Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,Father's Day special/kobitay baba

বাবা দিবস: বাবার জন্য কবিতা

Reading Time: 4 minutes

বাবা দিবস। বাবার প্রতি মমত্ববোধ শ্রদ্ধা রেখে কবি সাহিত্যিকরা যুগে যুগে রচনা করে গিয়েছেন ছড়া, কবিতা কিংবা গানসহ আরও অনেক কিছু। সে সব থেকে আজ প্রিয় পাঠকদের জন্য থাকল অল্পকিছু বাবার জন্য কবিতা। কবিতা ও প্রতীকী ছবিগুলো সংগৃহীত।


ছোট বড়
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
 
এখনো তো বড়ো হই নি আমি,
ছোটো আছি ছেলেমানুষ ব’লে।
দাদার চেয়ে অনেক মস্ত হব
বড়ো হয়ে বাবার মতো হলে।
দাদা তখন পড়তে যদি না চায়,
পাখির ছানা পোষে কেবল খাঁচায়,
তখন তারে এমনি বকে দেব!
বলব, ‘তুমি চুপটি ক’রে পড়ো।’
বলব, ‘তুমি ভারি দুষ্টু ছেলে’—
যখন হব বাবার মতো বড়ো।
তখন নিয়ে দাদার খাঁচাখানা
ভালো ভালো পুষব পাখির ছানা।
সাড়ে দশটা যখন যাবে বেজে
নাবার জন্যে করব না তো তাড়া।
ছাতা একটা ঘাড়ে ক’রে নিয়ে
চটি পায়ে বেড়িয়ে আসব পাড়া।
গুরুমশায় দাওয়ায় এলে পরে
চৌকি এনে দিতে বলব ঘরে,
তিনি যদি বলেন ‘সেলেট কোথা?
দেরি হচ্ছে, বসে পড়া করো’
আমি বলব, ‘খোকা তো আর নেই,
হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।’
গুরুমশায় শুনে তখন কবে,
‘বাবুমশায়, আসি এখন তবে।’
খেলা করতে নিয়ে যেতে মাঠে
ভুলু যখন আসবে বিকেল বেলা,
আমি তাকে ধমক দিয়ে কব,
‘কাজ করছি, গোল কোরো না মেলা।

 

 

আমি যদি বাবা হতাম, বাবা হত খোকা
-কাজী নজরুল ইসলাম
 
আমি যদি বাবা হতুম, বাবা হত খোকা,
না হলে তার নামতা,
মারতাম মাথায় টোকা।
রোজ যদি হত রবিবার !
কি মজাটাই হত যে আমার !
কেবল ছুটি ! থাকত নাক নামতা লেখা জোকা !
থাকত না কো যুক্ত অক্ষর, অংকে ধরত পোকা।

 

কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ’য়ে আছে ?
-শামসুর রাহমান
 
কোন্ দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ’য়ে আছে
এখনো আমার মনে ? দেখেছিতো গাছে
সোনালি বুকের পাখি, পুকুরের জলে
শাদা হাঁস । দেখেছি পার্কের ঝলমলে
রোদ্দুরে শিশুর ছুটোছুটি কিংবা কোনো
যুগলের ব’সে থাকা আঁধারে কখনো ।
দেশে কি বিদেশে ঢের প্রাকৃতিক শোভা
বুলিয়েছে প্রীত আভা মনে, কখনো-বা
চিত্রকরদের সৃষ্টির সান্নিধ্যে খুব
হয়েছি সমৃদ্ধ আর নিঃসঙ্গতায় ডুব
দিয়ে করি প্রশ্ন : এখনো আমার কাছে
কোন্ দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ’য়ে আছে ?
যেদিন গেলেন পিতা, দেখলাম মা’কে–
জননী আমার নির্দ্বিধায় শান্ত তাঁকে
নিলেন প্রবল টেনে বুকে, রাখলেন
মুখে মুখ ; যেন প্রিয় ব’লে ডাকবেন
বাসরের স্বরে । এখনো আমার কাছে
সেই দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হ’য়ে আছে !

 

 

 

বাবা
-সঞ্জয় সরকার
 
যেদিন আমি ছোট ছিলাম
যুবক ছিলেন বাবা
সেদিনটি আসবে ফিরে
যায় কি তা আজ ভাবা?
বাবার কাছেই হাঁটতে শিখি
শিখি চলা-বলা
সারাটি দিন কাটতো
আমার জড়িয়ে তার গলা।
বাবার হাতেই হাতেখড়ি
প্রথম পড়া-লেখা
বিশ্বটাকে প্রথম আমার
বাবার চোখেই দেখা
আজকে বাবার চুল পেকেছে
গ্রাস করেছে জড়া
তবু বুঝি বাবা থাকলেই
লাগে ভুবন ভরা।
বাবা এখন চশমা পড়েন পার করেছেন আশি-
আজো তাকে আগের মতোই
অনেক ভালোবাসি।
 

 

চামেলী হাতে নিম্ন মানের মানুষ
-আবুল হাসান
 
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে সরকারী লোক,পুলিশ বিভাগে চাকরি কোরেও
পুলিশী মেজাজ কেন ছিলনা ওনার বলুন চলায় ও বলায়?
চেয়ার থেকে ঘরোয়া ধূলো,হারিকেনের চিমনীগুলো মুছে ফেরার মতোন তিনি
আস্তে কেন চাকরবাকর এই আমাদের প্রভু নফর সম্পর্কটা সরিয়ে দিতেন?
থানার যত পেশাধারী ,পুলিশ সেপাই অধীনস্থ কনেস্টবল
সবার তিনি একবয়সী এমনভাবে তাস দাবাতেন সারা বিকেল।
মায়ের সঙ্গে ব্যবহারটা ছিল যেমন ব্যর্থপ্রেমিক
কৃপা ভিক্ষা নিতে এসেছে নারীর কাছে।
আসলে আমার বাবা ছিলেন নিম্নমানের মানুষ
নইলে দেশে তাঁর ভাইয়েরা জমিজমার হিশেব কষছে লাভঅলাভের
ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার আদায় কোরে নিচ্ছে সবাই
বাবা তখন উপার্জিত সবুজ ছিপের সুতো পেঁচিয়ে মাকে বোলছেন,এই দ্যাখোতো
জলের রং এর সাথে এবার এই সুতোটা খাপ খাবেনা?
আমি যখন মায়ের মুখে লজ্জা ব্রীড়া,ঘুমের ক্রীড়া
ইত্যাদিতে মিশেছিলুম,বাবা তখন কাব্যি কোরতে কম করেননি মাকে নিয়ে
শুনেছি শাদা চামেলী নাকি চাপা এনে পরিয়ে দিতেন রাত্রিবেলা মায়ের খোপায়।
মা বোলতেন বাবাকে তুমি এই সমস্তলোক দ্যাখোনা?
ঘুষ খাচ্ছে,জমি কিনছে,শনৈঃ শনৈঃ উপরে উঠছে,
কত রকম ফন্দি আটছে কত রকম সুখে থাকছে,
তুমি এসব লোক দ্যাখোনা?
বাবা তখন হাতের বোনা চাদর গায়ে বেরিয়ে কোথায়
কবি গানের আসরে যেতেন মাঝরাত্তিরে
লোকের ভীড়ে সামান্য লোক,শিশিরগুলি চোখে মাখাতেন।
এখন তিনি পরাজিত,কেউ দ্যাখেনা একলা মানুষ
চিলেকোঠার মতোন তিনি আকাশ দ্যাখেন,বাতাস দ্যাখেন
জীর্ণ শীর্ণব্যর্থচিবুক বিষন্নলাল রক্তে ভাবুক রোদন আসে,
হঠাৎ বাবা কিসের ত্রাসে দুচোখ ভাসান তিনিই জানেন।
একটি ছেলে ঘুরে বেড়ায় কবির মতো কুখ্যাত সব পাড়ায় পাড়ায়
আর ছেলেরা সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে সরে দাঁড়ায়
বাবা একলা শিরদাঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন,কী যে ভাবেন,
প্রায়ই তিনি রাত্রি জাগেন,বসে থাকেন চেয়ার নিয়ে
চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ,নিম্নমানের মানুষ।
 

 


আরো পড়ুন: বীরেন মুখার্জীর বর্ষার কবিতা


বাবা
অদিতি বসু রায়
 
বাবা মানে এক ছায়া মেহগনি গাছ
বাবা মানে যেন মন্ত্রের আনাগোনা
বাবার সঙ্গে গীতা-কোরানের সাথে
আযানে-আগুনে তর্ক ও আলোচনা
বাবার জন্য ইছামতী পার হয়ে
চলে যাওয়া দূর মাঠে একতারাতে
বাবা মানে তাই বাউলপাড়াটি ঘুরে
বাড়ি ফিরে খুব মনোযোগ অঙ্কতে
বাবা আসলে প্রিয়তম ধারাজল
খুব ভোরে উঠে বইখাতা খুলে বসা
বাবা মানে হল দুপুরে রেডিও খুলে
চুরি করে আনা বাবুইপাখির বাসা
সাহস শিখেছি বাবা কাছে ছিল বলে
যুদ্ধে নিয়েছি বাঁচার অস্ত্র হাতে
বাবা জানিয়েছে ‘ঘর ভাঙা হয়,হোক।
তারা দেখে নিবি ছাত উড়ে যাওয়া রাতে।’
 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>