গণিত সংখ্যা: গাণিতিক জন্মদিন । অর্ণব গোস্বামী
১
ক্লাসে ঢুকে অবন্তিকাকে দেখতে পেল না বিতান। ওর ব্যাগটা ডেস্কের ওপর রাখা। ফার্স্ট পিরিয়ড শুরু হতে বেশ কয়েক মিনিট দেরী আছে। এক ছুটে ক্লাস থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে ছুটল সে। পুরনো আমলের বড় বড় সিঁড়িগুলো দ্রুত পায়ে ডিঙাতে একটা করে সিঁড়ি বাদ দিয়ে দিয়ে পা ফেলে চলে এল লাইব্রেরির সামনে।দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে তাকিয়েই বুঝল, ওর ধারণা একেবারেই ভুল নয়। দমটাকে একটু সামলে নিয়ে এবার নিঃশব্দে এগিয়ে গেল টেবিলটার কাছে। ওর দিকে পিছন ফিরে বসে অবন্তিকা, যথারীতি সামনে দু চারখানা বই খোলা, আর সবকটাই যে অঙ্কের, সে কথা বলাই বাহুল্য। প্রথমে উঁকি মেরে দেখল সে। আশেপাশে অচেনা সিলেবাসের বাইরের কতগুলো মোটা মোটা বই খুলে বসে একটা কাগজের ওপর পেন দিয়ে অনেক সংখ্যা লিখে রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কাগজটা ইতিমধ্যেই কাটাকুটিতে ভর্তি। তার মানে সমস্যাটা যাই হোকনা কেন, সমাধান এখনও হয়নি। এবার সে ওর কানের সামনে মুখ নিয়ে ডাকল, “কী রে শকুন্তলা, কী নিয়ে মাথা খারাপ করে ফেললি? অলিম্পিয়াডের প্রিপারেশন বুঝি?”
ওর গলা শুনে এক মুখ বিরক্তি নিয়ে অবন্তিকা ফিরে তাকাল, তারপর বলল, “ ইস, ঐ নামটা খুব সেকেলে।”
বিতান হেসে বলল, “হলেই বা, ওনার পর এরকম অঙ্ক করতে আর তোকে ছাড়া কাকে দেখেছি বল দেখি। কী আঁকিবুকি কাটছিস রে ?”
“চল, বইক’টা কোন কাজে লাগল না। দুটো বই নে না। বইগুলো রেখে দিয়ে ক্লাসে যেতে যেতে বলছি। আর দশ মিনিটেই প্রেয়ার শুরু হবে তো।”
ওরা দুজন দুটো করে বই নিয়ে তাকে রেখে দিল। তারপর ধীর পায়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে চলতে লাগল সিঁড়ির দিকে। বিতানের কৌতূহল বেড়েই চলেছে। প্রথম সিঁড়িতে পা দেবার আগে মুখ খুলল অবন্তিকা। শুরুতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, “তুই তো জানিস, দাদু আমায় প্রতিবার জন্মদিনে একটা সারপ্রাইজ গিফট দেয়। এবারেও একটা দারুণ কিছু বই পাব ভেবেছিলাম। কিন্তু দাদু যে তার বদলে আমায় এমন ফ্যাসাদে ফেলবে ভাবিইনি।”
“তাই নাকি? কী ফ্যাসাদ? কাল তো গিফটের লোভে কেক কেটেই বাড়ি ছুটলি।” দুজনেই উত্তেজনায় সিঁড়ির এক পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল।
অবন্তিকা বড় বড় চোখ করে বলতে লাগল, “হুম, বাড়ি গিয়ে এক ছুটে দাদুর ঘরে পৌঁছে দেখি দাদু একটা বেশ রঙচঙে কাগজে মোড়া বাক্সর মত শেপের কিছু একটা সামনে নিয়ে বসে আছে। আমায় চোখের ইশারায় সেটা দেখাতেই দাদুকে কোনরকমে একটা থ্যাঙ্ক ইউ বলেই কাগজের র্যাপারটা খুললাম। আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি দাদু কী একটা বানাচ্ছে। আমি জানতাম আমার জন্যই গিফট বানাচ্ছে। র্যাপার আলগা করেই একটা বাক্স পেলাম। বাক্সটার সামনের দিকে ডিজিটাল স্ক্রিন, পাশে একটা বাটনে লেখা এন্টার। তার নিচে ছোট পেন আটকানো। বাক্সটা ঠ্যালা ঠেলি করেও কিছুতেই খুলতে পারলাম না। দাদুর দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি মুচকি হাসছে। বলল, ‘অত সহজেই কি আর খোলা যাবে? এবারের গিফটটা নিজের যোগ্যতায় অর্জন করতে হবে। পনেরো বছরের জন্মদিন বলে কথা!’ আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তার মানে?’ দাদু বলল, ‘মানেটা বাক্সর ওপর লেখা আছে।‘ এতক্ষণে বাক্সর ওপর আটকানো দুটো স্টিকি নোট খেয়াল করলাম।“
“কী লেখা ছিল তাতে?” জিগ্যেস করল বিতান।
“দাঁড়া দেখাচ্ছি।” এ কথা বলে নিজের স্কার্টের পকেট থেকে দুটো হলুদ রঙের কাগজ বের করে বিতানের হাতে দিল অবন্তিকা। বিতান সেটা হাতে নিতেই একটা দিকে লেগে থাকা আঠায় হাতে আটকে আটকে যাচ্ছিল। সে বলল, “এ বাবা এ তো এখনও স্টিকি হয়ে আছে, পকেটে রেখেছিস যে?”
“ওসব আননেসেসারি চিন্তা ছেড়ে আসল জিনিসটা দেখ তো!” বিরক্ত হয়ে বলল অবন্তিকা। ওর কথা শুনে কাগজ দুটোর দিকে মন দিয়ে তাকাল বিতান। প্রথম কাগজটায় কতগুলো সংখ্যা লেখা পরপর।
1421213105168421
অন্য কাগজটায় লেখা –
Hint : 3 15 12 12 1 20 26 3 15 14 10 5 3 20 21 18 5
কাগজদুটোয় চোখ বুলিয়েই উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল বিতান, “এই তো হিন্ট দেওয়া আছে।”
অবন্তিকা হেসে বলল, “ওটার মানেটা বলে দে তাহলে আমায়।”
“আমি কী করে বুঝব? আমি তো আর শকুন্তলা দেবী নই।”
“আবার ঐ বিচ্ছিরি নামটায় ডাকছিস? তাছাড়া আমায় ঐ নামে ডেকে আর ওনার অসম্মান করিস না তো! হিন্টেরও মাথা মুন্ডু নেই। এখন ক্লাসে চল, দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
২
স্কুলের পর অবন্তিকা আর বিতান একসাথেই বাড়ি ফেরে। অঙ্কটার সমাধান হয়নি এখনও। বিতানের খুব ইচ্ছে করছে বাক্সটা হাতে নিয়ে দেখতে। ও শুনেছে, অবন্তিকার দাদু একসময় বিজ্ঞানী ছিলেন। এখনও নাকি সারাদিন এটা ওটা নিয়ে নিজের পারসোনাল ল্যাবে পড়ে থাকেন। সারাদিন আজ ওর পাশে বসে অবন্তিকা কাগজে বিভিন্ন নাম্বার লিখেছে আর দুদিকে আপনমনে মাথা নেড়ে কেটে দিয়েছে সেগুলো। অসীম কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে থেকে বিতান বারবার বুঝেছে যে সমস্যার সমাধান হয়নি এখনও। এখন দুজনে চুপচাপই হাঁটছিল। নীরবতা ভেঙ্গে বিতান বলল, “আইসক্রিম খাবি? ওতে নাকি মাথা খোলে শুনেছি।”
“কে যে তোকে এসব আজগুবি খবর দেয়! তবে মন ভালো হয় শুনেছি।”
“তাহলে তো ঠিকই আছে। মন ভালো হলেই মাথা খোলে। চল না খাই, খুব ইচ্ছে করছে। কাল তো জন্মদিনে তাড়াহুড়ো করে কিছুই খাওয়ালি না। আমার তো একটা আইসক্রিম ট্রিটও পাওনা হওয়া উচিত, নাকি?”
অবন্তিকা হেসে বলল, “ঠিক আছে, চল। আমারও একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার। সারাদিন ঐ সংখ্যাগুলো নিয়ে ভেবে ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আসলে ক্লাসের মাঝে তো অতটা মন দিতেও পারিনি।”
ওরা দুজনে একটা করে আইসক্রিম নিয়ে দোকানের বাইরে একটা ফাঁকা বেঞ্চে বসলো। সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে আজ। কলকাতায় আজকাল বসন্তে গরম থাকলেও, সন্ধ্যের দিকে বসন্তের হাওয়া তার এলোমেলো চলার পথে ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের। বিতান বলল, “তোর দাদু তো সারাদিন কিসব যন্ত্রপাতি নিয়েই বসে থাকেন দেখি। উনি অঙ্কও করেন?”
“তা করবে না? অঙ্ক ছাড়া কোন বিজ্ঞান হয় নাকি? দাদু তো অঙ্ক নিয়েই গবেষণা করত আগে। তারপর একটা ঘটনা ঘটায় দাদু নাকি অঙ্কের গবেষণা ছেড়ে পুরোপুরি ইলেক্ট্রনিক্সে মন দেয়।”
“তার মানে? কী হয়েছিল?”- অবাক হয়ে জিগ্যেস করল বিতান।
“সে আমার, তোর জন্মের আগের কথা। ঘটনাটা একটু অদ্ভুত। তুই কখনও অ্যান্ড্রু ওয়াইলসের নাম শুনেছিস?” উত্তর দিল অবন্তিকা।
“তিনি আবার কে?” আবার প্রশ্ন বেরিয়ে আসে বিতানের মুখ থেকে।
“একজন ম্যাথেমেটিশিয়ান, যিনি ফারম্যাটের লাস্ট থিওরেম সল্ভ করেছিলেন।” ধৈর্যের সঙ্গে আবার উত্তর দেয় অবন্তিকা।
“এই দাঁড়া দাঁড়া, এতগুলো দাঁত ভাঙ্গা নাম বলছিস কেন একসাথে? আমি এদের কাউকে চিনি না, একটু খোলসা করে বলবি?” বিতানের উপর্যুপরি প্রশ্ন চলতেই থাকে।
ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করল অবন্তিকা। তারপর সেই কাগজের ওপর লিখল,
42 + 32 = 52
এবার মুখ তুলে বিতানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক এরকম প্যাটার্নের আরেকটা নাম্বার বল দেখি?”
বিতান বলল, “ওমা একটা কেন অনেকগুলো আছে।” একথা বলেই কাগজটা টেনে লিখে ফেলল।
82+ 62 = 102
122 + 52 = 132
এ দুটো লেখার পরেই কাগজটা ওর হাত থেকে টেনে নিল অবন্তিকা, বলল, “হয়েছে, আর লিখতে হবে না। এবার ব্যাপারটা বোঝাই তোকে। এরকম অনেক সংখ্যাই আছে যেগুলো নিজেরাও অন্য সংখ্যার স্কোয়ার, এমন কী অন্য কোন দুটো সংখ্যার স্কোয়ারকে যোগ করলে এই সংখ্যাগুলোকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ কিনা an+bn= cn” – বলে সমীকরণটা কাগজের ওপর লিখল সে। তারপর মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করল, “এবার বল দেখি, এমন একটা সংখ্যা, যা কিনা নিজেও অন্য সংখ্যার কিউব আবার অন্য দুটো সংখ্যার কিউবকে যোগ করলে তাকে পাওয়া যায়?”
কাগজটা টেনে নিয়ে খানিক পেন দিয়ে খচখচ করে অনেক সংখ্যা লিখল আর কাটল বিতান। তারপর চোখ তুলে দেখল, অবন্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে সে বলে উঠল, “ছেড়ে দে, সময় নষ্ট করিস না। এরকম সংখ্যা নেই তো পাবি কোথা থেকে?”
হাঁ করে তাকিয়ে থাকল বিতান। কাগজটা টেনে নিয়ে তার ওপর একটু আগে লেখা সমীকরণের ওপর ঢাকনাসহ ঠুকতে ঠুকতে অবন্তিকা বলল, “এই ইকুয়েশন তখনই কাজ করে যদি n=2 হয়। অতএব n, দুইয়ের চেয়ে বড় হয়ে গেলে কোনদিন তুই এরকম সংখ্যা পাবি না। এটাকেই বলে ফারম্যাটের লাস্ট থিওরেম, যেহেতু উনিই প্রথম এ কথা বলেছিলেন, আজ থেকে সাড়ে তিনশ বছর আগে। কিন্তু বললে কী হবে, ম্যাথেমেটিকালি প্রমাণ তিনি করতে পারেননি। আর সেই প্রমাণ করেছেন অ্যান্ড্রু ওয়াইলস, ১৯৯৩ সালে।”
“বাবা তুই কত কী জানিস? কিন্তু এর সাথে তোর দাদুর সম্পর্ক কী?”
“আমার জন্মের আগের কথা কিনা, তাই মা বাবার মুখেই গল্প শোনা। দাদুও নাকি তার আগের পাঁচ বছর ধরে কাজ করেছে ঐ অঙ্কটার সমাধান করতে। আর সমাধান যেদিন খুঁজে পেয়েছে, অদ্ভুত ভাবে সেদিনই জানতে পারেন ওয়াইলস নামে কোন একজন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, বিরাট ম্যাথেমেটিসিয়ান ঐ সলিউশনটা বার করেছেন। কী কাণ্ড ভাব, একই সময়ে, দুজন পৃথিবীর দুপ্রান্তে বসে তিনশ বছর আগের কোন এক কঠিন অঙ্কের সমাধান খুঁজছিলেন এবং খুঁজেও পেয়েছিলেন। দাদুকে কতবার বলেছি, ‘আমাকে একবার তোমার ঐ সলিউশনটা দেখাও।‘ বলে, সেটা নাকি কবেই দাদু ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস হয় না জানিস? কেউ কি নিজের অমন আবিষ্কার নষ্ট করে ফেলতে পারে? বিজ্ঞানীরা কি শুধুই নাম পাবার জন্যে কাজ করেন? কাজ করার মধ্যে আনন্দ থাকে বলেই না করেন! আমিও যে অঙ্ক করে এত আনন্দ পাই, সে কি অন্যের কাছে নাম পাবার জন্য?”
বিতান এতক্ষণ চোখ বড় বড় করে শুনছিল, এবার বলল, “বাবা, তোর দাদু তো তাহলে মস্ত লোক। তার মানে অঙ্ক তোর জিনেই।”
“ছাড় তো, দাদুর মতো আমি কখনো হতেই পারব না। ছাড় ওসব কথা, আইসক্রিম শেষ, এবার বাড়ি চল। একটু মাথা খাটাতে হবে, নাহলে গিফট পাব না।”
“ঐ হিন্ট দেখে কিছু মাথায় এল না?”
“মনে হচ্ছে কোন একটা সিরিজ। কিন্তু কিছুতেই সংখ্যাগুলোর মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছি না। এখন বাড়ি চল, ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করতে হবে।”
দুজনে আইসক্রিমের খালি কাপগুলো আরেকবার চেটে নিয়ে ট্র্যাশে ফেলে দিয়ে, বাড়ির পথ ধরল। বিতান জিজ্ঞাসা করল, “হিন্টটা না হয় অঙ্ক। বাক্সের ওপর ডিজিটাল স্ক্রিন আর ঐ পেনটাই বা কিসের? সেটা তো বলবি?”
অবন্তিকা অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে বলল, “তুই এত বোকা নোস, যে ওটাও বুঝবি না। স্ক্রিনে ঐ পেন দিয়ে পাসওয়ার্ড লিখতে হবে, আর ঠিক পাসওয়ার্ড দিলে তবেই বাক্স খুলবে।”
“চেষ্টা করেছিস কিছু?”
“না, দাদু বলেছে তিনবার ভুল পাসওয়ার্ড দিলে নাকি ওটা সাতদিনের জন্য লক হয়ে যাবে।”
বিতান হেসে বলল, “আমি ঠিকঠাকই বুঝেছি তাহলে। তবু তোর সাথে একবার ক্রসচেক করে নিলাম।”
৩
রাতেই অনেকবার ইচ্ছে করছিল অবন্তিকাকে ফোন করে। ওর যা বুদ্ধি মাথায়, তাতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে সমাধান হয়ে গেছে সমস্যাটার। কিন্তু বিতান বা অবন্তিকা কেউই মোবাইল ব্যবহার করে না, স্কুলে অ্যালাও করে না যে। তাই ওকে ফোন করতে হলে বাড়ির কারোর ফোনেই করতে হবে। রাত বিরেতে তাই আর চেষ্টা করেনি। কিন্তু সকাল হতেই মার কাছ থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে সে ছাদে চলে গেল। তারপরেই রিং করল অবন্তিকার বাবার ফোনে। ধরল অবশ্য অবন্তিকাই। কাকুই হয়তো নাম্বারটা দেখেই ওকে ফোনটা দিয়ে দিয়েছে। তবে কিনা, ওকে আর বিশেষ কথা খরচ করতে হল না। ফোন ধরেই অবন্তিকা বলল, “আমি তো ভাবলাম তুই উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে রাতেই আবার ফোন করবি। তা করিসনি ভালোই হয়েছে, নির্বিঘ্নে মাথাটা খাটাতে পেরেছি। তাড়াতাড়ি স্কুলে আয়, সল্ভ না হলেও খানিকটা এগিয়েছে।”
আজ স্কুলে পৌঁছাতে খানিকটা দেরী হল অবন্তিকার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝল, প্রেয়ার হলে অ্যাসেম্বলি শুরু হয়ে গেছে। সে দৌড়াতে লাগল সিঁড়ি বেয়ে। কোনরকমে ব্যাগটা রেখেই দৌড়াতে হবে। নাহলে একটু বাদেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাসে ক্লাসে এসে ঢুঁ মেরে যাবেন, কেউ অ্যাসেম্বলি মিস করেছে কিনা। মিস করলেই হাজারটা কথা শুনতে হবে, প্লাস ফার্স্ট পিরিওডটা ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে কাটাতে হবে। কোনরকমে লাফাতে লাফাতে শেষ দূরত্ব ঘুচিয়ে ক্লাসের সামনে পৌঁছেই টের পেল ভিতর থেকে একটা হল্লার শব্দ আসছে। তারপর দরজায় পৌঁছেই দেখল, গোটা ক্লাসরুম ফাঁকা। শুধু বিতান, অরিত্র আর অদ্রিজ একটা কিছু নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। ওকে দেখে হঠাৎ থমকে গিয়ে অরিত্র বলে উঠল, “এই তো প্রব্লেম সল্ভড, বাকিটা শকুন্তলার।”
অবন্তিকা তেমনি অবাক হয়েই তাকিয়ে বলল, “কিসের কথা বলছিস তোরা? প্রেয়ারে যাবি না?”
এবার বিতান ওর দিকে এগিয়ে এল, হাতে একটা প্যাকেট। ওর দিকে প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “খেয়ে দেখ, দারুণ।”
অবন্তিকা হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিল। তার ভিতর হাত ঢুকিয়ে একটা কুকি বের করে আনল। মাখনের গন্ধে ম ম করছে একেবারে। মুখে দিয়ে একটা কামড় দিয়েই মনটা ভরে গেল ওর। বলল, “দারুণ, কোথায় পেলি?”
বিতান বলল, “ভালো না? তুই তাড়াহুড়োয় নিশ্চয়ই খেয়াল করিসনি। স্কুলের পাশেই এই কুকিজের দোকানটা হয়েছে। আজ সস্তায় বিক্রি করছে। আমরা কিনে নিলাম এক প্যাকেট। সেই হল মুস্কিল। প্যাকেটে ছিল দশটা। অথচ আমরা তিনজন। তাই তিনটে করে খেয়েও একটা বেশি। সেটা কে খাবে সেই নিয়ে …”
ওর কথা শেষ হলনা, অবন্তিকা চেঁচিয়ে উঠল, “ব্রেভো বিতান। নে কুকি খা।”
বলে আধখাওয়া কুকিটা প্যাকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে আবার বিতানের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর এক গাল হাসি নিয়ে ডেস্কে বসে তাড়াতাড়ি ব্যাগ খুলে একটা খাতা আর পেন বার করে ফেলল। বিতানের মুখের হাঁ এখনও বন্ধ হয়নি। ওকে অমন করে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরিত্র ওর কাঁধে হাত দিয়ে কানের সামনে ফিসফিস করে বলল, “চাপ নিস না, যারা বেশি অঙ্ক করে তারা নাকি শুনেছি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যায়। ওর হয়তো আজই পাগলামির শুরু।”
বিতান এবার কুকির প্যাকেটটা অরিত্রর হাতে ধরিয়ে বলল, “না রে, এ আর্কিমিডিসের মতন ব্যাপার, শুধু ইউরেকা না বলে ব্রেভো বলল।” সে চুপ করে অবন্তিকার পাশে বসে পড়ে ওর খাতার দিকে তাকিয়ে দেখল। অবন্তিকা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “সকালে বললাম না কিছুটা এগিয়েছে? এবার ব্যাপারটা তোকে বলি। প্রথম যে নাম্বারটা ছিল মনে আছে?” একথা বলে অবন্তিকা আরেকবার নাম্বারটা লিখে দিল।
1421213105168421
এতক্ষণে অরিত্র আর অদ্রিজও খাতার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। অবন্তিকা আবার বলতে শুরু করল, “এটা একটা গোটা নম্বর নয়, এটা একটা সিরিজ। একটা করে স্পেস বসাই।”
1 4 2 1 2 1 3 1 0 5 1 6 8 4 2 1
“সকালে যেটুকু এগিয়েছি বলেছিলাম, সেটা আগে বলি শোন। ভালো করে দেখ, অনেকগুলো সংখ্যাই পরেরটার দ্বিগুণ। কিন্তু সবগুলো তা নয়। সেগুলোকে কিভাবে মেলাব বুঝতে পারছিলাম না। তুই ঐ তিনজনের জন্য দশটা কুকিজের কথা বলে সেটা মিলিয়ে দিয়েছিস। দেখ এখানে আমি স্পেস দিতে একটু গোলমাল করেছিলাম। এবার সেটা ঠিক করে দিই, তাহলে দেখবি এখানে কতগুলো সংখ্যা একে অপরের দ্বিগুণ আর অন্যগুলো তার আগের সংখ্যার তিন গুণের চেয়ে ঠিক এক বেশি। এবার লিখছি নতুন করে দেখ।“ অবন্তিকা আবার নতুন করে সংখ্যাগুলো লিখল।
1 4 2 1 2 1 3 1 0 5 1 6 8 4 2 1
“একটু গোলমাল হল, আরেকটু ভালো করে লিখলে আরও একটু বোধগম্য হবে”। গম্ভীর চেনা গলা শুনে ওরা চারজনেই ফিরে তাকাল। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল স্যার কখন যেন এসে ওদের পিছনে দাঁড়িয়েছেন। অরিত্র স্যারকে দেখেই বলল, “স্যার এই এখুনি যাচ্ছি প্রেয়ারে।”
স্যার হেসে বললেন, “অঙ্কের জন্য আজ ছাড়, তাও যখন এমন একটা অঙ্ক। কিন্তু এ অঙ্ক তোরা পেলি কোথায়?”
অবন্তিকা বলল, “দাদু সল্ভ করতে বলেছেন। তাই চেষ্টা করছি।”
হেসে স্যার বোর্ডের দিকে গিয়ে দাঁড়ালেন, তারপর মার্কার নিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “হুম, তোর দাদু তো আগে অঙ্কের প্রফেসর ছিলেন। তা এতটা সল্ভ যখন করেছিস বাকিটা না হয় বলেই দিই। তুই ঠিকই লিখেছিস। আরেকটু বুঝিয়ে বলি।” এবার তিনি মার্কার দিয়ে বোর্ডে লিখে ফেললেন।
1 4 2 1
2 1
3 1 0 5 1 6 8 4 2 1
4 2 1
5 1 6 8 4 2 1
এবার লেখা বন্ধ করে ওদের দিকে ফিরে বললেন, “এবার খেয়াল কর, যখন যখন কোন জোড় সংখ্যা বা ইভেন নাম্বার আসছে, পরের সংখ্যাটা হচ্ছে ঠিক তার অর্ধেক। আর যখন বিজোড় সংখ্যা বা অড নাম্বার আসছে, পরের সংখ্যাটা হচ্ছে তার তিনগুণের এক বেশি অর্থাৎ কিনা 3n + 1। ঠিক এভাবে যে কোন সংখ্যা দিয়ে শুরু করে জোড় সংখ্যার ক্ষেত্রে n/2 আর বিজোড় সংখ্যার ক্ষেত্রে 3n+1 করতে থাকলে দেখা যাবে এক সময় একে পৌঁছাবি। এ এক অঙ্কের বিরাট সমাধানহীন সমস্যা।”
“সমস্যা কেন স্যার, এ তো প্রমাণ হয়েই গেল?” জিজ্ঞাসা করে উঠলো অদ্রিজ।
স্যার হেসে বললেন,“ওরকম মনে হচ্ছে। এখন পাঁচ অবধি সল্ভ করছিস বলে। এরকম আর কতদূর অবধি হিসেব করতে করতে যাবি? বড় সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে কতগুলো করে সংখ্যা একটা সিরিজে আসবে ভেবে দেখ। এমন অনেক সংখ্যাই আছে যেগুলো পর্যন্ত কম্পিউটারও আজ অবধি পৌঁছাতে পারেনি। সংখ্যা তো অসীম, এর কোন শেষ নেই। কাজেই গাণিতিক কোন সূত্র বা ম্যাথেমেটিকাল ফরমুলার আওতায় একে আনা না গেলে কোনদিনই বলা সম্ভব নয় সমস্ত সংখ্যাই এই নিয়ম মেনেই চলবে কি চলবে না। দেখ তোরা কেউ হয়তো বড় হয়ে এটা সল্ভ করবি। এই সমস্যাটির নাম হল Collatz Conjecture .” এবার একটু থামলেন স্যার। তারপর চক আর ডাস্টার রেখে দিয়ে বললেন, “প্রেয়ারটা ওরকমভাবে কামাই করা কিন্তু তোদের ঠিক হয়নি। ডিসিপ্লিন জিনিসটা কিন্তু জীবনে খুব জরুরি।”– একথা বলে আর এদিকে না তাকিয়ে তিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।
স্যার বেরিয়ে যেতেই বিতান জিগ্যেস করল, “কিন্তু এ তো অনেক সংখ্যা। তোর দাদু কোন সংখ্যাটা রেখেছেন পাসওয়ার্ড হিসেবে সেটা কী করে বুঝবি?”
অবন্তিকা বলল, “আমার কী মনে হয় জানিস? আমার যেহেতু ১৫ বছরের জন্মদিন নিশ্চয়ই দাদু ১৫র সিরিজটাই পাসওয়ার্ড রেখেছেন।”
“এটা দারুণ বলেছিস। ইস আমার তো আর তর সইছে না, সেই বিকেল অবধি অপেক্ষা করতে হবে তোর গেস ঠিক কিনা জানতে? আর তাছাড়া হিন্টটা একেবারেই কোন কাজে লাগল না?” বলে উঠলো বিতান।
অবন্তিকা বলল, “হুম হিন্টের ব্যাপারটা আমারও একটু অদ্ভুত লাগছে বটে। ওটাও আমি ঠিক খুঁজে বার করব। তবে বিকেল অবধি অপেক্ষা তোকে করতে হবে না।”
“মানে?”
“মানেটা বুঝতে পারবি একটু পরে।”
৪
“এরকম কি আগে কখনো হয়েছে?”
“হ্যাঁ স্যার, একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। আসলে কয়েকদিন একদম রেস্ট হয়নি। খুব পড়াশোনা করেছি কিনা।”
“না না, শরীরের যত্ন নেওয়া দরকার। এই বয়সেই যদি এমন দুম করে মাথা ঘুরে পড়ে যাও, পরে কী হবে বল দেখি? এরকম করলে কি চলে? তোমার বাড়ীর কাউকে বরং খবর দিই, কেউ এসে নিয়ে যান, নাকি?” চোখ বড় বড় করে বললেন ক্লাস টিচার সন্দীপন বাবু।
বিতান আগ বাড়িয়ে বলল, “স্যার বলছিলাম কী, বাড়িতে খবর দেবার কি দরকার আছে? বাড়ির লোক খামখা চিন্তা করবেন। আমি তো ওর পাশের বাড়িতেই থাকি। আমি বরং ওকে পৌঁছে দিয়ে আবার স্কুলে চলে আসব।”
“সেটা অবশ্য খারাপ বলনি। না হয় তাই যাও। তবে, বেশি দেরী কোরো না। ফেরত এস যেন।” বললেন সন্দীপন বাবু।
অরিত্র বলে উঠলো, “তুই একা সামলাতে পারবি বিতান? নাকি আমিও যাব সঙ্গে?”
স্যার বললেন, “না না, এখানে সামলানোর কী আছে? সবাই মিলে যেতে হবে না। শুধু ফাঁকিবাজি!”
অরিত্র আবার বসে পড়ল। অবন্তিকার চোখে মুখে জল ছিটানোয় মুখটা এখনও ভিজে ভিজে। সেটা রুমাল দিয়ে মুছে বিতানকে নিয়ে ধীরে ধীরে স্কুলের গেটের দিকে এগোল ওরা।
৫
“দারুণ নাটক করলি কিন্তু আজ, কোন ভালো ফিল্ম ডিরেক্টর দেখলে আজই তোকে চান্স দিয়ে দিত!” অবন্তিকা বাক্সটা হাতে নিতেই বলে উঠল বিতান। মা, বাবা, দাদু কেউই এখন বাড়িতে নেই বলে স্কুল থেকে দুম করে চলে আসায় কাউকে কৈফিয়তও দিতে হবে না।
অবন্তিকা হাসল, তারপর বাক্সটা হাতে নিয়ে পেনটা বার করল। তারপর বিতানের দিকে তাকিয়ে বলল, “দাঁড়া একটা কাগজে আগে লিখি, তাহলে ভুল হবে না।” তারপর খচখচ করে কাগজের ওপর লিখে ফেলল।
15462370351065316080402010516842
হাতদুটো মুঠো করে ধরে বসল বিতান। জিজ্ঞাসা করল, “তোর কী মনে হয়? কী গিফট আছে ওটায়?”
“নিশ্চয়ই দারুণ কিছু একটা বই, আর সেটা অবশ্যই অঙ্কের, এই বলে রাখলাম, দেখে নিস।” এ কথা বলেই অবন্তিকা টাচ স্ক্রিনের ওপর পেন বুলিয়ে সংখ্যাগুলো লিখে এন্টার মারল। এরপর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তাই দেখে বিতান জিজ্ঞাসা করল, “কী রে, কী হল?”
“স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখ।”
বিতান স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল স্ক্রিনে একটা মেসেজ ফুটে উঠেছে। বলল, “হুম, কুড়িটার বেশি ক্যারেক্টার এন্টার করা যাবেনা বলছে। এবার কী হবে? পর পর সব গুলো দিয়ে দেখবি? মানে চার, পাঁচ সব সিরিজগুলো?”
“দাঁড়া একটু ভাবতে দে।” বলল অবন্তিকা। তারপর সেই সংখ্যা আর হিন্ট লেখা কাগজগুলো নিয়ে বসে রইল খানিকক্ষণ। ওকে এক মনে দেখতে থাকল বিতান। একটু পরে হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো অবন্তিকার মুখচোখ। সে বলে উঠল, “হিন্টটা দরকারি রে বিতান, দাদু ওটা শুধু শুধু দেয়নি। একবার ভালো করে দেখ।”
বিতান হিন্টের দিকে তাকাল, আবার পড়ল সংখ্যাগুলো।
3 15 12 12 1 20 26 3 15 14 10 5 3 20 21 18 5
বলল, “না রে, তুই বলে দে, আমার অত বুদ্ধিও নেই, ধৈর্যও নেই। আমি ব’লে গোয়েন্দা গল্পের শেষ পাতা আগে পড়ে নিই!”
হেসে ফেলল অবন্তিকা, তারপর বলল, “ঐ যে ১২ সংখ্যাটা দুবার আছে, ওটাই আমার চোখে এতক্ষণ পড়েনি কেন কে জানে? তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড স্যার থাকায় সহজ হল বোঝাটা। ওরে, ওটা কোন সংখ্যা নয়। ইংলিশ একটা ওয়ার্ড এমনি করে লেখা। ১২ নম্বর অ্যালফাবেট হল L, আর ওটা ডাবল আছে। এবার বাকি সংখ্যা ধরে ধরে অ্যালফাবেট গুলো লিখে ফেলে দেখ কী পাবি। মেসিনটা বলছে ম্যাক্সিমাম কুড়িটা ক্যারেক্টার, সেগুলো ডিজিট হতে হবে কখন বলল? ঐ হিন্ট এর সংখ্যাটা দিয়ে যে শব্দটা বলে হয়েছে তা হল, CollatzConjecture.”
এবার দ্রুত হাতে সে লিখে ফেলল শব্দটা। এবার এন্টার প্রেস করতেই একটা ক্লিক করে শব্দ হয়ে আপনা আপনি খুলে গেল বাক্সের ঢাকনা। তার মধ্যে চোখ পড়তেই এক গাল হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে। ভিতরে পাওয়া জিনিসটা বার করে আনল ও। অনেকগুলো কাগজের মোটা একটা বান্ডিল, আর তার ওপর লেখা “Mathematical proof of Fermat’s last theorem.” সে বলল, “আমি জানতাম বিতান, দাদুর অমন সাধের রিসার্চ দাদু নষ্ট করতে পারে না।”
বিতানের মুখেও হাসি ফুটে উঠল। সে নেড়ে চেড়ে দেখল কাগজগুলো, তারপর গম্ভীর হয়ে বলল, “একটা জিনিস বুঝলাম না, ঐ হিন্টটা যদি তুই আগেই বুঝতিস, তাহলে তো আর প্রথম সংখ্যাটার মানে খুজে বার করতিস না! তাহলে ওটা দেবার মানে কী?”
“আমার নাতনিকে আমি চিনি। ও ঠিক ওটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করত। গিফট আমি তো ওকে দিয়েই দিতাম। কিন্তু এমন মজা করে অঙ্ক শেখাটা কি হত? কী করে পেলে তোমরা অঙ্কটার সন্ধান? আমি তো ভেবেছিলাম হিন্টটা পেয়ে তারপর গুগল দাদার সাহায্য নেবে ওটা কী তা জানতে।”
দাদু যে কখন এসে ওদের পিছনে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারেনি ওরা।
“সব বলব দাদু, গিফটটা কিন্তু দারুণ হয়েছে।” বলে উঠল অবন্তিকা।

জন্ম ১৯৮৩ সালে কলকাতায়। পড়াশোনা বালিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল থেকে। তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি জীবন শুরু তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে। বর্তমানে কর্মসূত্রে আমেরিকার নিউ জার্সিতে বসবাস। কাজের ফাঁকে বই পড়া, সিনেমা দেখা আর ঘুরে বেড়ানোয় আগ্রহের অন্ত নেই । তারই মাঝে কখনো কখনো একটু আধটু লেখালেখি । কয়েকটি ম্যাগাজিনে ছোট গল্প লিখেছেন , লিখেছেন ফেসবুকে বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপেও । ২০২০ সালে মুক্তি পেয়েছে প্রথম উপন্যাস “উজান পথের খোঁজে”।