| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ঈদ সংখ্যা ২০২০

সুর পাগল ও অন্য গল্প

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

সুর পাগল

তখন সকাল গড়িয়ে গেছে।
রুম্পি ওর সেজকার সাথে বাগানে বসে অর্জুনগাছের ছাল তোলা দেখছিল। ছাল তুলে নেওয়ার সাথে সাথে কেমন রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে জায়গাটা। আহত গাছের ক্ষত থেকে ফুটে ওঠছে লালাভ পানি। ঝরে পড়ছে অবরুদ্ধ অভিমানে। রুম্পি বোঝে গাছটা কাঁদছে।

সেজোর সাদাপাঞ্জাবির ঝুল ধরে কান্না তোলা গলায় বলে ওঠে, ওরা কি সব ছাল তুলে নেবে সেজো? গাছটা যে তাহলে মরে যাবে! দেখো দেখো কেমন কাঁদছে গাছটা।
সেজো দেখে সত্যিই ত। গাছটা কেমন কান্না করছে। বিচলিত গলায় তাড়াতাড়ি ছাল তোলা লোকটাকে থামতে বলে, র-র রমেশ আজ থা থা থাক রে ভাই। গা-গা গাছটা নিতে পারছে না। ক-ক-কষ্ট পাচ্ছে। দে-দে-দেখছিস ত কেমন কা-কাঁপছে, কা-কা-কাঁদছেও।
রমেশকাকু ছুরি দিয়ে গাছের গায়ে চৌকা দাগ আঁকছিল। চশমার ফাঁকে ঘোলা চোখে ঘুরে তাকায়। সেজোর সঙ্কুচিত, বিব্রত মুখ দেখে একটু হাসে, গাছের আবার কাঁদন আর কাঁপন। কি যে কন আপনি। সারাক্ষণ গান শুনতি শুনতি আপনার মাথাডা এক্কেরে হালুয়া হয়ি গেছে আমজুদাদা।

সেজো মুখ ভার করে সরে আসে। রয়না গাছের গোঁড়ায় খেজুর পাটিতে গিয়ে বসে পড়ে। সেখানে ছোট্ট কালো একটি টেপ রেকর্ডারে তখন বেজে যাচ্ছে, রসকে ভরে তোরে নয়না, নয়েয়ে এনা সাভেরিয়া, আ আ আ সাভেরিয়া… তোরে নয়না…!

চকচকে ছুরি দিয়ে ছাল তুলে নিচ্ছে রমেশকাকু। ছাল তুলতে তুলতে রুম্পিকে বোঝায়, বুঝলে খুকি মানুষরে বাঁচতি, বাঁচাতি কত রকমের যে কাজ করতি হয় সারা জেবনভর। এই যে আমি ছাল তুলতিসি সে কি খালি আমার জন্যি ! এগুলো ত সব চলে যাবেনে দুর্যোধন কবিরাজের ওষুধ খানায়। এগুলো দিয়ে তারা ওষুধ বানাবেনে। ওষুধ না বানালি অসুখের সময় কি খায়ি মাইনসে অসুখ সারাবেনে? তা ছাল না নিলি ওষুধ হবিনে কেম্নে তুমি কও ত খুকি!
রুম্পি জানায়, কেন কাকু, আমাদের ফার্মেসিতে কত ওষুধ। ওগুলো খেলেই ত সব অসুখ সেরে যায়। সবাই ত তাই খায়। রমেশ এবার বিশাল এক তাচ্ছ্যিলের হাসি দেয়, কি যে কও খুকি। ওগুলো ত সব কারাখানায় বানায়। রংটং হাবাজাবা আরও কতকিছু মিশায় ওর সাথে। ভেজাল। বুঝলে খুকি সব ভেজাল। এইযে তোমার সেজোকাকা নিত্যিদিন কত ওষুধ খাতিসে। কই ভাল হতি পারিসে? আগের মত যে পাগল ছিল সে পাগলই রয়ি গিসে।
রুম্পি জানে সেজকার জন্যে কত ওষুধ আনা হয়েছে। কতবার কত ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কি সুন্দর দেখতে সেজকা। সেই সেজকা বছরের একটি নির্দিস্ট সময় পাগল হয়ে যায়। কাউকে চিনতে পারে না। নিজের ছেলেমেয়ে, প্রিয় ভাইঝি রুম্পিকেও তখন মারতে আসে। বাঁশের ঝাঁকায় ছালগুলো সাজিয়ে রাখে রমেশকাকু। ছুরিটা গামছায় অর্জুনগাছটার গোঁড়া পরিষ্কার করতে করতে বলে, তোমার কাকাডা হতিছে সংসারের বেহুল্লা মানুষ। কিচ্ছু জানে না। ঘরে বসি খাতিছে, গাতিছে, গান বান্তিছে আর সুময় সুময় পাগল হয়ি যাতিছে। চেরসুখি জন। আমাগের মত কামলা খাটি খাতি হলি বুঝতি পারত, কত ছালে কত টাকা হয়। আসি গো মামনি। গাছটারে একটু আদর যত্ন কইরো। প্রাণে বড় কষ্ট পাইছে আজ।

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

অন্তর্গত

রাইফেলের ট্রিগারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঙ্গুল উঠে আসে আইজ্যাক ইভানের। বুড়ো রাফাদ কম্যান্ডার রেবেকাকে টেনে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে বার বার ব্যার্থ হচ্ছে। গাড়ির দরোজা সজোরে জাপটে ধরে চেঁচাচ্ছে রেবেকা। আইজ্যাক বোঝে আর বেশিক্ষণ এভাবে টিকে থাকতে পারবে না রেবেকা। পাহাড়ি রাস্তা ধরে দ্রুত এগিয়ে আসছে আরো কিছু ইসরাইলি সৈন্য। যুদ্ধের দামামায় মাছ শিকারের মত মেয়ে শিকার করে উৎসব বানায় ওরা।

আগামী কয়েক বছরে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র বলে কিছু রাখবে না এই প্রতিজ্ঞা ওদের। তিন তিনবার মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গেছে আইজ্যাক। প্রথমবার রেবেকার আব্বা প্যালেস্টাইন সৈন্যদের হাত থেকে আইজ্যাককে কেড়ে নিয়েছিল নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে। নইলে তিনবছর আগে হামাস গ্রুপের হাতে ওর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেছিল। হেবরন থেকে সেদিন রাতেই জেরুসালেম পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল রেবেকার আব্বা ইউসুফ আঙ্কল। আইজ্যাক জন্মভুমি শহর, বিস্তীর্ণ আঙ্গুরক্ষেত, সদ্য নিহত বাবামার সমাধি রেখে পালিয়ে যায় বেতলেহম। বেতলেহেমের ওয়াল পার হয়ে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে প্রায় এক মাস মৃত্যুর সাথে লুকোচুরি খেলে জেরুসালেম ইহুদি বসতিতে এসে পৌঁছেছিল আইজ্যাক।
ছোটবেলার বান্ধবী রেবেকার অনুরোধ ছিল, পালিয়ে যা আইজ্যাক। পশ্চিমের কোন দেশে চলে যা। ওখানে আবার আমরা মিলিত হবো।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। আইজ্যাক স্বেচ্ছায় ইসরাইল আর্মিতে যোগ দিলো। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো রেবেকার সাথে সব যোগাযোগ। একুশ বছরের রক্তে জমলো ক্রোধ। উন্মত্ত প্রতিশোধ। শিরায় শিরায় নির্বিচার আগ্রাসন। যে করে হোক হেবরনকে দখল করতেই হবে। তার জন্মভূমি। কিছুতেই হেবরনকে প্যালেস্টাইনদের কাছে ছেড়ে রাখা চলবে না। আর মুসলমান জাতি, থুঃ। যখনই কোন মুসলিম ধরতে পেরেছে, তার উপর পুরো ম্যাগাজিন শেষ করে কুৎসিত উল্লাসে ভি চিহ্ন দেখিয়েছে ওরা। নির্বিচারে ধর্ষণও করেছে ধরে আনা মুস্লিম নারীদের। প্রেমিকা রেবেকার নাম মুছে গেছিল ওর হৃদয় মন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা থেকে।

আজ যখন চারজনের একটি মুসলিম নারীর দলকে ওরা ধরতে পেরেছে, বুড়ো কম্যান্ডার আনন্দে চুমু খেয়ে নিয়েছে ওর অস্ত্রে। আইজ্যাক কিছুটা পেছনে ছিল। গ্রেনেড ছুঁড়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছিল অই চারজন নারীকে বহনকারী মাইক্রোটিকে। হঠাত কম্যান্ডারের ডাকে ছুটে আসতে গিয়ে চমকে ওঠে আইজ্যাক। কম্যান্ডারের বুকে দুহাতে কিল চড় ঘুষি মারছে রেবেকা। হ্যা রেবেকাই ত!
বাঁ হাত থেকে ডান হাতে রাইফেল তুলে নেয় আইজ্যাক। রেবেকা আর কিছুক্ষণ পরেই হেরে যাবে। পালাতে পারবে না কিছুতেই। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে আসছে আরো ইসরাইলি সৈন্য। রেবেকার দুপায়ের মাঝখানে বুড়ো কম্যান্ডার ডান পা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এবার কেবল একটি ঝাটকা মাত্র। মুহুর্তে রেবেকা ঢুকে যাবে সামরিক গাড়ির গর্তে। শেষবারের মত গোলাপী স্কার্ফে ঘেরা মুখখানা কম্যান্ডারের কাঁধের পাশে একবার ঝলকে উঠলো। পুরো ম্যাগাজিন শেষ করে রিভলবার নিজের মাথা বরাবর তাক করার আগেই আইজ্যাক উড়ে গিয়ে পড়ে বুড়ো কম্যান্ডারের মৃতদেহের উপর। রেবেকার আধখানা দেহ ঢেকে গেছে বুড়ো কম্যান্ডারের শরীরের নিচে। শেষ কয়েক সেকেন্ড জীবিত আইজ্যাক কেবল স্কার্ফ ছুঁতে পারে। লালগোলাপি স্কার্ফ। হেবরনের বাড়ির পেছনে রেবেকা আর ওদের যৌথ বাগানে ফুল্ল হয়ে ওঠা আঙুরফুলের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল যেনো !
ইসরাইলি সৈন্যদলের সাথে আসা তরুণ ফ্রি ল্যান্সার সাংবাদিকটি বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায়। মানুষের রক্ত এত লাল হয় ! একই রঙ। একই ধারায় বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি রাস্তা রাঙিয়ে। সামরিক গাড়ির ভেতর ভয়ার্ত তিন নারীর ছবি তুলতে ক্যামেরা অন করতেই একজন সৈন্য দরোজা বন্ধ করে দেয়, নোওওপ।

 

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

হ্যাপি ফাদারস ডে মাম

দু দুটো মনিটর কিছুটা কার্ভ করে পাশাপাশি রাখা। বাঁদিকে একটি মাউথ পিস। কালো গলা। হা করে মুখ উঁচিয়ে আছে। উত্তর আর পূবের জানালায় ঝুলছে বাঁশবেতের কাজ করা বিশেষ পর্দা। পূবের জানালা দিয়ে কিছু সবুজপাতা আবছা দেখা যাচ্ছে। এসি বন্ধ। কিন্তু রুমটি বেশ ঠান্ডা। এক রুমের এই ছোট্ট অফিসে দুজনের বসার মত একটি পুরনো সোফায় বসে আছে রিমু।

যার কাছে এসেছে সে লোকটা শিল্পী। নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে সে। রিমুর কাজিন আব্রার ভাইয়ার ইশকুল জীবনের বন্ধু। অবশ্য এক্সকিউজ চেয়ে নিয়েছে। হাতের কাজটা শেষ হলেই রিমুর সাথে কথা বলবে। রিমুরও ভীষণ দরকার। তাই অপেক্ষা করছে আর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আব্রার ভাইয়ার পাঁচ বন্ধু মিলে দেওয়া ক্ষুদ্র অফিসটাকে। বসে থাকতে থাকতেই ব্যাগের ভেতরটা একবার চেক করে নেয় রিমু। আম্মুর এ্যালবাম থেকে কতগুলো ছবি তুলে এনেছে। এক বাবা ও মেয়ের অনেকগুলো ছবি। শিশুকালের মেয়ে আর তরুণকালের বাবা, কিশোরি বেলার মেয়ে সাথে তার বাবা। এগুলো নিয়ে কিছু আঁকাতে চায় রিমু। কাল রাত থেকে ভেবে যাচ্ছে কি আঁকাবে ও? কি আঁকালে ওর মনে শান্তি নেমে আসবে! ছবিগুলো দেখতে দেখতে একটি ছবি বেছে নেয় শিল্পী, এটা দিয়ে চলবে?
রিমু দেখে, ছবিতে এক শিশু। বাবার কাঁধে। বাবার হাতে বাঁশি। কোন এক বাংলা নববর্ষের সকালে তোলা হয়েছিল। চারুকলার সামনে। মঙ্গল শোভাযাত্রার পেছনে মেয়েকে কাঁধে নিয়ে নাচের ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে অই বাবা। আনন্দিত ও বিহ্বল বাবার মাথা দুহাতে আঁকড়ে ধরে আছে যে মেয়েটি তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়। এত আলো, এত গান, বাজনা বাদ্য, মানুষ, হাসি, বাঁশি! খুশিতে আরো জোরে আরো শক্ত করে বাবার চুল খামচে ধরেছিল মেয়েটি। খুশির উত্তেজনায় ঘুঙ্গুর পরা ছোট্ট দুপায়ে বাবার বুকে ছন্দের অভিঘাত তুলে তাকিয়ে দেখছিল সবাই কি সুন্দর করে গাইছে, এসো হে বৈশাখ। এসো এসো।
কি করতে চাও ছবিটা দিয়ে? কোন আইডিয়া থাকলে বল।
চেয়ারটা ঘুরিয়ে রিমুর মুখোমুখি বসেছে শিল্পী শিশির। সকালে আব্রার জানিয়েছিল ওর এক কাজিন আসবে। কিছুটা ছিটিয়াল । সামলে নিস দোস্ত। কিন্তু মেয়েটাকে বেশ শান্ত লাগছে। গোছানো পরিপাটি। অবশ্য খুব বেশি আলাদা না হলে শিশিরের কাছে সব মেয়েকেই শান্ত, গোছানো, পরিপাটি বলেই মনে হয়। তাছাড়া এ মেয়ে ত এখনও টিনএজ।
শিশিরের প্রশ্ন শুনে রিমুর চোখ জ্বলে ওঠে, এই বাবা লোকটার মুখ রাক্ষসের মত আর বাঁশিটাকে রক্তমাখা তরবারি করে এঁকে দিন ভাইয়া।
এবার হেসে ফেলে শিশির। তাহলে এই হচ্ছে মেয়েটার ছিট্‌!
কি যে হচ্ছে আজকাল। ঘরে ঘরে বাবা মায়ের বিচ্ছেদ সংখ্যা হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। সমাজ নিতে পারছে কিন্তু সন্তানরা কষ্ট পাচ্ছে। এ দেশে ডিভোর্স হলে একজন আরেক জনের নিন্দা মন্দ এমনভাবে করে যে, ব্যক্তিগতভাবে সে নিজে হচ্ছে সাধু সজ্জন। অন্যজন খারাপ। খারাপ মানে খুবই খারাপ। যার ফলে এক ছাদের নীচে এক সাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। পরস্পর পরস্পরের কাছে তারা জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাগুলো হচ্ছে জানোয়ারের বাচ্চা। বাবা ফেলে গেলে বাচ্চাগুলো ভাবে, বাবা জানোয়ার। আর মা চলে গেলে বাচ্চাগুলো বুঝে নেয় তাদের মা জানোয়ারের চেয়েও অধম। সমঝোতা আর সন্মানের সাথে আজ পর্যন্ত কোন ডিভোর্স হয়েছে কিনা সন্দেহ।
কেন যেনো অস্পষ্ট একটা আবেগ অনুভব করে শিশির, তোমার মেল আইডি থাকলে রেখে যাও। বিজি আছি।
ফাদার্স ডের আগে চাই ভাইয়া। আসি তাহলে, বাইই…
লো টেবিলের উপর একটি এনভেলাপ ও ছবি রেখে চলে আসে রিমু। খুব আনন্দ হচ্ছে ওর। ধানমন্ডি টিউটোরিয়ালের নার্সারী ক্লাশে রাইমস মুখস্থ বলার মত আনন্দ জাগছে ওর বুকে। কি সুইট ছিল ওদের ক্লাশ মিস! রাইমস না পারলেও একটি করে কফি চকোলেট দিতো ওদের সবাইকে। স্কুটিতে স্টার্ট দিয়ে রিমু মনে মনে উচ্চারণ করে, টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার…
এনভেলাপটা ড্রয়ারে রেখে কাজে ডুবে যায় শিশির। কাজটা সে আনন্দের সাথে করে বলে এটাকে পেশা করে নিয়েছে এখন। থ্যাংস গড। ওর আম্মু তেমন জোরালো আপত্তি করেনি। কিন্তু যদি করত ও কি শুনতো সে আপত্তি ?
নীল হলুদ মাউসের লাল চোখ দেখতে দেখতে শিশির ভাবে, হয়ত শুনত। আম্মুকে ও ভালোবাসে। কিছুতেই আম্মুকে অখুশি করত না । নিজে কষ্ট পেলেও, না।
জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার নেমে এসেছে। ও শিট ! আজ একবারও কথা বলা হয়নি আম্মুবুড়িটার সাথে। নিশ্চয় কোন কাজ করছে কিচেনে বা বারান্দা বাগানে। এক মুহুর্ত চুপ করে থাকতে পারে না। একবার ত নরম কাপড় দিয়ে ওর মনিটর মুছে সে কি যাচ্ছেতাই কান্ড করে ফেলেছিল। খুব বকেছিল সেদিন আম্মুকে। কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বার বার ছোট মানুষের মত করে বলছিল, আমি ভাবলাম এত নরম কাপড়, সামান্য পানি…
ছবিটা সেন্ড করে হাসে শিশির। বাবার বাঁশিতে একটি ফুল ও পাখি এঁকে দিয়েছে। মাথায় দিয়েছে মুকুট। শিশু মেয়েটিকেও পরিয়ে দিয়েছে ফুলের মুকুট ফুলের গহনা। বাবার হাতের পাশ থেকে পিঠে এঁকে দিয়েছে দুটি উড়ন্ত পাখনা। শিশু মেয়েটিকেও দিয়েছে দুটি রঙ্গীন পাখনা।
শিশির জানে, কোন কোন বাবা অথবা মা কখনো কখনো পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে চলে যায়। ঝরা পালকের মত তারা ফেলে যায় তাদের সন্তানদের। রিমু কি বুঝবে, যে যেতে চায় তাকে যেতে দিতে হয়!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত