শ্রীলঙ্কা হামলার চক্রী হাশিমের বাবা ছিল ছিঁচকে চোর
আইএস-এর পতাকার সামনে মহম্মদ হাশিম মহম্মদ জাহরান। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
জঙ্গি হামলার ভয়াবহতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তার মধ্যেই ফের ব্যর্থতার অভিযোগ সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে। ইস্টারের সকালে হামলার মূল চক্রী হিসাবে ইতিমধ্যেই মহম্মদ হাশিম জাহরানের নাম উঠে এসেছে। আত্মঘাতী হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সে দেশের গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই জিহাদি কাজকর্মে যুক্ত ছিল হাশিম। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাশকতার হুমকিও দিয়েছে সে। এমনকি স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে আগে ভাগে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
এখনও পর্যন্ত হামলার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ছবি: ছবি এএফপি।
স্কুলে পড়ার সময় হাশিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় মহমম্দ ইউসুফ মহম্মদ তৌফিকের। পরে হাশিমের অনুচরেও পরিণত হন তিনি। তিনি জানান, নিজের পছন্দ মতো কোরানের উল্লেখিত নির্দেশের ভুল অর্থ উদ্ধৃত করা বদভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল হাশিমের। তার জেরেই তিনমাসের জন্য ধর্মোপদেশ দেওয়া থেকে তাকে নিষিদ্ধ করে মসজিদ কমিটি। তার পরই রাগে সেখান থেকে চলে যায় সে। নিজের অনুগামীদের নিয়ে দল তৈরি করে। তাদের নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে ধর্মীয় বক্তৃতা করত সে। নিজের মতো করে কোরান ব্যাখ্যা করে শোনাত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের। ২৩ বছর বয়সে ১৪ বছরের একটি কিশোরীকে হাশিম বিয়ে করে বলেও জানা গিয়েছে।
উদারপন্থী সুফি সাধকদের বিরুদ্ধেও একসময় হাশিম উঠে পড়ে লেগেছিল বলে জানিয়েছেন সুফি মসজিদগুলির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংগঠনের সচিব সাহলান খলিল রহমান। তিনি জানান, ২০০৪ সালে কট্টানকুড়ির একটি সুফি মসজিদে গ্রেনেড হামলা হয়। ২০০৬ সালে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু বাড়িতে। এমনকি তাদের এক নেতাকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয় প্রকাশ্য। সুফি সাধকদের ধর্মান্তকরণের উদ্দেশ্যে মৌলবাদী ওয়াহাবিরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে দাবি তাঁর। আর সেই সুযোগেই সুফি সাধকদের হেনস্থা করতে নেমে পড়ে হাশিম। সুফিদের প্রার্থনার সময় হলে সময় মাইক বাজিয়ে তাদের উদ্দেশে কটুক্তি করতে শুরু করে সে। এমনকি ২০১২ সালে নিজের আলাদা মসজিদও শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো বলেও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
হামলার পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে দেশের সর্বত্র। ছবি: এএফপি।
সোশ্যাল মিডিয়ারও অপব্যবহার করতে শুরু করে হাশিম। মুসলিম ছেলেমেয়েদর মগজধোলাই করতে অনলাইনে নানারকম ভিডিয়ো পোস্ট করতে শুরু করে সে। জিহাদের ডাক দেয়। হুমকি দেয় নাশকতারও। একট ভিডিয়োয় এমনও বলতে শোনা যায় তাকে যে, ‘‘এমন ঘটনা ঘটাব যে দেহাংশ খুঁজে বের করার সময়ও মিলবে না। আল্লাকে যারা অপমান করে তাদের নরকে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে ছাড়ব।’’
তার পরই গত ২১ এপ্রিল, ইস্টারের সকালে শ্রীলঙ্কায় তার নেতৃত্বে আটটি ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। তাতে নারী, পুরুষ এবং শিশু মিলিয়ে ২৫০ জন প্রাণ হারান। হামলাকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশে ফেরত, উচ্চ শিক্ষিত, অভিজাত পরিবারের সন্তান বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম তাদের নেতৃত্বে থাকা মহম্মদ হাশিম মহম্মদ জাহরান। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একগুঁয়ে কিশোর থেকে তার মধ্য তিরিশের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার যাত্রা কিন্তু দেশের মধ্যেই, প্রশাসনের নাকের ডগায়।
