আমেরিকার বর্ণবাদঃ জিম ক্রো থেকে জর্জ ফ্লয়েড
আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সে দেশে তোলপাড়। দাঙ্গা, প্রতিবাদ সব শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকায় বসবাসকারী লেখক আদনান সৈয়দ গভীরভাবে আমেরিকার বর্ণবাদ ও তার ইতিহাস অনুসন্ধান করেছেন।
জর্জ ফ্লয়েড এর মৃত্যুতে গোটা আমেরিকায় এখন বর্ণবাদ বিরোধীদের বিক্ষোভের শহরে পরিনত হয়েছে। একদিকে ভয়াল করোনা ভাইরাসের তান্ডব আর অন্যদিকে বর্ণবাদের ভয়াল থাবা। সন্দেহ নেই এই দুই ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত এখন গোটা বিশ্ব। আমেরিকায় বর্ণবাদের গোড়াপত্তন একদিনে হয়নি। সেই ইতিহাস আমরা জানি। তবে শংকার বিষয় হল সেই কুখ্যাত ইতিহাস এখনো বর্তমান সময়ে বহমান। অথচ খুব বেশিদিন আগের কথা নয় আমেরিকার মাটিতে কুখ্যাত জিম ক্রো আইন( Jim Crow Law)এর কারণে আমেরিকার দক্ষিণে বর্ণবাদের আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছিল! সে এক লম্বা পথ। ১৮৭৭ সাল থেকে ২০২০! কিন্তু এই দীর্ঘ পথের যেন কোন শেষ নেই। সেই ১৮৭৭ সালে কুখ্যাত জিম ক্রো বর্ণবাদকে উসকে দেওয়া আইন কানুন যেন এখনো আমেরিকার মাটিতে চালু আছে।
১৮৭৭ সাল থেকে ১৯৬৫। এই দীর্ঘ আশি বছর কী ভয়ানক প্রতাপের সাথেই না শাসন করেছিল ভয়াবহ জিম ক্রো আইন! সেই ইতিহাস পড়লে আমরা শিউরি উঠি! আমরা তখন বেশ বুঝতে পারি কেন জর্জ ফ্লয়েডর মত কালো মানুষদের এখনও প্রাণ দিতে হয়! কেন আমেরিকার দাম্ভিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর সমর্থকরা দম্ভ করে ঘোষনা দেয়, ”লেটস আমেরিকা হোয়াইট এগেইন”। আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের গলায় চেইন বেঁধে আমেরিকায় নিয়ে এসে বোস্টনের স্লেভ মার্কেটে অকশানে বিক্রি করার ইতিহাস খুব বেশিদিন আগের নয়। ইতিহাসের সেই লজ্জাজনক অধ্যায়ের ধারাবাহিকতার সমান্তারালে আমরা এখনও হাঁটছি। এখন হয়তো শ্বেতাঙ্গদের ভাষার পরিবর্তন হয়েছে, জিম ক্রো আইন হয়তো নেই কিন্তু আদতে কিন্তু বর্ণবাদ লালনকারী শ্বেতাঙ্গরা সেই জিম ক্রোকে তাদের আত্মায় যুগ যুগ ধরেই লালন করে আসছে। কুখ্যাত বর্ণবাদ প্রথা এবং শ্রেণী বৈষম্যের থাবা থেকে মানুষ মুক্ত থাকলে আজ ফ্লয়েডকে সাদা পুলিশের হাতে মরতে হত না, ট্রাম্পের মত এক বর্ণবাদি প্রেসিডেন্টকেও আমাদের হয়তো দেখতে হত না।
আজ থেকে একশো বছর আগে জিম ক্রো আরোপিত আইনে যদি আমরা ফিরে যাই তাহলে বুঝতে পারব যে এই শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদে কতটা আচ্ছন্ন হয়ে ছিল! তখন আমরা বুঝতে পারব জিম ক্রো থেকে এই সমাজ থেকে আমরা কতটা সামনের দিকে এগিয়েছি এবং কতটুকু বর্ণবাদমুক্ত একটি সমাজ গড়তে সক্ষম হয়েছি। ভুলে গেলে চলবে না “লেটস আমেরিকা হোইয়াইট এগেইন।” আমেরিকার ট্রাম্পভক্তদের একটি জনপ্রিয় শ্লোগান। এই শ্লোগানকেও এই একাবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের শুনতে হচ্ছে। এটাই বাস্তব!
জিম ক্রোর আইন এবং তাদের আরোপিত ’কোড এন্ড কনডাক্ট’কে খুব গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বর্তমান সময়ে বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের চেহারাটি আমরা দেখতে পাব। জিম ক্রোর প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ আইন হল আফ্রিকান আমেরিকান অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মর্যদা দেওয়া। তারা মনে করে শ্বেতাঙ্গ মানেই “ঈশ্বরের প্রিয়” আর কৃষ্ণাঙ্গ মানেই হল “জন্মগত দাস”। ঈশ্বর নাকি স্বয়ং বর্ণবাদ তৈরি করে মানুষদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। জিম ক্রো আইন মনে করে এই পৃথিবীর কিছু মানুষ হল “উচ্চ স্তরের” আর কিছু মানুষ হল ’নিন্ম স্তরের’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে শ্বেতাঙ্গদের স্থান উচ্চ স্তরের। আর কৃষ্ণাঙ্গদের স্থান নীচের স্তরে। জিম ক্রো এই ধারনাকেই আইনে পরিনত করতে চায়। তারা মনে করে সমাজ শাষনে শ্বেতাঙ্গরা সবসময়ই কৃষ্ণাঙ্গদের উপর ছড়ি ঘোরাবে। এটাই নিয়ম। কারণ শ্বেতাঙ্গরা মেধায়, অর্থে, সামাজিক প্রতিপত্তি যশ সব দিক থেকে এগিয়ে। কৃষ্ণাঙ্গরা সমাজের নীচু তলার মানুষ। তাদের অবস্থান হল নীচে। এসব কিছু বিবেচনা করে উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গদল জিম ক্রো কিছু আইন কানুন তৈরি করে এবং এই ঘৃন্য বীজটি বর্ণবাদি গোষ্ঠি শ্বেতাঙ্গদের আত্মায় গেঁথে দিতে সমর্থ হয়। জিম ক্রো আরোপিত আইনগুলোর দিকে এবার চোখ বুলানো যাক। সমাজের প্রতিটা স্তরে এই আইনকে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের একমাত্র লক্ষ্য।
১) একজন কৃষ্ণাঙ্গ কখনই একজন শ্বেতাঙ্গের সঙ্গে করমর্দন করতে পারবে না। অথবা করমর্দনের জন্যে হাতটিও বাড়িয়ে দিতে পারবে না। জিম ক্রো মনে করে করমর্দন করা মানেই একজন কৃষ্ণাঙ্গকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া। একজন কৃষ্ণাঙ্গ কোনভাবেই একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান নারীকে তার হাত অথবা তার শরীরের কোন অংশ দিয়ে স্পর্শ করতে পারবে না। যদি কেউ সে কাজটি করে করে তাহলে তাকে নারীকে ধর্ষনের মামলায় গ্রেফতার করা হবে।
২) একজন কৃষ্ণাঙ্গ একং একজন শ্বেতাঙ্গ একই টেবিলে বসে খেতে পারবে না। যদি একান্তই একই টেবিল ব্যবহার করতে হয় তাহলে সেখানে শ্বেতাঙ্গদের আগে খেতে বসতে হবে। তাদের খাওয়া শেষ হলেই কৃষ্ণাঙ্গরা বসতে পারবে। এটাই আইন।
৩) কোন অবস্থাতেই একজন কৃষ্ণাঙ্গ একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে সিগারেট সাধতে পারবে না।যদি সে এই কাজটি করে তাহলে বুঝতে হবে সে শ্বেতাঙ্গ নারীটাকে ইচ্ছে করেই যৌন হেনস্থা করছে। তাকে তখন দ্রুত আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
৪) কৃষ্ণাঙ্গ কোনভাবেই প্রকাশ্যে চুমু খেতে পারবে না বা পরস্পরের মধ্যে কোন ধরনের অন্তরঙ্গ সম্পর্কে যেতে পারবে না। কেননা এই কাজটি শ্বেতাঙ্গদের বিব্রত অবস্থায় ফেলতে পারে।
৫) একজন কৃষ্ণাঙ্গকে প্রথম দাড়িয়ে একজন শ্বেতাঙ্গকে অন্যদের কাছে পরিচয় করে দিবে। শ্বেতাঙ্গের কাজ নয় একজন কৃষ্ণাঙ্গকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
৬) শ্বেতাঙ্গ কখনই একজন কৃষ্ণাঙ্গকে মিস্টার, মিসেস, স্যার বা ম্যাম বসে সম্বোধন করতে পারবে না। কাজটি এক তরফাভাবে একজন কৃষ্ণাঙ্গকেই করতে হবে।
৭) একজন শ্বেতাঙ্গ যখন গাড়ি চালাবেন তখন একজন কৃষ্ণাঙ্গ নিরাপদ দুরুত্বে গাড়ির পেছনের সিটে বসবে। যদি ট্রাক হয় তাহলে ট্রাকের পেছনে তাকে বসতে হবে।
৮) একজন কৃষ্ণাঙ্গ কখনও ভাববে না যে একজন শ্বেতাঙ্গ মিথ্য কথা বলছে। কারণ শ্বেতাঙ্গরা যাই বলুক না কেন তারা যা বলবে সেটাই সঠিক।
৯) কোন অবস্থতাতেই একজন কালো আফ্রিকান একজন শ্বেতাঙ্গকে অপমান করতে পারবে না।
১০) একজন সাদা মানুষকে সবসময় প্রভুর চোখে দেখতে হবে।
১১) সাদা মানুষের বুদ্ধিকে কখনও অবহেলার চোখে দেখা যাবে না।
১২) সাদা চামড়ার কোন মানুষকে গাল দেওয়া চলবে না।
১৩) কখনও সাদা চামড়ার মানুষকে দেখে হাসা যাবে না। কারণ শ্বেতাঙ্গরা কখনই হাসির পাত্র নয়।
১৪) সাদা চামড়ার কোন নারীকে দেখলে কোন রকম মন্তব্য করা যাবে না। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় উঠে অভিবাদন জানাতে হবে।
অথচ আমেরিকার সংবিধান বিশেষ করে ১৩,১৪ এবং ১৫ এমান্ডমেন্ট অনুযায়ী একজন শ্বেতাঙ্গ এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। আইনগতভাবে তাদের সবার সমান অধিকার থাকার কথা। যদিও ১৮৭৭ সালে আমেরিকা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রুথারফোর্ড বি. হায়েস ঘোষনা দেন যে কৃষ্ণাঙ্গদের সব স্বাধীনতা হরন করা হবে।
১৮৯০ সালে লুইজিয়ানাতে ‘পৃথক গাড়ি ভ্রমন আইন’ পাস করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে খাতা কলমে সাদা আর কালো চামড়ার মানুষের মধ্যে সমান অধিকার ঠিক আছে কিন্তু তারা একই বাস, ট্রেন বা গাড়িতে উঠতে পারবে না। তারা নিজেরা পৃথকভাবে গাড়িতে চড়বে। এরই মধ্যে লুইজিয়ানা রাজ্য আইন করে যে বাসে বা ট্রেনে একজন শ্বেতাঙ্গের জন্যে বরাদ্ধকৃত কোন সিটে কোন কৃষ্ণাঙ্গ বসতে পারবে না।
১৮৯১ সালে হোমার এ প্লেসি নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নেতা এই আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। তিন দাবী করেন যে বাস অথাব ট্রেনে সংরক্ষিত আসনে সাত/আটজন শেতাঙ্গদের মধ্যে একজন কৃষ্ণাঙ্গ হলেও বসার অধিকার রাখে। সেটি করতে যেয়ে প্লেসিকে গ্রেফতার করা হয়। প্লেসির উকিল আদালতে যুক্তি দেখান যে লুইজিয়ানা রাজ্যের এমন কোন আইন নেই যে একজন আমেরিকার নাগরিককে শুধুমাত্র তার গায়ের রং দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। একজন শ্বেতাঙ্গ শুধুমাত্র গায়ের রং সাদা বলে বাসে বসবে আর গায়ের রং কালো বলে কৃষ্ণাঙ্গরা বসতে পারবে না তা হতে পারে না। এই মামলায় শ্বেতাঙ্গ নিয়ন্ত্রিত সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয় যেহেতু এই রাজ্যে একজন সাদা বর্ণ এবং একজন কালো বর্ণের মানুষের সমান এবং পৃথক অধিকার নিশ্চিত করেছে তাই তারা যার যার মত করে আইন মেনে চলবে(Separate but equal)। কোর্ট ৭-২ ভোটে একটি আইন পাশ করে। আইনটি হল শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ পৃথক এবং সমানভাবে অধিকার পালন করা মানে এই নয় যে সবার সমান অধিকারের দাবী বাতিল হয়ে যাবে। দেখা গেল প্লেসির এই আদালত স্মরণাপন্ন হওয়ার কারনে দুটি রায় স্পষ্টভাবে শ্বেতাঙ্গ সুবিধাভোগীদের পক্ষেই চলে গেল।
এই সুযোগে জিম ক্রো ত্বরিত নতুন কিছু আইন জারি করে দিল। বিশেষ করে স্কুলে বা উন্মুক্ত জায়গায় একজন কৃষ্ণাঙ্গকে পানি খেতে হলে তাকে আলাদা ভাবে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে, হাসপাতালে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে আলাদা চিকিৎসা ব্যাবস্থা থাকবে। স্কুল, কবরস্থানসহ সর্বক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে আলাদা আলাদা ব্যবস্থার ঘোষনাও দেওয়া হল।
দেখা যাচ্ছে জিম ক্রো আইন একজন শ্বেতাঙ্গের ’শ্রেষ্ঠত্ব’কে বজায় রাখার জন্যে যা প্রয়োজন তাই করল। ১৯৩০ সালে অ্যালাবামার ব্রিমিংহামে কালো এবং সাদাদের এক সঙ্গে চেকার্স এবং ডোমিনোস খেলা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হল। ১৯৩৫ সালে ওকলাহোমা রাজ্যে সাদা এবং কালো বর্ণের মানুষদের এক সঙ্গে নৌকা ভ্রমন নিষিদ্ধ ঘোষিত হল। স্কুল কলেজ হাসপাতাল বা যে কোন উন্মোক্ত জায়গায় কৃষ্ণাঙ্গদের এবং শ্বেতাঙ্গদের এক সঙ্গে প্রবেশ নিষেধ ঘোষনা করা হল। একজন শ্বেতাঙ্গ স্কুলের সামনে সারিতে বসার পর পেছনে যদি কোন আসন খালি থাকে তাহলে সেখানে একজন কালো বর্ণের মানুষ বসার অধিকার রাখে এই মর্মেও একটি আইন জারি থাকলো। এমনকি মারা যাওয়ার পরও একজন কৃষ্ণাঙ্গ কোনভাবেই শ্বেতাঙ্গদের কবরস্থান ব্যবহার করতে পারবে না তাও বলে দেওয়া হল।
স্বাভাবিকভাবেই জিম ক্রো আরোপিত এই আইন ধীরে ধীরে হিংস্রতার রূপ নেয়। এই আইনের কোন প্রতিবাদ করা মানেই জেল জরিমানা তো বটেই সেই সঙ্গে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ। জিম ক্রোর আইনানুযায়ী বিচার বিভাগ, আইন আদালত, পুলিশ, জুড়ি, জেল কর্মকর্তা তাদের সবাইকে শ্বেতাঙ্গ হতে হবে। এই কারণে শ্বেতাঙ্গ কর্তৃক কালোদের উপর অমানুষিক নির্যাতন আমেরিকার ইতিহাসে খুব স্বাভাবিক একটি চিত্র। এক পরিসংখানে জানা যায় ১৮৮২ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আমেরিকার দক্ষিনের অঙ্গরাজ্য গুলোতে ৪৭৩০ জন কৃষ্ণাঙ্গকে পিটিয়ে, গুলি করে, ধর্ষন করে, গায়ে আগুন লাগিয়ে এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এর জন্যে আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনও কম হয়নি। কৃষ্ণাঙ্গ লেখক জেমস ওয়েলডন এর ভাষায়, “ ১৯১৯ সালের বসন্তে শিকাগো, ইলিনয়স, ন্যাসভিল, টেনেসি,চার্লসটন, সাউথ ক্যারোলাইনা, ওমাহা, নেবারাস্কা সহ আরো ডজন খানেক শহরে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।” কিন্তু আমেরিকায় বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সেই আন্দোলন কখনই ভয়াবহ বর্ণবাদকে রোধ করতে পারেনি।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমেরিকার বর্ণবাদ প্রতিটা আন্দোলনই শ্বেতাঙ্গদের দুস্কর্মের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল। একজন কালো মানুষকে কীভাবে ফাসানো যাবে বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গরা এই সুযোগটাই যেন সবসময় খুঁজে বেড়াতে লাগল। আমেরিকার এই বর্ণবাদী আন্দোলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রতিটা আন্দোলনেই দেশটির পুলিশরা শ্বেতাঙ্গদের পক্ষ নিয়েছে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। এমনকি শ্বেতাঙ্গ নিয়ন্ত্রিত প্রধান পত্রপত্রিকাতেও প্রতিবেদনে “ কালো সন্ত্রাসীদের দল’ এই শিরোনাম ছাপা হয়েছে।
জিম ক্রোদের আমেরিকার মাটিতে উচ্ছেদ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। কিন্তু প্রশ্ন হল জিম ক্রো সম্প্রদায় আমেরিকার মাটিতে যে জঘন্য বীজটি বোপন করেছিল সেই বীজ অসংখ্য ডালাপালা নিয়ে এখন পূর্নাঙ্গ একটি বৃক্ষে পরিনত হয়েছে। সেই রোপন করা বিষবৃক্ষটিকে অস্বীকার করা কী সম্ভব? বর্ণবাদের সেই হিংস্র বৃক্ষটি যে এখনও আমেরিকার মাটিতে বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে তা বর্তমান সময়ে আমেরিকার এই বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন দেখলেই বোঝা যায়। আর কতকাল জর্জ ফ্লয়েডদের জীবন দিতে হবে?
লেখক এবং প্রাবন্ধিক। জন্ম ঢাকা, বাংলাদেশ। পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকা থেকে ফাইনান্স এর উপর এমবিএ করেছেন। নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলা, নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার, নিউইয়র্ক সাহিত্য একাডেমিসহ নিউইয়র্ক ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। পেশায় আর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং আইটি পরামর্শক হিসেবে কাজ করলেও নেশা তাঁর লেখালেখি। ইতিহাস তাঁর প্রিয় এবং প্রধান একটি বিষয়। ভারত উপমহাদেশতো বটেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বৈচিত্রপূর্ণ জীবন, ঐতিহাসিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনাবলীর উপর তাঁর রয়েছে গভীর আগ্রহ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রš’গুলো গ্রন্থগুলো হল্: শিপ জাম্পারঃ বাঙালির আমেরিকা যাত্রা(মুক্তধারা, নিউইয়র্ক, ২০২০), অ্যাকুরিয়ামের মাছ ও হলুদ প্রজাপতির গল্প(মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৯), চেনা অচেনা শহীদ কাদরী (মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৮), ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীরা (ইত্যাদি গ্রš’প্রকাশ, ২০১৭), পূর্ব-পশ্চিমের আলো (প্রিয়মুখ, ২০১৬),আমেরিকানামা (সূচীপত্র, ২০১৫), জানা-অজানা রবার্ট ক্লাইভ (সূচীপত্র, ২০১৪) । নেশা ভ্রমণ, সিনেমা দেখা এবং বই পড়া। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবতায় তিনি বিশ্বাসী।