আমি যেদিন যাবো
আমি যেদিন যাবো, স্বস্তি পাবা-
নির্দ্বিধায় ছিপি খুলে নিও সমস্ত চিয়ার্সধ্বনিকে ডেকে, আর আস্ত ডিমের পুডিং হতে চামচে তুলে নেবে পছন্দসই; যেদিন চোখ মেলে চাওয়াটুকু থাকবে না আমার, এমনই মানুষেরা থাকা-না থাকার নির্জনতাকে গার্গেল করে করে ফেলছে মাটিতে, সে রকম কুলকুচি করে গলা থেকে নামিয়ে নিও আমার কবিতা!
আর, নিশ্চয়ই কেউ ধামাধরা বলবে না এসে- মাটির পিদিম হাতে চট করে দীঘল অরণ্যে, নিজেকে নিজেও খুঁজে বেড়াবে না কেহ! তুমি ও তোমাদের ঘিরে প্রোপাগান্ডার ভীড়, ঠেলে এসে বসবে না কেউ আঙুল উঁচিয়ে!
আসলে, এতোটাই ভুল করেছি, মৃত্যুকে ঘরে ডেকে এনে ডিনার খাওয়াতে চেয়ে, তাকে বসিয়ে রেখেই লিখতে বসেছি তুচ্ছ কবিতা, ভুল করেছি; তোমাদের থাবায় হেলান দিয়ে, কবিতা লিখেছি আমি, এইবার হাই তোলো, নিদ্রাকে প্রসাধনী দাও!
রাজ্যের যত ফরমাশ, সারাদিন কত না জ্বালাতন করে
হে সাহিত্য সওদাগর, কবিতাকে পণ্য লেভেলে নামানোর সফলতাকে ঠেঙাবে, এমন মুরোদ আছে আর কারো?
আমি যেদিন যাবো, আমার কবিতাকে
সব কথা বলে কয়ে যাবো!
একা
প্রাচীনতম পাহাড়ের মতো আগ্নেয়গিরি সেট করে বসে আছে প্রাক্তন কবিবন্ধুরা, সমুদ্রের ফেনা জড়ো করে ডেকে আনছে দাঁতাল হাঙর, চারিদিকে রটিয়ে দিয়েছে ধারালো বাতাসের ছুরি; আর তাহাদের যতো খিস্তি ও খাদের কিনারা, ছুড়ে দেয় এদিকে, সারাদেশের বন্যাকে দানব সাব্যস্ত করে আমি পুনরায় দাঁড়াতে চাইছি আঘাতের মুখোমুখি!
আকাশটা খালি পড়ে আছে, সেখানে কোনও উপদল নেই, প্রবঞ্চনা নেই, থ্রেট নেই; আছে শুধু উড়ে যাওয়া প্র্যাকটিস, আছে কোনো পানকৌড়ির ঠোঁটের ভিতর আটকানো মাছ একা!
যারপরনাই কবিতা লিখছি বলে, যতো প্রাক্তন রাগচোখ এড়িয়ে মগজে দগ্ধ করেছি আগুন; ততোদিন গান, ততোদিন খোলা উদ্যান!
এই হাসিখুশি, এই সংসারে থাকা আর এইসব হিংসাকে
‘এলিট’ পদবী ছুড়ে দিয়ে ডুব মারো অক্ষরে, একা একা ভাবো, একা হতে থাকো কবি!
নিচুমানুষের ছায়া
এতোটা রোদ্র গিয়ে স্লিপ খায় পাকা রাস্তায়, এতোটা বিনিদ্র যে সমস্ত রাত্রির স্মৃতি, নিজের ভিতরে নিজে প্যাচ লেগে চুপ হয়ে আছি; এভাবে চাই না আমি, প্রস্থান বা চলে যাওয়াটিকে!
এভাবে মায়ের দিকে, একবার চেয়ে শিশুর মতন
একবার চেয়ে নিঃসঙ্গ, একবার শুধু হেসে না ফেলে
যেতে চাই না, কোত্থাও নয়, তুমি বরং লাল ফিতা নাও
খোঁপা বেধে নাও, ফুলতরণীতে!
বাধের কিনার ঘেঁষে ঢেউ আছড়ায়, এই দৃশ্যে
বাজ ওড়ে কিছু, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর দেশে
বন্যাও যেনো করাল শ্বাপদ।
এই ভাসমান গ্রহে
ক্ষুধা ও ক্রন্দনরত নিচুমানুষের ছায়া
অসুখে ফেলে রেখে, আমি তো যাবো না কোথাও, এইভাবে;
এইসব রোদ, জরা ও জয়ন্তী ফেলে, কোথাও যাবো না আমি!
ইতিহাস
মহত্ত্ব অপেক্ষা মহত্ত্বের অভিনয়ে
তুমি স্বচ্ছল, ড্রামাটিক!
তার ওপর বেঁচে থাকাটার
কিছু ধার দেনা থাকে, পুষ্পের থাকে
নিত্য ভ্রমরডানা, কিছুদিন হাসিখুশি থাক
মর্ত্য ও মাটির কলহে জল, তুচ্ছকে হাত নেড়ে ডাকো!
এইদিকে শহীদ মিনার ঘেঁষে, প্রাচীন গ্রন্থাগার
আমাকে ধীর স্বর ডাকে, গল্পের বিপ্লবী;
যেনো কোনো কবিতাগ্রন্থের পাতা, রাইফেলে ভরে যাচ্ছে একা; এইদিকে ভুলেও কখনো, তাকাবে না তুমি! তাও জানি আমি!
তার ওপর গানের কলিতে প্রেম;
তার ওপর চাষাদের চিৎকারে, স্বাধীন বাংলাকে
দিশাহীন-বিবস্ত্র লাগে, এতসব জানো নাকি তুমি?
এইসবে মন দিতে গিয়ে বাবার আহত মুখ, বারবার এসে
চোখে ভাসে কেনো? বাবাকে প্রশ্ন করি, কতদিন হাসি নেই বাবার মুখে!
জিজ্ঞাসা শুনে ইতিহাস, নিজ জ্ঞানে চুপ করে হাঁটে!
মৃতদের স্মৃতি
তিনমাস হৃদপিণ্ডে আমি শুধু বৃষ্টিই চেয়েছি
ফিরে যেতে উদ্যত পা- ফিরে গিয়ে অনেক আকাশ ফুঁড়ে, যেখানে ভ্রুকুটি, পরশ্রী-কাতরতা
সকলই হলো ধুলিচাপা পড়া ডায়েরির পাতা;
যেখানে হিজলের ডাল উঁচু হতে চেয়ে, পরমতে শিথিল করেছে মোহ; ফিরে যায় ভ্রম, জিকিরে ভ্রমণ এসে লগিনাড়া হাত পেয়ে থামে; থামে আর ঢেউ, অভিলাষ হতে ছাড়াতে থাকে মৃতদের স্মৃতি!
এই তিনমাস, আমি শুধু পদ্মকে চাই, আমি চাই দিঘীকে এনে দিঘীটার সিঁড়ি ঠেকাবো তোমার পায়ে; এটুকু সময় জ্বলজ্বল করে ঘাট, এখানে মা’কেও শিশুতোষ পাই!
বৃষ্টির পানি পেয়ে খুলে নেন ফুলে নেন, কাতানে আঁকানো ফুল, ভাসাবেন বলে, ঘন রৌদ্র ও লিকারে সাজাবেন বলে, নদী ও সুবিল; আর, ‘রক্তক্ষয়ে মীমাংসা নেই, মিমাংসা থাকে না’ এইটুকু সরল চাহনী ছুড়ে মায়া টাচ করা রমণীটি, আমার মা!
অনেক আকাশ ফুঁড়ে, লওহে মাফুয; ন্যায়-অন্যায়-প্রেম, প্রাচ্যকে ডাকে! ডাকে নাকি শুধু? প্রাচীন শব্দের দল, হারিয়ে ফেলেছে তল?
দেখো, মাঠে ও মজ্জায় কার, ডুবে গেছে আধারোপা ধান!
এই মেঘমালা, এইসব হিমালয়ধ্বনি, বৃষ্টিতে স্নাতকোত্তর?
এটুকু সময় ধরে ভিজবে পৃথিবী, শুনেছো আকাশবাণী?
চৌচির বাকল নিয়ে, ভিজতেছে একাই একটি গাছ
কান্নাও বুকের ভিতরে জমে ধুলাবালি কাদা হয়ে গেছে!
একটি হৃদয়
তোমাকে শোনাব তেমন পাখাঅলা কবিতাও নেই
একটি বিকাল এসে মেঘের হুডের নিচে শান্ত ও শৈবালে ঢাকা
তোমাকে ধীর হতে ধীরতর হাওয়ার আকারে পাই-
যেনো সমস্ত বর্ষায় আমি বাধ ভেঙে আসা জোয়ারের তলে
একটি হৃদয়, যেনো শুকনা খাবার চেয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে হাত
বন্যার তোড়জোরে ভাসমান মা!
এইসব অতিবৃষ্টির ধারে আমাদের স্কুল, নিজ পায়ে ভর দিয়ে
কিছুদিন উচ্চতা পেলো; সবাই শোনালো গিয়ে, ভীষণ মনস্তাপে, গলে গলে পড়ে থাকা ‘মানবতা! মানবতা!’ শুধু!
বন্ধুত্ব ও কবিতা
যেদিন সর্বস্বান্ত রোদ এসে মাথার ওপর, কুকরি মুকরি করে চুল, আর ভাবি, ড্যানড্রাফ একটা বিষন্নতা-
এরকম দিনে, যে কারোই কোনও বন্ধু না থাকাটাও সই; যে কিনা সব দেখে শুনে চুপ করে থাকে, তোমার বুকে রক্তক্ষরণদিনে; যে কিনা হাত উঁচু করে ডাকে আত্মকেন্দ্রে, অভিসন্ধির দিকে- তার কাছে সত্য ও সলতে জ্বালানো
মিহিন আগুন চেয়ে কোনও লাভ নেই!
আর, তোমার সামনে দিয়ে যে হেঁটে জড়ো করে বেজোড় মেঘের পিস, তামাশাবাক্যের শেষে তুমিও তাকে ছুড়ে দিতে চাইছো ভাগাড়ে! রেইনকোট খুলে এসে আয়নাতে, ঐ বিজয়ী মুখের দিকে চাও, দেখো, ছায়াকে আঘাত করছে ত্রিশূল, এটা সাফল্য তোমার, এও নাকি চিরকাল ঘটে! বন্ধুকে উহ্য করে সমস্ত রঙ্ধনু নিজের পকেটে নিলে!
আমি শুধু জানি রোদে, মাথার ঘিলু টগবগ করা রোদে, আমরা দুজন একত্রে দাঁড়াবো সেদিন, ‘ইয়া নফসি’ ধ্বনিত হবার দিনে, কার ওপর এসে ছায়াঘন হবে মেঘমালা?
একটা আধাশোয়া কবিতাজীবন পারি দিয়ে এসে, আজ কেনো যেনো ইচ্ছে করে লিখি, এখানে, এই তীব্র ঝাঁঝালো এলকোহলের পেগে, একবার ডুবে আবার মাথাকে তোলা
‘বন্ধুত্ব এক প্রাচীন ধারণা, মশাই’!
সারাদিন ঘামছে জীবন
(প্রিয় আসাদ জামানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাসহ)
কাছে এক মৃত্যুযন্ত্রণা থেমে থেমে ডাকে, মেঘের মত ডাকে; তুমি ছায়া, দূর সাইরেন, শেষতম রোদে!
কতদিন কাছে এসে বসে কোলের ওপরে, মাথা ঘষে যায় পুরানা গল্প ও গৌরব, যেনো তাড়া নেই, রুলটানা খাতার ভিতর যেনো ঘাপটি মেরে আছে পূর্ণ জীবদ্দশা, ট্রলারের ধোঁয়া, পাখিডাক!
আমাদের আলোহাওয়া ব্রিজ
সম্পর্কের নাম করে বুকের ভিতর
খুটি ধরে জেগে থাকে, বন্ধনে, কাঁপা স্বরে ডাকে
আমাদের খোলামেলা হাসি, টেবিলে বিছিয়ে দিয়ে, কতদিন
বসি নাই আর! নিজ থেকে নিজ নিজ চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে
ধুয়ে মুছে গায়েই নিতেছি আবার, এইসব ক্রুটিবসন্তদিন
ধীর হয়! এভাবে স্মৃতির মিটারে, জড়ো হয় পরিচিত মুখ!
বেসিনে, এগিয়ে দিয়েছি মাথা
গোলগাল ট্যাপের নিচে, পানি পেলে
স্নায়ুর বিকার কমে।
এই দেখো, ক্ষতচুল্লির তলে সারাদিন ঘামছে জীবন, ততোধিক
একলা বোধের তলে গম্ভীর হয়ে আছে শিশুকন্যার মুখ!
এনিভার্সারি
কত হাওয়া, কেটে গেছে হাওয়া, ধার ঘেঁষে হৃদপিন্ডের!
কতটা সুদীর্ঘ লেন একা হেঁটে বৃষ্টিও থামে
বৃষ্টিও পিছু ফিরে চায়, যেনো তার মায়া ও মরম
ফেলে গেছে সে, ফেলে রেখে গেছে আমাদের স্নান!
তুমি আছো, তুমি স্বপ্নকে উঠানে ছড়িয়ে দিয়ে
সমস্ত স্মৃতির গ্যালারি, আলোকিত করে আছো;
আর আছে শব্দের সর
আমাদের ছায়ার সেতারে ওঠে
মৃদু গুঞ্জন!
লাল টিপের পাশে
এখন মিথ্যাকে সহজভাবে নিই, শঠতাকে পিছল খেতে দেখি মেইন রাস্তায়!
ঘাড় ছুঁয়ে ওড়ে খয়েরি পালকের পাখি- যেখানে দাঁড় করে গেছো অপেক্ষায়, সেই লেক ধরে অস্তকে রক্তাভ রেখে আমাদের সূর্যস্বজন হাঁটে! যেন কেউ সমস্ত দীর্ঘশ্বাস
হাতে নিয়ে খামির বানিয়ে ছেড়ে দিয়ে গেছে, আকাশে, সেই থেকে মেঘেদের ঘর নেই, গেরস্থপ্রতিভা নেই!
আজ শুধু জটিলতা নিয়ে ভাবি, লাল টিপের পাশে তোমার ঐ আঁচিলটুকু ঘন হয়ে আসে নাকি দুর্ভাবনায়? কেতলিতে জ্বাল উঠছে চায়ের, দূর থেকে স্বপ্নের হাঁটাচলা দেখি, গৎবাঁধা লাগে; শূন্যকে দিই প্রবেশাধিকার, ধমনীধানের দেশে;
আজ তুমি প্রশ্ন করে দেখো- এসে ফিরে গেছে বুলবুলি, এক পঙ্ক্তির জীবন সন্ধান করে, তোমার চাহনীর নীচে বেড়ে ওঠে চারা। খোঁপার ওজনে দোদুল্যমান ফুলে বিশ্রাম করে, মরু হতে এসেছে যে হাওয়া!
আমাদের চিঠিছাওয়া বিকাল কোথাও নেই, আমাদের পিয়নহৃদয় গিয়ে নক করে না, কারো দরজায় আর! সারাদিন মালা গাঁথে আর ছেঁড়ে উন্মাদ রমনী-
যেন শতাব্দী একটি দোকান, কলিজা এগিয়ে দিয়ে কিনে নিচ্ছে কেউ রাষ্ট্র নামের বুলেট! শতাব্দী এখানে দোকান, ব্যাবিলন আছে, বিভূতি আঁকছে কেউ!
গতকালই তুমি বাকির খাতায়, পরিশোধ করে গেছো, অনিদ্রার পাওনা যেটুকু আমার!
DR. Sazzad Saeef(Md. Ramzan Sarker), a bengali poet and psyciatric physician born on 29th June 1984 in Zatrabari,Dhaka, Bangladesh. Graduated MBBS from Shahid Ziaur Rahman Medical College, Bogra, Bangladesh. Studied CCD(on diabetology) from Birdem and DOC(on dermatolgy) from Aurora Skin And Hair Research Institute, Dhaka and then studied MPH(on public health) from Pundra University Of Science And Technology, Bogra, Bangladesh. Now works as an assistant registrar of psychiatry in TMSS Medical College, Bogra. He is former founder president of voluntary organization- The Wonders Youth Club and now acts as the vice-president of ‘Voluntary Medical Club Bogra’ with Bangladesh Medical Association(BMA) councilor Dr. Jisad Kabir, meanwhile he is a member of Shadinota Chikitsok Parishod, Bangladesh. This poet Worked as the editor of youth journal ‘Niharika'(2002-2004) from Dhaka and little magazin ‘Ekkhon'(2007). Worked as programme management editor of Bogra Lekhok Chokro (2010-2012) and He established a literary study circle named ‘Life Adda’ in 2014. In the early years worked as a Co-Editor of literary webzin ‘Khepchuriyas'(2011) with Jubin Ghosh from Kolkata, India and ‘Kirtikolap'(2015) with Talash Talukder. Author of poetry book ‘Kobi Nebe Jishur Jontrona'(2017) and ‘Mayar Molat'(2019). This poet achieved ‘Best Poet Of the year 2019’ award by Bongovumi Literary Organization. Now a days he works as a co-founder of ‘Jhornakolom Publishers’. His family is with father-mother-younger brother, wife and one and only daughter.