Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

হাসনাহেনা এবং একটি টর্চলাইট

Reading Time: 6 minutes

আজ ২৪ অক্টোবর কবি ও কথাসাহিত্যিক হামীম ফারুকের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


আবিদ যা ভেবেছিল, অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। বন‌্যার পানি প্রায় রেললাইন ছুঁইছুঁই। দুপাশের জমিগুলো প্লাবিত হওয়ার কারণে মনে হচ্ছে তাদের আন্ত:নগর ট্রেনটি কোন বিশাল জলাভূমির মাঝখান দিয়ে সামনে এগোচ্ছে। দুচারটে যে বাড়িঘর রয়েছে সেগুলোর চালাটুকু শুধু দেখা যাচ্ছে। দূরে একটা প্রাইমারি স্কুল ভবনের ভেতর দেখতে পেল দুর্গতরা আশ্রয় নিয়েছে।
জানালা দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছিল। চেয়ারকোচের উল্টো দিকের সীটে বসে আছে গিয়াস। মোবাইলে কিছু একটা মন দিয়ে পড়ছিল। চোখ তুলে দেখল আবিদকে। আবিদের চোখ জানালার বাইরে।
’কী ব্যাপার, মুড অফ নাকি ভাই?’ জিজ্ঞেস করে গিয়াস। তার গলায় হালকা সুর।
’এদিককার পরিস্থিতি দেখছি’, দেখতে দেখতে উত্তর দিল আবিদ।
তাই বলেন। আমি তো ভাবলাম ভাবীর কথা ভাবছেন।
আবিদ হাসল। শব্দটা জোরালো হয়ে গেল। অল্প কজন অন‌্যান‌্য যাত্রী। চোখ তুলে দেখল ওদের।
আবিদ বলল, যাই বলেন, এদিকের সিচুয়েশন বেশ খারাপ।
গিয়াস গম্ভীর গলায় বলল, হুম আগেও বন‌্যা হয়েছে, তবে এখানে কখনো এত পানি ওঠেনি।
ট্রেনের ঝাঁকুনি কমে এসেছে। হুইসেল শোনা গেল। একটু পরই ট্রেন শিবেরহাট ষ্টেশনে ঢুকল।
২.
চানতারা হোটেলের এর ম্যানেজার ইদরিস রীতিমত ধাঁধায় পড়ে গেছে। ঢাকা থেকে দুই সাংবাদিক এসে উঠেছে তাদের হোটেলে। এটিকে হোটেল না বলাই ভাল। ছোটখাট একটি বোর্ডিংএর মতো। কোন ভদ্রলোকের থাকবার মত জায়গা এটি নয়, জানে সে। যদিও হোটেলটি দিনে রাতে সব সময়ই জমজমাট। কাছেই ষ্টেশন। বোর্ডারের অভাব হয় না। মূলত: গরু বা সবজি ব‌্যবসায়ীরাই ওঠে তার হোটেলে। বিশেষত: হাটবারের আগের দিন এবং তার পরের দিন পর্যন্ত এ হোটেলটিতে কোনো সিট পাওয়া যাবেনা। কিন্তু ইদ্রিসের সমস‌্যা সেটি নয়। মুশকিল হলো লোকগুলো যে কদিন থাকবে বিড়ি খেয়ে ঘর, বিছানা নোংরা করে রাখবে। আর যাবার সময় টিপে টিপে হিসেব করে টাকা দিয়ে যাবে। কেউ কেউ আবার সিটভাড়ার কিছু টাকা ইদ্রিসের হাতে দিয়ে বাকি টাকা সামনের হাটবারে পরিশোধের কথা বলে চলে যাবে। এভাবেই চলছে।
তবে ছোট্ট এ শহরটিতে ভাল হোটেল বলতে রয়েছে মাত্র একটি। যার মালিক উপজেলার চেয়ারম‌্যান। মফস্বলে ভাল হোটেল বলতে বুঝায় এসিরুম, ঘরে ছোটখাট এনালগ টিভি রয়েছে এমন। তাও আবার সবরুমে নয়। তা হলেও সেখানে না উঠে লোক দুটো তার এখানেই উঠল কেন, বুঝতে পারেনা ইদ্রিস ম‌্যানেজার। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেসও করেনা। হোটেলে দীর্ঘদিনের ম‌্যানেজারি করে অন্তত: এটুকু বুদ্ধি হয়েছে তার, যে সব প্রশ্ন সবাইকে করতে নেই।
৩.
ভিজিটিং কার্ড পাঠাতেই অফিসার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আবিদ ও গিয়াসকে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, তো ভাই ঢাকা থেকে আপনারা কি মনে করে? বিনা কারণে তো আপনাদের পায়ের ধুলো পড়ে না।
আবিদ, গিয়াস দুজনেই হাসল।
অফিসার তাদের বসতে বলে নিজের চেয়ারে বসলেন।
অফিসারের বেশ চকচকে পরিপাটি চেহারা। কথাটি তিনি শুধু বলার জন্য বলেছেন, অনুমান করল আবিদ। 
চা খান?’ বলে কলিং বেলের দিকে হাত বাড়ালেন অফিসার। 
তারপর আবিদদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করেন,  তা কোন পত্রিকা যেন আপনাদের?  
দৈনিক নবযুগ।’ মনে করিয়ে দিল আবিদ। 
ও হ‌্যাঁ,  আপনাদের ভিজিটিং কার্ডেই তো লেখা আছে। বিখ‌্যাত পত্রিকা আপনাদের। বলুন কী জানতে চান? জিজ্ঞেস করেন অফিসার।
এখানকার বন্যা পরিস্থিতি কেমন? 
খুব খারাপ। এরকম আগে হয়নি। 
সরকারি সাহায্য পেয়েছেন?
পেয়েছি। তবে পানি না নামা পর্যন্ত আরও জরুরি সাহায‌্যের প্রয়োজন হবে। 
ঘরে পিয়ন ঢোকে। হাতে ট্রে। 
খুক খুক করে হাসলেন কী কাশলেন অফিসার বোঝা গেল না। বললেন, কোথায় উঠেছেন আপনারা। 
বলল আবিদ। 
শুনে কিছুটা অবাক হলেন অফিসার। বললেন, করেছেন কী, আপনারা চাইলে ডাক বাংলোয় ব্যবস্থা করে দিতে পারি। 
আবিদ ও গিয়াস পরস্পরের দিকে তাকাল। তাদের আগেই ঠিক করা আছে, কারও আতিথ্য নেবে না। গিয়াসই উত্তর দিল, না না ঠিক আছে। দু’একদিনের ব্যাপার । অসুবিধে হবে না। 
একটু যেন মনক্ষুন্ন হলেন অফিসার। 
আবিদ আবার নোট বই খুলেছে। বলল, আমাদের কয়েকটি জিনিস জানার ছিল। 
অফিসার মাথা ঝাঁকালেন, বলুন।
  
ত্রাণসামগ্রী কিভাবে বিতরণ করছেন? 
দেখুন, ত্রাণ আসবার পর সেটা রাখা হয়েছে এলএসডি খাদ‌্য গুদামে। এরপর, এখান থেকে প্রয়োজনমত বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তারা তাদের নিজ এলাকার মেম্বারদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করেন। 
একটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিছুটা তীক্ষ্ম হয়ে ওঠে আবিদের গলা। 
বলুন।
আপনার এলাকায় এই সব ত্রাণ বিতরণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না তো ? আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আর ফেসবুকেও বোধহয় এসংক্রান্ত একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।’ ইচ্ছে করেই প্রশ্নটি সরাসরি করল আবিদ। ব‌্যাপক অনিয়ম হচ্ছে তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিও সেরকম আভাষ দিয়েছে।  
অফিসার অস্বস্থি নিয়ে তাকালেন আবিদের দিকে। বললেন, হ‌্যাঁ, ফেসবুকের পোস্টটি আমাদেরও নজরে এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি সেটা ফেইক আইডি। 
আপনি কী শিওর! জিজ্ঞেস করে অফিসারের দিকে তাকিয়ে থাকে আবিদ। 
আমার কলিগরা তো আমাকে তেমনই জানিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা এলাকার গণপ্রতিনিধিদের উপরতো ট্রাস্ট রাখতে হবে আমাদের। তাই তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত তাদের ভূমিকা থাকে। আমরা ইনফ‌্যাক্ট প্রশাসনিক ও লজিস্টিক্স সহযোগিতা করছি 
আপনারা উপজেলা চেয়ারম‌্যান বা লোকাল এমপি সাহেবের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
অফিসার উত্তর না দিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা কাগজ বের করলেন। সেটা আবিদের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন, এ পর্যন্ত আমরা যতটুকু ত্রাণসামগ্রী পেয়েছি তা আছে এখানে। এবং এর কতটুকু বিতরণ করা হয়েছে, কারা পেয়েছে তাও পাবেন।  
কাগজটি হাতে নিয়ে দেখে আবিদ, ফটোকপি। সবাইকেই বোধহয় একই জিনিষ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাগজটি নিয়ে নোটবইয়ে গুঁজে রাখল আবিদ। তারপর উঠে দাঁড়াল। বলল, আপনার একটা ছবি নিতে পারি? 
কিছুটা অনিচ্ছুক ভঙ্গিতে রাজী হন অফিসার। গিয়াস তার ডিএসএলআর ক‌্যামেরায় ছবি নেয়। এতক্ষণ সে কথোপকথন রেকর্ড করছিল।
উঠে দাঁড়ালেন অফিসার। বললেন, আপনারা আজ আমার সাথে লাঞ্চ করলে খুশী হবো। 
আবিদই উত্তর দিল। বলল, না, আমাদের একটু তাড়া আছে। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। 
৪.
শহরের বিভিন্ন এলাকায় বন‌্যার পানি ঢুকে পড়েছে। উকিলপাড়া, কলেজ রোডে এক হাঁটু পানি। শহরের শেষ প্রান্তে একটি  মাদ্রাসা। তাতে লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। গ্রামের ভেতর অবস্থা আরো খারাপ। উঠতি ফসল প্রায় সব নষ্ট। ঘরের ভেতর পানি। চারদিক হাহাকার ভাব। আবিদ ও গিয়াস সব কিছু ঘুরে দেখল। কখনো কলাগাছের ভেলায় চড়ে, কখনো হাটুর ওপর প্যান্ট তুলে হেঁটে হেঁটে। জানা গেল, বন্যার পর এখানে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছেই ত্রাণ পৌঁছেনি। তবে ভয়াবহ হলো সরকারি ত্রাণ স্থানীয় বাজারেও বিক্রি হতে দেখেছে কেউ কেউ।  
ফেরার পথে আবিদদের পেছনে ফেউ লাগল। ওরা যেখানেই গেল ওদের পেছন আঠার মত লেগে রইল লোকটা। পরনে প্রিন্টেড লুঙ্গি, গায়ে মোটা কলারে লাল রঙের শার্ট, রুক্ষ চুলের নিচে মোটা চওড়া জুলফি। মুখে সর্বক্ষণ কিছু একটা চিবুচ্ছে।   
হোটেলে ফিরে জানা গেল লোকটার পরিচয়। ছোট শহরে সবাই সবাইকে চেনে। লোকে তাকে বালা গুন্ডা বলে জানে। এলাকার এমপির ডান হাত সে। জোড়া খুনের সন্দেহভাজনদের একজন ছিল। কিভাবে যেন জামিন পেয়ে বেরিয়ে এসেছে। আর বেরিয়ে এসে যথারীতি আগের চেহারায় ফিরে গেছে সে।   
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে বিছানায় পা তুলে বসল গিয়াস। তারপর একটা বালিশে ঠেস দিয়ে বসে বলল, এখন কী করবেন ভাই। যুদ্ধ তো শুরু হয়ে গেল মনে হয়। 
আবিদ বলল, যাই বলেন, এখন আর পেছানো যাবেনা। আমি চাইছি  রিপোর্টটা এক্সক্লসিভ হোক।  
গিয়াস চিন্তিত গলায় বলল, দ্যাখেন, এরকম কথা প্রেসক্লাবে চা খেতে খেতে তো শুনতে ভালই লাগে আবিদ ভাই। বলতেও। কিন্তু আমি আসলে এইখানে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইনা।  
আবিদ হেসে বলল, তাহলে? 
গিয়াস চাদরের তলায় ঢুকতে ঢুকতে বলল, আমি ভাই ব্যাক টু দা প্যাভিলিয়ন। কালকের ট্রেনে। অফিসে যা বলার আমি বুঝিয়ে বলব ‘ বলে গিয়াস পুরো শরীর চাদরে ঢেকে শুয়ে পড়ল।  
রাত বেশি হয়নি। যদিও আজ সারাদিন ছুটোছুটি হয়েছে অনেক। আবিদ মোবাইলে দেখল প্রায় দশটা। মফস্বলে রাত দশটায় শহর অনেকটাই নিরব হয়ে আসে। জানালার সামনে এসে দাঁড়াল আবিদ। কোথাও হাসনাহেনা ফুল ফুটেছে। বাতাসে তীব্র মাদকতা। নিজেকে হঠাৎ আশ্চর্য নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন মনে হল ওর। রাত ও ফুলের গন্ধের সাথে নিঃসঙ্গতার কোন যোগসূত্র আছে কিনা জানে না সে, তবে এসময়ে কখনো কোন মুহুর্তে নিজেকে বিভিন্ন মাত্রায় আবিস্কার করে আবিদ। সেখানে অন্য কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে না ও। এমনকি হাসনুহেনার গন্ধে অনেকসময় নিজের পার্থিব সত্বাও বিস্মৃত হয়। 
ভাবতে ভাবতে চোখের পর্দায় কিছু ধরা পড়ে আবিদের। জাগতিক কোন কিছুর নড়াচড়া । আবিদদের হোটেলে পেছনে একটি স’মিল। এরপর একটি পোড়ো জমি। সেখানেও বন‌্যার পানি।  এরপর উঁচু একটি জায়গায় উপজেলার খাদ‌্য গুদামটি। সামনে কালো সাইনবোর্ডের ওপর সাদা বড় বড় অক্ষরে কিছু লেখা। সাইনবোর্ডের বাতি জলছে। তেমন জোরালো আলো নয়। বাতির কিছু আলো ছিটকে গিয়ে পড়েছে বন‌্যার পানির ওপর। চিকচিক করছে। 
তবে গুদামের চারপাশে কোন দোকানপাট বা বাড়্রিঘর নেই। তাই চারপাশ ডুবে আছে আঁধারে। তাতে দূর থেকে গুদামের কাঠামোটিকে কেমন ভৌতিক দেখাচ্ছে। 
এতক্ষণে অস্বস্থির কারণ টের পেল আবিদ। গোড়াউনের মূল গেটটি খোলা। কয়েকজন মানুষ সেখানে। তাদের নড়াচড়া বেশ অস্বাভাবিক। কিছু একটা গুদাম থেকে বের করে আনছে তারা। 
একমুহুর্ত বিস্মিত হয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখে আবিদ। তার একটু আগের নিঃসঙ্গতাবোধ  বদলে গেল চাপা উত্তেজনায়। জানালার কাছ থেকে সরে এল। তাকাল গিয়াসের দিকে । ততক্ষণে ঘুমে কাদা হয়ে গেছে গিয়াস।  দ্রুত পোশাক পাল্টে টেবিলে রাখা বড় টর্চটা তুলে নিল সে। ঢাকার বাইরে এলে একটি টর্চ সাথে রাখে আবিদ। সময় নেই, তাই গিয়াসকে জাগাল না। যদিও চীফ রিপোর্টার হাসান ভাই এরকম এসাইনমেন্টে কোথাও একা বেরুতে মানা করে দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু এখন কিছু করার নেই।
হোটেলের পেছনে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল আবিদ। কপাল খারাপ। বেরোবার মুখেই পড়ল কেয়ারটেকার ছেলেটি। সে গামছায় হাত মুছতে মুছতে বলল, কই যান, স্যার? 
মহাবিরক্ত হল আবিদ। বলল, সিগারেট আনতে যাচ্ছি। 
’আমারে টেকা দেন। আমি আইনা দেই।’ দুগাল ফাঁক করে হাসতে হাসতে বলে ছেলেটি। 
আবিদ মা তা নেড়ে কথা না বাড়িয়ে দ্রূত নেমে এল নিচে। 
৫.
হোটেলটি বাজার রোডের ওপর। উঁচু রাস্তার সাথে। এদিকটায় পানি ওঠেনি। এই রাস্তাটিই চলে গেছে স্টেশনের দিকে। বা’ পাশে আরেকটা মাটির কাঁচা রাস্তা। স’মিলটা এখানেই। এই রাস্তা ধরেই এগোল আবিদ। রাস্তায় মানুষজন নেই। মাঝে মাঝে শাঁ শাঁ করে দুএকটি ইজিবাইক ছুটে যাচ্ছে। 
গুদামঘরের কাছে এসে নিজেকে আড়াল করল আবিদ। হ্যাঁ এবার স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। গুদামঘরের পাশের রাস্তায় ঘাপটি মেরে আছে একটি কাভার্ড ভ‌্যান। ছায়ামানুষগুলোর  ভুতুড়ে হাত দ্রুততার সাথে বের করে নিয়ে আসছে বস্তা। বাকি হাতগুলো সেগুলো তুলে দিচ্ছে কাভার্ড ভ‌্যানটিতে। 
এটি অস্বাভাবিক দৃশ‌্য নয়। খাদ‌্যগুদামে মাল ওঠানামা হবে। তবে যেভাবে নি:শব্দে, দৃশ‌্যত: গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজটি করা হচ্ছে, একটু খেয়াল করলেই যে কারও সন্দেহ হবে। হাতের টর্চটা বগলে চেপে মোবাইলে ছবি নিতে চাইল আবিদ। এসময় গিয়াসের ক‌্যামেরাটি থাকলে ভাল হতো। এতদূর থেকে ছবি খুব ভাল আসছে না। আরেকটু কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে আবিদ। 
এসময় দুটো ঘটনা একসাথে ঘটে। একটি বড় ট্রাক খুব দ্রূত মূল সড়ক দিয়ে কাছে এসে পড়ে। তার হেডলাইটের জোরালো আলো এসে পড়ে আবিদের গায়ে। সেই আলোয় রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়ানো বালাগুন্ডাকে চোখে পড়ে আবিদের । হুমহাম করে ট্রাকটি চলে গেলে চারপাশ আবারো ছায়াঘন হয়ে পড়ে। ততক্ষণে দৌড়োতে শুরু করেছে আবিদ। বালা গুন্ডা তাকে দেখতে পেয়েছে। তাকে দেখে তার মুখের  হিংস্র হাসিটি যেন আরো বিস্তৃত হয়েছে। 
দৌড়ানোর অভ্যাস নেই আবিদের। একটু দাঁড়িয়ে গিয়াসকে ফোন দেবে সেটিও পারছিল না। পেছন পেছন ছুটে আসছে বালাগুন্ডা। এভাবে বোকার মতো হোটেল থেকে বেরিয়ে আসা ঠিক হয়নি, ভাবে সে। হোটেলে ফেরার ছোট্ট পথটিও যেন এখন মনে হচ্ছে অনেক দূরে। জনশূন‌্য রাস্তায় পেছন থেকে বালা গুন্ডার থপথপ দৌড়ে আসবার শব্দ ভেসে আসছে। এসময় হাসনুহেনার সুগন্ধ আবারও নাকে এসে পৌঁছে আবিদের। আবিদ আচ্ছন্নের  মতো হাতের টর্চলাইটটিকেই এবার অস্ত্রের মত তাক করল। মোবাইলে কোনমতে গিয়াসের নাম্বারে রিং দেয়। তারপর টর্চলাইটটি ডান হাতে ধরে ঘুরে দাঁড়াল, ধীরে।  

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>