| 11 অক্টোবর 2024
Categories
খবরিয়া

বিদায় নিলেন মুঘল-ই-আজম খ্যাত দিলীপ কুমার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার আর নেই। আজ বুধবার (৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভারতের মুম্বাইয়েরে পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর।


দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন দিলীপ। গত ৩০ জুন তাকে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। রবিবার তার আ্যকাউন্ট থেকে একটি টুইট করে দিলীপ কুমারের অসুস্থতার কথা জানানো হয়। টুইটে স্ত্রী সায়রা বানু, কিংবদন্তি অভিনেতার জন্য প্রার্থনা করার আবেদন করেছিলেন। চিকিৎসক ডা. নিতীন গোখলের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে তার চিকিৎসা।

দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্ম নেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। বাবা মোহাম্মদ সারোয়ার খান ছিলেন ফল ব্যবসায়ী। মুম্বাইয়ে শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে পুনেতে যান তিনি। সেখানে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন। তবে কিছুদিন সেখানে কাজ করার পর আবারও মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন।

মুম্বাইতে ব্যবসার কাজে তার পরিচয় হয় তৎকালীন প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। তার মাধ্যমেই পরিচয় ‌‌‌‘বোম্বে টকিজ’-এর মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণ ইউসুফ সারোয়ার খানের। পরে ১৯৪৩ সালে বোম্বে টকিজে চাকরি খুঁজতে গেলে সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ইউসুফ সারোয়ার খান। দেবিকা রানীর সিনেমায় ইউসুফ সারোয়ার খানের নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৪ সালের ‘জোয়ার ভাটা’ চলচ্চিত্রটির জন্য দিলীপকে প্রধান চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন দেবিকা রানী। এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউড শিল্পে প্রবেশ করেন দিলীপ কুমার।

প্রথম দিকে দিলীপ কুমারের কয়েকটি ছবি ব্যবসাসফল ছিল না। ক্যারিয়ার শুরুর প্রায় ১৬ বছর পর ১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল এ আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ছয় দশকের ক্য্যারিয়ারে তিনি ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার স্ত্রী মুম্বাই চলচ্চিত্রের আরেক অভিনেত্রী সায়রা বানু।

‘জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল ই আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’সহ অর্ধশতাধিক বলিউড ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। তপন সিনহা পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সাগিনা মাহাতো’তে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন। এই কালজয়ী ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন সায়রা বানু।

১৯৭৬ সালে, দিলীপ কুমার ছবিতে অভিনয় থেকে পাঁচ বছর বিরতি নেন এবং ছায়াছবি ‘ক্রান্তি’র প্রধান চরিত্রে অভিয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন এবং প্রধান চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যান। তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল ‘কিলা’ (১৯৯৮)। দিলীপ কুমার অভিনেত্রী ‘বৈজয়ন্তীমালার’ সঙ্গে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেখানে তারা উভয়েই একসঙ্গে নিজেদের প্রযোজিত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘গঙ্গা যমুনা’-সহ সাতটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। তাদের দুজনের মধ্যে সবসময়ের জন্য বোঝাপড়া খুবই ভাল ছিল।

ভারত সরকার ১৯৯১ সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করে এবং ১৯৯৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি তার অসামান্য অবদানের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পদকে ভূষিত করা হয়। সেই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনীত করা হয়। তিনি ১৯৫৪ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার প্রথম পদক গ্রহণ করা ব্যক্তি এবং এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড তার ঝুলিতে। তিনি এখনও পর্যন্ত মোট আটটি বিভাগে এ পুরস্কার জিতেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত