| 21 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
শিশুতোষ

শিশুতোষ গল্প: কাফকা এবং একটি পুতুলের গল্প

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
ফ্রান্ৎস কাফকা ছিলেন জার্মানির একজন ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তিনি কখনো বিয়ে করেননি। মৃত্যুর ঠিক কয়েক বছর আগে তার জীবনে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তাঁর বয়স যখন ৪০, তখন এক পড়ন্ত বিকেলে তিনি বার্লিনের পার্কে হাঁটছিলেন। এমন সময় তিনি দেখলেন একটা ছোট্ট মেয়ে তার প্রিয় পুতুলটি হারিয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। কাফকা এবং সেই ছোট্ট মেয়েটা দু’জনে মিলে অনেক খুঁজলেন হারিয়ে যাওয়া পুতুলটাকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। 
কাফকা মেয়েটাকে বললেন, তিনি পুতুলটা যেভাবে হোক ঠিক খুঁজে বের করবেন। সে যেন কাল আরেকটিবার এখানেই তাঁর সঙ্গে এসে দেখা করে। অথচ অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কাফকা পুতুলটা পেলেন না। তখন কাফকা ছোট্ট মেয়েটাকে একটা চিঠি দিলেন। আর বললেন, 
“এই চিঠিটা তোমার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের লেখা।” 
সে চিঠিতে লেখা ছিল, 
“প্লিজ তুমি আর কেঁদো না। আমি পৃথিবী দেখতে বেরিয়েছি। কোন দেশে কি কি দেখলাম সেসব রোমাঞ্চকর কাহিনী তোমাকে নিয়মিত লিখে জানাব।”
এভাবেই শুরু হয়েছিল একটা গল্পের, যা চলেছিল কাফকার মৃত্যু পর্যন্ত। ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে কাফকার নিয়মিত দেখা হতো। আর যখনই দেখা হতো তখনই কাফকা একটা চিঠি দিতেন তাকে। বলতেন চিঠিটা তার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের লেখা।
চিঠিগুলো জুড়ে থাকত মেয়েটার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের অলীক ভ্রমণের আশ্চর্য সব বিবরণ। এভাবেই প্রতিটা চিঠির শেষে মেয়েটার দুঃখ কমে আসছিল একটু একটু করে। 
যেদিন শেষবার মেয়েটার সঙ্গে কাফকার দেখা হয়, তিনি তাকে একটা পুতুল উপহার দেন। যদিও সেই নতুন পুতুলটা ছিল আগের পুতুলের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। বললেন, 
“এই নাও, তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই পুতুল।”
মেয়েটা বললো, “এই পুতুলটা মোটেও আমার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের মতো দেখতে নয়।”
কাফকা তখন মেয়েটাকে আরও একটা চিঠি দিলেন যেটাতে তার প্রিয় পুতুলটা লিখেছে, 
“যে যে পথ ধরে এতদিন আমি এত জায়গায় ঘুরেছি… সেই পথই বদলে দিয়েছে আমাকে।”
ছোট্ট মেয়েটা তখন নতুন পুতুলটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল এবং অপার অনন্দে ভাসল। 

আরো পড়ুন: ভৌতিক গল্প: বাঘের মন্তর । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়


এর এক বছর পর কাফকা মারা যান।
অনেক বছর বাদে, সেই ছোট্ট মেয়েটা যখন অনেকখানি বড় হয়ে গেছে, তখন সে সেই পুতুলটার ভিতর আরো একটা চিঠি পায়।পুতুলটার কব্জির নীচের দিকে একটা সূক্ষ্ম ফাটলের মধ্যে লুকোনো সেই চিঠিতে লেখা ছিল,
“Everything you love will probably be lost, but in the end, love will return in another way..”
“এই জীবনে তুমি যা যা ভালোবাসবে, হয়ত সেই সবকিছুই একদিন হারিয়ে যেতে পারে। শুধু এইটুকু জেনো, শেষ অবধি তারা সবাই ফিরে আসে। হয়ত অন্য কোনও নামে, অন্য কোনও রূপে…”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত