| 24 এপ্রিল 2024
Categories
ঈদ সংখ্যা ২০২০

ফুল পরির বন্ধু দেবদূতি

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

দেবদূতির মন খারাপ। ভীষণ মন খারাপ। মা দেবযানী ও বাবা বিধান বাসায় নেই। তাই সে মন ভার করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। দেবদূতির আশপাশে কয়েকটা পুতুল রাখা আছে। পুতুল নিয়ে সে খেলছে না। ওর ঘুমও আসছে না। বাবা মার কথা খুব করে মনে পড়ছে। এর মধ্যে হঠাৎ কে যেন এসে বলল, ‘দেবদূতি তোমার মন খারাপ। তাই তোমার ঘুম আসছে না। আমি জানি। মন ভালো করার জন্য এসেছি।’
দেবদূতি ভয়ে পেয়ে গেল। কে আবার আমার মন ভালো করার জন্য এলো। আগে তো তাকে কখনো দেখিনি। আর মন খারাপের কথা জানলো কি করে। একটু পর দেবদূতি ভয়ে ভয়ে বলল, ‘আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। আপনি কে?’
হা হা শব্দ করে বলল, ‘আমি ফুল, মেঘ, নদী, পাখি ও পরিসহ সব কিছু।’
দেবদূতি ধীরে ধীরে বলল, ‘আচ্ছা, আপনাকে তো দেখতে মানুষের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি আবার এসব কীভাবে হবেন?’
‘তুমি বিশ্বাস করো। আমি সত্যি বলছি, যখন যা ইচ্ছা হয়, আমি তখন তাই হতে পারি। প্রমাণ দেখতে চাও?’
দেবদূতি সাহস করে বলল, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি মিথ্যা কথা বলছেন মনে হয়। আমি কিন্তু মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করি না। খবরদার আমার সাথে মিথ্যা কথা বলবেন না। তবে হ্যাঁ, আপনি ফুল, মেঘ, নদী, পাখি পরিসহ সব যে হতে পারেন তার প্রমাণ দেখতে চাই।’
দেবদূতির কথা শুনে বুঝতে পারল সাহস আছে মেয়েটার। তাই বললেন, ‘ঠিক আছে দেবদূতি। তোমার কথা শুনে ভালো লাগল আমার। এবার বলো প্রথমে আমাকে কি রূপে দেখতে চাও। আমাকে বলে তুমি চোখ বন্ধ করো।’
তার কথা বিশ্বাস করে দেবদূতি ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করে ভাবে কি না কি বিপদ হয়। তবুও সে তার কথা প্রমাণ করার জন্য সাহস নিয়ে বলল, ‘প্রথমে আপনি ফুল দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে। অপেক্ষা করো।’
দেবদূতি অপেক্ষা করতে লাগল। কিছু সময় পর তিনি বললেন, ‘দেবদূতি বন্ধ চোখ খুলো এবার। আমার দিকে তাকাও।’
দেবদূতি চোখে মেলে দেখে সত্যি সত্যি শাপলা ফুল। দেবদূতি শাপলা ফুল দেখে অবাক। ফুলের দিকে তাকিয়ে রইল। ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। শাপলা ফুল বলল, ‘কোনো ভয় নেই। আমি তোমাদের জাতীয় ফুল।’
দেবদূতির ভয় একটু কাটল। তবু সে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। শাপলা ফুল বুঝতে পারল সে ভয় পাচ্ছে। ভয় দূর করার জন্য শাপলা ফুল বলল, ‘দেবদূতি তুমি কি সত্যি ভয় পাচ্ছ?’
দেবদূতি বলল, ‘ফুল দেখে কেউ ভয় করে না। ফুল সবাই ভালোবাসে। আমি ভয় পাচ্ছি না। মুগ্ধ হয়ে দেখছি।’
‘তাই, আমাকে দেখার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। এবার তোমার ইচ্ছার কথা বলো দেবদূতি।’
‘আচ্ছা। আমার একটা ইচ্ছা আছে। সেটা কি পূরণ করে দেবেন?’
‘কি ইচ্ছা বলো দেবদূতি?’
দেবদূতি বুদ্ধি বের করে বলল, ‘শাপলা ফুলের বিল দেখার খুব ইচ্ছা। বিলে নিয়ে যাবেন। শাপলা ফুলের বিলে নৌকাতে ঘুরতে চাই।’
ফুল বলল, ‘অবশ্যই নিয়ে যাব। এক্ষুনি চলো।’
দেবদূতি খুশি হয়ে বলল, ‘এক্ষুনি! তবে যেতে পারি। বাবা মা বাসায় আসার আগেই কিন্তু আমাকে রেখে যেতে হবে।’
‘হ্যাঁ। এক্ষুনি। তোমার বাবা মা বাসা আসার আগেই রেখে যাব। তুমি চলো।’
শাপলা ফুল দেবদূতিকে উড়ে নিয়ে গেল বিলে। গিয়ে নৌকাতে ঘুরতে লাগল। ঘোরাঘুরি শেষে বলল, ‘দেবদূতি এবার আরও একটা ইচ্ছার কথা বলো।’
দেবদূতি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি প্রতিদিন মেঘ দেখি। মেঘ ঘুরে বেড়ায়। আমারও মেঘের সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে। তুমি নিয়ে যাবে মেঘের কাছে।’
‘অবশ্যই মেঘের কাছে নিয়ে যাব। তুমি চোখ বন্ধ করো।’
দেবদূতি চোখ বন্ধ করল। শাপলা ফুল এবার মেঘ হয়ে গেল। দেবদূতিকে নিয়ে মেঘ আকাশে গেল। দেবদূতি আর মেঘ মনের আনন্দে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন সময় একটা পাহাড় সমান মেঘ এসে বলল, ‘দেবদূতি মেঘ দেখতে এসেছ।’
দেবদূতি ভয়ে কিছু বলে না। চুপচাপ আছে। সে মনে মনে ভাবছে- এই পাহাড় সমান মেঘ যদি তাদের চাপা দেয়। তাহলে তো শেষ হয়ে যাবে।
মেঘ বলল, ‘হ্যাঁ, দেবদূতি মেঘ দেখতে এসেছে। তোমাদের মতো বড় বড় মেঘের কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা তার। সেজন্য তাকে নিয়ে এসেছি।’
বড় মেঘ বলল, ‘ভালো করেছ। দেবদূতি কথা বলছ না কেন। ভয় করছে তোমার। ভয়ের কিছু নেই। এখানে তোমাকে কেউ ক্ষতি করবে না। তাই ভয়ের কিছু নেই। আমরা সবাই মায়াভরা জল।’
এবার দেবদূতি বলল, ‘তোমাকে এত মোটা দেখে আমি ভয় পাচ্ছি। তুমি এত পাহাড় সমান মোটা কেন?’
বড় মেঘ বলল, ‘আমার শরীর যে জলকণায় ভরা। তাই আমাকে এমন দেখাচ্ছে।’
দেবদূতি বলল, ‘ও আচ্ছা। তোমার কত্ত মজা করো। দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। তাই না।’
‘হ্যাঁ, অনেক মজা। তবে তা কিছুদিনের জন্য। তারপরেই আমরা সবাই ফুরিয়ে যাই। হারিয়ে যাই।’
হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল, ‘হারিয়ে যাও কেন?’
‘বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি মাটিতে। বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়া ভারী মজা!’
‘ও তাই! আমিও বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ব।’
‘না না তুমি পারবে না। কারণ তোমার আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা মায়াভরা জল। আর তুমি রক্তে মাংসে গড়া ছোট্ট মানুষ।’
‘ও আচ্ছা। আমি বড় হলে পারব না।’
‘বড় হলে বলব। এখনো চলো মেঘেদের দেশে তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’
ওরা ঘুরতে লাগল মেঘেদের দেশে।
মেঘের দেশে ঘোরার পর দেবদূতি বলল, ‘নদীতে পালতোলা নৌকায় ঘুরার খুব ইচ্ছা।’
দেবদূতির কথা শোনার পর মেঘ বলল, ‘তাহলে এবার আমি নদী হয়ে যাই।’
‘তুমি এখন নদী হবে। নৌকা পাব তো।’
‘হ্যাঁ। পাবে। কোনো চিন্তা করো না। চোখ বন্ধ করো।’
দেবদূতি চোখ বন্ধ করল। একটু পর দেখে বিশাল এক নদী। নদীতে অনেক নৌকা। কোনো নৌকাতে থেকে কোনোটাতে উঠবে সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। তারপর দেখে একটা পালতোলা নৌকা দোল খাচ্ছে। দেবদূতি বুঝতে পারল। ওই নৌকা তাকে ডাকছে। সাহস করে ওই নৌকাতে উঠে বসল। নৌকা ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ একটা বোয়াল মাছ লাফদিয়ে উঠল নৌকায়। মাছ দেখে দেবদূতি অবাক হলো। কি করবে মাছটা। এমন সময় মাছটা বলল, ‘দেবদূতি তুমি পালতোলা নৌকায় এসেছ। ভালো করেছে। তুমি একা। তাই আমি তোমাকে সঙ্গ দিতে এসেছি। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’
দেবদূতি ভাবছে-নিশ্চয় ওনি এবার বোয়াল মাছ হয়েছে। তাই সে আর ভয় পেল না। বোয়াল মাছ নড়াচড়া করছে। দেবদূতি দেখছে। নৌকা চলছে। এমন সময় দেবদূতি মাছটার মাথায় হাত বুলানোর জন্য এগিয়ে গেল। তখনই মাছটা আবার নদীতে ঝাপ দিল। দেবদূতি মাছ চলে যাওয়ার কারণে চোখ বন্ধ করে শোকে মাথায় হাত দিল। পালতোলা নৌকা পাড়ে এসে ভিড়ল।
নদী বলল, ‘দেবদূতি কেমন মজা হলো।’
‘খুব ভালো। তবে মাছটা ধরতে পারল কি যে মজা হতো।’
‘এ মাছ ধরা বিপদ। এবার বলো। কোথায় যেতে চাও?’
পাখির কথা মনে করে দেবদূতি বলল, ‘আকাশে যখন পাখি উড়া দেখি। তখন আমার খুব ইচ্ছা হয় পাখির মতো উড়তে। উড়ে উড়ে বিখ্যাত বিভিন্ন জায়গা যেতে।’
‘বাহ। ভালো কথা বলেছ। তুমি চোখ বন্ধ করো। আমি পাখি হচ্ছি।’
দেবদূতি চোখ বন্ধ করল। নদী হয়ে গেল টিয়াপাখি। টিয়া পাখি দেবদূতিকে নিয়ে উড়তে লাগল। উড়তে উড়তে টিয়া পাখি বলল, ‘তুমি কি একটা মজা দেখবে।’
মজার কথা শুনে দেবদূতি খুশি হয়ে বলল, ‘কি মজা দেখাবে। আমি দেখব।’
‘তাহলে তুমি চপচাপ বসে থাকবে। আমি কি করব। তা শুধু দেখবে। কোনো রকমের শব্দ করবে না তুমি।’
‘ঠিক আছে। আমি কোনো রকমের কথা বলব না।’
টিয়া পাখি উড়তে উড়তে এক বাসায় বসল। একটু পর টিয়াপাখি মানুষের কণ্ঠ নকল করে আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে লাগল- আগুনের কথা শুনে আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও ছুটলেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে। কিন্তু যে বাড়িতে থেকে আগুন আগুন বলে চিৎকার করেছে, সেখানে পৌঁছানোর পর যেন সবার চোখ কপালে উঠে গেল। কোথায় আগুন! ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ির ভেতর কোথাও আগুন ধরেছে কি না জানতে অনুসন্ধান চালান। পরে দেখে টিয়া পাখি অগ্নিকান্ডের সতর্ক সংকেতের শব্দ নকল করছে।

টিয়া পাখির কান্ড দেখে হেসেই সবাই অবাক। বাসার সবাইকে বাই বাই দিয়ে টিয়া পাখি দেবদূতিকে নিয়ে উড়ে গেল। দেবদূতি মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
ওরা উড়ছে। দেবদূতি বলল, ‘তুমি তো অনেক দুষ্ট। তোমার খেলায় অনেক মজা পেয়েছি।’
টিয়া পাখি বলল, ‘আমি তোমাকে প্রথমেই বলেছি। আমরা যখন যা হওয়ার ইচ্ছা হয়। আমি তখন তাই হয়ে যাই। এখন প্রমাণ পেলে তো।’
দেবদূতি মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ, প্রমাণ পেয়েছি।’
টিয়া পাখি বলল, ‘এবার বলো। তোমার আর কি ইচ্ছা আছে।’
দেবদূতি বলল, ‘আমার পরির সাথে ঘোরার খুব ইচ্ছা। তুমি কি এবার পরি হতে পারবে।’
‘তোমাকে তো বলেছি। আমি সব হতে পারি।’
‘আচ্ছা। তাহলে এবার তুমি পরি হও।’
‘ঠিক আছে। তুমি চোখ বন্ধ করো।’
দেবদূতি এবার চোখ বন্ধ করল। একটু পর চোখ মেলে দেখে তার সামনে একটা পরি এসে হাজির। দেবদূতি খুশিতে আত্মহারা। সত্যি তো তার সামনে পরি। পরিকে কি বলবে, কিছুই বুঝতে পারছে না সে। পরি নিজেই বলল, ‘কি অবাক হলে। পরিকে দেখে ভয় পেলে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার বলো। পরির সাথে কি কি দেখতে চায়।’
দেবদূতি বলল, ‘আমি পৃথিবীর বিখ্যাত রেলস্টেশনগুলো দেখতে চাই।’
দেবদূতির কথা শুনে পরি অবাক হলো। কারণ এমন ইচ্ছার কথা শোনার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। পরির ধারণা ছিল। সে যাতে চাইবে পরিদের রাজ্যে। কিন্তু না সে দেখবে রেলস্টেশন। তাই পরির প্রথমে দেবদূতিকে নিয়ে গেল পৃথিবীর দীর্ঘতম রেল জংশন ভারতের খড়গপুর স্টেশনে। দেবদূতি দেখে অবাক হলো। তারপর একে একে বিভিন্ন রেল স্টেশনে ঘুরতে লাগল ওরা। বিভিন্ন জায়গা ঘোরাঘুরি পর দেবদূতি বলল, ‘আমাকে বাসায় রেখে এসো। বাবা মা হয়তো বাসায় এসেছেন।’
পরি বলল, ‘তোমার আর কিছু দেখার ইচ্ছা হয় না?’
দেবদূতি বলল, ‘না। আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি আমাকে রেখে এসো।’
পরি বলল, ‘তোমাকে যদি বাসায় না রেখে। অন্য বাসায় রেখে আসি। তুমি কি থাকবে?’
‘না না আমি বাবা মা ছাড়া অন্য কোন বাসায় থেকে চাই না। আমাকে বাসায় রেখে এসো তাড়াতাড়ি।’
পরি বলল, ‘তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি তোমাকে রেখে আসব। আমি তো পরি। আমার আগে কেউ যেতে পারবে না।’
‘তাই! কিন্তু আমার যে বাবা মার জন্য খারাপ লাগছে।’
‘মন খারাপ করো না দেবদূতি । এবার বলো তুমি কি আমার সাথে যেতে চাও। নাকি অন্য কোন মাধ্যমে যেতে চাও।’
‘না আমি কোনো মাধ্যমে আর যেতে চাই না। আমি তোমার সাথে যেতে চাই। আমাকে তাড়াতাড়ি রেখে এসো।’
‘ঠিক আছে। চলো।’
দেবদূতিকে নিয়ে পরি উড়তে লাগল। উড়েতে উড়তে বাসায় এলো দেবদূতি।
বাসায় আসা মাত্র পরি বলল, ‘দেবদূতি তোমার কোনো বিপদে বা কোথায় যেতে চাইলে, আমাকে শুধু তুমি, ফুল, মেঘ, নদী, পাখি ও পরি বলে তিন বার ডাকবে। আমি এসেছে হাজির হবো।’
‘ঠিক আছে। মনে থাকবে।’

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত