আজ ১৪ এপ্রিল। কবি নীলাদ্রি দেবের জন্মদিন। তার চারটি কবিতা রইল পাঠকদের জন্য। ইরাবতী পরিবার কবি নীলাদ্রি দেবকে জানাচ্ছে জন্মদিনের অসংখ্য শুভেচ্ছা।
অন্ধকার, আলো বিষয়ক কবিতা
——————————————–
অন্ধকারের দিকে এগিয়ে গেলে
চোখ থিতু হয় কোনো না কোনো সময়
ঘিরে ধরে মায়াবী আলো
ওতে কুয়াশা নেই
দু এক টুকরো প্রত্যাশা ছাড়া
সূর্য ওঠে না, উঠতে পারে না
আর জোনাকি
সূর্যআলোয় স্নান করলেও
এলো চুলে খেলে বেড়ায় না… অনন্তে
*
নদী ও মুখোশ
——————-
নদীর মুখোমুখি হলে
সমস্ত মুখোশ গলে যায়
অজস্র মুখোশের ছায়া বুকে নিয়ে
নদী ক্রমশ শান্ত হতে থাকে
গতিপথ ভুলে
হয়তো কিছু বিষাদ চর হয়ে ওঠে
স্বচ্ছ হতে থাকা নদীর দুপাশে
জড়িয়ে যাই উদ্দেশ্যহীনতায়
হালকা হতে থাকে এলুয়া কাশিয়ার বন
অক্ষর অথবা পদ্মপুকুরের কবিতা
পদ্মপুকুরের নীচে একটা পদ্মপুকুর আছে
সাপ, ভ্রমর না
থিতিয়ে পড়া কাদা, সরু ডাল
ও না-দেখা কুয়াশার ভিড় ওখানে
সূর্যের আলোয় মুখ ভেসে ওঠে পদ্মের
এমনকি পোকারও
কিন্তু এসব আলো, অন্ধকারের পেছনে
কোনো না কোনো বর্ণপরিচয় থাকে
অক্ষর! অক্ষরের কাটাকুটিতে
আস্ত একটা সময় থিতিয়ে যাচ্ছে
নতুন ঠিকানা
31.08.2017
শরৎ এর রোদে মনকেমন করা একটা গন্ধ আছে. যার জন্য ছেলে, বুড়ো সবাই অপেক্ষা ঘড়িতে দম দেয়. শরৎ রোদের চিকন আলো নতুন ঠিকানার পুবের জানালা দিয়ে, ঘুলঘুলি দিয়ে আমাদের ঘরে এসে পড়ে. এ আলোই পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় বাইরের কলাগাছের ঝুঁকে আসা পাতায়. সেখানে লেগে থাকা ফোঁটাফোঁটা বৃষ্টির সাথে তখন গল্পে মেতে উঠেছে নতুন জামা গায়ে চাপানো রোদ.
মাঝে মাঝে হালকা হাওয়ায় দুলে ওঠে পর্দা. আমার হাফ পাঞ্জাবিতে হাওয়া ছুঁয়ে গেলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসি. এসে বসি তল্লীগাছটার নীচে. এ গাছকে অনেক শরৎ ছুঁয়ে গেছে. এর গায়ে জড়িয়ে আছে পরজীবি বেশ কিছু গাছ, খানিক লুকানো অবস্থায় চোখ খুলে আছে পিঁপড়েদের বাড়ি, শান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে ওদের শোভাযাত্রা. তল্লীপাতার ফাঁক দিয়ে কখনো ছেঁড়া ছেঁড়া আলো এসে উঠোনের ক্যানভাসে রংছবি আঁকে.কখনো মেঘ এসে ঢেকে দেয়. দু একবার চোখ চলে যায় আকাশের দিকে. এদিকে কদমা পাখিদের খুব আনাগোনা. এরা বকের চেয়ে বড়. ডানায় কালোরঙের পোচ.ঠোঁট আর পা বকের চেয়ে বেশখানিকটা বড়. ঠোঁটে করে ওরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে বেঁটে বেঁটে শুকনো কাঠ, অচেনা গাছের ডাল. হয়তো নদীর পার থেকে এগুলো তুলে এনেছে ওরা. শুকনো কাঠে পেঁচিয়ে আছে কাশফুলের আঁশ.
বেঁচে থাকা জীবনের বয়স বাড়ছে. আর ততই যেন গ্রাস করছে ছেলেবেলা. সত্যি বলতে, বাহ্যিকভাবে তখন আর এখনের মধ্যে মিল তেমন কিছুই নেই.যে কোনো সাদামাটা দিনে বেশকিছুটা সময় নিজের চারপাশটায় ডুবে গেলে বোঝা যায় প্রকৃতি কিন্তু এখনো আগের মতই শরৎ-এ মেতে ওঠে, স্বপ্ন এঁকে রঙ ছুড়ে দেয়. শুধু সময় আর কাজের অজুহাতে আমরা এগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারিনা. এক অজুহাতের মাথায় গুঁজে দিই অনেক অজুহাতের পালক. উদযাপন করতে ভুলে যাই অতীতের স্বপ্নমাখা বর্তমানকে.