| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ক্রিকেট খেলাধুলা

হ্যাটট্রিক শব্দটির জন্ম হলো কিভাবে । অনিরুদ্ধ রহমান

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

শেফিল্ডের হাইড পার্কে অল-ইংল্যান্ড একাদশের হয়ে ১৮৫৮ সালে এইচ এইচ স্টিফেনসন একটা কাণ্ডই করে ফেললেন। পর পর তিন বলে তিনি তুলে নিলেন প্রতিপক্ষের তিন তিনটি উইকেট। তখনও আঁতুরঘরে থাকা ক্রিকেটে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। পেশাজীবীদের অসাধারণ অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে কিছু একটা উপহার দেওয়ার তত্কালীন রীতি অনুযায়ী স্টিফেনসকে একটি টুপি বা হ্যাট উপহার দেয়া হলো। সেই উপহারের হ্যাটই শুরু করলো ক্রিকেটের নতুন এক অধ্যায়ের। সেই নতুন অধ্যায়ের নাম ‘হ্যাট’ এর ‘ট্রিক’ বা হ্যাটট্রিক

শব্দটির জন্ম ক্রিকেটে হলেও হ্যাটট্রিক এখন শুধু আর ক্রিকেটীয় সম্পত্তি নয়। ফুটবল, হকি, ওয়াটার পোলো, হ্যান্ডবলসহ আরও অনেক খেলায় বহুল ব্যবহূত হচ্ছে শব্দটি। ১৮৫৮ সালে জন্ম নেওয়া শব্দটির ছাপার স্বীকৃতি পাওয়া যায় এরও বিশ বছর পর ১৮৭৮ সালে। এর পর আর তার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

হ্যাটট্রিককে একজন বোলারের বিরল অর্জন হিসেবেই দেখা হয়। আর হবে না-ই বা কেন? ১৮৭৯ সালে আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিকের যাত্রা শুরু হলেও গত প্রায় দেড় শ বছরে এবং ২০০০-এর ওপরে টেস্ট খেলা হলেও এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের সংখ্যা মাত্র ৪০টি। আর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন হাজারের বেশি ম্যাচে হ্যাটট্রিক মাত্র ৩৪টি এবং নবীনতম ফরম্যাট টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তিন শতাধিক ম্যাচে এর সংখ্যা তিনটি। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের সংখ্যা মোট ৭৭।

অর্থাত্ সব ফরম্যাট এবং সব দল মিলিয়েও গড়ে একেকটি হ্যাটট্রিকের জন্য লেগে যায় প্রায় দুই বছর এবং ৭০টি ম্যাচ! টেস্ট এবং ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক মুত্তিয়া মুরালিধরনের আক্ষেপ বলতে ওই এক হ্যাটট্রিকই রয়ে গেছে। এ থেকেই বোঝা যায় একটা হ্যাটট্রিক একজন বোলারের কাছে কতটা আরাধ্যের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে হ্যাটট্রিক করে রুবেল হোসেন জায়গা করে নিলেন সাহাদাত হোসেন এবং আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা বাংলাদেশিদের ছোট্ট তালিকায়। টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেন অলক কাপালি এবং সোহাগ গাজী। টেস্টে ১২টি হ্যাটট্রিক নিয়ে ইংল্যান্ড, একদিনের ম্যাচে ৮টি নিয়ে পাকিস্তান এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২টি হ্যাটট্রিক নিয়ে নিউজিল্যান্ড দল হিসাব তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে।

টেস্ট ও ওয়ানডেতে দুটি করে মোট ৪টি হ্যাটট্রিক নিয়ে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম তালিকায় ব্যক্তিগতভাবে শীর্ষে আছেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনটি হ্যাটট্রিক নিয়ে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা কোনো একক ফরম্যাটে সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের মালিক। মালিঙ্গার এরই সঙ্গে আছে অনন্য এক রেকর্ড। টানা চার বলে চার উইকেট, আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচে এই কৃতিত্ব আর কারও নেই। চার বলে চার উইকেটকে ক্রিকেট পরিভাষায় ‘ফোর ইন ফোর’ বলা হলেও কোথাও কোথাও প্রধানত মিডিয়াতে একে ‘ডাবল হ্যাটট্রিক’ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। তবে দুই বলে দুই উইকেটের একটা কেতাবি নামও আছে—‘ব্রেস’।

সবচেয়ে বিচিত্র হ্যাটট্রিকটির মালিক মার্ভ হিউজ। ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হিউজ তাঁর হ্যাটট্রিকের প্রথম উইকেটটি পান ওভারের শেষ বলে। পরের ওভারের প্রথম বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দশম উইকেটটি তুলে নিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে হিউজ বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলেই তুলে নেন গর্ডন গ্রিনিজের উইকেট। দুটি ভিন্ন ইনিংস এবং তিন ওভারের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ করেন এক বিচিত্র হ্যাটট্রিক!

 

 

 

কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত