পরিচালক: সুমন ঘোষ
ছবির ধরন:Drama
সুদীপ ঘোষ
জয়েসের ছায়া থেকে বেরিয়ে বাঙালির নিজস্ব সত্তার সার্থক খোঁজ
জেমস জয়েসের ‘ডাবলিনার্স’ বইয়ের অন্যতম এবং সবচেয়ে লম্বা গল্প ‘দ্য ডেথ’ অবলম্বনে সুমন ঘোষের ‘বসু পরিবার’। ‘দ্য ডেথ’ গল্পের কিছু অংশ, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি। আয়ারল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে এই গল্পটি এমনিতেও অতি সুস্বাদু আইরিশ হুইস্কির মতো— তাল, লয়, মানে স্বাদ, নেশায় সামঞ্জস্যপূর্ণ এক অসাধারণ সৃষ্টি।
সেই গল্পটিকেই বাংলায় ফেললে কেমন হবে, সেটাই চেষ্টা করেছেন সুমন ঘোষ। অবশ্যই আসল গল্পটির থেকে অনেক কিছুই পাল্টাতে হয়েছে তাঁকে। যেমন গল্পটির মূল বিরোধ যেখানে, যা থেকে গল্পের শেষে অবিনশ্বরের উদাসীনতা প্রকাশ পায়, তা এখানে মূল গল্পটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
কিন্তু উত্তম আইরিশ হুইস্কিকে বাংলায় ফেললেও, তার স্বাদ যে একটুও টাল খায়নি, একথা অবলীলায় বলা যায়। তার নেশাও ততটাই মসৃণ। কেন সেটাই বলছি। ‘বসু পরিবার’ একটি ফ্যামিলি ড্রামা। একটি চেম্বার ড্রামাও বটে। অর্থাৎ তার মধ্যে কোনও অতিনাটকীয় মোচড়ের স্কোপ নেই। তা যে থাকে না এমন ঘরানার ছবিতে, তা বলব না, কিন্তু এ ছবিতে নেই।
তা সত্ত্বেও দু’ঘণ্টার কাছাকাছি এই ছবিটি যে কখন শেষ হয়ে যাবে, আপনি হুঁশই পাবেন না। এবং গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনাকে মোবাইল ফোন দেখতে হবে না বারে বারে। অবশ্যই এখানে একটা শর্ত আছে। আপনি যদি সেই রকমের দর্শক হন, যিনি আজকাল বাংলা ছবি দেখেন না কারণ বেশিরভাগ ছবিতেই কেমন একটা অপূর্ণতা থেকে যায় শেষে, তাহলেই কিন্তু আপনার এ ছবি ভালো লাগবে। ছবির শেষের দিকে সৌমিত্র চট্টোপাধায়ের চরিত্রের একটি উক্তি আছে, ‘পঞ্চাশ বছর অনেকটা সময় অবার অনেকটা নয়ও।’ ছবিটাও অনেকটা সে রকমই। কারণ ছবিতে প্রায় কিছুই ঘটে না, আর সে কারণেই অনেক কিছুই ঘটে।
ছবির গল্প বলায় কোনওদিনই বিশ্বাস করিনি। শুধু এটুকু বলব যে ছবির দুই প্রধান পাত্রপাত্রী, প্রণবেন্দু আর মঞ্জরীর বিয়ের পঞ্চাশতম বর্ষে পরিবারের সকলে নিমন্ত্রিত। ছবির মূল ভাবনা হল এই আনন্দের অবসরে ধীরে, ধীরে বেরিয়ে আসে বসু পরিবারের ক্ষয়িষ্ণু কঙ্কাল। আর্থিক নয়, আত্মিক। প্রত্যেক আনন্দের পিছনেই যে লুকিয়ে থাকতে পারে বিরাট, বিরাট ক্ষত, সেটাই ছবির প্রতিপাদ্য। একই সঙ্গে মানুষের এই ছোট ছোট দুঃখ-সুখের তোয়াক্কা করেন না যে ঈশ্বর, তা-ও পরিষ্কার করে এ ছবি।
সুমন এ ছবির পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং লেখক। তাঁর কাজটা তিনি সফলভাবে করেছেন। কারণ একইসঙ্গে সৌমিত্র, অপর্ণা, ঋতুপর্ণা, যিশু, কৌশিক, সুদীপ্তা, লিলি, শাশ্বত, পরাণ— এতজনকে সামলানো সহজ নয়ই, তাঁদের থেকে সেরাটা বের করে আনা অত্যন্ত শক্ত। এই ছবিতে প্রত্যেকের অভিনয় সম্পদ। আর সম্পদ শেষের ন্যারেটিভের ভাষাখানা, যা সৌমিত্রবাবুর রচনা। বিক্রম ঘোষ একেবারে অচেনা এক অবতারে অবতরণ করে ছবির সুর দিয়েছেন।
বিশ্বের সর্বশেষ খবর, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার, ভিডিও, অডিও এবং ফিচারের জন্যে ইরাবতী নিউজ ডেস্ক। খেলাধুলা, বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সহ নানা বিষয়ে ফিচার ও বিশ্লেষণ।