ফুল, অশ্রু, প্রেম – ৩১ নারীর কবিতা (পর্ব – ৪)। মুম রহমান
আমার বিবেচনায়, প্রেমের কবিতার ক্ষেত্রে এলিজাবেথ বারেট ব্রাউনিং (১৮০৬-১৮৬১) সকল নারীর মধ্যে সেরা। ব্যক্তি জীবনেও তিনি প্রেমের জয়গান গেয়েছেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি রবার্ট ব্রাউনিংয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেম হয়। বাবার অনুমতি পাবেন-না জেনেই গোপনে তারা বিয়ে করেন। বাবা-মা আর ১১ ভাইবোন রেখে তিন ঘর ছেড়েছেন প্রেমের জন্যই। ১৮৪৬ সালে ব্রাউনিং দম্পতি ইতালি চলে যান এবং জীবনের বাকী দিনগুলো এখানেই কাটিয়েছেন। এলিজাবেথ ব্রাউনিং ইংরেজি ভাষায় প্রথম নারী যিনি পেত্রার্কের দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে ‘সনেট সিকোয়েন্স’ লেখেন। সনেট সিকোয়েন্সকে বলা যায় ধারাবাহিক চতুর্দশপদী কাব্য। পেত্রার্ক, স্যার ফিলিপ সিডনি, শেকসপিয়ার, জর্জ মেরিডিথের মতো শক্তিশালী পুরুষ কবিরাই এর আগে ‘সনেট সিকোয়েন্স’ রচনা করেছেন। এলিজাবেথের সনেটগুলো ‘সনেট ফর পর্তুগিজ’ শিরোনামে ১৮৫০ সালে প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, পতুর্গিজ বলতে এখানে পর্তুগালের সনেট বোঝানো হয়নি, এলিজাবেথ তার প্রিয়তম ব্রাউনিংকে আদর করে ‘পর্তুগিজ’ বলে ডাকতেন। প্রেমিক ব্রাউনিংয়ের প্রতিই নিবেদিত তার সনেট সিকোয়েন্স। ভিক্টোরিয়ান আমলের এই কবি একই সঙ্গে ব্রিটেনে ও আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়েছেন এইসব প্রেমের কবিতা লিখে। কিশোরী কাল থেকেই কবিতা লেখা শুরু। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাকী জীবন মেরুদন্ডের ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা নিয়েই কাটিয়েছেন, সঙ্গে বাড়তি যন্ত্রণা ছিলো দূর্বল ফুসফুস। ধারণা করা হয় তার হয়তো যক্ষাও ছিলো। ব্যথার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে তিনি আফিম নিতেন, যা তাকে আরও দূর্বল করে তুলতো। তীব্র শারীরিক যন্ত্রনা নিয়েও তিনি ১৮৪১-৪৪ সাল নাগাদ প্রচুর গদ্য, পদ্য এবং অনুবাদ সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। ১৮৪৪ সালে তার কাব্যসংকলন প্রকাশ হলে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। পরবর্তীতে এডগার এলান পো, এমিলি ডিকিনসনের মতো মার্কিন কবিরাও তার কাব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
প্রিয়তম, আপনি আমাকে কতো ফুল এনে দিয়েছেন
প্রিয়তম, আপনি আমাকে কতো ফুল এনে দিয়েছেন
বাগানে ভরে দিয়েছেন, পুরো গ্রীস্মকাল জুড়ে
আর শীতেও, আর মনে হয় যেন ওরা বেড়ে উঠেছে
এই বদ্ধ ঘরেই, বাদ পড়েনি যেন সূর্যালোক কিংবা বৃষ্টি স্নান থেকে,
যেন আমাদের ভালোবাসার নামের মতো,
এইসব ভাবনার কথাই ধরুন যেগুলোও উন্মোচিত হলো,
আর যা এই উষ্ণ আর শীতল দিনে আমি প্রত্যাহার করে রেখেছিলাম
আমার হৃদয়ের জমিন থেকে। যথার্থই, ওইসব ফুলের সারিগুলো
বড় বেশি বেড়েছিলো আগাছা আর তিক্ততায়,
আর অপেক্ষায় ছিলো আপনার বিবাহের, তবুও এখানে এগলানটাইন
এখানে আইভি ফুটেছিলো!- ওদের গ্রহণ করুন, যেমন আমি করছিলাম
আপনার দেয়া ফুলগুলো, আর দেখবেন যেন শুকিয়ে না যায়।
আপনার চোখকে বলবেন, ওদের রঙকে যেন সত্যি করে রাখে,
আর আপনার আত্মাকে বলবেন, ওদের শেকড় আছে আমার কাছে।
আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি
আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি? আমাকে পন্থাগুলো গুণতে দিন,
আপনাকে ভালোবাসি গভীরতর, প্রশস্ততর আর উচ্চতর সীমায়
আমার আত্মা পৌঁছাতে পারে, যখন অনুভূতি দৃষ্টিসীমার বাইরে
সত্তার আর আদর্শ গৌরবও যখন শেষ হয়ে যায়।
আমি আপনাকে ভালোবাসি প্রতিদিনের সমতায়
সবচেয়ে একান্ত চাওয়ায়, সূর্য আর মোমের আলোয়।
আমি আপনাকে ভালোবাসি মুক্তভাবে, যেমন পুরুষের লড়াই অধিকারে;
আমি আপনাকে ভালোবাসি নিখাদ, যেন তা সব প্রশস্তির বাইরে।
আমি আপনাকে ভালোবাসি সেই একান্ত আসক্তিতে
যা আমার অতীতের বেদনায় আর শৈশবের বিশ্বাসে আছে।
আমি আপনাকে ভালোবাসি সেই ভালোবাসায় যা মনে হয় হারিয়ে ফেলেছিলাম
আমার হারানো সন্তদের সাথে, আমি আপনাকে ভালোবাসি নিঃশ্বাসে,
হাসিতে, কান্নায়, আমার সারা জীবনের! আর, যদি ঈশ্বর চায়,
আমি আপনাকে মৃত্যুর পর আরও বেশি ভালোবেসে যাবো।
জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।