ্ন থেকে যায় ৷ ইহজীবনের কর্ম অনুযায়ী মৃত্যুর পর স্বর্গ অথবা নরকবাসের ফলে মানুষের পুণ্য অথবা পাপ ক্ষয়ে যাবার পরেও আবার পূর্বজন্মের কৃতকর্ম অনুযায়ী মানুষ (তার আত্মা) কীভাবে নূতন জন্ম লাভ করবে ? যে পাপপুণ্য একবার স্বর্গ অথবা নরকবাসের ফলে ক্ষয় হয়ে গেছে , পুনর্জন্ম লাভ করে তারই ফল আবার ভোগ করা ? শেষের পরেও শুরু ? এ কীভাবে সম্ভব ? ” আধুনিক জীববিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন যে , সন্তানের মধ্যে মাতাপিতার জিনের খোঁজ পাওয়া গেলেও তার সাথে জন্মান্তরের কো’ন রকম সম্পর্ক নেই৷ ব্রাহ্মণ্য যুগের পরবর্তী পুরাণগুলিতে পূর্বজন্মের কর্মফল অনুযায়ী যে চারটি বর্ণের কথা আছে তা আসলে বংশানুক্রমিক কায়েমি স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার চক্রান্ত বিশেষ ৷ সব চেয়ে বড় কথা , যে সময় থেকে আত্মা , পরলোক এবং পাপপুণ্য ও জন্মান্তর নিয়ে তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সেই সময় থেকে এর বিরুদ্ধে মতবাদও গড়ে উঠেছে ৷ কঠ উপনিষদে নচিকেতা আত্মা , পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে সন্দিহান হয়ে যমকে প্রশ্ন করলে মোটেই সে নচিকেতার প্রশ্নের সহজ ও যথাযথ উত্তর দিতে পারেন নি ৷ এ প্রসঙ্গে লেখিকা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভঙ্গিতে আমাদের পুরাণস্মৃতিকে উস্কে দিয়ে বলেছেন—” আত্মা-পরমাত্মার অস্তিত্ব যে বিজ্ঞান ও যুক্তি নির্ভর নয় , সে বিষয়ে বৃহদ্যারণ্যক উপনিষদে গার্গী বাচক্লবী ও যাজ্ঞবল্ক্যের প্রশ্নোত্তরের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায় ৷ গার্গী যখন যাজ্ঞবল্ক্যকে ব্রহ্ম (পরমাত্মা) সম্বন্ধে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে জর্জরিত করছিলেন , তখন যাজ্ঞবল্ক্য কো’ন সদুত্তর দিতে অপরাগ হয়ে অসহিষ্ণু হয়ে বলেন—” হে গার্গী , যে বিষয়ে অতি প্রশ্ন করা উচিত নয় , সে বিষয়ে তুমি অতি প্রশ্ন করছ ৷ আর প্রশ্ন করো না , তোমার মাথা যেন খসে না পড়ে ৷” কিন্তু অতিপ্রশ্ন করা যাবে না কেন ? কারণ , আত্মা বাস করে শুধু মনের কল্পনা রাজ্যে ৷ প্রশ্নের দ্বারা কৌতূহলের দ্বারা অর্থাৎ যুক্তির দ্বারা আত্মা-পরমাত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় না ৷ এর বাস্তব কো’ন অস্তিত্ব নেই ৷” আসলে ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব চায় , প্রশ্নহীন , সীমাহীন আনুগত্য ; যা ক্ষমতাকে স্বস্তি ও শান্তি দেবে ৷

ইতিহাস বলছে , বৈদিক পরবর্তী যুগে বেদবিরোধী , ব্রাহ্মণ্যধর্ম বিরোধী যে বৈজ্ঞানিক তথা বস্তুবাদী চিন্তার উন্মেষ ঘটেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল চার্বাকবাদ বা লোকায়তবাদ ৷ সেই সময়ে চাবর্বাকদের মেনে নেওয়া
ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদের কাছে আত্মহননের সমতুল্য ৷ অতএব ক্ষমতাতন্ত্রের দ্বারা চার্বাকরা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হন এবং রাজরোষে চার্বাকদের মূলগ্রন্থগুলি বিনষ্ট হয়ে যায় ! এই সূত্রে লেখিকা আমাদের জানাতে ভোলেন না যে ,”তাই চার্বাকবাদ সম্বন্ধে আমাদের জানার মূল উৎস হ’ল চার্বাকবাদকে খন্ডন করার উদ্দেশ্যে বিরোধী পক্ষের দেওয়া চার্বাকদের উদ্ধৃতিগুলি ৷ চার্বাকদের মূল অসূয়াশূন্য ভাষ্য যাদের রচনার মধ্যে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে শঙ্করাচার্য এবং জয়ন্ত ভট্টই শ্রেষ্ঠ ৷ “

“যমালয় যাত্রা ” অংশে লেখিকা তাঁর বিজ্ঞাননিষ্ঠ যুক্তিবোধের ধারালো বুদ্ধিবৃত্তির অস্ত্র দিয়ে ‘প্রেতত্ব প্রাপ্তি ও শ্রাদ্ধবিধি’ , “শ্রাদ্ধক্রিয়ার দান’, ‘ব্রাহ্মণ ভোজন’ , ‘যমমার্গ’ ইত্যাদি চূড়ান্ত অর্থহীন বিষয়গুলোকে একেবারে ধরে ধরে কচুকাটা করেছেন ৷ ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের মোটা চামড়ায় আষ্টেপিষ্টে জলবিছুটি লাগিয়েছেন ৷ কিন্তু কোথাও তিনি কোন ভাবেই আক্রমণাত্মক নন ; বরং পরম সহিষ্ণুতায়, শৃঙ্খলাপূর্ণ যুক্তি পরম্পরায় প্রতিটি অর্থহীন , অন্ত:সারশূন্য ও শূন্যগর্ভ বিষয়কে সামনে এনে সত্যের আলোয় তাদের বিকৃত ও কদর্য চেহারা দেখিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন ৷ তাই ‘স্বর্গ নরক’ অংশে লেখিকা ইতিহাসনিষ্ঠ ভাবে এবং বৈজ্ঞানিকের নির্মোহ দৃষ্টিতে চরম এক বিভ্রান্তিকে ধরিয়ে দিয়েছেন এই ভাবে ,” ধর্মশাস্ত্রের প্রবক্তা মনু বলেন—” স্মৃতিশাস্ত্রে চারবর্ণের জন্য যে
ভিন্ন ভিন্ন আচার কথিত আছে , তা প্রতিপালন করাই পরমধর্ম ৷”প্রকৃতপক্ষে কিন্তু চারবর্ণের মানুষের প্রত্যেকে নিজ বর্ণধর্ম অর্থাৎ বর্ণ অনুযায়ী জীবিকা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে শাস্ত্রকারগণ ‘সকলের মধ্যে সমতার’ পরিবর্তে মানুষে মানুষে আর্থসামাজিক অসমতাই তৈরি করতে চেয়েছেন ৷ আর এজন্য প্রয়োজনে স্বর্গলাভ অথবা নরকগমনের ভয় দেখাতে কার্পণ্য করেন নি ৷” সঠিক ও যথাযথ বিশ্লেষণ ৷ একমাত্র আদিম ও মধ্যযুগীয় তথা সামন্ততান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন বর্বর মানুষ ছাড়া অন্য আর কেউ এমতের বিরোধিতা করবে না ৷

পরলোক ও কর্মফলের তত্ত্বের সঙ্গে নিবিড় ও অভিন্নভাবে জড়িয়ে রয়েছে তীর্থমাহত্ম্যের মিথ ও মিথকেন্দ্রিক লোকভাষ্য ৷ যাগযজ্ঞের পরিবর্ত তথা বিকল্পরূপেই উত্তরবৈদিক যুগে তীর্থ-মাহাত্ম্যের কথা পাওয়া যায় ৷ এ গ্রন্থের “তীর্থ মাহাত্ম্য” অংশটিকে লেখিকা যথেষ্ট ঐতিহাসিক নিষ্ঠা ও প্রাজ্ঞতার দ্বারা বুনে তুলেছেন ৷ ইতিহাসগত ভাবে এটা সত্য যে , বৈদিক যুগের শেষ দিকে বেশ কয়েকটি বৈদেশিক আক্রমণ ঘটে এবং পাশাপাশি বৌদ্ধদের উথ্থান ও ক্রমপ্রসারকে প্রতিরোধ করা ব্রাহ্মণ্য শক্তির পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় ৷ এরওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ ও জনবিন্যাসের পরিবর্তন পুরাতন তন্ত্রকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয় ৷ ব্যয়বহুল যজ্ঞানুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় ৷ এই “শূন্যস্থান আংশিকভাবে পূরণ করা এবং সনাতন ব্রাহ্মণ্যধর্মের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে দেশের প্রায় সর্বত্র তীর্থস্থান গড়ে তোলা হয়৷ কল্পিত দেবতাদের বাসস্থান রূপেই তীর্থস্থানগুলি হয়ে ওঠে পবিত্র স্থান বা তথাকথিত পুণ্যস্থান ৷ এই তীর্থস্থানগুলিকে দেবতার বাসভূমি রূপে জনসাধরণের কাছে সহজেই গ্রহণীয় করার উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিটি তীর্থস্থানের সাথেই জুড়ে দেওয়া হয় এক বা একাধিক গল্প ৷ ” আবার ধর্মগ্রন্থ নির্দেশিত ‘ব্রত উপবাস’-এর মধ্যেও যে একধরণের কায়েমি শ্রেণিস্বার্থ নিহিত আছে ,সেটাও যুক্তির আলোয় মেলে ধরবার চেষ্টা করেছেন লেখিকা ৷ বিখ্যাত পন্ডিত P.V Kane এর লেখা “History of Dharmasatra” থেকে উদ্ধৃতি চয়ন করে লেখিকা তাঁর মতামতকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন—”
Towards the end of the 13th century , the men of the day,…both
learned and ignorant, were expending vast intellectual labour
and large sums of money on vratas , pilgrimages and sraddhas, blissfully ignorant of and blind to the political and religious dangers that engulfed them all .”

পুনর্জন্মবাদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িয়ে রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্র ৷ সেই সঙ্গে রয়েছে কর্মবাদের সম্পর্ক ৷ ‘জীবনও ফলিত জ্যোতিষ’ অংশেলেখিকা খুব যত্নের সঙ্গে সুচারু যুক্তিবিন্যাসে এবং বিজ্ঞানের সুনির্দিষ্ট পথে জ্যোতির্বিজ্ঞানএবং ফলিত জ্যোতিষের মধ্যকার পার্থক্যটিকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন ৷’বৈদিক জ্যোতিষের’কথা বলা হলেও বেদে কোথাও যে ফলিত জ্যোতিষ বা রাশিচক্রের সাহয্যে ভাগ্যগণনা সম্বন্ধে
কোন তথ্য পাওয়া যায় না , এ সত্যকে লেখিকা প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছেন ৷ আবার অন্যদিকে ‘সবর্ণ ও অসবর্ণ বিবাহ’ অংশে লেখিকা চাতুর্বর্ণ্য প্রথার উৎপত্তির পাশাপাশি তিনি দৃষ্টান্ত সহযোগে প্রমাণ করেছেন ধর্মশাস্ত্রের যুগে অসবর্ণ বিবাহ শুধু ধর্মানুমোদিতই ছিল না , সমাজে বহুল প্রচলিতও ছিল ৷
অথচ ভারতীয় সমাজে আজ অসবর্ণ বিবাহ সংবিধান স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও সমাজের একটা বড় অংশ এই বিবাহ মেনে নিতে পারে না ৷ তত্ত্বে এবং বাস্তবে নারীর অবস্থানের স্ববিরোধিতার দিকটি ধরা পড়েছে এ গ্রন্থের ‘দেবী ও দাসীঃ দুই রূপে নারী’ অংশে ৷ আসল কথা হ’ল নারীকে স্বাতন্ত্র্য লাভের সকল প্রকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে পুরুষের অধীনস্থ করে রাখার ব্যবস্থাই গড়ে তুলেছিল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শাস্ত্রকাররা৷ আধিপত্যকামিতার ভয়াবহ অবদমনের রাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে এই অংশে ৷ মনে রাখা দরকার স্মৃতিশাস্ত্রের প্রধান প্রবক্তা মনু বলেছেন—

পিতা রক্ষতি কৌমারে , ভর্তা রক্ষতি যৌবনে ৷
রক্ষন্তি যৌবনে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমহর্তি৷

অর্থাৎ মনুর বয়ান অনুযায়ী স্ত্রীলোকে কুমারী অবস্থায় পিতা, যৌবনে স্বামী এবং বার্ধক্যে পুত্র রক্ষা করবে, স্ত্রীলোক কখনও স্বাতন্ত্র্য লাভের যোগ্য নয় ৷

এ গ্রন্থের শেষ পরিচ্ছেদটির নাম “সংস্কৃতি ও কুসংস্কৃতি ” ৷ এই অংশে লেখিকা ঠিক আগের মতই ঝরঝরে সহজ ভাষায় বোঝাতে চেয়েছেন যে অন্ধবিশ্বাসের উৎস হ’ল আমাদের মধ্যকার অবিদ্যা এবং অজ্ঞানতা ৷সেই সঙ্গে এও বলতে ভোলেননি যে, ধর্ম বিশ্বাস কো’ন ভাবেই যুক্তি , বুদ্ধি বা বিজ্ঞান চেতনার ওপর নির্ভরশীল নয় ৷ যাবতীয় কুসংস্কৃতির জন্মের পেছনে আছে অলৌকিকতার প্রতি এক প্রকার নির্বোধ বিশ্বাসের সদা সক্রিয় ভূমিকা ৷ রাষ্ট্রশক্তির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে শাস্ত্রকারগণ মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গোটা জীবন ব্যাপী বিভিন্ন উপলক্ষ্যে নানান প্রকার ধর্মীয় ক্রিয়াকান্ড ও আচার-আচরণের বিধান দিয়ে ব্রাহ্মণ পুরোহিত শ্রেণির জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৷ এই ধারা বংশ পরম্পরায় চলমান ৷ শ্রমজীবী জনতাকে লাগামহীন শাসন ও শোষণের উদ্দেশ্যে উচ্চবর্ণভুক্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিত তথা শাস্ত্রকার এবং শাসক শ্রেণির মধ্যে রয়েছে এক রাজনৈতিক বোঝাপড়া এবং এক চিরস্থায়ী গাঁটবন্ধন ৷ জনসাধরণকে যদি হাজার রকম ধর্মীয় বাঁধনের ক্রিয়াকান্ডে বেঁধে রাখা যায় , তাহ’লে শাসক শ্রেণির শোষণের স্বরূপ উপলব্ধির ম’ত সময় ও সুযোগ এবং সেই উপযুক্ত মানসিকতা থেকে বঞ্চিত হতে হয় জনসাধরণকে ৷ এই সুযোগে শোষণের ভিত হয় পাকা ও অপ্রতিরোধ্য ৷ আজও আমাদের সমাজের নানা অংশে মধ্যযুগীয় কুসংস্কৃতির বিবিধ ধারা বহমান ৷ নানান শ্রেণির ধর্মবণিকদের সংস্কৃতি বিরোধী কার্যকলাপ বর্তমান সময়ে টিকে থাকার ম’ত রসদ সংগ্রহে ব্যস্ত ৷ ধর্ম এবং রাজনীতির অশুভ আঁতাত এই রসদে ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত ৷ লেখিকা তাই গ্রন্থের শেষ অংশে বলেছেন—”আধুনিক বিজ্ঞান এমন কোন মনুষ্যেতর ঈশ্বরকে আবিষ্কার করতে পারেনি , যাকে ছোঁয়া যায় , এবং যার অস্তিত্বকে চোখে দেখে প্রত্যক্ষ করা যায় ৷…..পদার্থবিজ্ঞান এবং সৃষ্টিবিজ্ঞান প্রাণীদেহে মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্নায়ুতন্ত্র ছাড়া অন্য কোন আত্মার সন্ধান পায়নি ৷….দেহহীন (বস্তুহীন) কোন চৈতন্য বা আত্মা কোথাও বিরাজ করে না ৷…বহুযুগ সঞ্চিত সব কুসংস্কারের কাঠামোকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান সুযোগ ও অধিকারের ভিত্তিতে সমাজগঠনের প্রথম ও সর্বপ্রধান শর্ত হল ব্যাপক গণচেতনার উন্মেষ ৷…ধর্মীয় সংস্কারের মোহ ত্যাগ করে অবিরাম শ্রেণিসংগ্রাম ও আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার দ্বারা বুদ্ধি ও যুক্তি নির্ভর সমসমাজ গঠনই আমাদের মুক্তির উপায় ৷”

“ধর্ম সংস্কার ও কুসংস্কার ” আসলে এক আলোকিত গ্রন্থ ৷ এ যেন এক আলোর খনি ৷ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিপরীতে যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীল ঝোঁক ও প্রবণতার বিরুদ্ধে এ গ্রন্থ আসলে এক বৈদ্ধিক , বৈপ্লবিক আগ্নেয় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ৷ ধর্মীয় ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে এ গ্রন্থ হাজার হাজার মিশাইলের চেয়েও ক্ষমতাবান ৷ এ গ্রন্থের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যথার্থ সহজ সরল ভাষা ও ভঙ্গিতে লেখিকা তাঁর মৌল বক্তব্যকে নান্দনিক ভাবে মেলে ধরতে পেরছেন ৷ কোথাও কষ্টকল্পিত কৃত্রিমতার আশ্রয় নিতে হয়নি ৷ আমাদের দেশ সহ গোটা পৃথিবীতেই আজ ধর্মরাজনৈতিক সন্ত্রাস ভয়াবহ বিপন্নতা বয়ে আনছে প্রতিমুহূর্তে ৷ আমাদের তাই অনেক বেশী সচেতন হতে হবে ধর্মবণিকদের রণকৌশলটুকু বুঝে নিতে ৷ এ গ্রন্থ অবশ্যই সেই বুঝে ওঠার পাঠ আমাদের দিতে পারে ৷ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিত্য নতুন যুগের চলমান সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের ধর্ম থেকে বিজ্ঞানের পথে আসতে হবে , বিশ্বাস থেকে বুদ্ধি ও যুক্তির পথে পা বাড়াতে হবে ;মরচে পড়া চেতনায় আঘাত হানতে হবে , এই উত্তরণেই নিহিত আছে মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ ৷ কেননা ” এ পথেই পৃথিবীর ক্রম মুক্তি হবে ৷ “

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত