আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির অচেনা দুটো পাতা

Reading Time: 2 minutes

হলোকস্টের সব থেকে পরিচিত মুখ? না কি, সাধারণ এক কিশোরী? ইহুদি তনয়া আনা ফ্রাঙ্কের বিশ্বখ্যাত দিনলিপির দু’টি ‘নতুন’ পাতা ফের উস্কে দিল সেই প্রশ্ন।

১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল আনা ফ্রাঙ্কের ‘দ্য ডায়েরি অব আ ইয়ং গার্ল’। প্রথমে মূল জার্মানে, তার কয়েক বছরের মধ্যে অন্যান্য নানা ভাষায়। জার্মান অধিকৃত নেদারল্যান্ডসে নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে দু’বছর এক গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে ছিল আনা। সঙ্গে পরিবারের বাকি লোকজন। সেই সময়েই ডায়েরি লিখতে শুরু করে বছর তেরোর কিশোরী। দু’বছর পরে নাৎসি সেনার হাতে ধরা পড়ে আনারা। আর তার কয়েক মাস পরেই জার্মানির বের্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, সম্ভবত টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে, মারা যায় মেয়েটি। নাৎসি অত্যাচারে প্রাণ গিয়েছিল পরিবারের সব সদস্যের, বেঁচে গিয়েছিলেন শুধু আনার বাবা ওটো ফ্রাঙ্ক। তিনিই পরে খুঁজে পেয়ে পেয়েছিলেন ডায়েরিটি।

সম্প্রতি সেই ডায়েরির দু’টো পাতা ‘খুঁজে’ পাওয়া গিয়েছে। পাতা দু’টির ওপর আঠা দিয়ে ব্রাউন পেপার আটকানো ছিল সেখানে কী লেখা রয়েছে, এত দিন পড়া যায়নি। নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে এ বার সেই পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এবং পড়ার পরেই স্পষ্ট হয়েছে, কেন আঠা দিয়ে পাতাগুলোর ওপরে কাগজ আটকে দিয়েছিল কিশোরী আনা।

কারণ, ‘নোংরা’ রসিকতায় ভরা ডায়েরির এই দু’টি পাতা। তাই বড়দের চোখ এড়াতে পাতা দু’টো কাগজ দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল আনা। কী লেখা আছে সেখানে? প্রথমেই লেখা— ‘‘আমি এই পাতায় কয়েকটা নোংরা রসিকতা লিখব।’’ তারপর চারটে প্রাপ্তবয়স্ক রসিকতা লিখেছে আনা, যেগুলো সে তার বন্ধুদের কাছে শুনেছিল। এমন রসিকতা, যা কিশোর-কিশোরীরা বলেই থাকে! আমস্টারডামের আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়ামের রোনাল্ড লিওপোল্ডের কথায়, ‘‘এই পাতা দু’টো পড়লে কেউ হাসি চেপে রাখতে পারবে না।’’ তবে লিওপোল্ড জানিয়েছেন, এই রসিকতাই ডায়েরির একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক কথোপকথন নয়। প্রথম রজস্বলা হওয়ার অভিজ্ঞতা, প্রথম চুম্বন, এ ধরনের নানা কথাবার্তায় যৌনতাকে একাধিক বার বুঝতে চেয়েছে কিশোরী আনা।

যে পাতাগুলোয় কাগজ আটকে দিয়েছিল আনা, সেগুলো প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিতে বেশ কিছু দিন সময় নিয়েছিলেন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। লিওপোল্ডের কথায়, ‘‘আমাদের প্রত্যেকের মনেই একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল— আনার যে ভাবমূর্তি আমাদের মনে আছে, সেটা এই পাতা দু’টো পড়ে পাল্টে যাবে না তো?’’ তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে আনা হলোকস্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ হতে পারে, কিন্তু যখন সে এই ডায়েরি লিখছে, তখন আনা তো নিতান্তই এক সাধারণ কিশোরী।’’

সত্যিই তো। হলোকস্ট নিয়ে অনেক গবেষণা, অনেক চর্চার ভিড়ে হয়তো তলিয়ে গিয়েছিল আনার কৈশোর। এই দু’টি পাতা বিস্মৃতির অতল থেকে খুঁজে আনল সেই কিশোরীকে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>