| 29 মার্চ 2024
Categories
সময়ের ডায়েরি

বহু বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সে দেশে তোলপাড়। দাঙ্গা, প্রতিবাদ সব শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানকার অভিজ্ঞতা জানালেন এক প্রবাসী বাঙালি। সমৃদ্ধি চট্টোপাধ্যায়, মিনিয়াপোলিস। ফ্লয়েডের শহর থেকে বিশেষ প্রতিবেদন….


 

ছয় বছর হল মিনেসোটায় থাকি। সাজানো গোছানো শান্তিপ্রিয় এই রাজ্য। হঠাৎ গত এক সপ্তাহে তা যেন কেমন অচেনা হয়ে উঠল।

জর্জ ফ্লয়েডের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পরই শুনেছিলাম, গাড়ি, বাস, বিমান চড়ে বহু লোক অন্য রাজ্য থেকে প্রতিবাদ করতে আসছে আমাদের মিনিয়াপোলিসে।

দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলো আমাদের বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। শুনলাম, আমাদের চেনা ভারতীয় রেস্তোরাঁ পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম বলে আমি অনেকদিনই বাড়ি থেকে কাজ করি। এখন তো বেরোনোর প্রশ্ন নেই। আমার বাড়ি এডিনা অঞ্চলে, যা শ্বেতাঙ্গ অধ্যূষিত। তাই আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে কিছু হয়নি অবশ্য। তবে এখানে যমজ দুটি শহর রয়েছে। মিনিয়াপোলিস এবং সেন্ট পল। দুটোতেই তীব্র উত্তেজনা।

এই ছ’বছরে আমাদের মানে ভারতীয়দের কখনও শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয়নি। তবে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্য নিয়ে চাপা টানাপোড়েন আছে বেশ। ফ্লয়েডের মৃত্যুতে তাই প্রতিবাদ তীব্র হয়ে উঠেছে।

আমার নিজের ধারণা, এই প্রতিবাদের কারণ শুধুমাত্র ফ্লয়েডের মৃত্যু নয়। এ হল আফ্রিকান আমেরিকানদের মনে শ্রেণীবিভেদ আর বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

গত শুক্রবার পরিস্থিতি খুব উত্তাল হয়ে ওঠে। সে দিন পরিস্থিতি আগাম আঁচ করে মিনিয়াপোলিস মেয়র এবং মিনেসোটার গভর্নর রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত কারফিউয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে রাত আটটা থেকে রাস্তায় প্রচুর লোক জমায়েত হতে শুরু করে। রাত দশটা পর্যন্ত চলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, ধর্না। হঠাৎ রাত ১০টা থেকে শুরু হয় তাণ্ডব। তখনই জানলাম, ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, টার্গেট স্টোর, রেস্তোরাঁ, দোকান লুঠ করে দাউদাউ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ প্রশাসনের হাতের বাইরে তখন।

শনিবার সকাল থেকে বার বার প্রেস কনফারেন্স করে মানুষকে কারফিউ চলাকালীন ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হয়। আশঙ্কা ছিল, আরও বড় বিপর্যয় দেখতে চলেছে রাজ্যবাসী। ন্যাশনাল গার্ডদের সামনে দাঙ্গাবাজরা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। আমাদের এখানেও রবিবার পর্যন্ত কারফিউ ছিল। রবিবার থেকে অনেকটাই শান্ত। তবে বড় ঘটনা ঘটতে পারত। একটা ট্যাঙ্কার প্রতিবাদীদের মধ্যে চলে এসেছিল আচমকা। সবাই হুড়মুড় করে সরে গিয়েছে। দুর্ঘটনা ঘটলে আগুন জ্বলত আবার।

ফ্লয়েড নামক আফ্রিকান আমেরিকান ব্যক্তির কী অপরাধ ছিল? মাত্র কুড়ি ডলারের একটি নকল নোট তিনি এক দোকানদারকে দেন। দোকানদার নিয়মমাফিক ৯১১-এ ফোন করে সে কথা জানান। পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন সহ আরও তিন অফিসার আসেন সেখানে। এমন ঘটনা অনেক সময় ঘটে। পুলিশ আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছেড়ে দেয়। টিভিতে দেখেছি, সেদিন পুলিশের ব্যতিক্রমী আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে যান দোকানদারও।

আমার মনে হয়, দোষী পুলিশ অফিসারদের দ্রুত শাস্তি দিলে ব্যাপারটা এত ভয়ঙ্কর হত না।

এখানকার টুইন সিটি জুড়ে প্রথমে প্রতিবাদ শুরু হয় খুবই ন্যায্য দাবি নিয়ে। চার পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রশাসন ওই চার অফিসারকে বরখাস্ত করলেও ক্রমশ প্রতিবাদ বাড়তে থাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে। বুধবার রাত থেকে শুরু হয় দোকান ভাঙচুর আর লুঠ। বেশ কিছু ছোট ব্যবসায়ীর দোকান এবং বিজনেস কমপ্লেক্স জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সেই অরাজকতা ঠেকাতে পারেনি সে দিন রাতে।

সব মিলিয়ে মিনেসোটার ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী রইলাম আমরা। জানি না, এই আগুন কবে নিভবে।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত