Categories
ইরাবতী গীতরঙ্গ গণিত সংখ্যা: সম্পাদকীয়
আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
আমরা ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ার সময় দাদা ধাঁধা ধরত,হাতুড় বাটাল বাইশটা চোরে নিলো দুইটা বাকী রইলো কয়টা? হাতের কর গুনে বিজ্ঞের মতো ভাব নিয়ে বলতাম বিশটা কিন্তু দাদা হেসে বলতো একটা কারন বাইশ একটা হাতুড়ির মতো ইট ভাঙার জিনিস কিংবা বন্ধুদের বোকা বানাতে দাদার কাছে শেখা ৩৬ থেকে ৩০০ (তিন শ) গেলে কত থাকে বাকি?’ সবাই হোঁচট খেত। কারণ, একটি ছোট সংখ্যা থেকে এত বড় সংখ্যা আবার বিয়োগ হয় নাকি? আমরা তো তখন ঋণাত্মক সংখ্যা নিয়ে হিসাব করার কথা জানতাম না। কিন্তু এর একটা উত্তর ছিল। বিয়োগ ফল ৩৩! কারণ, ৩০০ আসলে ব্যঞ্জনবর্ণের তিনটি শ, ‘শ, ষ ও স’, আর ৩৬ হলো ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা, যা ধাঁধায় ৩৬ বলে ধরা হয়েছে। তাহলে এই ৩৬ থেকে তিনটি শ, অর্থাৎ ৩ বিয়োগ করলে তো ৩৩-ই থাকবে! এই ধাঁধার মধ্যে দুটি বিষয় ছিল। এক হলো, গণিত নিয়ে চালাকির খেলা করা যায়। দ্বিতীয়, গণিতের মধ্যেও মজার অনেক কিছু আছে। কিন্তু এখন গণিত আছে, মজা নেই। কারণ, একে শুধুই পুঁথিগত বিদ্যায় পরিণত করা হয়েছে। অথচ গণিতে আনন্দ পেলে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের দরজা খুলে যায়। এমন ফেলে আসা দিনের কথা বলছিলাম গণিতের শিক্ষক অদিতি ঘোষদস্তিদারকে,তখনই মাথায় এলো একটা গণিত সংখ্যা করলে কেমন হয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও রাজি হলেন অদিতি ঘোষদস্তিদার,গীতরঙ্গ গণিত সংখ্যার অতিথি সম্পাদকও তিনিই। তেরোর গেরো সাজিয়ে তুললেন তেরজন লেখকের তেরটি ভিন্নমাত্রার লেখায়। অদিতির এই কাজ পাঠককে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে আশা করি। অদিতি ঘোষদস্তিদার ও সংগ্রামী লাহিড়ীর প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। এই দুজন মানুষ না থাকলে এই সংখ্যাটি করা হয়ত অসম্ভব ছিলো। পাঠকের ভালো লাগলে আমাদের ও অদিতির শ্রম সার্থক হবে।
অলকানন্দা রায়
সম্পাদক ইরাবতী
অতিথি সম্পাদকের দু চারটি কথা
এই মার্কিন মুলুকে স্কুল কলেজে পড়া গুঁড়ো থেকে বুড়োর বেশির ভাগের মুখেই এক রা! “আই হেট্ ম্যাথস!” প্রথম এসে বেশ চমকে গেছিলাম ‘হেট্” শব্দটা শুনে। আমরা তো কখনোই চট করে এমনভাবে ঘৃণা বা ঘেন্না কথাটা ব্যবহার করি না। তাই গোটা অঙ্ক বিষয়টা সম্পর্কে এরকম একটা সার্বজনীন তিক্ত ধারণা শুনে তো আমি তাজ্জব। শেখাব কী করে এদের কঠিন গাণিতিক তত্ত্ব? ক্রমে ক্রমে বুঝলুম এদের হেট্ কথাটার মানে অতটা মর্মভেদী নয়, কথাটা এরা ব্যবহার করে ঘোর অপছন্দ বোঝাতে। ততদিনে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। প্রথম ধাক্কার তাল সামলে এই আমি বেশ সড়গড়। প্রতি সেমেস্টারে প্রথম যে অংকের ক্লাসেই যাই প্রথমেই সেখানে দিই এক লেকচার। তারা কিছু বলার আগেই কলকলিয়ে উঠি, “শোনো বাপু , আমি বিলক্ষণ জানি তোমরা অঙ্ককে হেট্ করো – তা করতেই পারো, সে ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র বিরূপ মতামত নেই, কিন্তু দয়া করে তোমাদের এই অংকের টিচারকে হেট্ কোরো না, তাহলে বুকে শেল বিঁধবে আমার! মানুষটা আমি এমনিতে খুব একটা মন্দ নই, আর আমার শত্তুররাও বলে আমার্ হাতে নাকি খুউউব নম্বর!” সবাই হেসে ওঠে একসঙ্গে! আমিও আটকে রাখা দমটা ছাড়ি! যাক! প্রথম ধাপটায় উৎরে গেছি। এরপর ধীরে ধীরে ভুলিয়ে ভালিয়ে খেলিয়ে এনে অঙ্ক সাগরে দু একটা ডুব দেওয়ানো যাবে হয়ত। সেই ভরসা বুকে নিয়েই “গণিত সংখ্যা”র সম্পাদনায় সাড়া দেওয়া। ইরাবতীর সম্পাদক যখন “অঙ্ক নিয়ে সংখ্যা করতে চাই” বলে দায়িত্ব দিতে চাইলেন এই অধমকে, প্রথমেই মনে হল “‘লাও তো বটে’, কিন্তু পড়বে কে?” সেই বুক ঢিপঢিপিনি ছিল টিজার দেখার আগে পর্যন্তও। সাড়ে দশ ঘন্টা পিছিয়ে থাকার জন্যে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম টিজার বেরিয়েছে বেশ কিছু আগে আর তাতে লাইক কমেন্টের সংখ্যাও নেহাত মন্দ নয়! বুঝলুম অঙ্ককে ভালো না বাসলেও গণিত সংখ্যার তেরোরত্নের তেরোটি দুর্দান্ত লেখা পাঠের জন্যে ‘তেরোর গেরো’ খুলতে আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই! পাঠকের ভালোবাসাই লেখক আর সম্পাদকের কাছে শেষ কথা। সেই আশা বুকে নিয়েই আরো সাহসী হতে মন চাইছে। অঙ্কের ভয় জয় করিয়ে আরো আরো গণিত সংখ্যা হয়ত আগামী দিনে আসবে এবং পাঠক অঙ্ককে হেট্ করলেও ‘গণিত সংখ্যা’ গুলিকে পরম আদরে মনের মণিকোঠায় ঠাঁই দেবেন!
অদিতি ঘোষদস্তিদার ( অতিথি সম্পাদক )
তেরোই ডিসেম্বর, ২০২১
নিউ জার্সি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
চমৎকার বিষয় নিয়ে অভিনব সংখ্যা।