নোবিতা নোবির কল্পনা আজকের ডোরেমন

Reading Time: 3 minutes

তাসনুভা মেহ্জাবীন

ডোরেমন হলো একটি মাঙ্গা সিরিজ। সারা বিশ্বের সবচেয়ে অর্থ উপার্জনকারী আনিমেটেড ফ্রাঞ্চেইজি হিসেবে এটি পরিচিত। সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ছোট বাচ্চারা এই কার্টুনটি দেখে। সেই ১৯৬৯ সাল থেকে এটি চলে আসছে এবং এখনো সমান জনপ্রিয় রয়েছে।
ডোরেমনের কাহিনিটি ছিল ভবিষ্যৎ থেকে আসা একটি রোবটীয় বিড়ালকে নিয়ে যে ২২শ শতাব্দী থেকে বর্তমানে আসে নোবিতা নোবি নামক এক স্কুল ছাত্রকে সাহায্য করতে।

নিজের সৃষ্টি কাল্পনিক চরিত্রের সঙ্গে স্রষ্টা ফুজিও এফ ফুজিকো


এই ডোরেমনে পেছনে এক আসল ইতিহাসও রয়েছে। নোবিতা নোবি নামে এক বালক সত্যিই ছিল জাপানে। সে স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিল। এই রোগের রোগী তার পছন্দের সবকিছু কল্পনা করতে এবং একসময় তাকে ভাবতে শুরু করে। নোবিতাও ডোরেমনকে কল্পনা করতে শুরু করে। নোবিতার রোগের কারণে তাকে নিয়ে সবাই খুব ঠাট্টাতামাসা করত। সে কল্পনা করে ডোরেমন তাকে সেসব থেকে বাঁচায়। ডোরেমন এবং নোবিতা একসাথে সমস্ত দুনিয়া চষে বেড়াতে থাকে। তাদের মনে কোনো বাঁধা থাকে না।
এভাবে একসময় নোবিতা নিজেকে তার রুমে বন্ধ করে দেয়। সেখান থেকে আর বের হয় না। এ অবস্থা দেখে তার বাবা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার অনেক কষ্টে তাকে বুঝায় যে ডোরেমন মাত্রই তার কল্পনা, এর বেশি কিছু নয়।
নোবিতা ডাক্তারের কথা বুঝতে পেরে বাড়ি আসে এবং প্রচণ্ড নিঃসঙ্গ অনুভব করতে থাকে। একসময় সে আত্মহত্যা করে কারণ ডোরেমনবিহীন জীবন তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
জাপানি কমিক এবং মাঙ্গা লেখক ফুজিও এফ ফুজিকো এ কাহিনীর অবলম্বনে লেখা শুরু করেন যা আকাশছোঁয়া সাফল্য পায়। তিনি একসময় এর প্রকৃত সত্যটা দিয়ে কাহিনি শেষ করতে গেলে ডোরেমন ভক্তদের মধ্যে চরম আন্দোলন তৈরি হয়। সবাই এর বিপক্ষে চলে আসে। তখন ফুজিও ফুজিকো লেখা না ছেড়ে লিখে চলেন। পরবর্তীতে তা সফল অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজে পরিণত হয়।
ফুজিও এফ ফুজিকো ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ডোরেমন লেখেন। তবে তার মৃত্যুর পরও এটি চলতে থাকে। যারা এগুলো লিখত তারা এটি শেষ করার জন্য দুইবার প্রচেষ্টা চালায়।

ডোরেমন হলো শিশুদের বর্তমান এবং বড়দের অতীত


একবার ডোরেমনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায় এবং নোবিতা সেই শোকে অন্যরকম হয়ে যায়। দীর্ঘ ৩৫। বছর সে সাধনা শেষে একসময় সে নিজেই ডোরেমনকে ঠিক করতে সফল হয়। এই এপিসোডটি প্রচণ্ড সাফল্য পেলেও ভক্তরা আরো এপিসোদের দাবি চালিয়ে যায়।
দ্বিতীয়বার নোবিতা তার ছোটবেলার বান্ধবী সিজুকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সে তা গ্রহণ করলেও একজনের ষড়যন্ত্রে নোবিতা ভুল খবর পায় যে সিজুকা তাকে গ্রহণ করে নি। সেকারণে নোবিতা আত্মহত্যা করে। এই এপিসোডটি তেমন জনপ্রিয়তা পায় না, উল্টো এর বিরুদ্ধে আরো বেশি আন্দোলন শুরু হয়।
এরপর আর কেউ এটি শেষ করার চেষ্টা করেনি। বর্তমানে ডোরেমন সারা পৃথিবীতে কার্টুন হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। নোবিতা-ডোরেমনের অভিযানের ওপর নির্ভর করে প্রায় ৩২ টি মুভি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ মুভিটি ছিল ডোরেমন কীভাবে নোবিতার জীবনে আসে এবং তার জীবনটা ডোরেমনের ওপর চলে আসে।
আগে আমাদের দেশে হিন্দিটা প্রচারিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে আমাদের দেশে এর বাংলা ডোরেমন শুরু হয়েছে। ডোরেমনের আদলে জাপানিরাই কিটেরেটসু, মুজাকো, নিনজা হাত্তোরি, চিম্পুই ইত্যাদি এর মতো কার্টুন নির্মাণ করলেও কোনোটিই ডোরেমনের আগে যেতে পারেনি।

ডোরেমন হলো বন্ধুত্বের প্রতীক


ডোরেমন হলো একটি অমর বন্ধুত্বের, নোবিতা এবং ডোরেমনের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতীক। এটি কৃত্রিম হলেও এর ভেতরে দেখানো নোবিতা ডোরেমনের ভালোবাসা অকৃত্রিমই মনে হয়। সেকারণে ডোরেমন সবার এত্ত প্রিয়। ডোরেমন হলো শিশুদের বর্তমান এবং বড়দের অতীত। ফুজিও এফ ফুজিকোর অমর সৃষ্টি!

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>