Categories
একগুচ্ছ কবিতা
আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট
বৃষ্টিগান
স্থায়ী…
উদ্ধার হওয়া বিজ্ঞাপন থেকেই খুঁজে পেলাম
বৃষ্টি সংলাপ আর হারানো কিছু গান..
গান ও বৃষ্টি ছুঁলাম চোখ বুজে
যতটা সম্ভব টেনে নিলাম
বুকের ভেতর -অলিগলি!
ভেজা মাটি শেখায় কতকী!
না-শেখা গানলিপি, স্বরে -সুরে..
শিখিয়েই চলে বাস্তুহারাদের হাসির আসল মানে
হাতে ধরে চেনায় কোমল স্বরের
কঠিন হওয়ার গল্প ও চলাচল!
শিখিয়ে চলে কালো কেটে সাঁতারের ফর্মুলা!
প্রাজ্ঞ গান ও বৃষ্টি চেনে
শৌখিন মেঘলা উঠোন
চেনে শুকোতে দেওয়া
বাহারি শাড়ি!
চেনায় চলে যাওয়া ও ফিরে আসার কৌশল…
রূপান্তরের তেপান্তর!
উদ্ধার হওয়া বিজ্ঞাপন থেকেই তো চিনে নিলাম নিজেকে
সবটা না হলেও কিছুটা!
পিছুটানহীন যুদ্ধ আগুন
ঠাণ্ডা জমাট জলের চাক
কখনো মাটির বুকে বুক মিশিয়ে
কখনো নদীর শুয়ে থাকা শরীরে ” জবাকুসুমসঙ্কাশ…” অনুচ্চারিত থাক কিছুটা!
রমণীয় শ্লোক যত ডুব সাঁতারে..
বৃষ্টিগান এঁকে যায় কতশত আলপনা! জল জানে সেসব।
আমি দেখি জলের মুখে আমার মুখ!
কখনো হাম্বীর-ছায়ানট কখনো মারুবেহাগ কখনো বৃন্দাবনী সারং-এ!
এক তীব্র প্রাচীন, গান হয়ে ঝরে
আমি হয়ে উঠি মুষলধারে বৃষ্টিপাত!
.
অন্তরা
আমি এভাবেই জড়িয়ে রাখতে চাই বৃষ্টি ধারা!
জলের হরফে খুঁজে পাওয়া প্রাচীন আকাশ -মাটির ইতিহাস ছুঁয়ে থাক আমায় বল্লমবিদ্ধ করে….
আমার চোখের ভেতর থেকে বর্ষামঙ্গল আসে মিছিলের উত্তালে!
বৈদিক মন্ত্রে হাল বওয়া কৃষকের ঠোঁটে বিবাগী বাঁশি…
জলোচ্ছ্বাসের শব্দ শুনি সে সুরে!
কৃষক এখন কৃষ্ণ…
কিন্তু শ্রীরাধিকা, আর আগের মত নেই
সানবার্ণে কালচে ত্বক
আরও বেশি উজ্জ্বল!
আরও বেশি উছল!
মেঘজন্ম হওয়া সেই হরিণ চোখের আলুথালু সেই সাধারণ মেয়ে …
যে তাঁর প্রেমিকের অসমাপ্ত কাজে
বাড়িয়েছে হাত
লাঙল ধরেছে..
মাটি আর লাঙলের ফলার যুগলবন্দীতে
বুনেই চলেছে আবহমান শস্য সম্ভাবনা…
বাঁশি আর লাঙলের যৌথ সুখ
বৃষ্টি হয়েই ঝরছে..
আমি লুট হচ্ছি নিয়মিত
আমি ভিজছি
ভিজেই চলেছি
ভিজেই চলেছি…
.
সঞ্চারী
এখন শুধু ভাঙা রাতের স্বপ্ন খোঁজার পালা …
“…বালি উম্রিয়া কুক শুনাবে
ইস বি র হ ন কি জিয়ারা জ্বালাবে…”
শ্রীমতী পুড়ে যায় …হেঁটে যায়
কোন এক অজ্ঞাত আগুন -বৃষ্টির
ঘোরলাগা অন্ধকারে
ক্রমশ…
‘তোমার ফুলবনে যাইব না…’
ছবির জন্যই ছবি।ছবির বাইরে নেই আর কোনো গল্প! তারপর পালটে পালটে গিয়েছে ক্যালেন্ডারের কত কত খসখসে -তেলতেলে পাতা! বদলেছে আস্ত একটা মোহিনী অধ্যায়… মায়ামাখা-ছায়ামাখা! বদলেছে কি শুধু সেসবই?! পালটে গেছে জীবন দর্শন ও! অতীত-বর্তমানের ফিউশনে আমি তবু বইছি! সাধারণ থেকে অতি সাধারণ এর বহমানতায় আমি… এই তো সেদিন এক কবি বলছিলেন ” তুমি তো নদীই…! তুমি বহতা নদী…শুধুই বয়ে চলো…” কাল সন্ধে তে যখন আকাশ ছেয়ে মেঘেদের মুদ্রা, তখন আবার তিনিই বলছেন আমি নাকি ‘ সন্ধ্যার মেঘমালা…”!!! আমি তো এভাবেই বইতে চাই… মহাকালের অমোঘে! আর একজন সেদিন বলছিলেন ‘তোমার দুখ (দুঃখ) আমায় দিয়ে তুমি বয়ে চলো… ‘ জানিনা, তিনি রেখাদাগেই হয়তো জুড়তে চেয়েছিলেন আমার চলাচলের ধারাবাহিক! অন্য এক কাছের মানুষ নাম রেখেছেন ‘বন্যা’! জলের ওপর বিছোনো আমার যে মন, সে মন জলেই থাকুক… কবিতা আওড়াতে আওড়াতে বলেছিলেন “.. এখানে মেঘ গাভীর মত চরে…”! আবার আমার খুব প্রিয় দিদি মধুমিতা চক্রবর্তী উনি আমায় আগুন-হাওয়ায় উস্কে দেন নিয়মিত! আমার খুব প্রিয় বন্ধু ড. নিবেদিতা আমায় ‘ আলো মেয়ে’ বলে আমায় লজ্জায় ফেলেন! কণা’দি প্রতিমূহুর্তে আমায় দুলিয়ে যান…. মনবাউলের দোতারার সুরে ঘুম ভাঙে রোজ… গুপ্তবৃন্দাবনের অলৌকিক মায়াটানে মন ছুঁতে চাওয়ার কোমলতাটুকু রেখে দিই সযত্নে…. কেউ সেখানে নিয়মিত লিখেই চলেছে অন্তহীন এক জলকথা…!!! বৃষ্টি বৃত্তান্তে ধুয়ে যায় সব… আবার জলকথা গড়ে তোলে আমারই মতো কাউকে নিভৃতে… কোনো কাব্য-মহাকাব্য কিছুই নয়! কিন্তু গড়ে তুলতে চাওয়া এক জলজ ‘প্রতিমা’….. কোনো নারী বা নদী নয়….. শুধুই এক অনন্ত প্রকৃতি! আসলে, এগুলো আত্মকথন মনে হলেও অথবা আত্মপ্রচার মনে হলেও, তা নয় এক্কেবারেইই! জলের ভেতর অনন্ত আঁসমা আর আঁসমার ভেতর নিরহংকারী নিবিড় জলের এই ব্যক্তিগত আমাকে প্রতিমূহুর্তে বাঁচতে শেখায়… ছিঁড়তে শেখায়… ভাসতে শেখায়! কথার কথা হয়ে বেঁচে থাকার লঘু যত, ক্ষমা করতে শেখায় সেসবও! বিষাদ ধুয়ে যায় তাদের জলশ্লোকে… আবার আগুন-মনের সংলাপ বাড়িয়ে দেয় গলনাঙ্কের কেতাবি ফর্মূলা! ডিটারজেণ্টের প্রয়োজন নেই সেখানে… অহেতুক ফেনা তোলার নেশা কাটিয়েছে যে জল-আগুনের কথকতা…তাকেই তো প্রণাম জানাতে হয় বারবার! সেখানেই তো নতজানু হতে ইচ্ছে হয় বারবার…! আসলে ‘মুক্তি’ কেউ কাউকে দিতে পারেনা…
‘মুক্তি ‘ নিজেকেই খুঁজে নিতে হয় তুমুল এক সুরের উচাটনে! মুক্তির একটা অন্য শরীর থাকে যেখানে আলোরটানে গড়ে ওঠে অন্য এক অবয়ব…!! লেন্সে বেজে যায় শুধু সময়ের সারেঙ্গী! আমি আমাকে খুঁড়ি রোজ… অন্য এক ‘আমি’পাওয়ার নিবিড় আশায়!
আনঅথোরাইজড…
মণিকাঞ্চন কথায় ডুয়ার্সের লাজুক চাঁদ ঘুঙুর পায়ে নেমে আসে
মৎসকুমারীর মায়া তার লেয়ারকাট চুল থেকে ফিরোজা নেইলপলিশে…
কবির সঙ্গে তখন কুচোনো বাদাম আর ব্ল্যাক কফি।
ভিতরের ঘর ইশারায় তখন।
খুব ঘোরের ভেতর কে যেন বলেই যাচ্ছে আপেলের ফলন্ত বাগিচার কথা,গন্ধ বিলাসের কথা। কবি ও চাঁদের মুখে ফ্যাটলেস বাতাস…
কুয়াশার কুচি থেকে যে-শব্দ নিষ্পাপ মুখ দেখায়
যে-গান বলে হৃদমাঝারে রাখার খুঁটিনাটি
সেই খুঁটিনাটি থেকে আমি তোমাকেই দেখি কবি!
কবির সব চাওয়াগুলো ল্যাহেঙ্গার পাকের মতো আমাকেও
ডেকে বলে যায় মাছরাঙার মতন শিকারি হওয়ার গল্প!
কাচের প্লেট ক্রমশ হারাচ্ছে তার জৌলুস
মৃত্যর মতো ফ্যাকাশে হয়ে আসে সব
আসলে, প্রতিটি মৃত্যু এক-একটি অনিবার্য গান
পিয়ানো স্বরলিপি ফেলে কানে মন রাখে,বেজে চলে…
কবি তখন কথা হয়ে শুয়ে থাকে
আমরা কথার পাশে।
আততায়ীর ছলাৎছল থেকে ভেসে আসে জল
ভিজিয়ে দেয় আমাদের…
কোথা থেকে যেন উড়ে এলো একটা আর্তনাদ
‘কেন আনারকলি বলে ডাকলে আমায়…’
মিলিয়ে গেল। আগুনের কাছে একদৌড়ে গিয়ে
বললাম ভাতের কথা,আনডেলিভার্ড চিঠির কথা,ঘুমের কথা—-
খিলখিল হেসে উঠে এলেন কবি অ্যারোমা আগুনের ফিউশনে!
তারপর, মিলিয়ে গেলেন
আর দেখিনি তাঁকে…
বিরল পাখির পেঁজা ডানাটাও ফেরার সেই থেকে…
কবি,গায়ক ও সম্পাদক