| 23 এপ্রিল 2024
Categories
গীতরঙ্গ

মহামারী সংখ্যা: এই অতিমারী নতুন একটি সিংহদ্বার । অরুন্ধতী রায়

আনুমানিক পঠনকাল: 11 মিনিট

৩ এপ্রিল,২০২০ ফিনানশিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত অরুন্ধতী রায়ের এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছেন অনুবাদক: সুমন গোস্বামী।


 

 

ভাইরাল হয়ে গেছে!!”

আচ্ছা, একটুও আমতা আমতা না করে এই শব্দগুলি কি এখন আর কেউ উচ্চারণ করতে পারবে? দরজার হাতলটা, কি নির্দোষ কার্ডবোর্ড কার্টনটা, সবজিভরা ব্যাগটা – যে দিকেই তাকান না কেন, ভয় হচ্ছে না যে, সর্বত্রই বুঝি গিজগিজ করছে ওই অদেখা অদৃশ্যপ্রতিম বস্তুগুলো! অর্ধজীবিত, অর্ধমৃত ক্ষুদ্র কণা, যার শরীরে অসংখ্য শোষক প্যাড… ওরা বুভুক্ষুর মতো অপেক্ষা করছে আমাদের দেহে ঢুকে সোজা ফুসফুসে পৌঁছে যাবার জন্য! অচেনা মানুষকে চুম্বন! সর্বনাশ!! এক লাফে বাসে ওঠা বা বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো – সবটাই তো এখন সত্যিকারের ভয়ের কাজ! সাধারণ কোনও বিনোদনের কথাও কি এখন আর ভাবা সম্ভব? একটুও ভয় না পেয়ে? আমাদের মধ্যে কি আর এমন কেউ আছেন, যিনি হাতুড়ে এপিডেমিওলজিস্ট নন, ভাইরোলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ বা ভবিষ্যদ্বক্তা নন? কোন বিজ্ঞানী বা ডাক্তারটা আছেন, যিনি লুকিয়ে চুরিয়ে অলৌকিকের জন্য প্রার্থনা করছেন না? কোন ধর্মগুরুটি আছেন, যিনি – লুকিয়ে হলেও – বিজ্ঞানের দোরে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন না?

আবার যখন এই ভাইরাস লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখনও এমন কেউ কি আছেন, যিনি নগরীর বুকে পাখির কিচিরমিচির শুনে রোমাঞ্চিত হচ্ছেন না? আকাশ জোড়া নিস্তব্ধতার মধ্যে ট্রাফিক ক্রসিং জুড়ে নেচে বেড়াচ্ছে পুচ্ছধারী ময়ূর – এ কি রোমাঞ্চকর নয়?

এই সপ্তাহেই গোটা বিশ্বে সংক্রামিতের সংখ্যা দশ লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। ইতিমধ্যে মারা গেছেন পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সংখ্যাটা কয়েক লক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে। আরও বেশিও হতে পারে। বিভিন্ন দেশের রাজধানীগুলোর মধ্যেকার বাণিজ্যপথ বেয়ে অবাধে নেচে বেড়াচ্ছে ভাইরাস। সঙ্গে যে ভয়াবহ রোগটি সে বয়ে নিয়ে আসছে, তাতে সমগ্র মানবজাতি বন্দি হয়ে বসে আছে। নিজের দেশে, নিজের শহরে, নিজের বাড়িতে। তবে পুঁজির স্রোত যেমন কেবল মাত্র মুনাফা খোঁজে, এই ভাইরাসের স্রোত কিন্তু তা নয়। তার লক্ষ্য কেবল বিপুল হারে বৃদ্ধি।

ফলত, কিছুটা কাকতালীয় ভাবে হলেও, সে পুঁজির ওই স্রোতটিকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। অনুপ্রবেশে নিয়ন্ত্রণ, বায়োমেট্রিকস, ডিজিটাল সারভাইল্যান্স ইত্যকার তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতিগুলোকে সে একেবারে হাস্যকর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। সবথেকে বেশি আঘাত হেনেছে সর্বাপেক্ষা ধনী আর ক্ষমতাবান দেশগুলিতেই। ঘাড়ে ধরে থামিয়ে দিয়েছে পুঁজিবাদের মহান রথকে। ক্ষণকালের জন্যেও আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে কিছু সময়। যাতে আমরা প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখতে পারি, বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি, আর সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, আমরা কি এই রথটাকেই ঠিকঠাক করে আবার কাজ চালাবো, না কি নতুন কোনও রথ খুঁজবো? চিনা(মান্দারিন)রা এই অতিমারীর সঙ্গে যুঝছে আর আন্তরিক ভাবেই একে বলছে – যুদ্ধ। কোনও প্রতীকি-টতিকি নয়, খাতায় কলমে যুদ্ধ বলতে যা বোঝায় – সেই যুদ্ধ। আচ্ছা, সত্যিই যদি এটা যুদ্ধ হত তাহলে তার জন্য সবথেকে বেশি তৈরি থাকা দেশটা কে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আবার কে? যদি সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের মাস্ক আর দস্তানার পরিবর্তে বন্দুক, বোমা, সাবমেরিন, জেট-বিমান, পরমাণু বোমা ইত্যাদি ইত্যাদির প্রয়োজন হত, তাহলে কি ও দেশটার কোনও অসুবিধে ছিল? যোগান তো অফুরন্ত!

পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে বসে রাতের পর রাত ধরে আমরা কেউ কেউ নিউ ইয়র্ক গভর্নরের প্রেস ব্রিফিংগুলো শুনেছি অবাক বিস্ময়ে। পরিসংখ্যান ঘাঁটতে গিয়ে পাচ্ছি মার্কিন দেশে উপচে পড়া হাসপাতালের কথা। শুনে যাচ্ছি প্রায় বিনে পয়সায় অতিরিক্ত কাজ করে চলেছেন ওদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা; জঞ্জাল থেকে কাপড় নিয়ে আর বর্ষাতি দিয়ে নিজেদের ব্যবহারের জন্য তাঁরা মাস্ক বানাচ্ছেন; দেখছি ভেন্টিলেটর নিয়ে আকচা-আকচি চলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলির মধ্যে; দেখছি ডাক্তাররা অসহায় বিবেচনায় ব্যস্ত – কোন রুগীকে বাঁচাতে হবে, আর কাকেই বা ছেড়ে দেওয়া হবে মৃত্যুমুখে! এইসব দেখছি আর মনে মনে বলছি, “ভগবান! এই তাহলে আমেরিকা!!  অত্যন্ত বেদনাদায়ক কিন্তু বাস্তব সত্য এটা। যা আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। তবে এ কিন্তু নতুন কিছু নয়। এটা আসলে চলতে চলতে বহুদিন আগেই নিয়ন্ত্রণ হারানো একটা ট্রেনের বেলাইন একটা কামরা। মনে নেই ‘পেশেন্ট ডাম্পিং’ ভিডিওগুলোর কথা? যেখানে অসংখ্য অসুস্থ মানুষকে পরিকল্পিত ভাবে রাস্তার ধারে জড়ো করা হচ্ছে? মানুষগুলোর শরীরে তখনও হাসপাতালের গাউন, কিন্তু পশ্চাদ্দেশ উন্মুক্ত, মনে নেই?

মার্কিন দেশে অভাগা নাগরিকদের জন্য হাসপাতালের দরজা এর আগেও অনেকবারই বন্ধ হয়েছে। মানুষগুলি কতটা অসুস্থ, কতটা কষ্ট পাচ্ছেন – সেটা কোনও বিচার্য বিষয়ই নয়।। তবে এসব এই সময়ের আগের কথা। কারণ এখন, এই মুহূর্তে হতদরিদ্র মানুষের শরীরের অসুখও ধনী সমাজকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। তবুও, সকল লোকের জন্য স্বাস্থ্যের কথা বলা মার্কিন সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এমনকি এখনও, তাঁর নিজের পার্টিতেই।

আর আমার নিজের দেশের কী হবে? আমার প্রিয়তম দরিদ্র কিন্তু ধনী দেশ ভারত! সামন্তবাদ আর ধর্মীয় মৌলবাদের মাঝে, জাতিভেদ আর পুঁজিবাদের মাঝে আটকে পড়া ভারত! অতি-দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকের ভারত! তার গল্পটা কী? ডিসেম্বর মাসে, চিন যখন উহানে ভাইরাস সংক্রমণের বিস্ফোরণ সামাল দিতে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তখন ভারত সরকার ব্যস্ত অন্য কাজে। পার্লামেন্টে সদ্য পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে দেশজুড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে সামাল দেওয়ার কাজ করছে সে। আমাদের দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ। তার ক’দিন আগেই আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবসে মহামান্য অতিথিবর দিল্লি ছেড়েছেন। কে ছিলেন যেন তিনি? আমাজন অরণ্যখেকো আর ‘কোভিড নেই, কোভিড নেই’ চিৎকার করা জাইর বলসনারো। কিন্তু এর পরেও এই ভাইরাসটি শাসক দলের টেবিলে জায়গা পেল কোথায়! তখনও তো আরও অনেক কাজ বাকি!! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসছেন না ফেব্রুয়ারির শেষে!! গুজরাটের যে স্টেডিয়ামে তিনি দাঁড়াবেন, সেখানে দশ লক্ষ লোক সমাগমের কথা দেওয়া আছে না!! এসব করতে তো খরচ হবেই প্রচুর! আর হ্যাঁ, সময়ও খরচ হল বেশ খানিকটা।

এরপর এসে গেল দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। ভারতীয় জনতা পার্টি সেখানে হারতই, যদি না অন্য কোনও খেলা হত। তা সেই খেলা হলও। মাত্রাছাড়া, ভয়ানক হিন্দুত্ববাদী প্রচার শুরু হল। নির্বিচার মারধোর আর ‘গদ্দার’দের ‘গোলি’ মারার হুমকি সহ। এতদসত্ত্বেও, তারা হার এড়াতে পারে নি। তাই এবার শুরু হল দিল্লির মুসলিমদের শাস্তিদান। এই লজ্জাজনক পরিণতির জন্য তো তারাই দায়ী, তাই না? পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে সশস্ত্র হিন্দু গুণ্ডাবাহিনী উত্তর-পূর্ব দিল্লির শ্রমজীবী মুসলিম পরিবারগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আগুন লাগিয়ে দিল বাড়িতে, মসজিদে, দোকানে, স্কুলে। মুসলিমদের মধ্যে যাঁরা এই আক্রমণ আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, তাঁরাও পাল্টা মারলেন। ৫০ এর বেশি মানুষ এতে মারা যায়। অধিকাংশ মুসলিম, কিছু হিন্দু।। কবরখানার অস্থায়ী উদ্বাস্তু শিবিরে তখন হাজার হাজার মানুষ। জালিকার মতো ছড়িয়ে থাকা অজস্র নালা থেকে তখনও কাটা-থেঁতলানো দেহগুলিকে টেনে টেনে বার করা হচ্ছে। ঠিক এই সময়েই সরকারি কর্তাব্যক্তিরা বসলেন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রথম বৈঠকে। ভারতবাসী এই প্রথম হ্যান্ড স্যানিটাইজার বলে একটা জিনিসের নাম শুনল।

মার্চ মাসটাও যথেষ্ট ব্যস্ততায় কেটেছে সরকারের। প্রথম দু হপ্তা গেছে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিয়ে বিজেপি সরকার বসানোর খেলা খেলতে। মার্চের এগারো তারিখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ কে প্যানডেমিক বা অতিমারী হিসেবে ঘোষণা করে। এর দুদিন পর, মার্চের ১৩ তারিখ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলেন, “করোনা কোনও হেলথ এমার্জেন্সি নয় ।” অবশেষে মার্চের ১৯ তারিখ ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা করতে উঠলেন। খুব একটা হোমওয়ার্ক করে আসতে পারেননি তিনি। ফ্রান্স আর ইটালির নোটবুক পড়েই কাজ চালাতে চেয়েছিলেন। তিনি তাই আমাদের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এর প্রয়োজনীয়তা বোঝালেন (জাতিভেদ আর বর্ণপ্রথা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে যে সমাজকে, তারা এটা চট করে বুঝবেও), আর আহ্বান করলেন ২২ তারিখ ‘জনতা কাফিউ’ পালন করার। এই সংকটে তাঁর সরকার কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা তিনি বললেন না। উল্টে মানুষকে

আবেদন জানালেন বারান্দায় বেরিয়ে এসে ঘণ্টা, কাঁসর বাজাতে। এতে নাকি স্বাস্থ্যকর্মীরা উদ্দীপ্ত হবেন!  প্রধানমন্ত্রী বলেননি যে, ওই মুহূর্তেও, ভারত কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র আর স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার্য পি.পি.ই. রপ্তানি

করেই চলেছে। যদিও প্রয়োজন ছিল সেগুলো নিজের দেশের জন্য সামলে রাখার।। নরেন্দ্র মোদীর আবেদন যে মহাসমারোহে পালিত হবে, এতে আর আশ্চর্যের কী! থালা বাজিয়ে মিছিল হল, পাড়ায় পাড়ায় নাচ হল, শোভাযাত্রা হল। ফিজিকাল ডিসট্যান্সিংটাই শুধু হল না! পরবর্তী দিনগুলিতে লোকে ভয়ার্ত গরুদের ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল গোবর সংগ্রহের জন্য। বিজেপি সমর্থকরা গোমূত্র পার্টি দিলেন একের পর এক। এতেই শেষ নয়। বেশ কিছু মুসলিম সংগঠন ঘোষণা করল, এই ভাইরাসের পতন আল্লাহের হাতেই। তাই আবেদন করা হল সবাইকে মসজিদে জড়ো হবার। মার্চ ২৪, রাত আটটা : টিভির পর্দায় আবার মোদীজীর আগমন। এবারের ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা ভারতে লকডাউন। দোকানপাট বন্ধ, গণ পরিবহন বন্ধ।

তিনি এও বললেন, এই সিদ্ধান্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিচ্ছেন না, বরং পরিবারের বয়স্ক সদস্য হিসেবে নিচ্ছেন। বটেই তো, ১৩৮ কোটি মানুষের একটা দেশে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে এরকম একটা লকডাউনের ঘোষণা, তাও আবার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই – এ কাজ আর কে করতে পারে? প্রধানমন্ত্রী তো পারেন না, এটা নিশ্চিত। ওনার কার্যপ্রণালী দেখলে এটা মনে হওয়াটা মোটেই অপরাধ নয় যে, তাঁর কাছে দেশের নাগরিকরা হলেন একেবারেই অবাধ্য এবং এদের নিকেশ করাই উচিত।

আমরা এখন বন্দি। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ বা মহামারী বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। হয়তো নীতিগত ভাবে তাঁরা সঠিকও বটে। কিন্তু মনে হয় না তাঁদের কেউই এই পদ্ধতিটা সমর্থন করছেন। মূর্খের মতো, কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই, প্রস্তুতির বিন্দুমাত্র অবকাশ না দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম এবং অনপনেয় ক্ষতির আশঙ্কাযুক্ত লক-ডাউনটি সংঘটিত হল। আসলে যা উদ্দেশ্য, তার ঠিক বিপরীতটাই যাতে ঘটে। ফুটো ভেল্কিবাজি দেখাতে যিনি ওস্তাদ, এই বিপদে দেখালেন বটে তাঁর তামাসা। স্তম্ভিত, শঙ্কিত বিশ্ব বড় বড় চোখে দেখল, ভারত লাজলজ্জা ছেড়ে আবরণমুক্ত হচ্ছে। সবাই প্রত্যক্ষ করল এই দেশের নিষ্ঠুর, সামাজিক, আর্থিক অসাম্যকে। দেখতে পেল যে,  শ্রেণীভেদে নাগরিকদের কষ্টের তারতম্য হয়।

এই লকডাউনটা অনেকটা বিদ্যূৎ চমকের মতো অন্ধকারে মিশে-থাকা কত কিছুকে যেন আচমকা আলোয় নিয়ে এল। একদিকে দোকান, রেস্তোরাঁ, কারখানা আর নির্মাণ শিল্প সম্পূর্ণ বন্ধ; উচ্চ আর মধ্যবিত্তরা নিজেদের স্ব-স্ব পরিধির মধ্যে আটকে রাখছেন; অপরদিকে আমাদের শহর আর মহানগরগুলি তাদের শ্রমজীবী নাগরিকদের উগরে দিতে শুরু করল। পরিযায়ী বা অভিবাসী শ্রমজীবী মানুষ। এরা হয়ে উঠলেন একেবারেই অবাঞ্ছিত মানুষের দল। কাউকে তাড়িয়েছে বাড়িওয়ালা, কাউকে ভাগিয়েছে কর্মস্থলের মালিক। দরিদ্র, অসহায়, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁদের আর কোনও যাওয়ার জায়গা নেই! কোনও যানবাহন নেই যাতে তাঁরা নিজেদের গ্রামে ফিরতে পারেন।

অতএব শুরু হল এক লং মার্চ। নিজেদের গ্রাম, নিজেদের বাড়ির দিকে লং মার্চ। হাঁটছেন বৃদ্ধ এবং বাচ্চা, পুরুষ এবং নারী, অসুস্থ মানুষ, অন্ধ মানুষ, পঙ্গু মানুষ … দলে দলে, লক্ষ লক্ষ। দিনের পর দিন হাঁটলেন তাঁরা। হাঁটলেন বাদুয়ান, আগ্রা, আজমগড়, আলিগড়, লক্ষ্মৌ, গোরখপুর-এর দিকে। শয়ে শয়ে কিলোমিটার এই হাঁটার পথে কেউ কেউ ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। তাঁরা জানতেন, গ্রামের বাড়িতে গেলে অন্তত এই মুহূর্তে না খেয়ে মরতে হবে না। সম্ভবত তাঁরা এটাও জানতেন যে, ভাইরাসটা তাঁদের শরীরেও থাকতে পারে। সংক্রামিত হতে পারে পরিবার। বাড়ির বুড়ো মাবাবা বা বাচ্চা-কাচ্চা আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু একটু সহানুভূতির ছোঁয়া, একটু মাথাগোঁজার আশ্রয়, একটুখানি সম্মান – সবথেকে বড়, একটুখানি খাবারের জন্যই তাঁরা এই পথ হাঁটলেন। সব জেনেও। চলার পথে তাঁদের কেউ কেউ  নিষ্ঠুর পুলিশের সম্মুখীন হয়েছেন।

কার্ফু পালনের কঠোর নির্দেশ পেয়ে পুলিশবাহিনী তখন মহা উদ্যমী কিনা! ওরা তাঁদের পিটিয়েছে, দূর দূর করে খেদিয়েছে। অসম্মান করার সমস্ত পদ্ধতি পালন করা হয়েছে। যুবকদের হাইওয়ের ওপর উবু হয়ে ব্যাঙলাফ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। বেরিলির ঠিক বাইরে, কিছু এমন শ্রমজীবী মানুষকে রাস্তায় জড়ো করে শরীরে রাসায়নিক ছেটানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই, এই পলায়নরত মানুষের স্রোত দেখে আতঙ্কিত সরকার রাজ্য সীমান্তগুলি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল। না, হেঁটেও পার হওয়া যাবে না। যাঁরা দিনের পর দিন হাঁটতে হাঁটতে এসেছিলেন, তাঁদের আটকে দিয়ে আবার ফিরে যেতে বলা হল সেইখানে, যেখান থেকে মানুষগুলিকে ক’দিন আগেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বয়স্ক মানুষদের মনে পড়তে পারে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময়কার কথা। ভারত ভাগ হল আর পাকিস্তানের জন্ম হল। ফারাক একটাই, এখনকার এই দলে দলে মানুষের স্রোতটা ধর্মীয় ভেদাভেদের কারণে নয়, বরং  শ্রেণী বৈষম্যের কারণে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই মানুষরাও কিন্তু ভারতের দরিদ্রতম মানুষদের মধ্যে পড়েন না। এরা হলেন সেই সব মানুষ, যাঁদের শহরে একটা কাজ আছে, অন্তত এখনও পর্যন্ত। আর যাঁদের তাও নেই, তাঁরা? কর্মহীন, নিরাশ্রয়; শহরে আর গ্রামে ইতিউতি পড়ে থাকা মানুষ; তাঁদের জীবনের সীমাহীন যন্ত্রণা তো আজকের এই সময়ের অনেক অনেক আগে থেকেই! আর এই ভয়ানক সময়েও আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহাশয়, মাননীয় অমিত শাহ কী করছিলেন? ভ্যানিশ! তাঁর টিকিটিও দেখা গেল না।

ভারতের শ্রমজীবী মানুষের ওই দীর্ঘ পথচলাটা যখন শুরু হয় তখন আমি গিয়েছিলাম দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের গাজীপুরে। একটা সাপ্তাহিক, যেখানে আমি মাঝেমধ্যেই লিখি, সেখান থেকেই একটা প্রেস পাস জোগাড় করেছিলাম।

বাইবেলে বর্ণিত দৃশ্যের মতোই লাগছিল। না, বোধহয় ঠিক বললাম না। মানুষের সংখ্যাটা যে এত হতে পারে, এটা বাইবেলের সময়ে কারও মাথাতেই আসতে পারে না। মানুষে মানুষে শারীরিক দূরত্ব তৈরির প্রয়োজনেই তো এই লকডাউন। আর ফল হল ঠিক উল্টোটা! ছোট্ট জায়গায় অভাবনীয় সংখ্যার মানুষের চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা!! ভারতের বেশিরভাগ শহর আর গঞ্জেও এটাই সত্যি। বড় রাস্তাটা হয়তো ফাঁকা, কিন্তু ছোট্ট খুপরি ঘর বা বস্তিতে দরিদ্ররা তো জড়িয়ে লেপ্টিয়েই আছে, একসঙ্গে! রাস্তায় চলমান এই মানুষদের যাঁর সঙ্গেই আমি কথা বলেছি, প্রত্যেকেই দেখেছি ভাইরাস নিয়ে শঙ্কিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, বাস্তব জমিনে দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে কাজ হারানোর ভয়ের কাছে ওই ভয়টা গৌণ। না-খেতে পাওয়ার যন্ত্রণা আর পুলিশী নিপীড়নের সামনে ভাইরাসের ভয় কিছুই না। বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা হল। মুসলিম দর্জিদের একটি দলের সঙ্গেও কথা হল। মাত্র এক হপ্তা আগে যাঁরা মুসলিমবিরোধী আক্রমণের হাত থেকে বেঁচেছেন। কিন্তু এসব ছাপিয়ে বিশেষ একজনের কথা আমায় বিচলিত করেছিল। উনি একজন কাঠমিস্ত্রী। নাম রামজিৎ। যাচ্ছিলেন গোরখপুর পার হয়ে নেপাল সীমান্তের দিকে। উনি বললেন, “খুব সম্ভবত মোদিজী এই সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সময় কেউ তাঁকে আমাদের কথাটা বলেনি। উনি বোধহয় আমাদের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এখানে ‘আমাদের’ বলতে প্রায় ৪৬ কোটি মানুষ। হ্যাঁ, এই দেশের মানুষ।

মার্কিন দেশের মতোই এখানকার রাজ্য সরকারগুলি এই সংকটের সময় তুলনায় বেশি মানবিকতা দেখিয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি আপৎকালীন খাদ্য ও রসদ তুলে দিয়েছেন অসহায় এই মানুষগুলির হাতে। ত্রাণের জন্য যে তীব্র আকুতি, কেন্দ্রীয় সরকার সেখানেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অনেক দেরিতে। দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ত্রাণ তহবিলে সেরকম টাকা নেই! উল্টে শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসা টাকাটা ঢালা হল পি.এম.কেয়ার নামক এক রহস্যময় ফান্ডে। এইবার মোদীর মুখের ছাপওয়ালা খাবারের প্যাকেটের দেখা মিলল।

এইসব ছাড়াও অবশ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী আরও কাজ করেছেন। তাঁর যোগনিদ্রার ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন। কম্পিউটারের কারিকুরি করা মোদীর মতো দেহটা সেখানে আসনের মাধ্যমে মানুষকে শেখাচ্ছেন, কেমন করে সেলফ-আইসোলেশন এর সময়ে স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা যায়। এই নার্সিসিজম আর সহ্য করা যাচ্ছে না! ওই আসনগুলির সঙ্গে আর একটি বিশেষ আসনের আবেদন করাটা উচিত ছিল আমাদের। প্রধানমন্ত্রী মোদী সেখানে ফরাসি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবেন যে, দেশের মানুষের মুখ চেয়ে তিনি রাফায়েল ফাইটার জেট এর চুক্তিটা ভঙ্গ করতে চান। যে ৭.৮ বিলিয়ন ইউরো এই কাজে খরচ হওয়ার কথা, সেই টাকায় জরুরি ভিত্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের আশু প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। ফরাসি মানুষ নিশ্চয়ই বুঝত। আশা করি।

লক-ডাউন এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে পৌঁছল। যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ঔষধ বা অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে। হাজার হাজার ট্রাক চালক এখনও আটকে আছেন হাইওয়েগুলোতে। তাদের সঙ্গে রয়েছে যৎসামান্য খাদ্য ও পানীয় জল। বীজতলি তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে, কৃষির সময় সমাসন্ন। কিন্তু অপেক্ষায় অপেক্ষায় ধীরে ধীরে সেই বীজতলির  শরীরে পচন ধরতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক সংকট তো চলছিলই। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি ইতিমধ্যে কোভিড স্টোরিকে নিজেদের মতো করে মুসলিমবিদ্বেষের প্রচারে পরিণত করে নিয়েছে। লক-ডাউন ঘোষণার আগে দিল্লিতে একটি মিটিং করেছিল তবলিগি জামাত নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনটিকে সংক্রমণ ছড়ানোর মূল পাণ্ডা বলে প্রচার করা হচ্ছে। এই ঘটনাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে মুসলিমদের একঘরে করার জন্য, তাঁদেরকে একটি দানবীয় রূপ প্রদানের উদ্দেশ্যে। মোদ্দা কথা, বিশ্বাস করতে হবে, এই ভাইরাসটা বুঝি মুসলমানরাই বানিয়েছে আর জেহাদের নামে জেনেবুঝে তা ছড়িয়েছে!

কোভিড সংকটের কি আরও কিছু বাকি আছে? আমরা জানি না। যদি অবস্থা আরও খারাপও হয়, তবে এটা নিশ্চিত যে, তার মোকাবিলা করা হবে এভাবেই – ধর্ম, জাত আর  শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গিকে ঠিকঠাক রেখে, কুসংস্কারকে উসকে দিয়ে।

আজকের দিনে (২ এপ্রিল) ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ২০০০, যার মধ্যে মৃত ৫৮ জন। এই সংখ্যাগুলি অবশ্যই মোটেই বিশ্বাস করার মতো নয়। কারণ অতি সামান্য পরিমাণ পরীক্ষাই কেবল করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতেও চূড়ান্ত অমিল। কেউ কেউ তো বলছেন, সংখ্যাটা নিযুত-লক্ষ হতে পারে। কেউ বা বলছেন, আসলে সংখ্যাটা অনেক কম হবে। সংকটের আসল চেহারাটা বোধহয় কোনওদিনই আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে না। হ্যাঁ, এমনকি আমরা আক্রান্ত হবার পরেও। আমরা কেবল এটুকু জানি যে, মানুষ দলে দলে হাসপাতালের দিকে ছুটছে, এই অবস্থাটা এখনও তৈরি হয়নি। ভারতের সরকারি হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলো লক্ষ লক্ষ শিশুকে বাঁচাতে পারে না। তারা মরে আন্ত্রিকে, অপুষ্টিতে বা অন্যান্য কারণে। প্রতি বছর। নিয়ম করে। পাশাপাশি মারা যান কয়েক লক্ষ টিবি রোগী (গোটা বিশ্বের মোট এক-চতুর্থাংশ)। সেই সঙ্গে আছে রক্তাল্পতায় ভোগা, অপুষ্টিতে ভোগা এক বিশাল জনসমুদয়। যে কোনও সাধারণ রোগব্যাধিই যাঁদের কাছে ভয়ানক বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তো এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি ইউরোপ বা আমেরিকা যে সংকটের মুখে, সেরকম সংকটের মোকাবিলা করতে পারঙ্গম? দৈনন্দিন অন্যান্য চিকিৎসাগুলো এখন প্রায় বন্ধ, কারণ হাসপাতালগুলো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিখ্যাত এইমস হাসপাতালের ট্রমা সেন্টার বন্ধ। বিশাল ওই হাসপাতালের বাইরের রাস্তার ঘরগুলিতে থাকতেন শয়ে শয়ে ক্যানসার রোগাক্রান্ত অসহায় মানুষ। তাঁদেরকে গরু-ছাগলের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে ক্যানসার-উদ্বাস্তু ।। মানুষের কি রোগ-ব্যাধি হবে না? হবে। এবং তাঁরা বাড়িতে বসেই মারা যাবেন। তাঁদের গল্পটা হয়তো আমাদের কানে কোনওদিনই পৌঁছবে না, এমনকি পরিসংখ্যান হিসেবেও নয়। আমরা বড়জোর আশা করতে পারি যে, এই যে শোনা যাচ্ছে, এই ভাইরাসটা ঠাণ্ডা আবহাওয়াই কেবল পছন্দ করে – সেটা যেন সত্যি হয় (যদিও অনেক সমীক্ষকই এতে ঘোর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন)। মানুষ তাই চাইছে একটা গ্রীষ্মকাল আসুক – গনগনে, পুড়িয়ে দেওয়া, কষ্টকর এক গ্রীষ্ম! আচ্ছা, কোনওদিনই কি এমন করে দাবদাহ চাওয়ার কথা ভাবা গেছিল!

আমাদের সঙ্গে এমনটা কেন হল? হ্যাঁ, এটা একটা ভাইরাস, এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু পাশাপাশি এটা তার থেকেও বেশি কিছু। কেউ কেউ বলছেন, ঈশ্বর এইভাবে আমাদের চেতনা ফেরাচ্ছেন। আবার কেউ বলছেন, বিশ্ববিজয়ের জন্য এটা একটা চীনা ষড়যন্ত্র । যাই হোক না কেন, করোনা ভাইরাস আমাদের এই ছুটন্ত বিশ্বটাকে হ্যাঁচকা টানে থামিয়ে একেবারে হাঁটুমুড়ে বসতে বাধ্য করেছে। আমাদের মন এখনও ইতিউতি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। অপেক্ষা স্বাভাবিকতা ফিরে আসার, প্রাণপণ চেষ্টা অতীতের সঙ্গে অনাগত ভবিষ্যতের যোগসূত্র খোঁজার, চেষ্টা এই দুঃসময়টা ভুলে থাকার। কিন্তু দুঃসময়টা তো আছেই! আর এই ভয়াবহ সঙ্কটকালের মাঝে দাঁড়িয়ে সে আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, যে প্রলয়ঙ্কর যন্ত্রটা আমরা নিজেদের জন্য বানিয়েছি, সেটার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করার। আসলে স্বাভাবিকতা’য় ফিরে যাওয়ার থেকে খারাপ আর কিছু হতেই পারে না।

ঐতিহাসিকভাবেই প্যানডেমিকগুলো মানুষকে অতীত ছেড়ে বেরিয়ে এক নতুন ভবিষ্যতে এনে দাঁড় করিয়েছে। এবারেরটাও অন্য কিছু নয়। এটা আসলে একটা পোর্টাল। এক বিশ্ব থেকে অন্য বিশ্বে যাবার জন্য একটা ক্ষণকালীন দরজা। আমরা তার মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতেও পারি। সঙ্গে নিয়ে নেব লাশের পাহাড় আর আমাদের সংস্কার ও বিদ্বেষ, আমাদের লোভ, আমাদের তথ্যভাণ্ডার, আমাদের গেঁজিয়ে-যাওয়া দুষিত নদীগুলো আর ধোঁয়ায় দম-আটকা আকাশের ধুসরতা। অথবা আমরা খুব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাঁধাছাঁদা করে স্রেফ হাঁটা লাগাতে পারি ওই দরজা বেয়ে – এক নতুন পৃথিবীর দিকে। সেই অনাগত বিশ্বের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি বুকে করে।

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত