ঈদ সংখ্যার গল্প: অদৃশ্য মানব । আলভী আহমেদ
ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে আছি অনেকক্ষণ হলো। লিখব বলে বসে আছি। হচ্ছে না। আইডিয়া পাচ্ছি না। ইতিমধ্যে তিনটা সিগারেট টানা শেষ। চারগ্লাস পানি খেয়েছি। বাথরুমে যেতে হয়েছে দুবার। গল্প আসেনি।
স্ক্রিনে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের একটা ডক ফাইল খোলা। পাতাটা ধবধবে সাদা। এক লাইনও লেখা হয়নি। কিন্তু আমাকে একটা গল্প লিখতে হবে। প্রেমের গল্প। ১৫০০ শব্দের। আজ সোমবার। শুক্রবার সাহিত্য পাতায় এই গল্প যাবে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-স্পেশাল সংখ্যা। বুধবারের মধ্যে পেজ মেকআপ হয়ে যায়। সুতরাং যা করার দ্রুত করতে হবে। হাতে সময় নেই।
আমাদের পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক সেলিম ভাই। তিনি এমনিতে খুব ভালো মানুষ। কিন্তু মাঝেমধ্যে অবুঝের মতো কাজ করেন।
আজ দুপুরবেলা সেলিম ভাই আমাকে তার রুমে ডেকেছিলেন। আমি তার আন্ডারে কাজ করি। গিয়ে দেখি, হটপট খুলে তিনি লাঞ্চ বের করছেন। ভাত, লাউ-চিংড়ি আর মুরগির ঝোল। টেবিলের ওপর দুটো প্লেট সাজানো। আমাকে তার সঙ্গে খেতে বললেন। আমি বসলাম। খাওয়ার সময় সেলিম ভাই কোনো কথা বললেন না। কিছু একটা ভাবছেন। ফেলুদা যখন ভাবতে বসে তোপসে তখন তাকে বিরক্ত করে না। আমিও চুপচাপ খেয়ে গেলাম। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিল, সামনে ঝামেলা। রেডি হও। সেলিম ভাই কোনো একটা কাজ আমাকে গছিয়ে দেবেন। তাই এই এক্সট্রা খাতির।
লাঞ্চ শেষে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তিনি ঝেড়ে কাশলেন। বললেন, রফিক, টিনা আপা তো মনে হয় ফাঁসায়ে দিল।
আমি চুপ করে রইলাম। টিনা আপা বসের ইয়ারের মানুষ। পুরোটা না শুনে ভালো-মন্দ কমেন্ট করা যাবে না। বিপদে পড়ে যাব।
তিনি আবারও বললেন, ফোন ধরতেছে না। গল্পটা এক সপ্তাহ আগে দেওয়ার কথা। উনি তো কখনো ডেডলাইন মিস করেন না।
টিনা আপা বরাবরই ডেডলাইন মিস করেন। তার কাছ থেকে এক একটা লেখা আদায় করতে আমার জান বেরিয়ে যায়। কিন্তু বসের সামনে এ কথা বলা যায় না। বললাম, দেবে। টেনশন কইরেন না বস।
কবে দেবে? আর টেনশন করব না কেন? ফোন ধরতেছে না। মেসেজও সিন করতেছে না।
তাইলে তো বিপদ!
শুধু বিপদ! তিনি বললেন, তুমি এক কাজ করো, টিনা আপার ভরসায় বসে থেকে লাভ নাই। অলটারনেট কিছু একটা করো।
জ্বি বলেন, আমি বললাম, কী রকম অলটারনেট? অন্যকোনো রাইটারকে ফোন দেব? মারুফ ভাই বা সুরভি আপা? সাজ্জাদ ভাইকেও দেওয়া যায়।
মার্চে বইমেলা হবে, সেলিম ভাই বললেন, ডিক্লারেশন হয়ে গেছে। করোনার জন্য আটকাবে না। মেলার বই নিয়ে সবাই ব্যস্ত এখন। এই শেষবেলায় কে দেবে গল্প?
অনেকেই দেবে। বলে দেখি আমি।
দেবে না। কাগজ-কলম দাও। লিখে সাইন করে দিচ্ছি, কেউ দেবে না। হাতি কাদায় পড়লে চামচিকাও লাথি মারে।
আমি বুঝতে পারলাম বস ইতিমধ্যেই দু-একজনের কাছে লাথি খেয়েছেন। লেখা চেয়েছেন। পাননি। তিনি নিজে যেখানে ফেল মেরেছেন, সেখানে আমি কী করে পাস করব?
সেলিম ভাই বললেন, এমনিতে না চাইতেও গল্প ছাপানোর জন্য সবাই ঠেলাঠেলি করবে। যে-ই বুঝবে আমরা ফেঁসে গেছি, ওমনি চোখপল্টি মারবে। ফাউল শালারা। রাইটারের জাতটাই খারাপ।
মুখ ফসকে প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল, বস, আপনিও তো একজন রাইটার!
শেষ মুহূর্তে সামলালাম নিজেকে। বসের মুখের ওপর সব কথা বলা যায় না। সত্য কথা তো নয়ই। তার কথায় তাল মেলানো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। বললাম, একদম ঠিক বলছেন। তো এখন কী করবেন?
সেলিম ভাই একটুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তুমি একটা গল্প লিখে ফেলো।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। পাতা ভরানোর জন্য ওপরমহল থেকে নানা নির্দেশ আসে। গত সপ্তাহেও কপিরাইট আইনের ওপর একটা ১৪০০ শব্দের লেখা দিয়েছি। তার আগের সপ্তাহে ‘চিরসবুজ পাঁচ ভালোবাসার গল্প’ শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। ৭০০ শব্দের। দুটোই ফালতু লেখা। এগুলো লেখার জন্য আমি আলাদা কোনো পারিশ্রমিক পাই না। সাব-এডিটর হিসেবে যে বেতন পাই সেটুকুই। তারপরও লিখি। পৃষ্ঠা ভরাবার জন্য লিখতে হয়। বসের কথা ফেলে দেওয়া যায় না। আর এগুলো লেখা আসলে খুব একটা জটিল বিষয়নয়। গুগল করে ওই বিষয়ের ওপর পাঁচ-ছয়টা ইংরেজি আর্টিকেল খুঁজে বের করি। তারপর সেগুলোর জিস্ট তৈরি করা সোজা ব্যাপার। একটু উনিশ-বিশ করে বাংলায় অনুবাদ করলেই হয়। কাজ নেমে যায়। এই আর্টিকেলগুলো যে কেউ লিখতে পারে। এর জন্য সাব-এডিটর হওয়ার প্রয়োজন নেই। বা সেগুলো না লিখলেও পৃথিবীর তেমন কিছু যায় আসে না। গুরুত্বহীন সব ব্যাপার।
গুরুত্বহীন ব্যাপার গুলোতে যে মানুষ অভ্যস্ত তাকে এত গুরুদায়িত্ব দেওয়ার মানে কী? অফিসে কি করোনার কারণে লে-অফের আয়োজন চলছে? আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাতে ব্যর্থ হব। এরপর ছাঁটাই করে দেবে? উঁহু, এই ফাঁদে আমি পড়ছি না। এতটা বোকাও আবার আমি না।
একটা গল্প আমি কী করে লিখব? একটা আস্ত গল্প, যে গল্প আমি লেখার আগে এই পৃথিবীতে ছিল না? তা-ও আবার প্রেমের গল্প! প্রেম এত সোজা নাকি? মিনমিন করে বললাম, বস, আমি তো কখনো গল্প লিখি নাই।
লেখো নাই, তিনি বললেন, এখন লিখবা। সবকিছুরই একটা শুরু আছে। আছে না?
তা তো আছে। বাট, আমার মনে হয়, আমাকে দিয়ে এই কাজ হবে না। আমাকে যেকোনো নিবন্ধ-টিবন্ধ লিখতে দেন। লিখে দিচ্ছি। বা অনুবাদ হলেও করে দিই। নেট ঘেঁটে দেখি, মুরাকামির কোনো প্রেমের গল্প পাই কি না। অনুবাদ করে দিচ্ছি। পাবলিক আজকাল মুরাকামি খুব খাচ্ছে।
অনুবাদ-টনুবাদে হবে না। তুমি লেখো। মৌলিক একটা প্রেমের গল্প।
আমি পারব না বস। আমাকে দিয়ে হবে না।
ভ্যালেন্টাইনস ডে সংখ্যায় আমরা গল্প ছাপব না?
ছাপবেন না কেন? নিশ্চয়ই ছাপবেন। আপনি লেখেন বস।
আমাকে আজ রাতের ট্রেনে চিটাগং যেতে হবে। শালির বিয়ে। না গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। নাইলে ট্রাই করতাম।
আমি মোর্শেদ ভাইকে একটা ফোন দিয়ে দেখি। ওনাকে বুঝায়ে বলবোনে আমাদের সমস্যাটা। আমার সাথে সম্পর্ক বেশ ভালো। উনি লিখে দেবেন।
লিখে দেবেন মানে কী? এগুলো কী ধরনের কথা? লিখে দিয়ে উনি আমাদের দয়া করবেন? আর সে-ই দয়ার চোটে আমরা আনন্দে মুতে দেব? দরকার নাই। তুমিই পারবা। তুমি লেখো।
আমি চুপ করে রইলাম।
সেলিম ভাই বললেন, আরাফাত বোধহয় টিনা আপার গল্পের একটা ইলাস্ট্রেশন রেডি করছে। সুন্দর হইছে ছবিটা। দেখো সেটা, ছবি দেখে একটা গল্প লিখে ফেলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ছবি দেখে গল্প লিখে ফেলব!
হুম।
আরাফাত কি টিনা আপার গল্পটা পড়ছে? গল্প না পড়ে ও ইলাস্ট্রেশন কী করে করল?
আরে পড়তে হবে কেন? টিনা আপার সাথে ওর মেসেঞ্জারে কথা হইছে। স্টোরি লাইনটা শুনছে। আর না শুনলেই-বা কী এসে যায়! ওনার গল্পে তো কোনো প্যাঁচঘোঁচ নাই। সব গল্পই এক। একটা মেয়ে থাকবে। তার সাথে একটা ছেলের প্রেম হব হব করবে। শেষ পর্যন্ত হবে না। মেয়েটা তখন খুব দুঃখ পাবে। দুঃখে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কোনো একটা দেশে মাইগ্রেট করবে। ফিনিশিংয়ে একটা বিশাল মনোলগ থাকবে। ফর্মুলা তো সিম্পল। এতদিন ধরে আরাফাত এইসব কাজ করে। ওর একটা আইডিয়া হইছে না কে কী লেখে? আইডিয়া থেকে ইলাস্ট্রেশন করছে। তুমিও ওই ছবি দেখে লিখে ফেলো।
আমি মাথা নেড়ে একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেলিম ভাই আমাকে কোনো সুযোগ দিলেন না। সোজা উঠে গেলেন দরজার দিকে। বের হওয়ার আগে বললেন, ১৫০০ শব্দের গল্প হবে। বেশিও না, কমও না। মনে থাকে যেন। পেজ মেকআপ করা আছে। আমি দেখি দিছি। খাপে খাপে তোমার গল্পটা বসায়ে দিবা ফাঁকা জায়গায়।
আপনাকে দেখাতে না হবে গল্প? আমি জানতে চাইলাম।
দরকার নাই, তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা হলে পিডিএফ করে পাঠিয়ো। চিটাগংয়ে এত ঝামেলার মধ্যে মনে হয় না দেখার সুযোগ পাব আর এতদিন ধরে পত্রিকায় চাকরি করতেছ। সামান্য একটা গল্পও লিখতে পারবা না? সেটাও আমাকে দেখে দিতে হবে!
গল্প লেখা মোটেই সামান্য কিছু না, এ-জাতীয় একটা কথা মনে মনে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, তার আগেই সেলিম ভাই আবার বললেন, আরাফাতের আঁকা ছবিটা ভালো করে দেখো। ওই ছবির সাথে যায় এরকম একটা প্রেমের গল্প বানাও। পারলে হালকা সেক্স-টেক্স ঢুকাও। রসে টইটম্বুর করে ফেলবা। শুকনো গল্প যেন না হয়। পাঠক যেন সুপার গ্লু দিয়ে চিপকায় যায়।
সুপার গ্লু দিয়ে পাঠক চিপকানোর জন্য এখন আমি আমার ডেস্কে বসে আছি। চেয়ারের সাথে আমার পাছা চিপকে গেছে। গল্প বের হয়নি।
শিল্পীরা লেখকের গল্প প্রথমে পড়ে। তারপর সে গল্পের ইলাস্ট্রেশন করে। সে রকমই নিয়ম। আর আমি গল্পের ইলাস্ট্রেশন প্রথমে দেখব। তারপর সে-ই গল্প লিখব। কপাল আমার!
মানুষ ভাবলেই কত আইডিয়া পেয়ে যায়। আমি কিছু পাই না। কারণ,আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। মিডিওকার কাকে বলে নিজেকে দিয়ে বুঝি। মিডিওকার শব্দটা গুগলে লিখে ইমেজ আকারে সার্চ করলে আমার ছবি ভেসে উঠবে।অন্তত আমার তা-ই ধারণা।
শংকরের উপন্যাস থেকে সত্যজিৎ রায় একটা ছবি বানিয়েছিলেন—জন-অরণ্য। সে-ই ছবিতে উৎপল দত্ত একজন ব্যবসায়ী। জীবনে চাকরি-বাকরি কিছু করেননি। চাকরি করা লোক তিনি পছন্দও করেন না। তার কাছে একজন আসে চাকরি চাইতে। তখন উৎপল দত্ত তাকে বলেন, যে জিনিস আমার ধাতে নেই, সে জিনিস হাতে থাকবে কী করে ভায়া?
প্রেম করা আমার ধাতে নেই। প্রেমের গল্প তো আকাশ থেকে টুপ করে এসে আমার সামনে পড়বে না। আমার বয়স ২৯। বন্ধুবান্ধব অনেকেই বিয়ে করেছে। যারা করেনি তারা গোটা দুয়েক প্রেম অন্তত করেছে। তারা নানা সময়ে আমাকে তাদের গল্প বলে। তাদের প্রথম হাত ধরার গল্প। প্রথম চুমু খাওয়ার গল্প। মদের আড্ডায় অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে কেউ কেউ বুকে মুখ ঘষার গল্পও করে ফেলে।
সে সব গল্পে আমি সবসময়ই শ্রোতা। প্রেম বা ভালোবাসা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা আমার নেই। আমি বেঁটে, কালো এবং মোটা। মানিব্যাগ পাতলা। এই চারটা জিনিসের অপূর্ব কম্বিনেশনে মেয়েরা বরাবরই আমার থেকে দূরে থাকে। দেখেও দেখে না। চোখে চোখ পড়লে চোখ সরিয়ে নেয়। মেয়েদের চোখে আমি একজন ইনভিজিবল ম্যান।
অথচ আমাকে লিখতে হবে প্রেমের গল্প।
রাত আটটা বাজে। জানালার ওপারে ঢাকা শহর জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। একটা লাইনও লেখা হয়নি। পাশের ডেস্কে মল্লিক বসে আছে। আর কেউ নেই এই মুহূর্তে আমাদের সেকশনে। চাইলেই এখন ডেস্কে বসে একটা সিগারেট ধরানো যায়। খ্যাঁচখ্যাঁচ করার মতো কেউ নেই। কিন্তু আমি সিগারেট ধরালাম না। বোতলে মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলাম।
আরাফাতের ইলাস্ট্রেশন কাগজে প্রিন্ট দিয়ে ল্যাপটপের পাশে রাখা। আমি তাকিয়ে আছি ছবিটার দিকে। একটা মেয়ে, স্কাই ব্লু ড্রেস পরা। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। মনে হয়, সে দৌড়াচ্ছে। আবার না-ও দৌড়াতে পারে। হয়তো জোরে হাঁটছে। দৌড়ালে কী কারণে দৌড়াচ্ছে? সে কি ভয় পেয়েছে? তাকে কেউ তাড়া করেছে? রাস্তায় কোনো গন্ডগোল? এটাই কি গল্প? আমাকে কি এখন তার দৌড়ানোর কারণটা খুঁজে বের করতে হবে? তারপর সেটা লিখব? সে-ই দৌড়ানোর সাথে প্রেমের কী সম্পর্ক? দৌড়াতে গিয়ে মেয়েটা প্রেমে পড়ে যাবে? এ রকম হয়? মেয়েটার ওড়না পাখির ডানার মতো দুদিকে ছড়িয়ে আছে। সে কি একসময় আকাশে উড়ে যাবে? দৌড়াতে দৌড়াতে প্লেন যেভাবে টেকঅফ করে, সেরকম?
এই মেয়েকে নিয়ে আমি কী গল্প লিখব? নামই তো জানি না ওর।
আমি এবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকালাম। অদ্ভুত ব্যাপার! ইলাস্ট্রেশনের কাগজ থেকে মেয়েটা উঠে এসেছে ল্যাপটপ স্ক্রিনে। কীভাবে উঠল একা একা? ডক ফাইলের সাদা স্ক্রিনে সে দাঁড়ানো। তার বয়স কত? ২০ নাকি ২৫? আমি তার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। ছবিটা পেছন থেকে আঁকা। এ কারণে বয়স বোঝা যাচ্ছে না। তার চুলগুলো এলোমেলো। হাওয়ায় উড়ছে। অনেক বাতাস সে-ই রাস্তায়? কোন রাস্তা? এইটি ফাইভ লেন্সে তোলা পোর্ট্রেটের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে আছে। কিন্তু এটা তো ফটোগ্রাফ নয়। জলরঙে আঁকা ছবি। আরাফাত ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দিল কেন?
আমি একটা সিগারেট ধরালাম। বাঁকা হয়ে নানা অ্যাঙ্গেল থেকে মেয়েটার মুখ দেখার চেষ্টা করলাম। মুখটা একবার দেখতে পেলেই আমি গল্পটা লেখা শুরু করে দেব। মুখ অনেক কিছু বলে দেয়। মুখ দেখতে পেলেই আমি বুঝতে পারতাম মেয়েটার সোশ্যাল স্ট্যাটাস কী, ও কাউকে ভালোবাসে কি না, ওর কোনো চাপা দুঃখ থাকলে তা-ও মুখে ভেসে উঠত।
পাশের ডেস্ক থেকে মল্লিক উঠে দাঁড়াল। বাসায় যাবে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কী ব্যাপার? হইছেটা কী ভাই? একভাবে বসে আছেন। বাসায় যাবেন না?
আমি মল্লিকের চোখদুটো অনুসরণ করে দেখলাম সে আমার ডেস্কে রাখা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে। কাগজে আরাফাতের করা ইলাস্ট্রেশন। মেয়েটা যে কাগজ থেকে ল্যাপটপের স্ক্রিনে উঠে এসেছে, এই ব্যাপারটা তার চোখে পড়েনি।
আমি মৃদুস্বরে বললাম, যাব। একটু সময় লাগবে। একটা লেখা শেষ করতে হবে।
মল্লিক বলল, লিখতে হলে লেখেন। কিন্তু আপনি তো লিখতেছেন না। মেয়েটার দিকে তাকায়ে আছেন। কী আছে ওই মেয়ের মধ্যে? তখন থেকে তাকায়ে আছেন!
কী আছে জানি না, বললাম আমি, কী নাই সেটা বলতে পারব।
কী নাই?
চেহারা।
মানে কী?
ওর চেহারা দেখতে পারতেছি না।
উল্টো দিকে মুখ করা তো। চেহারা কী করে দেখবেন?
সেটাই তো সমস্যা?
একটা কিছু ভেবে নেন। জুলিয়া রবার্টসকে ভাবেন বা মেগ রায়ান, আপনার তো আবার শবনম ফারিয়াকে পছন্দ, অফিসে যেদিন আসল ড্যাবড্যাব করে তাকায়ে ছিলেন। তাকেই নাহয় ভাবেন, বলে মল্লিক চলে গেল।
আমাদের সেকশনে এখন আর অন্যকোনো মানুষ নেই। হঠাৎ আমার খুব ঘুম পেয়ে গেল। কনুইয়ে ভর দিয়ে চোখদুটো বন্ধ করতে যাব, স্ক্রিনে একটা ম্যাজিক হলো। চোখের ভুল হতে পারে আমার। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকাল।
আমি দেখলাম, তার চোখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। কিছু একটা খুঁজছে সে। আমি সিগারেটে ধরিয়ে জোরে একটা টান দিলাম। মাথা ঘুরে উঠল আমার। শরীর কাঁপছে, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই কোনো। মনে হলো, একটু একটু করে হালকা হয়ে যাচ্ছি আমি। ওজন কমে যাচ্ছে। একদম ‘নেই’ হয়ে যাব কিছুক্ষণের মধ্যে।
শোঁ শোঁ শব্দে ফ্যান ঘুরছিল এতক্ষণ। সে-ই শব্দ থেমে গেল। অনেক দূরে কোথায় যেন একটা গুলির শব্দ হলো। কে গুলি করল? নাকি রাস্তায় গাড়ির টায়ার বার্স্ট হলো? সবকিছু ঘোলা দেখাচ্ছে। যেন আমি সাদা কুয়াশার একটা চাদরে জড়িয়ে নিচ্ছি নিজেকে। ধোঁয়ার মধ্যে একটা জায়গায় বসে আছি। আসলে বসে নেই। ভাসছি। মাথার ওপরে ছাদ নেই। ছাদ না থাকলে আকাশ থাকার কথা। রাতের আকাশ, জোছনা কিংবা অন্ধকার। কিছু নেই। চারদিকে ভয়াবহ শূন্যতা। শূন্যতার রং কালো বলে ভেবেছিলাম। সেই রকমই হওয়ার কথা। এখন দেখছি, শূন্যতা আসলে কুয়াশার মতো।
আমার সামনে ল্যাপটপ থাকার কথা। নেই। শুধু ল্যাপটপ কেন, ডানে-বাঁয়ে কিছু নেই। সাদা রঙের ধোঁয়া পুরো জায়গাটা ঘিরে আছে। সিগারেটে এত ধোঁয়া হয়! মাই গড! মনে হচ্ছে, সিনেমার শুটিংয়ে কেউ স্মোক মেশিন চালিয়ে দিয়েছে। আমি হাত বাড়ালাম। কিছু ছুঁতে পারলাম না। সাদা ধোঁয়া শুধু। সে-ই ধোঁয়া এত গাঢ় যে কেবল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা ব্যবহার করতে পারছিলাম। বাকি ইন্দ্রিয়গুলো একেবারেই কাজ করছে না।
ধোঁয়া একটু একটু করে রং বদলাচ্ছে। স্কাই ব্লু কালার হতে শুরু করেছে এখন। মেয়েটার জামার রঙের মতো। অনেক দূর থেকে একটা সাইরেনের পোঁ পোঁ শব্দ শুনতে পেলাম। অ্যাম্বুলেন্স নাকি ফায়ার ব্রিগেড? মাথাটা দুলে উঠল আমার। এরপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরল, তখনো আমার চারদিকে ধোঁয়া। রোদ ঝলমল করছে। তাতেও কুয়াশার মতো ধোঁয়া কাটেনি। কিন্তু সে-ই কুয়াশার ভেতরেও আমি সব দেখতে পাচ্ছি। আমি একটা ফার্মেসির ভেতরে দাঁড়ানো। ওষুধ কিনব? কী ওষুধ? আচ্ছা, ভোর হলো কখন? আর এই ভোরে কিসের এত গন্ডগোল? এত শব্দ কেন? আমি আমার অফিস থেকে কখন বের হলাম? শাহবাগ মোড়ে কে আমাকে পৌঁছে দিল? ম্যাজিক নাকি?
আস্তে আস্তে সব দেখতে পেলাম। ক্যামেরার লেন্সে ডিফোকাস থেকে ফোকাস করলে যেমন দৃশ্যগুলো পরিষ্কার হয়, তেমন পরিষ্কার হচ্ছে সব।
চারদিকে অসংখ্য মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। বাসগুলো বেসামাল গতিতে ছুটছে। কে যেন একটা ইট ছুড়ে মারল বাস বরাবর। ঝনঝন করে জানালার কাচ ভেঙে গেল। বাসের ভেতর থেকে যাত্রীরা চিৎকার করছে। প্রাইভেটকারগুলো পালাচ্ছে হুড়োহুড়ি করে। কালো রঙের এক মিৎসুবিশি পাজেরো ধাক্কা মারল একটা বাইককে। বাইকটা ছিটকে ১০ হাত দূরে গিয়ে পড়ল। বাইকের চাকা রাস্তায় পড়েও বনবন করে ঘুরছে। থামবে না? মাথায় হেলমেট পরা বাইকার একদম নড়ছে না। মরে গেছে বোধহয়।
রাস্তায় আরও কিছু লোক পড়ে আছে। নড়ছে না তারা। চাপ চাপ রক্ত জেলির মতো রাস্তায় লেগে আছে। লোকগুলো কি সব মরে গেছে? কেন মরেছে? কিছু একটা কারণ নিশ্চয়ই আছে। অমলেট খেতে ইচ্ছে হলেই আমরা ডিম ভাঙি। তেলের মধ্যে ছাড়ি। এমনি এমনি ডিম ভাঙে কেউ? মাথা কাজ করছে না আমার। মানুষ মরে পড়ে আছে রাস্তায়। এর সাথে অমলেট আর ডিমের কী সম্পর্ক?
এসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করছে না আর। মাথার যে সাইডটা টেনশন রিলেটেড ব্যাপারগুলো নিয়ে ডিল করে সেই সাইডটাকে যদি ঘুম পাড়িয়ে রাখা যেত! ডলফিন এরকম পারে বলে শুনেছি। মানুষ ডলফিন হয়ে জন্মাল না কেন? মানুষ হওয়ার কী দরকার ছিল?
মাটি ফুঁড়ে শয়ে শয়ে দাঙ্গা পুলিশ নেমে এল রাস্তায়। লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে সবাইকে। স্যুট-টাই পরা লোক থেকে শুরু করে বুড়ো ভিখারি কেউ বাদ যাচ্ছে না। কেন পেটাচ্ছে? পেটানোর সময় তারা রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষগুলোকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে।
৭-৮টা ছেলের একটা দল কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসছে। তাদের দাবিগুলো আমি শুনতে পেলাম না। অথচ দাবিগুলো জানা আমার খুব দরকার। কী দাবি তাদের?
পুরো দৃশ্যটা স্বপ্নদৃশ্য হতে পারে। কিন্তু আমার স্বপ্ন বলে মনে হলো না। এগুলো বাস্তব না জানি, কিন্তু কোনোভাবে স্বপ্নও নয়। কোনো একটা জায়গায় এগুলো ঠিকই ঘটছে। আমি সে-ই ঘটনার সাক্ষী।
আমি দাঁড়িয়ে আছি কেঁচিগেট লাগানো একটা ওষুধের দোকানের ভেতর। এই জায়গা থেকে দ্রুত পালাতে হবে। কিন্তু কীভাবে পালাব? বের হলেই পুলিশের চোখে পড়ে যাব। তখন পুলিশ যদি আমাকেও পেটায়? আমি বেঁটে-খাটো লোক, গাট্টাগোট্টা শরীর। লাঠি চালিয়ে তারা বেশ আরাম পাবে। এই মার আমি হজম করতে পারব?
আচ্ছা, আমিই-বা এমন ভাবছি কেন? আমি তো অমলেট বানাতে চাইনি। কোনো ডিম ভাঙিনি। আমাকে পেটাবে কেন পুলিশ? আমি কী করেছি? একটা গল্প লিখতে চেয়েছিলাম শুধু। এই অপরাধে কেউ কাউকে পেটায়?
আমি বিসমিল্লাহ বলে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম। প্রায় সাথে সাথেই এক মোটা মহিলা হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমার ভেতর দিয়ে চলে গেল।আশ্চর্য ব্যাপার! আমি কি ট্রান্সপারেন্ট নাকি? ওই মহিলা আমার শরীর কী করে ভেদ করল? সে কি আমাকে দেখতে পায়নি? ধরে নিচ্ছি, দেখতে পায়নি। তা-ই বলে আমার ভেতর দিয়ে চলে যাবে! সম্ভব?
ধাম করে আমার মাথায় চিন্তাটা খেলে গেল।আমি বুঝতে পারলাম, আমি অদৃশ্য হয়ে গেছি। আ ইনভিজিবল ম্যান। আমাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। দোকানে যখন দাঁড়িয়েছিলাম লোকগুলো আমার সাথে কথা বলেনি। আমার দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। কারণ আমি নেই। আমাকে কেউ দেখছে না।
বেশ, আমি যদি না-ই থাকি, তাহলে এখানে কেন এসেছি? কেন আমাকে এখানে উঠিয়ে আনা হয়েছে? এখানে কি কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটবে? আমাকে সে-ই ঘটনার সাক্ষী হতে এখানে আনা হয়েছে?
ঠিক আছে, সাক্ষী কেউ বানাতে চাইলে আমি হব। কিন্তু আমার চোখ জ্বলছে কেন? টিয়ার গ্যাসে কি অদৃশ্য মানবের চোখ জ্বলার কথা? যার শরীরই নেই, তার চোখে আবার আলাদা করে কিসের যন্ত্রণা?
চোখ দুটো কচলে ভালো করে তাকাতেই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম। আমার থেকে ঠিক ৫০ মিটার সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে। স্কাই ব্লু ড্রেস পরা। পাগলের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। চোখে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি। আরাফাত এই ছবিটাই এঁকেছিল। এই মেয়েটাই আমার ক্যারেকটার। একে নিয়েই আমার একটা গল্প লেখার কথা। মেয়েটা সত্যিই আছে। এই পুলিশ, আন্দোলন, টিয়ার গ্যাস, গাড়ি ভাঙচুর সব সত্যি! এই মেয়েটার জন্যই সব আয়োজন। এবং আমি এর সাক্ষী।
মেয়েটা হঠাৎ দৌড়াতে শুরু করল। তার ওড়না বাতাসে ভাসছে। একদম ছবির মতো।
পুলিশের ভারী কনভয় রাস্তায় শব্দ করে এগিয়ে আসছে। এগুলোকে কী বলে? জলকামান? গরম পানি ছুড়ে মারবে? জলকামানের মুখ মেয়েটা যেদিকে ছুটছে সেদিকে তাক করা। এখনই হয়তো গরম পানি ছুড়বে। আমি দৌড়ে যেতে চাইলাম মেয়েটার কাছে। কিছু একটা আমাকে আটকে রাখছে। পারছি না।
আমার কোনো ওজন নেই, হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাওয়ার কথা আমার। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তি আমার শার্ট টেনে ধরে রেখেছে পেছন থেকে। আমার ভয় পাওয়া উচিত। কিন্তু পেলাম না। মানুষ তখনই ভয় পায়, যখন বিষয়টা নিয়ে ভাবে। না ভাবলে কিসের ভয়? আমার ভাবার মতো শক্তি লোপ পেয়েছে।
মনের সবটুকু জোর এক করে সামনে বাড়লাম। মেয়েটাকে আমার বাঁচাতে হবে। তাকে বিপদে রেখে আমি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। রাস্তায় শত শত মানুষ। তাদের সবার বিপদ। কিন্তু সবাইকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে, এরকম কোনো ঠিকা আমি নিইনি। আমি ঠিকা নিয়েছি এই মেয়েটার। সে আমার গল্পের চরিত্র। তার কিছু হয়ে গেলে গল্পটা আর লেখা হবে না।
আমার মনে হলো, ছুটে গিয়ে মেয়েটাকে বুকের সাথে চেপে ধরি। তাহলে সে-ও আমার সাথে অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাকে আর কেউ দেখতে পাবে না।
আমি ছুটছি। মেয়েটাও ছুটছে। আমি তাকে পেছন থেকে ডাকার চেষ্টা করছি। গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। তাছাড়া কী নামে ডাকব? নামও তো জানি না তার। পেছনে জলকামান এগিয়ে আসছে। দাঙ্গা পুলিশ আসছে। তারা মেয়েটাকে ধরে ফেলবে। কোনো ক্ষতি হওয়ার আগেই আমাকে তার কাছে পৌঁছাতে হবে। আমাকে দৌড়ে হারিয়ে দিতে হবে সবাইকে। মেয়েটাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে এই ভয়ংকর গন্ডগোল থেকে।
হঠাৎ কে যেন আমার মাথার মধ্যে এসে ফিসফিস করে বলে দিয়ে গেল মেয়েটার নাম। আমি চিৎকার দিয়ে ডাকলাম, নীতু।
নীতু দাঁড়িয়ে গেল। সে আমার ডাক শুনতে পেয়েছে। পেছনে ফিরে তাকাল। আমার থেকে বিশ-ত্রিশ হাত দূরে সে তখন। আমি হাত নেড়ে চিৎকার করে উঠলাম, নীতু, দাঁড়াও। ভয় নেই। আমি আছি।
নীতু ঠিক আমার চোখ বরাবর তাকাল। বনবিড়ালের চোখে তাকিয়ে আছে।কিছু একটা খুঁজছে সে আমার চেহারায়। ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্টের ছবির সাথে চেহারায় মিল খোঁজার সময় এভাবে তাকিয়ে থাকে। আমাকে বিশ্বাস করা যায় কি না তা-ই ভাবছে বোধহয়।
পুলিশের জলকামান আমার শরীর ভেদ করে চলে গেল। আমার কিছু হলো না। তারমানে আমি এখনো ট্রান্সপারেন্ট। শরীর নেই আমার। তাহলে নীতু আমাকে কী করে দেখতে পাচ্ছে?
এই যে পৃথিবী, এই পৃথিবীতে কি কেবল ওই একটা মেয়ের কাছেই আমার অস্তিত্ব আছে? হঠাৎ করে মনে হলো, আমি এখানে এই নতুন পৃথিবীতে থেকে যাই। দুনিয়াজোড়া মানুষের কাছে আমি অদৃশ্য, ক্ষতি নেই তাতে। নীতু আমাকে দেখতে পাচ্ছে।
এই একটা মেয়ে দেখলেই আমার বেশ চলে যাবে। কিউট একটা মেয়ে।মিষ্টি, দিশেহারা এবং খানিকটা বোকা। বোকা না হলে এমন গন্ডগোলের ভেতর কেউ রাস্তায় নামে?
আমি সে-ই মুহূর্তে নীতুকে ভালোবেসে ফেললাম।
গল্পের সারমর্ম কিছু বোঝা গেলো না।