| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ক্যারিয়ারের যত্ন জীবন যাপন

একজন উদ্যোক্তার সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো

আনুমানিক পঠনকাল: 4 মিনিট

একজন উদ্যোক্তার ব্যবসায়ে সফল ও ব্যর্থ হওয়ার কারণ যদিও তার সামর্থ্য, দুর্বলতা, প্রবণতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে যেগুলো মূলত একজন উদ্যোক্তাকে সাফল্য লাভ করতে কিংবা তার ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কাজ করে। একজন উদ্যোক্তার জন্য সেই কারণগুলো সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই কারণগুলো জানা থাকলে ও সঠিকভাবে এসবকে কাজে লাগাতে পারলে একজন উদ্যোক্তার জন্য ব্যবসায়ে সফল হওয়াটা সহজ হয়ে যাবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, একজন উদ্যোক্তার ব্যবসায়ে সফল ও ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো।

ব্যবসায় সঠিক পণ্য নির্বাচন

সঠিক পণ্য নির্ধারণ, ব্যবসায় সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে। একজন উদ্যোক্তাকে কোনো পণ্য নির্বাচনের সময় সেই পণ্যের চাহিদা কেমন, মানুষের কাছে সেই পণ্যের মান কেমন হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনে তারপরে পণ্য বাজারজাত করতে হবে। একইভাবে পুরাতন পণ্যের চেয়ে নতুন পণ্যের উপর মানুষের আগ্রহ কেমন, পুরাতন পণ্যের চেয়ে নতুন পণ্য দ্বারা ব্যবসায় জড়িত হলে লাভের মুখ দেখা যাবে কি না সে বিষয়ের দিকেও খেয়াল রেখে পণ্য নির্বাচন করতে হবে।

সঠিক ব্যবসায়ের পরিকল্পনা

সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনার উপর ব্যবসার সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। ভবিষ্যতে আপনার এই ব্যবসার সাথে সংযুক্ত সকল ধরণের চিন্তাভাবনা ও কাজের নীল নকশা পূর্ব থেকেই করে রাখার নামই হচ্ছে ব্যবসা পরিকল্পনা। একজন উদ্যোক্তাকে ব্যবসা শুরু করার পুর্বেই সেই ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে রাখতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের সমস্যা আর নাহয় আর যদি তারপরেও ভবিষ্যতে একই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে যেনো সেটা কম খরচে ও অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান করা যায়। সঠিক পরিকল্পনার না থাকার কারণে অনেক ব্যবসাই ব্যর্থ হয়ে থাকে।

পর্যাপ্ত মূলধন

ব্যবসা শুরু করার আগেই আপনাকে যেমন উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে তেমনি আপনার হাতে যথেষ্ট পরিমাণ মূলধন থাকতে হবে। মূলধনের পরিমাণ যদি কম হয় তাহলে ব্যবসার গোঁড়াতেই সমস্যা দেখা দেবে, যেটা ব্যবসার কার্যক্রম অনেকটাই পিছিয়ে দেবে। সুতরাং, একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার গবেষণা করে বের করতে হবে যে আপনার ব্যবসাটি আসলে দীর্ঘমেয়াদি নাকি স্বল্পমেয়াদি। আর তারপরে সেটার উপর নির্ভর করে আপনাকে মূলধনের পরিমাণ বাড়াতে কমাতে হতে পারে। পর্যাপ্ত মূলধণের অভাবে ব্যবসার কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় না।

মার্কেট রিসার্চ

আপনার ব্যবসার পণ্যের বাজার চাহিদার উপর ব্যবসার সফলতা অনেকটাই নির্ভরশীল। আর সেজন্যে আপনাকে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে। কোনো ব্যবসায়িক পণ্য বাজারে চলবে নাকি, বাজারে এর চাহিদা কেমন, কোন ধরণের মানুষের কাছে আপনার ব্যবসায়িক পণ্যের সহজলভ্যতা বেশি, কোন বয়সের মানুষ আপনার পণ্যের উপর বেশি আগ্রহী, ব্যবসায়ের ভ্যালু নির্ধারণসহ আরো অনেক কিছুই নির্ভর করে এই মার্কেট রিসার্চের উপর। একইভাবে পণ্য সরবরাহের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যদি মার্কেট রিসার্চ না করেন তাহলে হয়তো আপনার পণ্যের চাহিদা বেশি হওয়া সত্ত্বেও আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্যের যোগান দিতে পারবেন না, যা এক অর্থে ব্যর্থতারই লক্ষণ।

পণ্য বাজারজাতকরণ

বাজারজাত হচ্ছে সঠিক মূল্যে কোনো পণ্যকে বাজারে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা। শুধুমাত্র সঠিক মূল্য হলেই হবে না, যথাসময়ে বাজারে পণ্যের চাহিদা মেটাতে সক্ষম না হলে অন্য কোনো উদ্যোক্তা সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করবে। ধরুন, আপনি নির্দিষ্ট একটি পণ্যের ব্যবসা করছেন। আপনার আশেপাশে আরো দশটি দোকান রয়েছে যারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করে। এখন যদি আপনার পণ্য সরবরাহ দেয়ার ক্ষেত্রে দেরী হয় কিংবা পণ্যের দাম বেশি বলে মনে হয় তাহলে হয়তো আপনার আশেপাশেই কোনো উদ্যোক্তা সেই একই পণ্য বাজারজাত করবে, কম মূল্যে ও যথাসময়ে সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে একজন ক্রেতা কখনোই সেই পণ্যের জন্য আপনার কাছে আর আসবেন না।

অভিজ্ঞতা

ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ততটা না থাকলেও শেখার আগ্রহের দিকে যথেষ্ট মনোযোগ রাখতে হবে। আপনার আশেপাশে যারা ব্যবসা করছে তাদের টেকনিক, তাদের ব্যবসায়ের মেথড, তাদের ব্যবসায়ের প্ল্যানিং, ব্যবসায়ের ধরণ, ক্যাটাগরি, অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে শিখতে পারলে আপনিও একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারবেন। যেকোনো উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা হচ্ছে শিখতে থাকা। যত বেশি শিখতে থাকবেন তত বেশি অভিজ্ঞ, দক্ষ আর যোগ্য উদ্যোক্তা হতে পারবেন।

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন

ধরুন, আপনি এমন একটি পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন যেটা আপনার আগেও আরো বেশ কয়েকজন একই জায়গায় করেছেন। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যর্থতা কেউ ঠেকাতে পারবে না! আপনাকে অবশ্যই ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে সেখানে আপনার পণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে না হয়। মানুষের প্রয়োজন যেখানে, মানুষের যে স্থানে যেটা প্রয়োজন সেটার উপর নির্ভর করে ব্যবসা করতে হবে। নাহলে ব্যবসায়ে সফল হতে পারবেন না।

যৌথ উদ্যোগ

একজন মানুষের কাছে একইসাথে বেশ কয়েকটা কাজ সফলতার সাথে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে করাটা খুবই কষ্টকর এবং সত্যিকার অর্থেই সময়সাপেক্ষ। আর সেজন্যে দলগতভাবে যেকোনো উদ্যগে হাত দেয়া উচিত। একই ব্যবসায় আপনি নিজেই ম্যানেজার, নিজের ডেলিভারি ম্যান, নিজেই রিসেলার, নিজেই মালিক, নিজেই রিসার্চার, নিজেই মার্কেটার হয়ে কাজ করতে পারবেন না। আর সেজন্য ব্যবসা শুরু আগে উপযুক্ত দল বাছাই করতে হয়। একসাথে ব্যবসার কারণে ব্যবসার গতি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

Source: bazarnews.ir


ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানিং

যেকোনো ব্যবসা শুরু পূরবে ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে যদি চিন্তাভাবনা না করেন তাহলে ব্যবসা শুরু হওয়ার পড়ে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক, মানসিক ও ব্যবস্থাপনার সমস্যার পড়তে পারেন। আর তাই, সঠিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানিংয়ের উপর ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে।

One thought on “একজন উদ্যোক্তার সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো

  1. উদ্যোক্তাদের জন্য দারুণ একটা লেখা।
    প্রতিটা পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার কাছে মনে হয় একজন উদ্যোক্তাকে বেশ দূরদর্শী হতে হয়।
    তার ভেতর বিশেষ করে তিনটি কোয়ালিটি থাকতে হয়-
    প্রোএকটিভনেস
    ক্রিয়েটিভিটি
    কমিউনিকেশন
    কোলাবরেশন
    এই বিষয়গুলো একজন উদ্যোক্তার জন্য খুব জরুরী।
    উদ্যোক্তা বিষয়ে আরও লেখা চাই আপনাদের ওয়েবসাইটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত