| 29 মার্চ 2024
Categories
গীতরঙ্গ

গীতরঙ্গ: সাবেকি কলকাতার ছাপাখানা ও মুদ্রণ । প্রশান্ত দত্ত

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

আমরা প্রায় সকলেই মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসাবে জার্মানির ইয়োহানেস গুটেনবার্গ এর নাম জানি৷ ভারতীয় উপমহাদেশে পর্তুগিজরাই প্রথম ১৫৫৬ সালে গোয়াতে ছাপাখানা চালু করেছিলেন৷ বেশ কিছুদিন পর ১৭৭৯-৮০ সাল নাগাদ জেমস অগাস্টাস হিকি কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা তৈরি করেন ও সেখান থেকে বাংলার প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ করেন৷ কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা চালু হয় ১৭৭৭ সালে৷ কলকাতার প্রথম মুদ্রাকর পেশায় সাংবাদিক জেমস অগাস্টাস হিকি৷ তিনি মাত্র হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে কলকাতায় ১৭৭৭ সালে একটি কাঠের ছাপাখানা তৈরি করে ছাপার কাজ শুরু করেন৷ তাঁর ছাপাখানা থেকেই ছাপা হয়েছিল কলকাতার প্রথম দুই ক্যালেন্ডার৷ গ্রাহাম শ’,যার উল্লেখ করে লিখেছেন-” ১৭৭৮ সালের ক্যালেন্ডার ফর দ্য ইয়ার অফ আওয়ার লর্ড MDCCLXXVlll” ১৮০০ সালের মধ্যে কলকাতায় প্রায় ১৭টি ছাপাখানা গড়ে ওঠে৷ যদিও মনে করা হয় তার মধ্যে মাত্র ১০টি চালু ছিল৷ আসল কথা হল এই গুলোর পরিচালকদের সকলেরই হাতেখড়ি হয়েছিল হিকির ছাপাখানায়৷ ১৮০০ সালের মধ্যে কলকাতায় মুদ্রাকর ছিলেন আনুমানিক চল্লিশ জন৷ মাত্র ছজন বাদে সকলেই কোন না কোন কাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা’-র ( দ্বিতীয় খন্ড) পাতায় সাবেকি কলকাতার ছাপাখানার নাম ধাম ও কাজকর্মের বিবরণ মেলে৷


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, First Printed Works kolkata irabotee gitoranga


তৎকালীন কলকাতার এক বিশিষ্ট অক্ষর খোদাই শিল্পী ছিলেন জোসেফ শেফার্ড৷ এই তরুণটি কলকাতায় গিলক্রিস্ট এর ইংরেজি এবং হিন্দুস্থানী অভিধান এর সঙ্গে পার্সিয়ান টাইপ ডিজাইন করেন৷ ১৭৮১ সালে সরকারি তরফে যে ছাপাখানা গড়ে ওঠে তার নাম হলো’ অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’৷ এই সরকারি ছাপাখানাটির পরিচালক ছিলেন চার্লস উইলডেনস৷ সরকারি ছাপাখানা হলেও এখান থেকে বেসরকারি উদ্যোগে অনেকে ছাপার কাজ করাতেন৷ একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ,আঠারো শতকের কলকাতায় মুদ্রিত ৬৫০টি বইয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০টি মুদ্রিত হয় এই ছাপাখানায়৷ বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ভাষার বই ছাপার জন্য দেবনাগরী, উর্দু ভাষার বই ছাপার জন্য নাস্তালিক এবং সিয়াকত  হরফ তৈরি করেছিল এই প্রেস৷ এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নাল ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ ছাপা হয়েছিল এই ছাপাখানা থেকে৷ 
১৭৮৬  সালে কলকাতা শহরে ড্যানিয়েল স্টুয়ার্ট এবং জোসেফ কুপার মিলিত ভাবে ক্রনিকল প্রেস গড়ে তোলেন৷ পাশাপাশি তারা বাংলা এবং উর্দু ভাষার জন্য নাস্তালিক, হিন্দির জন্য দেবনাগরী হরফ তৈরি করেন৷ এ সময় কলকাতায় বিভিন্ন ভাষায় পত্রিকা বা গ্রন্থ ছাপার জন্য যারা নানা ধরনের হরফ তৈরিতে নিয়োজিত হন, তাঁদের কয়েকজন ছিলেন- উইলিয়াম দুনে, জন মিলার, পিটার স্প্যালডিং প্রমূখ৷ কলকাতায় আঠারো শতকের শেষ নাগাদ উইলিয়াম বেইলি, রবার্ট মাবন, অ্যারন আপজন, জন অ্যালে ফাউন্ডার, জোসেফ শেফার্ড প্রমুখ দক্ষ খোদাই শিল্পী মুদ্রণ ব্যবস্থার মানকে উন্নত করে তোলেন৷ এই কলকাতাতে বসেই বেলজিয়ান শিল্পী বালথাজার সলভিনস বিভিন্ন ছবি দিয়ে সাজানো অ্যালবাম প্রকাশ করেন (১৭৯৯)৷ উইলিয়াম বেইলি প্রকাশ করেন কলকাতার মানচিত্র (১৭৯২)৷
উনিশ শতকের প্রথমদিকে শহর কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠে ছাপাখানা৷ কলুটোলায় চন্দ্রিকা যন্ত্রালয়, বহু বাজারে শ্রী লেবেন্ডার সাহেবের ছাপাখানা ,আরপুলিতে বারানসি আচার্যের ছাপাখানা ও শ্রী হরচন্দ্র রায়ের প্রেস, মির্জাপুরে মুন্সি হেদাতুললার ছাপাখানা ও তিমির নাশক যন্ত্রালয়, শাঁখারীটোলায় বদন পালিতের প্রেস শোভাবাজারে বিশ্বনাথ দেবের প্রেস, খিদিরপুরে বাবুরামের সংস্কৃত প্রেস প্রভৃতি৷ এছাড়াও গিলক্রিস্টের হিন্দুস্থানী প্রেস (১৮০২) ম্যাথু ল্যাম্পস ডেন এর পার্সিয়ান প্রেস (১৮০৫) প্রভৃতি থেকে অজস্র গ্রন্থ মুদ্রিত হয় ৷ খিদিরপুরে বাবুরামের ছাপাখানা সম্পর্কে ভাষাচার্য সুকুমার সেন লিখছেন, “A press for printing Sanskrit works in Nagri types and Sanskrit and Bengali works in Bengali types, were established, presumably under the patronage of Colebrooke and other scholars at Khidderpore. The owner was Baburam, a brahmin from Mirzapore”
পঞ্চানন কর্মকার শ্রীরামপুরে উইলিয়াম কেরির ছাপাখানায় যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে ছাপার অক্ষর গুলি কে আরও উন্নত মানের করে তোলেন৷ পঞ্চানন কর্মকার এর জামাতা মনোহর মিস্ত্রি নিজের ছাপাখানা চন্দ্রোদয় প্রেস তৈরি করেন (১৮৩৮-১৮৩৯খ্রিস্টাব্দে)৷ পঞ্চানন কর্মকার এর পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র কর্মকার ও মনোহর মিস্ত্রির উদ্যোগে টাইপ ফাউন্ড্রি নামে এক হরফ ঢালাইয়ের কারখানা গড়ে ওঠে (১৮০৯ খ্রি)৷ যদিও এটি শ্রীরামপুরে গড়ে উঠেছিল৷ তবুও দেখা যায় কলকাতায় চন্দ্রোদয় প্রেসে এই হরফকে কাজে লাগানো হত৷ এ প্রসঙ্গে বিশ্বনাথ বসু সংকলিত বিশ্বকোষ এ লেখা হয়,” মনোহর এর পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র উৎকৃষ্ট ছাঁদের ডাইস প্রস্তুত করিয়া বাঙ্গালা পঞ্জিকা, পুস্তক ও ছবি ছাপিতে আরম্ভ করেন৷” ছাপাখানার ইতিহাসে কলকাতার বটতলার অবদানও কম ছিল না৷ বিশ্বনাথ দেব বটতলায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন (১৮২০ খ্রিস্টাব্দে)৷ বটতলার বই গুলির দাম ছিল কম৷ বটতলার হিন্দু প্রকাশকেরা বহু ইসলামী গ্রন্থ ছাপান৷ তারা ফেরি করে করে বাংলার গ্রামগুলিতে  প্রাচীন কাব্য ,সাহিত্য ,ধর্মীয় বই পৌঁছে দিতেন৷ বটতলার হকাররা বই ফেরির সময় অনেক ক্ষেত্রে নগদ দাম না নিয়ে ছাপা বইয়ের বদলে পুরনো পুঁথী নিয়ে আসতেন৷

এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৮৮৫-৮৬ সালে অর্থাৎ জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম লগ্নে তামাম ভারতের ছাপাখানা সংখ্যা ছিল এক হাজার চুরানব্বইটি, যার মধ্যে শুধু বাংলাতেই ছিল ২২৯টি ছাপাখানা৷ বাংলার এই ছাপাখানাগুলির অধিকাংশ ছিল কলকাতায়৷ এই সমস্ত ছাপাখানাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে চালু করা হয় ‘প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ বুকস অ্যাক্ট, (১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ )’৷ এক আইন জারি করে বলা হয়- বই ছাপা হলে তাকে সরকারি নথিভুক্ত করতে হবে৷শুধুমাত্র বই ছাপা নয়, কলকাতার ছাপাখানা গুলিতে মুদ্রাকররা ছবি, মানচিত্র, নকশা প্রভৃতির কাজও শুরু করেন৷ এখান থেকেই কেউ হয়ে ওঠেন চিত্রশিল্পী, কেউ ব্লক নির্মাতা, কেউবা খোদাই শিল্পী৷


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, First Printed Works kolkata irabotee gitoranga


সরকারি উদ্যোগে প্রথমে কলকাতার  ১নং, পরে ২ নং হেয়ার স্ট্রিটে মিলিটারি অরফ্যান প্রেস বহু সরকারি নথিপত্র ছাপে ৷কলকাতার ৫ নং কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে ছাপাখানা স্মিথ অ্যান্ড কোম্পানি ক্যালকাটা গেজেট ছাপার দায়িত্ব পায় ৷উইলিয়াম ইয়েটস,  উইলিয়াম হপকিনস পীয়ার্স , ইউ স্টেস কেরী,জন লসন প্রমুখ মিশনারিগন কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ব্যাপ্টিস্ট মিশন প্রেস (১৮১৮সালে)৷ ভারতের ১১টি প্রধান ভাষার বিভিন্ন বিষয়ের বই ছাপা হয় এখানে৷ ছাত্রদের সুবিধার জন্য এখানে উইলিয়াম হপকিন্স পীয়ার্স তৈরি করেন ইতালিকস এর বিকল্প বাংলা হরফ ৷এর বিশেষত্ব ছিল নির্দেশিত শব্দ বা বাক্যের মাত্রা সোজা থাকবে আর বাকি লেখা হাতের লেখার আদলে বাঁকা হবে ৷

বাংলা মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য৷ তিনিই প্রথম বাঙালি মুদ্রাকর ,প্রথম বাঙালি প্রকাশক, প্রথম বাঙালি সংবাদপত্র পরিচালক, প্রথম বাঙালি বই বিক্রেতা৷ শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন লিখছেন -“বাঙালি পুস্তক প্রকাশকদিগের ব্রহ্মা হইতেছেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য৷ বটতলা হাটেরও তিনি প্রথম হাটুয়া৷ সেই গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠা করেন বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস হাজার (১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে)৷ রাজকৃষ্ণ রায় ৩৭ নং মেছুয়াবাজার স্ট্রিট ঠনঠনিয়ায় ‘বীণাযন্ত্র’ -নামে একটা ছোট্ট ছাপাখানা গড়ে তোলেন৷ পরবর্তীকালে রামমোহন রায় ধর্মতলায় ‘ইউনিটেরিয়ান প্রেস’- নামে মুদ্রাযন্ত্রালয় প্রতিষ্ঠা করেন৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার মিলিত হয়ে’ সংস্কৃত যন্ত্র’- নামে একটি মুদ্রাযন্ত্র গড়ে তোলেন৷ এমনকি তারও অনেক পরে ছাপাখানার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুভব করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ গড়ে তোলেন৷


Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, First Printed Works kolkata irabotee gitoranga


কলকাতার ছাপাখানার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন হল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ইউ. রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা  (১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দ )৷এর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে লীলা মজুমদার লিখছেন, “১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ছাপার কাজ ও ছবি এনগ্রেভ করা সম্বন্ধে তাঁর (উপেন্দ্রকিশোরের) এতখানি শেখা ও জানা হয়ে গিয়েছিল, এতখানি দক্ষতা ও নিজের উপরে একটা বিশ্বাস এসেছিল যে সাহস করে নিজের পয়সায় বিলেত থেকে কিছু যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিজের ছাপাখানায় কাজ শুরু করে দিলেন ৷ এইভাবে সেকালের বিখ্যাত ‘ইউ. রায় এন্ড সন্স’- এর গোড়াপত্তন হল৷ প্রতিষ্ঠালগ্নে ইউ .রায় এন্ড সন্স -এর ঠিকানা ছিল ১৩ নং কর্নওয়ালিস স্ট্রীট, পরে ৭নং শিবনারায়ণ দাস লেন, তারপর ২২ সুকিয়া স্ট্রিট, শেষে ১০০ গড়পার রোডে এর ঠিকানা বদলায়৷ উপেন্দ্রকিশোরের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি বাংলা ছাপা বইয়ে হাফটোন ব্লক এর ব্যবহার৷ তিনি এই ব্লক তৈরিতে হুবহু ইউরোপীয় পদ্ধতির নকল করেননি৷ তাই বলা যায় তিনিই ছিলেন ভারতে হাফটোন ছবির পথিকৃৎ৷ তাঁর ছাপাখানা থেকেই ভারতে প্রসেস শিল্পের বিকাশ শুরু হয়৷
মুদ্রণ ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোরের আবিষ্কার গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ৬০° স্ক্রিনের পরিকল্পনা, মাল্টিপল পদ্ধতি, স্ক্রীন এডজাস্টমেন্ট ইন্ডিকেটর প্রভৃতি৷  সে সময়ে মুদ্রণ বিষয়ক এক বিখ্যাত পত্রিকা ছিল লন্ডনের ‘পেন রোজেস পিকটোরিয়াল অ্যানুয়াল’৷ এতে  তাঁর নটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ছাপা হয়৷ পত্রিকার সম্পাদক উইলিয়াম গ্যাম্বেল এই প্রবন্ধগুলির স্বকীয়তার জন্য তাঁকে সমকালের সর্বোচ্চ গবেষকের মর্যাদা দেন৷ উপেন্দ্রকিশোরের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে ‘Process Work And Electrotyping’ পত্রিকায় লেখা হয়- “Mr.U.Roy of Calcutta…is far ahead of European and American workers in originality, which is all the more surprising when we consider how far he is from the hub centres of process work.” (উপেন্দ্রকিশোর, বিশ্বভারতী পত্রিকা,৩৭০ সংখ্যা)৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতী ‘পত্রিকায় লিখলেন, “অনেকেই হয়ত জানেন না হাফটোন লিপি সম্বন্ধে উপেন্দ্রবাবুর নিজের আবিষ্কৃত পদ্ধতি বিলাতের শিল্পী সমাজে খ্যাতিলাভ করিয়াছে৷”
বাংলা মুদ্রণ প্রকাশনায় দুইশত বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দবাজার পত্রিকার উদ্যোগে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷ এই প্রদর্শনীতে একদিকে ছিল দুশো বছরের মুদ্রিত বাংলা বই ও পত্র-পত্রিকা অপরদিকে ছিল সাবেকি আমলের ছাপাখানা থেকে শুরু করে সেই সময়কাল পর্যন্ত মুদ্রণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম৷ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন সুকুমার সেন৷ যন্ত্রপাতি মন্ডপটির উদ্বোধক ছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ এই উপলক্ষে একটি বইমেলারও আয়োজন করা হয়েছিল৷ যাতে অংশ নেন সে সময়কার বাংলা বইয়ের প্রকাশকগণ৷ বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ এই প্রদর্শনী উৎসবটি পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার আহ্বায়ক ছিলেন অভিক সরকার৷ প্রদর্শনী উপলক্ষে প্রতিদিন মুদ্রণ ও প্রকাশনা সম্পর্কে একটি করে সেমিনার ও আলোচনা সভা  বসত৷ প্রতিদিন হিকির বেঙ্গল গেজেট, সমাচার দর্পণ এবং প্রথম বাংলা দৈনিক সংবাদ প্রভাকর এর একটি করে সংখ্যা হুবহু ছাপিয়ে বিনামূল্যে প্রদর্শনী মেলা প্রাঙ্গণে বিতরণ করা হতো৷
কলকাতায় ছাপাখানার আদিযুগ নিয়ে’ সমাচার দর্পণ’ পত্রিকায় লেখা হলো, “যেমন ক্ষুদ্র নদী নির্গত হইয়া সর্বদেশে ব্যাপ্ত হইয়া সেই দেশকে উর্বরা করে ,সেই মতো ছাপার পুস্তক ক্রমে ক্রমে সর্বদেশে ব্যাপ্ত হইয়া সকল লোকের বোধগম্য হওয়াতে তাহাদের মন উচ্চাভিলাষী করে৷ পূর্বকালে বর্ধিষ্ণু লোকের ঘরেতেও তালপত্রে অক্ষর মিলা ভার ছিল ৷ ছাপার অক্ষর আরম্ভ হওয়া অবধি শূদ্র লোকের ঘরেতেও অধিক পুস্তক সঞ্চার হইয়াছে৷।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত