ফিদেল “সিক্স থ্রি ফোর, উইদআউট নো লস”

Reading Time: 2 minutes

সৌরভ পাল  

বিদ্রোহী। বিপ্লবী। রাষ্ট্রনায়ক। একনায়ক। সর্বহারার এক নায়ক। নায়ক ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ আপাদ মস্তক এক প্রেমিক। মাথায় মিলিটারি ক্যাপ, শরীর ঢেকে আছে জলপাই রঙের ইউনিফর্মে। কোমরে বন্দুক, কাঁধে রাইফেল। কপাল জুড়ে ভাঁজ, আর এক গাল হাসি, প্রথম যৌবন থেকে শেষ যৌবন ফিদেল এমনই। দাড়ি না কেটে নিজের জীবনের পাঁচ হাজার মিনিট বাঁচিয়ে রেখেছেন, অবসর আর ব্যস্ততা সবই কেড়ে নিয়েছে রোম্যান্টিক বিপ্লবীর একমাত্র প্রেয়সী ‘বিপ্লব’। জীবনের ৯০ বসন্ত বিপ্লবের সঙ্গে বাসর কাটানো একমাত্র কমিউনিস্ট ফিদেল আর নিঃশ্বাস নিচ্ছেন না। স্লোগানগুলো মনে গেঁথে দিয়ে বন্ধু চে গেভারার সঙ্গী হতে যাত্রা শুরু করেছেন কাস্ত্রো।

বাতিস্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, জয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং কমিউনিস্ট পার্টির হর্তাকর্তা ‘বিধাতা’, সব মিলিয়ে কিউবার ৪৭ বসন্তের ‘একমুখ’, ‘একশরীর’, ‘এককন্ঠ’, ‘একনায়ক’ ছিলেন একমাত্র ফিদেল। গোটা পৃথিবী খুঁজলে এমন নজির আর একটাও মিলবে না। তবে প্রেমিক ফিদেল কিন্তু সর্বদাই ছিলেন বহুমুখী। দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন, খেলাধুলার প্রতি প্রীতি আর নিজের জীবন যতবার বাঁক নিয়েছে, প্রতি মোড়ে মোড়ে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে স্বতন্ত্র প্রেমিকার। তাঁরা রূপে, গন্ধে, স্পর্শে স্বতন্ত্র হলেও, মিল ছিল ‘একেই’, ৪৭ বসন্ত কিউবার একনায়কের সঙ্গেই তাঁদের সক্কলের প্রেম। ফিদেলের প্রতি প্রেম। ‘প্রেম সে এক, কেবল বদলে গিয়েছে মানুষগুলো’। প্রতিটি প্রেম পরিণতি পেয়েছে একেবারে মনুষ্যরূপে। মার্কেজের কাব্যে যেমন প্রেম ছিল ফিদেলের, ঠিক ততধিক প্রেমিকায় প্রেম ছিল কাস্ত্রোর। বলা হয় প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে নাকি এক নারীর অবদান থাকে, ফিদেলের ক্ষেত্রে অবশ্য সংখ্যাটা ছয়। এক তাঁর মা, আর বাকি পাঁচ তাঁর প্রেমিকা।

মিরতা দিয়াজ বালার্ট, হাভানা সোশ্যালাইট, ডালিয়া সোতে ডেল ভালে এই তিন নারী ছাড়াও আরও দুই প্রেমিকার গর্ভে প্রাণ পেয়েছে ফিদেলের ডিএনএ। এদের মধ্যে মিরতা এবং ডালিয়ার সঙ্গেই ফিদেলের আইন সম্মত বিয়ে হয়েছিল। হাভানা সোশ্যালাইটের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হয় তিনি যখন আন্ডারগ্রাউন্ডে যান। সাল ১৯৫০, ফিদেল এবং হাভানার প্রেম পরিণতি এবং পরিচিতি লাভ করে আলিনা ফার্নান্ডেজ নামে। আলিনা ফিদেলের প্রথম কন্যা সন্তান। ফিদেল কাস্ত্রোর নয় সন্তানের মধ্যে পাঁচ জনের মা ডালিয়া সোতে ডেল ভালে। এখানেই শেষ নয়। ফিদেলের প্রেম ও যৌবনে মোহিত হয়েছিলেন মার্কিন ইন্টিলিজেন্সের এজেন্ট মারিতা লোরেঞ্জ। ফিদেল-মারিতার প্রেম এবং সম্পর্ক নিয়ে পরবর্তীতে একটি সিনেমাও হয়। মার্কিন ইন্টিলিজেন্সের হয়ে খুন করতেই ফিদেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন মারিতা। কিন্তু, এটাই বোধহয় রোমান্টিসিজম, বিল্পবী ফিদেলের প্রেমে পড়েন মারিতা। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মারিটা। পড়ে অবশ্য সেই ভ্রূণকে পৃথিবীর আলোই দেখতে দেওয়া হয়নি।

অতি নাটকীয় এবং অতি রোমাঞ্চকর বললেও কম বলা হবে ফিদেলের চরিত্রকে। জন্ম এক অতীব সাধারণ পরিবারে। পেশায় চাষি মায়ের ছেলে যে বন্দুক হাতে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে, তা কেই বা জানত। দরিদ্র পরিবারের একরত্তি ছেলে যে একদিন ‘দ্য গ্রেটদের’ আসনে সবার প্রথম দিকে বসবেন তা একমাত্র ইতিহাসই জানত না। ইতিহাস তো নিজে হাতেই লিখেছেন কাস্ত্রো। কখনও বন্দুকের নলে, কখনও কলমের খোঁচায়, কখনও আবার একটানা সাত ঘণ্টার ভাষণে। ফিদেল আজ সশরীরে নেই, তবে রয়ে গিয়েছে তাঁর রক্তবীজেরা, রয়ে গিয়েছে তাঁর আদর্শ। তাই ফিদেল নামের আগে একটা শব্দ “অমর” অনায়াসেই লিখে দেওয়া যায়, বলা যায় “অমরত্ব” যোগ্য সম্মান পাবে ফিদেলের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে। কারণ, ৬৩৪ বার যাঁর বিরুদ্ধে খুনের চক্রান্ত করেও তাঁর কিঞ্চিত কেশও ছিড়তে পারেনি শক্তিধর মার্কিন দেশের দশ শক্তিশালী রাষ্ট্রপতি, তাঁকে আর অমরত্বের পরীক্ষায় বসতে হয় না। তাই একথা বলতেই হয়, ফিদেল আর তাঁর জীবনের পার্টনারশিপ “সিক্স থ্রি ফোর, উইদআউট নো লস” (৬৩৪ বার জয় ফিদেলের, শূন্য শূন্যই থেকে গিয়েছে)।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>