| 19 এপ্রিল 2024
Categories
গীতরঙ্গ

গীতরঙ্গ মহামারি সংখ্যা: সাহিত্যে মহামারির একাল ও সেকাল

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট
।। মজিদ মাহমুদ ।।
বর্তমান পৃথিবী এমন এক সংকটে ভুগছে যা মোকাবিলায় জীবিত মানুষের অভিজ্ঞতা খুব কাজে আসছে না। বিগত অর্ধশতকের প্রেক্ষাপটে নানা ধরনের মহামারির সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটেছে, বহুলোক ক্ষয় হয়েছে; কিন্তু পৃথিবীব্যাপী সর্বস্থানে রোগটি এভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এমনকি শত বছর আগেও যে সব ভয়ঙ্কর মহামারি মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়েছিল, তার রূপও এতটা সর্বব্যাপী ছিল না। তার অন্যতম কারণ তখনো পৃথিবীতে আজকের মতো যোগাযোগ সহজ ছিল না। প্রাকৃতিক বিচ্ছিন্নতার ফলে কোনো জনপদ পুরো ধ্বংস হলেও অনেক স্থানে আশার আলো সমুজ্জ্বল ছিল। সবচেয়ে আশার দিক বর্তমান বিশ্ব মহামারির মারণ ক্ষমতা অতীতের অনেক মহামারির চেয়ে কম। আজকের মতো অতীতেও মহামারি মানুষকে এতটা প্রভাবিত করেছিল, যার প্রমাণ সর্বকালের সাহিত্যিকগণ ঘটে যাওয়া মহামারি কিংবা কল্পিত মহামারির মারণযজ্ঞ নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন। বর্তমান রচনায় তার একটি রূপচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
 
১৯৪৫ সালে আলবেয়ার ক্যামু (১৯১৩-১৯৬০) বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য প্লেগ’ প্রকাশের প্রায় তেত্রিশ বছর আগে ১৯১২ সালে জ্যাক লন্ডন (১৮৭৬-১৯১৬) রচনা করেন ‘দ্য স্কার্লেট প্লেগ’। এটি মূলত আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসে পোস্ট-অ্যাপক্যালিপটিক উপন্যাসের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে। উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল আমেরিকায় ‘রেড ডেথ’ মহামারিতে একটি জনপদ উজাড় হওয়ার পরে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবন আখ্যান নিয়ে। এটি মূলত আমেরিকার সান-ফ্রান্সিসকো এলাকায় ঘটে যাওয়া মহামারির প্রায় ষাট বছর পরে টিকে যাওয়া মানুষের গল্প। মুষ্টিমেয় যে ক’জন বেঁচে ছিলেন তাদের মধ্যে জেমস হাওয়ার্ড স্মিত ওরফে গ্রানসার অন্যতম। উপন্যাসে তিনি তার বন্য পরিবেশে বেড়ে ওঠা নাতির কাছে সেই পরিস্থিতির বর্ণনা করেন- কীভাবে মহামারিতে লোকজন মারা গিয়েছিল। মৃত্যুর প্রতি তখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল। যদিও উপন্যাসটি একশ বছরের বেশি সময় আগে প্রকাশিত হয়েছে; তবু মানবসমাজে বারংবার হানা দেয়া এই অদৃশ্য মহামারি ছড়িয়ে পড়লে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং হতাশার রূপ কেমন হতে পারে- তারই অক্ষয় চিত্রায়ন হয়ে আছে এতে। অবশ্য জ্যাক লন্ডন এই উপন্যাস রচনার প্রায় সত্তর বছর আগে ১৮৪২ সালে অ্যাডগার অ্যালান পো (১৮০৯-১৮৪৯) আমেরিকার রেড ডেথ নিয়ে একটি গল্প লেখেন- যার নাম ‘দ্য মাস্ক অফ দ্য রেড ডেথ।’ ইহুদিদের আদি পুস্তক এবং নিউ টেস্টামেন্টে উল্লেখ আছে, বনি ইসরাইলিদের প্রভু কীভাবে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের পাপের ফলে। আর টেস্টামেন্টের দাবি অনুসারে ঈশ্বর অবাধ্যতার জন্য মাঝে মাঝে মানুষকে এ ধরনের শাস্তি দিয়ে থাকেন। ঈশ্বরের আরো অনুগত হওয়া ছাড়া যে শাস্তি থেকে মানুষের রেহাই নেই।
‘দ্য স্কার্লেট প্লেগ’ উপন্যাসেই যে প্রথম এ ধরনের পাপের কথা উল্লেখ আছে তা নয়। প্রাচীনকালের প্রায় সব সাহিত্যেই মহামারিকে মনে করা হতো দৈব নিয়ন্ত্রিত পাপের শাস্তি। খ্রিস্টপূর্বে প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে গ্রিক সাহিত্যে সফোক্লিস রচিত বিখ্যাত নাটক ‘ইদিপাস রেক্সে’ও সেই পাপের উপস্থিতি আমরা লক্ষ করি। রাজার পাপের ফলে একদা সমৃদ্ধশালী থেবেস রাজ্যে নেমে আসে মহাদুর্যোগ। কিন্তু এতে রাজার কোনো হাত ছিল না। গ্রিসের মানুষজন মনে করতো, মানুষের ভাগ্যের উপরে তার কোনো হাত নেই; অদৃষ্টে যা লেখা আছে তা হবেই; আর মানুষ অজান্তেই সেই পাপের পথে পা বাড়াবে। তবে তৎকালীন গ্রিসে এমনকি সফোক্লিসের আগেও অনেক লেখক মহামারিকে দৈবের অভিশাপ হিসেবে মেনে নিতেন না।
আদি পৃথিবীতে মানুষের কাছে জীব ও জগত সম্বন্ধে নানা রহস্যের জবাব ছিল অপ্রতুল। দৈবের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। জিউফ্রে চসার (১৩৪০-১৪০০)-এর কেন্টাবারি টেলস কিংবা জিভান্নি বোকাচ্চি (১৩১৩-১৩৭৫)-এর ডেকামেরনে আমরা মানুষের পাপের শাস্তির ধারণা দেখতে পাই। তবে সেই পাপ ঈশ্বরের অনিবার্য রহস্যময়তার দ্বারা আবৃত নয়; এই পাপ মানুষ তার চরম বস্তুবাদী চিন্তা ও লোভের দ্বারা অর্জিত। কোনো মানবসমাজ যখন মানসিকভাবে মৃত্যুবরণ করে তখন শারীরিকভাবে তার বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। আর তখনই তাদের উপরে নেমে আসে মহামারির মতো অভিশাপ।
জ্যাক লন্ডনই প্রথম সাহিত্যে মহামারির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজেছেন। এমন দুর্যোগকালে সমাজ রাজনীতি অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি তিনি বস্তুনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া ততদিনে বিজ্ঞানের উন্নতি, পুঁজির বিকাশ এবং প্রথম বিশ^যুদ্ধের প্রাক্কালে জীব-রাজনৈতিক বিষয়াদি তার পুস্তকে ধরা পড়েছে। জ্যাক লন্ডনের উপন্যাস রচনার দীর্ঘকাল পরেও এটি এখনো এ ধরনের দুর্যোগ একটা প্রতীকী রূপ নিয়ে হাজির থাকে। মহামারিকালে মানুষের অসহায়তা বিপর্যস্ততা হতাশা ভেঙে পড়ার করুণ পরিণতি; আর একই সঙ্গে মানুষের লোভ ও বৈশ্যবৃত্তিরও ঘৃণ্য-প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। একটি লোকালয়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কালে পুরনো ওষুধ কাজ করতে চায় না। মহামারি তার নতুন রূপ নিয়ে হাজির হয়। ভাইরাসগুলো তার চরিত্র পরিবর্তন করে। তখন এর একমাত্র প্রতিকার এই রোগের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা, বিচ্ছিন্ন থাকা বা অন্তরীণ থাকা। কিন্তু এর মধ্যেও চলতে থাকে ক্ষমতাকে প্রশ্নাতীত করার জন্য নানারকম অযৌক্তিক অবৈজ্ঞানিক বিষয়াদি, এবং ধর্মের দ্বারাও তা সমর্থিত করার চেষ্টা করা হয়। যেমন রেড ডেথের সময় শাসককুলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাইবেলে প্রভু বলেছেন, এটি মানুষের পাপের শাস্তি। আর ঈশ্বর যখন শাস্তি দেন তখন কেউ রক্ষা করতে পারে না। ঈশ^র মানুষকে রোগ দ্বারা ক্ষুধা ও বিপদ দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন। কারণ ঈশ্বর সর্বাবস্থায় মানুষের কাছে আনুগত্য প্রত্যাশা করেন। মানুষ সীমা লঙ্ঘন করলে তিনি কুপিত হন। তবে খ্রিস্টপূর্বে ল্যাটিন কবি লুক্রেটিয়াস (খ্রি.পূ ৯৯-৫৫) তার লেখায় উল্লেখ করেছেন প্লেগ ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে টানাপড়নের ফল নয়; বরং মানুষ যখন সামাজিক দায়বদ্ধতা হারিয়ে ফেলে এবং স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পায় তখনই এ ধরনের আঘাত নেমে আসে।
ডানিয়েল ডিফো (১৬৫৯-১৭৩১)-র ‘এ জার্নাল অফ দ্য প্লেগ ইয়ার’ গ্রন্থে ১৬৬৫ সালে ঘটে যাওয়া লন্ডনের প্লেগ মহামারির বিশদ চিত্র পাওয়া যায়। প্লেগের প্রতি মানুষের মৌল প্রতিক্রিয়া ও ধারণা নিয়ে মূলত ডিফো এটি রচনা করেন। ১৯৩০ সালের দিকে মিলান শহরে যে ব্যাপকভাবে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে; ইতালীয় ঔপনাসিক আলেসান্দ্র মানজানি’র (১৭৮৫-১৮৭৫) বইতে তার ভয়াবহ বর্ণনা রয়েছে। তবে ঔপন্যাসিক মেরি শেলি (১৭৯৭-১৮৫১)-র ‘দ্য লাস্ট ম্যান’ (১৮২৬)-কে এ ধারার প্রথম উপন্যাস মনে করা যেতে পারে। এ গ্রন্থের লেখক প্লেগে বেঁচে যাওয়া কিছু মানুষের টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে আখ্যান রচনা করেছিলেন।
জ্যাক লন্ডন মার্কিন লেখক হলেও তিনি সে-দেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তার রচনার অন্যতম দিক হলো বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুঁজিবাদী সমাজের অবক্ষয় ও যুদ্ধংদেহী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা। ফলে মহামারি ও ছোঁয়াচে ভাইরাল রোগ নিয়ে তার কাজ পুঁজিবাদী সমাজের অবক্ষয়কে মানব ধ্বংসের জন্য দায়ী করা। লন্ডন তার সায়েন্স ফিকশন ‘দ্য আনপ্যারালাল ইনভেশন’ (১৯১০)-এ দেখান যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ে কীভাবে চীনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কারণ তারা এশিয়ায় তাদের উপনিবেশ টিকিয়ে রাখতে চায়, যাতে চীনের অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা এশিয়ার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে না পারে। অথচ বর্তমান করোনা মহামারিকালে যুক্তরাষ্ট্রপন্থি তথ্যসমূহে বলা হচ্ছে চীন এই মহামারির দ্বারা লোকসংখ্যার চাপ কমিয়ে এনে বৈশি^ক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। অর্থাৎ বৈশ্বিক ক্ষমতাসীন পক্ষগুলো মহামারি সংকটকালেও তাদের বাণিজ্যিক ও ক্ষমতার লড়াইটি ভুলতে পারে না।
প্লেগের মতো মহামারির উদ্ভব, ভয়াবহতা ও নিরসনের সামাজিক মনস্তাত্তি্বক সংকট উত্তরণে লন্ডনের দ্য স্কার্লেট প্লেগ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কারণ তিনি বিশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব আবিষ্কারগুলোও তার রচনায় ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। বিশ শতকের শুরুতে মানুষ এ কথা আর বিশ্বাস করতো না যে মহামারি বাইবেল বর্ণিত পাপের শাস্তি- যা ঈশ্বর দিয়ে থাকেন। কারণ ততদিনে লুই পাস্তুর ও রবার্ট কোচের মতো বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে মানুষ জেনে গেছে যে, এসব রোগের জন্য ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নামের অণুপরজীবীরা দায়ী। আর এ ধরনের রোগ নির্মূলের জন্য টিকা বা প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষজনের মধ্যে মহামারি সম্বন্ধে ধারণা পরিবর্তন খুব কমই হয়। এ ধরনের সংকটে পড়লে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি আরো বেশি করে।
স্কার্লেট প্লেগের শুরুর দিকে লেখক এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, ‘যখন এই ব্যাকটেরিয়াল রোগটি ছড়িয়ে যেতে শুরু করলো তখন মানুষজন খুব একটা গা করল না, তারা ভাবল- এ এমন কিছু নয়, বিজ্ঞানীরা আগের মতো খুব শিগগির এটিকেও বাগে নিয়ে আসবেন।’ কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা ভয় পেয়ে গেল, এই রোগের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে। যাকে ধরছে তাকেই হত্যা করে ছাড়ছে, প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। লন্ডনের স্কার্লেট প্লেগের কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রানসার এই রোগের এভাবে বর্ণনা দেন- ‘হৃৎপিণ্ডের দ্রুত ধুকপুকানি শুরু হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তারপর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়; কালো হয়ে ওঠে, মনে হয় যেন শরীরের উপর দিয়ে দাবানল বয়ে গেছে। অধিকাংশ লোকই শরীরের তাপমাত্রা এবং বুকের ধুকপুকানি বুঝতে পারে না; আর যখন তা বুঝতে পারে তখনই টের পায় শরীরে এক বিদঘুটে ফুসকুড়ি বের হয়েছে। সাধারণত ফুসকুড়িগুলি দৃশ্যমান হতেই শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়। আর সেটাও যে দীর্ঘস্থায়ী হয় এমন নয়। এর আগেই তাদের হাঁটু পা নিতম্বগুলো অসাড় হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’
লন্ডন লেখেন- স্কার্লেট প্লেগে মৃত-দেহগুলো দ্রুত সৎকার করতে না পারায় কোটি কোটি জীবাণু এই রোগের প্রসারণকে আরো ত্বরান্বিত করে তোলে। ডাক্তাররা এই রোগ নিরাময়ের জন্য কোনো ওষুধই কাজে লাগাতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে এর প্রতিষেধকমূল সিরাম আবিষ্কার হলেও তা প্রয়োগ করতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। এমনকি যারা ল্যাবরেটরিতে এসব নিয়ে গবেষণা করছিল, তাদের জ্ঞান ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বিষয়ক হলেও নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি। একদিকে তারা গবেষণা করছিল অন্যদিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলেন। যত দ্রুত সম্ভব অন্যরা সেই সব জায়গা পূরণ করছিল।
এ সময় বিজ্ঞান ও ওষুধের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিল। আর তার জায়গায় মানুষের মনে এক আজানা ভয় স্থান করে নিচ্ছিল। এই উপন্যাসের নায়ক গ্রানসার, যিনি একদা ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি তার নাতিকে বলছিলেন- ‘বিষ্যুদবার রাতে দেশে প্রথম এই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। একটু ভেবে দেখ আমার নাতি, মানুষ গিজগিজ করছিল সলেমন নদীর তীরে। শহর থেকে বানের জলের মতো মানুষ বাঁচার জন্য পালিয়ে আসছিল আর সঙ্গে আনছিল এই মহামড়কের জীবাণু। এমনকি ধনীরা যারা বিমানে করে পাহাড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল এই জীবাণু।’ কিন্তু তাদের পালানোর কোনো উপায় ছিল না। কারণ জীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। কেউ তাদের থামাতে পারছিল না; এমনকি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আগে কখনো পৃথিবীর মানুষ হয়নি। মহামারিকালে মানুষজন একেবারে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করছিল। ‘যখন সাধারণ রোগ আমাদের মধ্যে ছড়ায় তখন আমরা এমন আচরণ করি না। আমরা এ ক্ষেত্রে শান্ত থাকি, ডাক্তার কিংবা নার্সের কাছে যাই, আর তারা যা বলে সেভাবে চলতে থাকি। প্লেগ যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল তখন কিছু লোক বাঁচার জন্য লোকালয় ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। আবার যারা লোকালয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিনতাই, মদ্যপান, ডাকাতি এমনকি খুনের মতো ঘটনার শিকার হচ্ছিল। এই অনিয়ন্ত্রিত আচরণের দ্বারাও প্লেগ ছড়িয়ে পড়ছিল। গ্রানসারের কথায়, ‘বুঝলে নাতি- আমরা আমাদের সভ্যতার মধ্যে, আমাদের বস্তি আর শ্রমিকদের মধ্যে একটি বর্বর প্রজাতির জন্ম দিয়েছিলাম; আর তারই ফলে আমাদের এই বিপর্যয়, প্রকৃতি আমাদের বুনো জন্তুর মতো পিষে মেরেছিল। তারা নিজেরাও তাদের ধ্বংস করেছিল।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত