বিতর্কিত ডিম

Reading Time: 2 minutes

 

ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিনা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বিতর্ক করে আসছেন। আমেরিকান মেডিক্যাল জার্নাল জে এ এম এ-র প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন মাত্র দুটি ডিম খেলেই হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়, এবং অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

এতে বলা হয়, আসলে ডিম খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিনা – তা হয়তো নির্ভর করে আপনি কতগুলো ডিম খাচ্ছেন তার ওপর।

ডিম নিয়ে এ উদ্বেগের কারণ হচ্ছে : ডিমের কুসুমে থাকে বিপুল পরিমাণ কোলেস্টেরল। একটি বড় আকারের ডিমে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১৮৫ মিলিগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানুষের খাদ্যে দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল থাকা উচিত নয়। অথচ এর অর্ধেকেরও বেশি কোলেস্টেরল আছে একটি মাত্র ডিমে।

ঝুঁকি আসলে কতটা?
এ জরিপে মোট ৬টি পরীক্ষার উপাত্ত ব্যবহৃত হয়েছে – যা ১৭ বছর ধরে ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা।

গবেষকরা এর পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে – খাবারের সাথে দিনে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ১৭ শতাংশ, আর অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে ১৮ শতাংশ।

বিশেষ করে ডিমের ক্ষেত্রে গবেষকরা দেখতে পান যে প্রতি দিন তিন থেকে চারটি ডিম খাবার সাথে হৃদরোগের ৬ শতাংশ বাড়তি ঝুঁকি এবং অকালমৃত্যুর ৮ শতাংশ বাড়তি ঝুঁকির সম্পর্ক আছে।

তবে এর মধ্যে বেশ কিছু ‘যদি’ আছে
জরিপটি বলছে, হৃদরোগ বা অকালমৃত্যুর সাথে ডিমের এই সম্পর্কের সাথে বয়স, ফিটনেসের স্তর, তামাক ব্যবহার, বা উচ্চ রক্তচাপের মতোআগে থেকে বিদ্যমান কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক নেই।

“আমাদের জরিপে দেখা গেছে যে দুজন লোক যদি হুবহু একই খাবার খায়, এবং একজনের ক্ষেত্রে শুধু ডিমের পরিমাণটিই আলাদা হয় – তাহলে এ লোকটির হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি বেশি হবে” – এ কথা বলছেন জরিপ রিপোর্টটির অন্যতম প্রণেতা, এবং নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক নোরিনা এ্যালেন।

‘আগেকার গবেষণার সাথে এ ফলাফল মিলছে না’
এর আগের গবেষণায় বলা হয়েছিল, ডিম খাওয়া এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।

কিন্তু নতুন এই গবেষণার সাথে সেসব ফলাফল মিলছে না।

নোরিনা এ্যালেন বলছেন, আগেকার জরিপগুলোতে নমুনার বৈচিত্র্য কম ছিল এবং অংশগ্রহণকারীদের ওপর নজর রাখা হয়েছিল কম সময় ধরে। তবে এই গবেষকরাও স্বীকার করছেন যে তাদের জরিপ পদ্ধতি বা বিশ্লেষণেও ভুল থাকতে পারে।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নতুন এ গবেষণার ফল ‘পর্যবেক্ষণমূলক’ – তারা ইঙ্গিত করছেন যে ডিম খাওয়ার সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক থাকতে পারে – কিন্তু ‘একটার কারণেই যে অন্যটা হচ্ছে’ তা প্রমাণ করতে পারেননি।

তাহলে এবার বলুন, দিনে ক’টা ডিম খাওয়া যাবে?
কতগুলো ডিম খাওয়া নিরাপদ – এ প্রশ্ন করা হলে নোরিনা এ্যালেন বলছেন, সপ্তাহে তিনটির বেশি নয়।

তিনি আরো বলেন, “আমি ডিম খাওয়া একেবারে বাদ দিতে বলছি না, শুধু কমাতে বলছি – এবং কুসুম বাদ দিয়ে প্রধানত ডিমের শ্বেতাংশটাই খেতে বলছি।”

এক জরিপে বলা হয়, একজন আমেরিকান বছরে গড়ে ২৫২টি ডিম খায়। সেদেশে ২০ শতাংশ মৃত্যু হয় হৃদরোগের কারণে। কিন্তু জাপানে এক জন লোক বছরে গড়ে ৩২৮টি ডিম খায়, কিন্তু সেখানে হৃদরোগে মৃত্যু হয় মাত্র ১১ শতাংশ লোকের।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টম স্যান্ডার্স বলছেন, পরিমিত মাত্রায় ডিম খেলে – যেমন সপ্তাহে তিন থেকে চারটি – তাতে কোনো সমস্যা নেই।


সূত্র : বিবিসি

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>