| 20 এপ্রিল 2024
Categories
চলচ্চিত্র বিনোদন

মুভি রিভিউ: বুলবুল অন্য আলোয় একটি বলিষ্ঠ নারীবাদী গল্প

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
অভিনেতা: তৃপ্তি দিমরি, রাহুল বসু, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রুচি মহাজন, বরুণ পরশ, বুদ্ধদেব
পরিচালক: অন্বিতা দত্ত
পাঠকের রেটিং ৩.৫/৫

 
সুন্দরী মহিলা এমনিতেই বিপজ্জনক। আর যদি সে আয়নায় নিজেকে দেখে হাসে, মনের গভীরের সেই মণিমুক্তোকে দিনের আলোয় বিছিয়ে দিতে চায়, যা তার নিজের সত্তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত, তাকে ঘিরে থাকা পুরুষের প্রতি যদি তার প্রশ্নহীন আনুগত্য না থাকে, তবে সে দ্বিগুণ বিপজ্জনক।
 
অন্বিতা দত্তের ডেবিউ ছবিটির প্রেক্ষাপট উনিশ শতকের বাংলা। টানা টানা চোখের বালিকা বধূ তার সঙ্গী খোঁজে, দয়ালু ও প্রাণোচ্ছ্বল এক সঙ্গী। আর সেই সন্ধানই তাকে পৌঁছে দেয় অন্ধকারময় এক জগতে। এই কাহিনীই আধিভৌতিক জঁরের মাধ্যমে বলেছেন পরিচালক। বাপের বাড়িতে যে বুলবুল ছিল এক স্বাধীন মনের শিশু, গাছে চড়ে, আম কুড়িয়ে দিন কাটত যার, শ্বশুরবাড়িতে তাকে হয়ে উঠতে হয় বয়সে তিনগুণ বড় স্বামী ইন্দ্রনীলের বাধ্য স্ত্রী। রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে যমজ ভাই মহেন্দ্র, তাঁর স্ত্রী বিনোদিনী (পাওলি) ও ছোট ভাই সত্যকে নিয়ে ইন্দ্রনীলের সংসার। ইন্দ্রনীল ও মহেন্দ্র – দুটি চরিত্রেই অভিনয় করেছেন রাহুল বসু।
 
বাংলা সাহিত্যের অসম্ভব প্রভাব রয়েছে অন্বিতা দত্তের এই ছবিতে, যা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, যদিও সব প্রভাব সব সময়ে খুব স্পষ্ট নয়। সবার উপরে রয়েছে রবি ঠাকুরের ‘চোখের বালি’। শুধুমাত্র বিনোদিনী-মহেন্দ্র নামকরণের জন্য নয়। অল্পবয়সী বিধবা, তার দেওর ও বালিকা বধূর মধ্যে টানাপোড়েনের সম্পর্কের বিষয়টিও রয়েছে। বিমল মিত্রের উপন্যাসের ভিত্তিতে নির্মিত ‘সাহেব বিবি গোলাম’-এ আবরার আলভি যেভাবে বড় বউয়ের চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন, সেই রেফারেন্সও রয়েছে। আবার সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’-য় গৃহস্থালিতে আটক এক গৃহবধূর হঠাৎ এসে পড়া অতিথির চোখ দিয়ে অন্য একটি পৃথিবীকে দেখা – সেই রেফারেন্স খুবই স্পষ্ট। এমন আরও অনেক আছে।
 
তবে তার পরেও ‘বুলবুল’ একেবারেই পরিচালকের একটি স্বতন্ত্র ছবি। ক্লাসিক রেনেসাঁ-পূর্ববর্তী বাংলার সঙ্গে দেশি হরর ছবির গথিক নির্মাণ মিশেলে তৈরি হয়েছে একটি টানটান চিত্র। ছবির ঘন লাল রংয়ের প্যালেট যেন রাজমহলের ভিতরে বয়ে চলা রক্তাক্ত কোনও কিছুর প্রতীক। কিন্তু এই রংটি ছবির মেজাজের সঙ্গে একেবারেই উপযুক্ত। আবার এই কারণেও প্রাসঙ্গিক যে আমরা জানি কপালে সিঁদুর, পায়ে মল দিয়ে যে মেয়েদের বেড়ি পরানো যায় না, তাদের দাবিয়ে রাখতে হয়। পুরুষতন্ত্র তখনও ছিল, এখনও আছে, কোথাও যায়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত