| 8 অক্টোবর 2024
Categories
ঈদ সংখ্যা ২০২০

সাদাত হাসান মন্টোর গল্প: কালো সালোয়ার

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

সাদাত হাসান মন্টোর গল্প :  কালো সালোয়ার                

অনুবাদ :    শীলা বিশ্বাস


হিসাব নিকাশ সব ভুল আঠেরো টাকা আট আনা এই হল গিয়ে তিন মাসের কামাই  তাকে শুধু কোঠা ভাড়া হিসাবেই কুড়ি টাকা দিতে হবে এখানে পায়খানায় চেন লাগানো আছে প্রথমদিন সুলতানা ভেবেছিল এই চেন ধরে উঠতে হয় তারপর চেন টেনে যা হল ! বিস্ফোরণ ! ভয় পেয়ে গিয়েছিল সুলতানা এখন বুঝল বাড়িওয়ালা কেন এটাকে ফ্ল্যাট বলছিল খুদা বক্স্ পাশের ঘরে ক্যামেরা পরিষ্কার করতে করতে উঠে বলল , ‘তুমি চ্যাঁচালে সুলতানা?’  সুলতানার তখনও ঘোর কাটেনি ,  বলে, “হায় আল্লা , এটা পায়খানা না রেলস্টেশন ? আমি ভেবেছিলাম আমি মরেই যাব’  খুদা বক্স্ হাসতে হাসতে বলল , ‘এটা হল বড় শহরের বিলাতি পায়খানা বুঝেছ?’

সুলতানা আর খুদা বক্স্– এর দেখা হওয়াটা একটা সুন্দর গল্প খুদা বক্স্ রাওলপিণ্ডির ছেলে হাই স্কুল পাশ করে ট্রাক চালাতো পরে বাস কোম্পানীতে চাকরিও পেয়েছিল রাওলপিন্ডি থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত বাস চালাতো কাশ্মীরে একটি মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তারপর প্রেম তাকে নিয়ে লাহোরে পালিয়ে আসে সেখানে বিশেষ কাজ না পেয়ে মেয়েটি আদিম ব্যবসায় যুক্ত হয় মেয়েটি আবার বছর দু-একের মধ্যে অন্য একটি ছেলের প্রেমে পড়ে। খুদা বক্সকে ছেড়ে চলে যায় মেয়েটির খোঁজে খুদা আম্বালা পর্যন্ত আসে এই আম্বালায় সুলতানার সঙ্গে দেখা ও প্রেম

 সুলতানার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকেই খুদা বক্স্এর কপাল ফেরে তাই সুলাতানাকে ও খুব পয়া মনে করত খুদা বক্স্ একটা ক্যামেরা কিনেছিল কিছুদিনের মধ্যেই ছবি তোলা শিখে নিয়ে সাহেবদের ছবি তুলতো তারাই ধীরে ধীরে সুলতানার খদ্দের হয়ে যায় এখন রোজগার ভালোই  নিজের জিনিস একটু একটু করে গুছিয়ে নিচ্ছিল  সুলতানা একজোড়া রুপোর কানে দুল আর চারগাছি সোনার চুড়ি কিনেছিল আলমারিতে প্রায় পনেরোটা শাড়ি এখন  

খুদা বক্স– এর একদিন মনে হল আম্বালা ছেড়ে দিল্লীতে গিয়ে থাকবে  সুলতানাও রাজী হয়ে গেল দিল্লীতে প্রথম দুমাস কোনো ব্যবসাই হল না আম্বালা থাকাকালীন দিল্লী সম্পর্কে যা শুনেছিল সব মিথ্যে খদ্দের না পেয়ে বড়ই চিন্তিত প্রথমে ভেবেছিল হয়ত যুদ্ধের জন্য খদ্দের এমুখো হচ্ছে না এক সময় যাও এল একসঙ্গে তিনজন আয় মাত্র তিনটাকা আরও কয়েকজন খদ্দের আসায় তিন মাসের মোট আয় আঠারো টাকা আট আনা  কোঠার কুড়ি টাকা ভাড়া ছাড়াও জল আর ইলেক্ট্রিক বিল , খাওয়া জামাকাপড় এতকিছু হবে কী করে পরিস্থিতিও ক্রমশ খারাপের দিকে সোনার চুড়িগুলো একটার পর একটা বিক্রি করে দিতে হল লাস্ট চুড়িটা বিক্রির আগে সুলতানা অনেক করে খুদাকে বলেছিল “ জানচলো আমরা আবার আম্বালায় ফিরে যাই  খুদা বক্স  একবারেই রাজী নয়   “ না মেরী জানআমরা এখানে থেকেই রোজগার করব তোমার সোনার চুড়ি আমি ঠিক ফিরিয়ে আনবো আমার উপর ভরসা রাখো সুলতানা খুদার এই উত্তরে সুলতানা কোন তর্ক না করে শুধু খালি হাতটা দেখালো  

দিল্লীতে কোঠাতেই থাকে সুলতানার বান্ধবী তামাঞ্চা জান ওর সঙ্গেই যত সুখ দুঃখের কথা বলত দিস লাইফ ইজ ভেরী ব্যাড  এখানে কোন কাজ নেই কী করে চলবে বল তো ? কালকের খাবার কোথা থেকে আসবে জানি না ছোট ছোট ইংরাজি কথা সুলতানা শিখে নিয়েছিল আম্বালাতেই ওখানকার দিনগুলো ছিল অন্যরকম। তিন চার ঘন্টায় একজন না একজন খদ্দের টলমল পায়ে এসেই যেত  রোজ বিশ ত্রিশ টাকা কামানো কোনো ব্যাপার ছিল না সুলতানার কিন্তু সাহেব খদ্দের বেশী পছন্দের ছিল যদিও ওদের ভাষা বুঝতো না সাহেবদের নিজের মাতৃভাষায় গালাগাল দিয়ে খুব মজা পেত  ‘উল্লুকা পাঠ্ঠে’ আর হারামজাদা’ বললেও সাহেব খদ্দের হেসে গড়াতো

আরো দুমাস সামান্য আয়ে চলল সুলতানা জানে না এর পর কী করতে হবে খুদা বক্স বেশীর ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটায় সেই দিনগুলোতে সুলতানাও যেন আর বেশী করে একলা আর অসুখী হচ্ছিল আজকাল আর গল্প করতেও ভালো লাগছে না একা একা ঘরে বসেই দিন কাটায় মাঝে মাঝে ব্যালকনিতে বসে বসে বাজারহাট লোকজন দেখে কখনও রেলস্টেশনের দিকে তাকিয়ে থাকে রেলওয়ে কারশেট শেডের তলায় শয়ে শয়ে বাক্স চারিদিকে ছড়ান থাকে  বাদিকে খোলা জায়গা একটা লাইন ক্রস করে আরেকটা লাইন চলে যাচ্ছে আলো পড়ে চকচক করছে হাতের শিরার মত ট্রেন আসছে ইঞ্জিন স্টীম হুটার বাজিয়ে পাশ করে যাচ্ছে চলে  যাওয়ার আওয়াজ আসতে আসতে মিলিয়ে যাচ্ছে হঠাত একদিন সকালবেলায় কুয়াশার মধ্যে একটা সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হল ধোঁয়া আকাশে উঠে যাচ্ছে একটা কামরা ইঞ্জিন থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে সুলতানার নিজের জীবনটাও যেন এক একটা বাতিল কামরার মত জীবনের ট্রাকে ওকেও  কে  যেন ঠেলে দিয়েছিল  সে নিজেও ইঞ্জিন চালিত স্বেচ্ছায় কিছু করতে পারে না আসতে আসতে একদিন সুলতানাও থেমে যাবে আর চলবে না আম্বালাতেও ওর ঘরের কাছে রেল স্টেশন ছিল তবে এভাবে কোনদিন ভাবেনি এখন তার মনে হচ্ছে রেলস্টেশন একটি নিষিদ্ধ গলি  মোটা ইঞ্জিনগুলি সেই মোটা ব্যবসায়ী যারা আম্বালায় মাঝে মাঝে তার কাছে আসতো

পাঁচ মাস হয়ে গেল কিছুই পরিবর্তন হল না মহরমের আর মাত্র কয়েকটা দিন সকলেই কালো রঙের পোশাক পবে সুলতানার কাছে একটা নতুন সাদা কামিজ ও সাদা ওড়না আছে নতুন জামা কেনার মতো তার কাছে আর টাকা নেই ভাবছে রঙ করিয়ে নেবেএকটা কালো সালোয়ার ওকে কিনতে হবে কী যে করবে সুলতানা কিছুই ভেবে পাচ্ছে না

সুলতানা ব্যালকনিতে বসে আছে যদি কোন বাবু এসে যায় দু একজন যারা যাওয়া আসা করছে তারা কেউ নজর করছে না  তারা হয়ত তাদের স্ত্রীর কাছে ফিরে যাচ্ছে  হঠাত মনে হল একটি লোক তার দিকে নজর করছে সুলতানা একটু হাসি দিল তারপর চোখের ইশারায় উপর আসতে বলল তাও লোকটা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো আগে পিছু দেখতে লাগলো লোকটা সুলতানা হাত নাড়িয়ে উপরে আসতে ইশারা করল  লোকটা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এসে ঘরে ঢুকতেই

আপনার কি আসতে ভয় করছিল?’ সুলতানা জিজ্ঞেস করল

 আপনি কেন এরকম বলছেন?’  স্মিত হাসি হেসে বলল লোকটা

সুলতানার উত্তর ‘না আপনাকে অনেকক্ষণ ওখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখছিলাম তাই বলছিলাম আর কি

আবার হেসে বলল লোকটা, ‘মোটেও না আসলে আপনার উপরতলা থেকে একজন মহিলাকে দেখছিলাম একটা লোককে ইশারা করে কী বলছিল তারপর আপনাকে দেখলাম সবুজ লাইট জ্বালিয়ে বারান্দায় এলেন সবুজ আমার প্রিয় রঙ চোখের জন্য ভালো এই বলে লোকটা ঘরটা ঘুরে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো

 সুলতানা জিজ্ঞেস করল,’ আপনি কি চলে যাচ্ছেন ?’

না একটু ঘুরে দেখছি আপনার ফ্ল্যাটটা

 সুলতানা ওকে ওর তিনটে ঘর দেখিয়ে আবার ফিরে এল যেখানে মেঝেতে গদি পাতা আছে — -‘আমার নাম শঙ্কর

এই প্রথমবার সুলতানা শঙ্করের মুখের দিকে ভালো করে তাকালো উচ্চতা ও চেহারা মাঝামাঝি  কিন্তু চোখ দুটি খুব উজ্জ্বল কলার তোলা সাদা শার্ট আর ধূসর রঙের প্যান্ট পরা শঙ্কর মেঝেতে বসলো একটা সাধারণ চাদর পাতা রয়েছে গদির উপর  সুলতানার মনে হল  দুজনের ভূমিকা পালটে গেছে

সুলতানা কিছুই বলছে না দেখে শঙ্কর বলল,

আমি কী বলব আপনি তো কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না

তাও সুলতানা মুখ খুলছে না দেখে আবার শঙ্কর বলল ‘ ঠিক আছে তুমি প্রশ্ন কর আমি উত্তর দিচ্ছি… ঠিক আছে … আসলে তুমি যা ভাবছি আমি তা নই আমি টাকা দিই না ডক্টরের মত ফীজ নিই আমার ফী আছে আমাকে ডাকলে ফীজ দিতে হয়

 সুলতানা হেসে উঠে বলল,’আপনার কাজটা কি বলুন তো ?’

শঙ্কর বলল, ‘ আপনার যা কাজ

সুলতানার পালটা প্রশ্ন, ‘ তুমি কী কর?’

শঙ্কর মুখে হাসি বজায় রেখে বলল, ‘ আমি…  আমি কিছুই না

সুলতানাও নাছোর , ‘তাহলে আমিও কিছুই না

এটা কোনো কথা হল কিছু তো করেন

আমি নিজেকে নষ্ট করি

আমিও

তাহলে দুজনে একসঙ্গে নিজেদের নষ্ট করি

আমি ইচ্ছুক কিন্তু কিছু দিতে পারব না

এটা কোন লোঙ্গরখানা নয় আর  আমি কোনো ভলান্টিয়ার নই

 ‘আমি বোকা নই খুদা বক্স বোকা

 ‘কেন?’

 ‘কারন ও বহুদিন ধরে একটা ভন্ড ফকিরের সাথে ঘুরে বেড়ায় ও নাকি খুদার ভাগ্য ফেরাবে!  যার নিজের ভাগ্যের এই দুর্দশা সে আবার ভাগ্য ফেরাবে?’

আসলে তুমি হিন্দু তুমি ওসব বুঝবে না

 শঙ্করে হেসে বলল, ‘এটা হিন্দু মুসলিমের ব্যাপার নয়

 সুলতানায়  ডান হাত নাড়িয়ে বলল ‘ দরজা ও দিকে

শঙ্কর দাঁড়িয়ে পড়ে পকেটে হাত দিয়ে বলল, ‘ কখনো দরকার পড়লে আমাকে ডেকো আমি কিন্তু খুব কাজের মানুষ

শঙ্কর চলে গেলেও শঙ্করের অদ্ভুত কথাবার্তার একটা রেশ রয়ে গেলো সুলতানার মধ্যে  আগের থেকে মনটাও যেন একটু ভালো 

খুদা বক্স ফিরলে জানতে চাইলো, ‘ কোথায় ছিলে এতক্ষন?’

খুদা খুব বিদ্ধস্ত ছিল , ‘পুরানো কেল্লার কাছেই ছিলাম  একটা ফকিরের কাছে গেছিলাম  যদি আমদের ভাগ্য ফেরে

তিনি কি বললেন?’

কিছু না

এখনো কিছু বলেননি?’

কিন্তু কিছু একটা হবে এটা আমার বিশ্বাস

বিকেলে যাবে না

সুলতানার মহরমের কথা মনে পড়ে গেল  কান্না ভেজা গলায় বলল , ‘আমাকে এই খাঁচায় রেখে তুমি সারাদিন বাইরে থাকো  আমি কোথাও যেতে পারি না  একটা কালো নতুন সালোয়ার লাগবে  একটা কানা কড়িও নেই ঘরে  লাস্ট সোনার চুড়িটাও চলে গেছে  আমাদের কী হবে কিছু ভেবেছো ? নাকি ওই ভন্ড ফকিরের পিছনে পিছনে ঘুরবেতোমার পুরানো ফটো তোলার কাজটা আবার শুরু কর কিছু তো আয় হবে নাকি?’

খুদা বক্স মেঝেতে শুয়ে নিল তারপর  বলল,  শুরু করতে হলে আমার কিছু ক্যাপিটাল লাগবে সে সবের জোগান কোথায়?  তুমি ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে  আল্লা বোধ হয় আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন

আমার সালোয়ারের জন্য কালো কাপড় কিনে আনতে হবে  মুক্তারআনোয়ার সবারই কালো পোশাক আছে  ওরা সবাই পবে  আমার খালি সাদা সাটিনের কামিজ আর সিফনের ওড়না আছে  দুটোকে কালো রঙ করিয়ে নেব  আমার মাথা ছুঁয়ে বল তুমি নিয়ে আসবে  যদি না কর আমি কিন্তু মরে যাব

 চুপ কর প্লীজ আমি কোথা থেকে টাকা পাবআমার একটা পয়সাও নেই বরং আজ আল্লার কাছে প্রার্থনা কর যেন তিন চারজন কাস্টমার এসে যায়’ 

আর তুমিকিছুই করতে পারবে না?’

না বরং আমি কিছু খাবার কিনে নিয়ে আসি বাজার থেকে

পরদিন সকালে খুদাবক্স আবার সেই ফকিরের কাছে চলে গেল  সুলতানা  যা পয়সা ওর কাছে ছিল তাই দিয়ে লন্ড্রিতে  কামিজ আর দুপাট্টা রঙ করতে দিল দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুম থেকে যখন উঠল তখন বিকেল হয়েছে  গায়ে একটা লাল চাদর গায়ে দিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো  সন্ধ্যা ধীরে ধীরে নামছে মহল্লায় হঠাত শঙ্করকে দেখতে পেল , শঙ্কর একটু হাসলো সুলতানা ওকে ইশারায় আসতে বলল 

শঙ্কর এল সুলতানা যেন একটু অপ্রস্তুত  শঙ্করকে কেন সে ডেকেছে কি বলবেশঙ্কর খুব স্বাভাবিক ভাবে বালিশটাকে কোলে টেনে মেঝেতে শুয়ে পড়লো  সুলতানা কিছুই বলল না  শঙ্কর বলে ‘তুমি আমাকে বার বার আসতে বলো আর বার বার চলে যেতে বলো আমি কিছু মনে করি না

তোমাকে কেউ যেতে বলে না

তাহলে আজ আমার শর্তে’ শঙ্কর হেসে বলল,

কিসের শর্ত?  তুমি কি  আমাকে বিয়ে করবে?’

বিয়ে তুমি আমিআমাদের এই বাজে কাজটা করা উচিত হবে না  বিয়েটা আমাদের জন্য নয়

থামো কিছু কাজের কথা বল’ 

‘ কী বলতে চাইছো বল তো?’

 ‘এমন কিছু বলো যাতে আমাদের কিছুটা সময় ভালো কাটে

 বলো তুমি কি চাও?

অন্য পুরুষ যা চায়

তাহলে অন্যদের সঙ্গে তোমার কোন তফাত নেই

তোমার আমার মধ্যে পার্থক্য নেই কিন্তু আমার আর তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে

বুঝেছি

তাহলে তুমি জিতেছো

তোমার নাম সুলতানা আমার নাম শঙ্কর

চলো আমরা পাশের রুমে যাই

পাশের রুম থেকে যখন বেরোলো  তখন দুজনকেই খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিল

সুলতানা শঙ্করকে বলল, ‘তুমি আমার জন্য একটা কাজ করে দিতে পারবে?’

কি বল?’

না মানে বললেই ভাববে আমরা যা করলাম তার জন্য দাম চাইছি’ 

বলই না?’

তুমি আমাকে একটা কালো সালোয়ার কেনার টাকা দিতে পারবেমানে বলছিলাম কি কালো সালোয়ার এনে দিতে পারবেমহরমের দিন পরব

 শুনে শঙ্কর হাসলো তারপর বলল, ‘আমার পকেটে কি আর টাকা থাকেযাই হোক আমি কথা দিচ্ছি মহরমের প্রথমদিন তুমি কালো সালোয়ার পেয়ে যাবে

সে সুলতানার কানের দুলের দিকে তাকালো তুমি আমাকে তোমার কানের দুলটা দিতে পারবে?

সুলতানা বলল এটা সাধারন একটা রুপোর দুল  পাঁচ টাকার বেশী দাম হবে না

আমি কানে দুলের কথা বলেছি দাম জানতে চাইনি’ 

এই নাও ঠিক আছে

শঙ্কর চলে যাওয়ার আগে অনেক্ষন পরে মনে হল সুলতানা তার কানের দুলটা হারালো

শঙ্কর কথা রাখতে পারবে না  সুলতানা নিশ্চিত ছিল 

মহরমের দিন সকালে দরজায় খট খট  শঙ্করের হাতে খবরের কাগজে মোড়া একটা জিনিস  কালো সালোয়ার পরে দেখা হবে’ এই বলে চলে গেলো শঙ্করের চলে যাওয়ার পর প্যাকেট খুলল 

সুন্দর কালো সাটিনের সালোয়ার ওর বন্ধু মুক্তার যেমন দেখিয়ে ছিল  সুলতানা নিজের কানের দুলের কথা ভুলে গেল 

বিকালে রঙ করতে দেওয়া দুপাট্টা আর কামিজ নিয়ে এলো  নতুন জামা পরল  দরজায় আবার কড়া  এবার মুক্তারদুজনেই দুজনকে দেখছে 

মুক্তার বলল,’ কামিজ আর দুপাট্টা রঙ করেছো বোঝাই যাচ্ছে   সালোয়ারটা নতুন বানালে ? কখন?’

আজই, দর্জি সকালে দিয়ে গেল

মুক্তারের কানে একটা নতুন দুল সুলতানা জিজ্ঞেস করলো এটা কবে কিনলে ?

মুক্তার বলল আজই এরপর কেউ কোন কথা বলেনি

দুজনেই দুজনের দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত