বিরহের কবিতা
এই সন্ধ্যা কবিতাবন্ধ, আবছায়া আলোর বিন্যাস থেকে মুক্তো ঝরে
আকস্মিক ভেসে আসে তার মুখ, আকাশের গভীর চাদর সরিয়ে
পৃথিবীর সমস্ত চরাচর নিয়ে জেগে ওঠে পুরনো বেদনা ;
অন্য দংশনে যেন সে পাপবিদ্ধ কুমারীর মুখ দূর পৃথিবীতে গিয়ে
একটি পঙক্তির মতো নড়ে চড়ে, হাওয়ার সমস্ত কাতরতা নিয়ে
বাকি সব কল্পনা, মনোরথের দীর্ঘ ভ্রমণ, অস্পষ্টতার ভেতর থেকে
একটি কার্নিশকে চূর্ণ করে উজ্জ্বলতায়, বিরহের কবিতা জন্মায় ;
দেখা হবে
একটা কনে-দেখা রঙের আকাশের পাশে
যুগব্যাপী দেখা উঁচু দেয়ালের ভঙ্গিমা
বাধ্য কিশোরের আঁটকে পড়া ছেলেবেলা
নিয়ে নিস্তেজ দাঁড়িয়ে আছে কিরকম!
ক্লান্ত পথিকেরা ঘরে ফিরে যায়। এই রঙ
এই খেয়াল থেকে আশ্চর্য দূরত্ব নিয়ে,
জীবনের দিকে মনোনিবেশ, হিংস্র হাওয়া
যদি উপড়ে রেখে গেছে অন্য কারো জীবন
তখন নিরিবিলি যে নদীটি গিলে খায় সূর্য
অবাক দেখা বেণীগাঁথন, তার রং রূপ মুছে;
আমি সে নদীর জলে নাইতে নেমে দেখি –
স্বপ্নের চলছে মহড়া, অন্য আরেক দিনের ;
এই নিয়ে কারুকাজ। আমাকে হাত বাড়ায়
অদেখা বিকেল, কনে রূপ বৃত্তায়ন, তাকে
বলি চলে যাবার কথা। সে বলে, দেখা হবে।
তার কথা
তার গান ফুরিয়ে আসে, তবুও মুগ্ধতায় বাতাস দোলে
এই বর্ষাকাল পাতায় পাতায় লিখে তার নাম ;
তুমি ফিরে আসো, যেন সর্বস্ব রেখে এসে তার কাছে
শুধু মধুর গন্ধ, কদমের বনে ছড়ানো হাহাকার!
তুমি দেখো মানুষের দূর অভিমান, বৃষ্টিজলের ছিটে,
তারই মুখের প্রতিচ্ছবি, সংলাপহীন পারাপারে
সুদূরে হারিয়ে যাওয়ার মতো অজস্র কবিতা তার শ্রী
সে আসে অরণ্যে, লতাগুল্মের এই স্নানধারায় ;
তার গান ফুরিয়ে আসে, তবুও মানুষের থাকে মুগ্ধতা
চিরায়ত শূন্যতার বিপরীতে তাকে খোঁজা কারবার,
বিষণ্ণ নূপুরের দিন আর থেমে যাওয়া শব্দের নিবাসে
যদি সে আসে, মুচকি হাসে, আকাশে রংধনু চমকায়
বন্ধ্যা সময়
লেখার হাত বন্ধ হয়ে এলে ভেতরে শুরু অস্থিরতা
যেন মনমরা বিকেলের পাশে স্থির সাঁকো
দুই পাশ খুলে নেয়া, তবুও পার হওয়া চাই।
যেন অনন্তদিন পার হতে না পেরে বিবর্ণতা এক গ্রাম
মেঘ চমকায় তবুও হাওয়ার তোড়ে ভাঙেনা সাঁকো
বহুদূরে বৃষ্টি নামে, গুমরে ওঠা কান্নাকে পথ দেখায়।
ডাকনাম
উড়ে যাব এই বাসনা রাখি
মেঘঘন তোমার চোখ
আর জীবনানন্দের বিরহ
সমন্বিত এ সান্ধ্যমুহূর্তে
কে আমাকে ফেলে রাখে
এলিয়ট ক্যাথিড্রালে একা!
আমি তো চলে যাব বলে
করে আছি কবে মনস্থির
অনন্ত আকাশের দিকে –
সেখানে সমুদ্রপাখি আসে
হিমদেশের গান শোনায়।
উড়ে যাব এই বাসনা রাখি
যাবতীয় অনুযোগের দূর
কেবল একটি ডাকনাম…
