ঈদ সংখ্যার গল্প: অতীন বাবুর শ্রাদ্ধ । দেবদ্যুতি রায়
ঘটনাটা গত শনিবার শেষ বিকেলের। এই বাড়িতে সেদিন জ্ঞাতিগোষ্ঠী আত্মীয় স্বজন আর পাড়ার মানুষের নেমন্তন্ন। সেই উপলক্ষ্যেই তখন ইলাদের রান্নাঘরের বাইরে পাতা নতুন উনুনে স্মৃতি ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে একের পর এক ফুলকো লুচি ভেজে ডেকচিতে তুলে রাখছে। কত ডেকচি লুচি হয়েছে সে তার মনেও নেই। পাশে বসে মণি আর রিপা সমানে লুচি বেলে চলেছে। কোনোটা গোল, কোনোটা তেকোনা, কোনোটা আবার লম্বাটে, মণি বলে লুচি নাকি শুধু গোল বানালে মজা নেই, একেকটা লুচি একেক রকম হলে তবেই তা খেতে মজা। গনগণে আগুনের তাপে গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে স্মৃতি একের পর এক লুচি ভাজে। আগেই আলু বেগুন মুলো কচুরমুখীর ঘণ্ট, চাক চাক করে কাটা বেগুন ভাজা আর ছোলার ডাল রান্না করে রেখেছে বড় বড় দুটো ডেকচিতে। ইলা, রাম কিংবা নয়ন এসে নিয়মিত বিরতিতে ডাল, ঘণ্ট আর লুচির গামলা নিয়ে যাচ্ছে, একটার পর একটা মিষ্টির প্যাকেট বাইরে যাচ্ছে ওদের হাতে। বাইরের উঠানে তখন সমান করে বিছিয়ে দেয়া খড়ে মুখোমুখি বসে খেতে বসেছে জনা চল্লিশেক মানুষের ব্যাচ। এই এলাকার এই দস্তুর। যে কোন অনুষ্ঠান আয়োজনে মাটিতে খড় বিছিয়ে কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়। আজকাল অবশ্য কলাগাছের সংকটের কারণে পাশের গঞ্জ থেকে ভাড়া করা ডেকোরেটরের থালা বাসনেই আয়োজন সারা হয় বেশি। এ বাড়িতেও কলাপাতার বদলে ‘ভাই ভাই ডেকোরেটরের’ কমলা রংয়ের মেলামাইনের থালায় পরিবেশন করা হয়েছে খাবার।
বাড়ির নাম বড়বাড়ি। এককালে বড়বাড়ি ছিল জোতদারবাড়ি। এখনো পাড়ার যেকোনো প্রান্ত থেকে সামনে তাকালে যত জমিজিরাত চোখে পড়ে, সবই সেই আমলে এই জোতদার বাড়ির সম্পত্তি ছিল। ইদানিং সেসব জমির মাঝে ছোটো ছোটো আল, ছোটো ছোটো সীমানা দিয়ে আলাদা করা হয়েছে আর সেই ছোটো ছোটো ভূমিখন্ডের মালিকানায় ঢুকে পড়েছে আশেপাশের দু তিন গ্রামের কাঁচা পয়সাওলা মানুষের নাম। বড়বাড়ির জমি কমেছে, বড়ো পাকা বাড়ির জায়গায় এখন অনেকের বাঁশের বেড়ার ঘরগুলোও জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে, আজকাল দুই মাইল দূরের ইপিজেডে কামলা দিতে যায় এ বাড়ির অনেক ছেলে বৌয়েরাই। তবু এই যে বড়বাড়ি নাম, আজ পর্যন্ত এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। এ বাড়ির মানুষেরা আজো বাইরের লোকের কাছে বাবু, এ বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা এখনো আশেপাশের দশ গ্রামের সেরা। তো এ বাড়ির শোক হোক বা উৎসব- আয়োজনের খাওয়াও এখনো দশ গ্রামের চেয়ে সেরাই হয়। বাড়ি গেছে, মান কমেছে, এ বাড়ির বাবুদের বাবুগিরি কমেনি এখনো। ধারদেনা হোক, কী জমি বন্ধক যাক, আয়োজনের কমতির কথা ভাবতে পারে না বড়বাড়ির লোক।
এ বাড়ির অতীন রায় মারা যাওয়ার সেদিন দশম দিন। বৈষ্ণব মতে তার পরদিন এগার দিনে তার শ্রাদ্ধ। রীতি অনুযায়ী সেদিন দশকর্মের কাজ। সকাল বেলায় ক্ষৌরকর্ম আর যাবতীয় শ্রাদ্ধ শান্তি শেষ হয়েছে। বিকালে লুচি তরকারি মিষ্টির নেমন্তন্ন আত্মীয়, জ্ঞাতি গোষ্ঠী, দশ সমাজের। আত্মীয় বলতে অবশ্য তার দুই মেয়ে ইলা আর হেমা এসেছে স্বামী, সন্তান নিয়ে। বড়দার মেয়ে স্মৃতি, অতীনের ছোটো বোন ললিতা আর বেয়াই বীরেশ্বর এসেছে এ পর্যন্ত। অন্যরা বেশিরভাগই আসবে পরের দিন। শ্রাদ্ধবাড়িতে কোনো আত্মীয় আগেভাগে আসতে চায় না। এ বাড়ির বারোয়ারি চকমেলানো বাইরের উঠানে তখন সেই নেমন্তন্নরই আয়োজন।
প্রথম ব্যাচে বাড়ির পুরুষ আর বাচ্চারা খেয়ে উঠেছে, তার পরের ব্যাচে খেয়েছে বাড়ির বৌ মেয়েরা। খেয়েদেয়ে দরাজ মনে রান্নার সুখ্যাতি করেছে সবাই। তা স্মৃতি অবশ্য রাঁধে ভালো। সেদিন মোটমাট শ দেড়েক মানুষের আয়োজন বলে আলাদা রাঁধুনি ডাকার প্রস্তাবে না করেছিল সেই। বলেছে- কাকিমা, এই অল্প রান্নাটুকু আমিই করে দিতে পারব। তার পরের দিন শ্রাদ্ধের খাওয়ার রান্না রাঁধতে রাঁধুনি আসবে। অবশ্য বারোয়ারি রান্নার রাঁধুনিও ওই পাশের পাড়ার বিমল, বসন্ত আর এ বাড়ির কুমারেশ, বাড়িরই মানুষ সবাই বলতে গেলে। তিন জনে মিলেই এলাকার সকল আয়োজনের রান্না সেরে ফেলে সব সময়।
লুচি বেলতে বেলতে মণি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে- কাকু শ্যাষের দিকে এক কাপ চা খাওয়ার জইন্য হামার বাড়ি যায়া বসি থাইকছেলো রে, দিদি! আর আইজ দ্যাখ…
স্মৃতি কিছু বলে না। ওর হাতে অনেক কাজ, শেষ লুচি কটা রাম এসে নিয়ে গেছে, আরো লাগবে। মণির কথায় সে চুপচাপ লুচি ভেজে চলে। অতীন কাকুর জন্য তারও কষ্ট হয় নিশ্চয়, সেদিন সকালেও সে কেঁদেছিল। শেষের দিকে কত কষ্টেই না কেটেছে কাকুর জীবনটা! শেষবার যখন দেখা হয়েছিল পাঁচশোটা টাকা হাতে দিয়ে গিয়েছিল সে, কাকু কী খুশিই না হয়েছিল সেবার!
বাইরে তখন যে ব্যাচটা খেতে বসেছিল, তাতে সবাই পাশের ছোট্ট পাড়াটার লোক, মাঝাপাড়া বলে ওরা। সেই জোতদারির সময়ে ওদের পূর্বপুরুষেরা ফাইফরমাশ খেটে দিত এ বাড়ির, লেঠেলও ছিল কয়েকজন। ওদের প্রজা বলত এ বাড়ির বাবুরা। অতীনের বাবা কাকারা জমিজমার নতুন রেকর্ডের সময়, সেই বাষট্টির রেকর্ডের সময় তাদের নামে কিছু জমি রেকর্ড করিয়ে দিয়েছিল। বড়বাড়ির বাবুদের বড় বড় বাঁশঝাড়ের ফাঁকে নিজেদের নামে রেকর্ড করা সেই জমিতে ওরা এখন ছেলেপুলে নিয়ে বাস করে। এ বাড়ির ‘দশ’-এর তারাও সদস্য। তাই রোজকার কাজকর্মে যেমন, অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়াতেও বাড়িসুদ্ধ ছেলেবুড়ো সবার ডাক পড়ে আজও।
সে সময় এই ব্যাচটার খাওয়া অর্ধেক হয়ে গিয়েছে প্রায়। লিটনের ছোট ছেলেটা, যার নাম সাহেব সে বরাবর খেতে খুব ভালোবাসে। খাবারের ব্যাপারে তার কোনো বাছবিচার নেই। হাতের কাছে যা পায় তাতেই তার সীমাহীন আগ্রহ। সাহেব ততক্ষণে আঠারোটা লুচি খেয়ে ফেলেছে, আরো কয়েকটা খেতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সবাই সেই বিষয় নিয়ে রীতিমতো হাসাহাসি। রাম বিরক্ত গলায় ওকে বলেই বসেছে- এত লুচি কায়ো খাবার পায় নাকি রে, সাহেব? উঠ। নাইলে ফির আইতোত প্যাট বিষাইবে তোর।
সাহেব নাছোড়বান্দা। অগত্যা রাম ওর থালায় ঝপ করে আরো তিনটা লুচি ফেলে দেয়। ইলা আরেকটু ছোলার ডাল ঢেলে দেয় ওর থালার মধ্যে।
নিজের খাওয়া শেষ করেই পেছন থেকে বড়সড়ো স্টিলের গামলাটা বের করে সীতারানী। এই গামলায় লুচি মিষ্টি নিয়ে যাবে রাতের খাবারের জন্য। ইলা বলে ওঠে, না না, খাবার বাড়ি নিয়া যাওয়া হবার নায় কারো। সবায় এ্যাটেকোনা বসি প্যাট ভরে খায়া যাও তোমরা।
সীতারানী সেকথা মানতে নারাজ। সে আগেই দেখেছে বড়বাড়ির কয়েকজন দিব্যি খাওয়া শেষে বাড়ির জন্য গামলা ভরে খাবার নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির লোক বলে নিয়ে যেতে পারবে, আর তারা এত খাটাখাটনি করে দেয় সবসময়, তাদের জন্য বাড়ি নিয়ে যাবার বরাদ্দ নেই এ কেমন কথা। সীতারানী রুক্ষস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে-
তকোন তাইলে উত্তমের মাও দুই গামলা নুচি নিয়া গেল ক্যানে? ওমাক ক্যানে নিয়া যাবার দিনেন তোমরা। এই বাড়িত বারো মাসে খাটনি দেই, দশের খাওয়ার দিনো তোমরা এইগলা ক্যানে করেন হামার সাতে।
সীতারানী জানে বাচ্চা না কাঁদলে নিজের মাও দুধ দেয় না। আর এ তো পরের বাড়ির খাবার। একটু গলা না উঁচু করলে বেশি মিলবে কেন? এখন কি আর বড়বাড়ির সেই দিন আছে যে সবাইকে খাওয়ার শেষে এক এক গামলা খাবার বেঁধে সঙ্গে দিয়ে দেবে?
কিন্তু সীতারানীর সঙ্গে এ নিয়ে বাক্যব্যয় করার আগ্রহ পায় না ইলা। এই ব্যাচ ধরে খেতে বসে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে তার গা গোলায় হঠাৎ। তার বাপ এত কম বয়সে মরল কিসে? সবাই জানে সে মরেছে খেতে না পেয়ে। আর আজ তারই দশকর্মের নেমন্তন্নে দেড় দুশো লোককে পাত পেড়ে খাওয়াও! আত্মীয় স্বজন পুরোহিত- সবাইকে নতুন কাপড় দাও! ইলার মনে হয় এইসব শ্রাদ্ধশান্তির পাট যদি সে চুকিয়ে দিতে পারত! এইসব লোক দেখানো আচার যদি সে বন্ধ করতে পারত!
কদিন থেকে বাপের কথা মনে হলেই হাউমাউ করে কান্না আসে তার। দিনের পর দিন দুটো ভালোমন্দ খেতে না পেয়ে মারা গেছে তার বাপ অতীন। বাপের জমি যা ছিল, তার অর্ধেক বেচে দিয়েছিল কোন জোয়ানকালে, বাকিটুকুর প্রায় সবই বন্ধক রাখা। তবু বন্ধকী জমির বর্গা বাবদ যা ধান আসে তা দিয়ে বছরটা কেটে যায়। কিন্তু শুধু ধানে কী হয়? দিনের পর দিন পাতের কোনায় শুধু একটা ঘণ্ট কী একটা ভাজা দিয়ে ভাত নেড়েচেড়ে লোকটা মুখে পুরেছে কোনোমতে, পেট ভরেনি, মন ভরেনি। যেদিন মাছটা কি মাংসটা হয়েছে বাড়িতে, খুব শান্তি করে পাত চেটেপুটে খেয়ে একেবারে বাচ্চা মানুষদের মতো খুশি হয়ে গেছে।
দ্বিজেন বাবুর বড়ো ছেলে অতীন বড়ো আদরে মানুষ হয়েছিল। সেই তাকেই কিনা শেষ বয়সে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য সকালে গিয়ে বসে থাকতে হতো স্মৃতিদিদের বাড়ি। অপুষ্ট শরীরটায় নানা রোগশোক বাঁধিয়ে কত অল্প বয়সেই বাবা মরে গেল টুক করে। অসুখে দুটো দিন বিছানায় পড়ে থাকল না পর্যন্ত। ইলার মনে হয়, ওর বাপের শরীরটা ভেতরে ভেতরে একেবারে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল বোধহয়। শরীরে না ছিল ওজন, না ছিল কোনো শক্তি। শেষের দিকে ঠিক করে হাঁটতেও পারত না মানুষটা!
সেই মানুষের শ্রাদ্ধের আয়োজনে নাকি কোনো ফাঁক থাকা যাবে না। খরচের হিসাব দেখেছিল ইলা কাল সকালে, দাদা নিজের হাতে সব খরচ করেছে, দেখেই রাগে দুঃখে চিৎকার করতে ইচ্ছে করেছিল ওর। কিসের জন্য এই নিয়ম, কিসের জন্য এত এত লোকজন ডেকে খাওয়ানো, নতুন কাপড়ের রীতি? কিন্তু ওর মা শিউরে উঠে বলেছিল, কিছু বলিস না ইলা। মানুষটার আত্মাটাক শান্তি পাবার দে!
শান্তি! না খেতে পেয়ে যে মানুষটা একটু একটু মরে গেল তার আত্মার নাকি শান্তি মিলবে এসবে! যে মানুষটা বেচে থাকতে কেউ জমিতে হাত দেয়ার দরকার মনে করল না, তার শ্রাদ্ধের খরচে মন্ডলের ভিটার জমিটা দিব্যি ছোটকার হাতে চলে গেল, এইসব খরচ করে লোক খাওয়ানোতে নাকি তার আত্মার শান্তি হবে! ইলার দপদপানো মাথার যন্ত্রণা ছাড়ে না, অনন্তকালের জন্য বুঝি বসত গেড়ে বসেছে।
গেল মাঘ মাসে বাপ মাকে পিঠা,ভাতের নেমন্তন্ন খাওয়ানোর কথা মনে পড়ে ইলার। বিকালে তিন চার রকম পিঠা পুলি খাওয়ার পর রাতে খাসির মাংস দিয়ে ভাত কেমন গোগ্রাসে খেয়েছিল ওর বাপ। বাপের পাতেই প্রায় অর্ধেক মাংস তুলে দিয়েছিল সে। মুখে বারবার খাব না, খাব না বললেও সবগুলো মাংস চেটেপুটে খেয়েছিল বাবা। বলেছিল, কত দিন বাদে যে খাসি দিয়া ভাত খানু, ইলা!
দাঁতে দাঁত চেপে সে উপচানো কান্নাটা ঠেকিয়ে সীতারানীর দিকে তাকায়। সীতারানী তখনো ক্রুদ্ধচোখে তাকিয়ে ছিল ওর দিকেই। ইলা ওকে আস্তে করে বলে- মাক যায়া ক, তোক লুচি তরকারি দিয়া দিবে মাও।
সীতারানী চোখ নামিয়ে তারপর বাড়ির দিকে হনহন করে হাঁটা দেয়। এই ব্যাচটারও খাওয়া প্রায় শেষ। সব মিলিয়ে আর হয়তো দু চারজন আছে খাওয়ার। তাদের সবাইকে একসাথে বাড়ির ভেতরে বসিয়ে দিলেই হবে। ইলা রামকে সব গুছিয়ে আসতে বলে নিজে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।
সব লুচি ভাজা শেষ করে তখন উনুনের ধার থেকে বাইরে এসেছে স্মৃতিরা। প্রকান্ড স্ট্যান্ড ফ্যানটার কাছে বসে স্মৃতি গায়ের ঘাম শুকাচ্ছে। ঘণ্টা ধরে লুচি ভাজতে গিয়ে শাড়িটাও ভিজে ন্যাতা হয়ে গেছে ওর। স্নান করে ফেলতে হবে আরেকবার। সীতারানী উঠানে গিয়েই গামলা বাড়িয়ে ইলার মার কাছে লুচি মিষ্টির ভাগ বুঝে নেয়।
কমলারঙা বিকালটা তখন একটু একটু করে থিতিয়ে আসছে সন্ধ্যায়। এমন সন্ধ্যা সন্ধ্যা শেষ বিকালেই ঘটে ঘটনাটা। সীতারানীর গামলাটা যখন প্রায় ভরে এসেছে, স্মৃতি বাড়ি যাবে বলে ন্যাতানো শাড়ি পরে উঠে দাঁড়িয়েছে চেয়ার থেকে, মণি কীসব গল্প করছে হেমার বরের সঙ্গে ঠিক তখনই ইলা কোত্থেকে একটা লুচি সবজি মিষ্টিতে সাজানো থালা নিয়ে এসে তুলসীতলায় রাখে। কেউ কিছু বুঝতে পারার আগেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে তারপর। ওর ফোঁপানো কান্নার শব্দে অবাক হয়ে যায় উঠানে উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষ। ইলা ততক্ষণে ফোঁপাতে ফোঁপাতে একেঘেয়ে সুরে ওর বাবাকে ডেকে চলেছে। তারপর কান্নার ঢেউ স্তিমিত হলে ও জোরে চিৎকার করে ওঠে- তোমরা যে খাবার না পায়া মরি গেইনেন বাবা, আইজ এত মানুষ তোমার বাড়িত লুচি মিষ্টি খাওচে, তোমার কোনো কিছু খাবার ইচ্ছা করে না?
উপস্থিত জনতা ঘটনার আকস্মিকতায় বিব্রত হয়ে যায়। ইলার তখন কোনোদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সে এবার তুলসীর থানের ওপর মাথা কুটতে থাকে অবিরাম- বাবা, বাবা, বাবা বলে। সবাই সেদিকে নিস্পলক তাকিয়ে দেখে, কী করবে তা কেউ বুঝতে পারে না। তারপর হঠাৎ সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখে ইলার আনা সেই খাবারের থালা শূন্যে উঠে যাচ্ছে খুব ধীরে ধীরে। ওপরে উঠতে উঠতে সেই থালা তারপর ওদের বাড়ির টিনের চালের ওপর দিয়ে চলে যেতে থাকে সোজা উত্তরদিকে, পাড়ার শেষ মাথায় ওদিকেই ইলার বাপ অতীনের সমাধি।
গল্পকার
দারুণ। দারুণ। দারুণ। ধন্যবাদ গল্পকার দেবদ্যুতি রায়। মন কেড়ে নেয়।
আরও লেখা চাই।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। খুব ভালো থাকবেন।