চেতনা প্রবাহরীতি ও লাল দেদ
১৪ শতকের কাশ্মীরি কবির শৈব বন্দনা কেবল দেবতার স্তবগীতি নয়, তার কয়েকটি বিশেষ যুক্তি এই রকম। প্রথম কবিতা থেকেই কবির অন্তরের গায়ত্রী আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে নিজের গহীন মনস্তত্ত্বকে দেখতে চেয়েছে। তাপসী মেয়েটির কাছে নিজেরই ভেতরে আছে এক তীর্থ,যার জন্য নিজের থেকে বেরিয়ে পড়া যায়, আর তাকেই কবি বললেন,” is like falling in love/ with the greenness of faraway grass.”এই তাঁর অভিযাত্রা শুরু। এখানে আয়নায় প্রতিফলিত আত্মবিম্ব যে আসলে কবির আরেক আমি, পরবর্তী বিশ্বসাহিত্যে তাকেই আমরা জেমস্ জয়েসের ইউলিসিস এ মনন ও বিচ্ছিন্ন চিন্তার প্রবাহের মাধ্যমে প্রকরণের সাযুজ্যে বুঝতে চেয়েছি। কিন্তু বহু শতাব্দী আগে উপনিষদের একেশ্বরবাদী মনোভাবের এই ভক্তি নিরপেক্ষ কবিতা আমাদের তেমন মনোযোগ আদায় করতে পারেনি। আমরা বলতে চাই,কবি তাঁর রচিত বাক্ এর মধ্যে বারবার প্রথাগত ধর্মীয় অনুশাসনকে বরখাস্ত করে ব্যক্তির নিজস্ব অনুভববেদ্য একটি পৃথক জগৎ তৈরি করেছেন: Gluttony gets you the best table in the town of Nowhere fasting gives your ego a boost. Slave of extremes,learn the art of balance and all the closed doors will open at your touch. ( 82, The poems of Lal Ded, pg 84) এ অনেকটা বেদান্তের পরা ও অ-পরাবিদ্যার মতো; মুণ্ডক উপনিষদের বিখ্যাত ‘সযুজা সখায়া’ শ্লোকের ভেতরের কথাটা যেন বলতে চায়। সন্ন্যাস বা লালসা কোনটাই নয়, এ দুইকে সমন্বিত করে নির্মিত হল গার্হস্থ্যের আদর্শ, যা আসলে ভোগ এবং ত্যাগের মধ্যে একটি পরিমিতিবোধের কথাই বলতে চেয়েছে। পরিক্রমার চূড়ান্ত পর্যায়ে কবি এবার কিছু-নেই এর বিশ্বে অবতীর্ণ। স্বর্গ ও নরক, সত্য ও মিথ্যা সমস্ত তাঁর নখদর্পণে। বললেন, আমি আমার আত্মা ও দেহ তাঁকে দিলাম হলাম সেই বাজনা,যা তাঁকে আমার মধ্যে বাজিয়ে নেয় মনন স্থির করে, সমস্ত আকাশে উড়ে গেলাম আর খুলে গেল স্বর্গ ও পাতালরেখা। (বাক্ ১১২, আমার অনুবাদ) এখানেই শেষ নয়। এর পরেও শব্দের নিজস্ব কালিমা রয়ে যায়, শব্দহীন মুদ্রা ও পিছু নেয় আমাদের। আমরা তাড়িত হই আমাদের পিতৃপুরুষের শব্দে ও। শিব অথবা শক্তি, অথবা দুই ই আমাদের বেঁধে ফেলতে চায়। না, এখানেই তিনি একক, কেবল নাস্তিতে এসে তিনি জাগ্রত ও নিদ্রিতের মাঝে কোথাও চেতনাবন্ত হয়েছেন। সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বয়ম্প্রভ ।
The mind’s asleep.When it outgrows itself, it will awake. The five organs are the lake in the sky from which a rain of nectar is falling. The offering Shiva loves most is knowledge of Self. The supreme Word you ‘re looking for is Shiva Yourself. ( 136, pg 138 )
প্রাতিষ্ঠানিকতার বেড়া ভেঙে কবির এই উত্তাল নীরবতায় নিজেকে নিমজ্জন একই সঙ্গে অস্তি ও নাস্তির সমন্বয়ের মুহূর্ত, আমি এখানে নৈর্ব্যক্তিক। সোহম্ তত্ত্বের যেন আর এক সূত্র রইল এখানে। গোপাল হালদার, ধূর্জটিপ্রসাদের ভূমিকায় কথাসাহিত্যে আমরা যে নতুন প্রকরণ দেখেছি, লাল দেদ এক দিকে সেই অন্যচেতনার স্তরীভূত আমি কেই এখানে প্রয়োগ করেছেন।
কবি