| 20 এপ্রিল 2024
Categories
এই দিনে কবিতা গদ্য সাহিত্য

ভেসে থাকাই যে জীবন কালীদাঃ তুষ্টি ভট্টাচার্য

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

আজ ১৫ এপ্রিল। কবি,গদ্যকার তুষ্টি ভট্টাচার্যের শুভ জন্মতিথিইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় জন্মতিথির শুভেচ্ছা। পাঠকদের জন্য রইল তুষ্টি ভটভট্টাচার্যে চারটি কবিতা ও একটি গদ্য


দধীচির হাড়

দধীচি দেখে নি হাড়ের নাচ

খুলিতে করেনি সে বিষপান

দধীচি মরেছে হাড়ের গুঁতোয়
জানে নি কখনও হাড়ের নাম

টিবিয়া ফিবুলা ফিমার – ব্যাস
আগেভাগে ছোটে , দেখেনি ও
দধীচির ছিল চোখের রোগ

হাড়ে হাড়ে ঘষে আগুন লাগে
জেনেছে কে –
কোন মহাজন

 

 

ভেজা জামাকাপড়

 

ছাদের দড়িতে মেলা ভেজা জামাকাপড়ের সাথে
লুকোচুরি খেলছে রোদ আর মেঘবৃষ্টি

রোদ একা একাই ঘুরছে ফিরছে
মেঘবৃষ্টির জুটি এসময়ে প্রায়ই হারিয়ে দিচ্ছে ওকে

ভেজা জামাকাপড় ক্লিপে আঁটা পড়ে আছে
শুখনো হওয়ার অপেক্ষায়

মেঘ সাথী আছে , তবু বৃষ্টির কি অসুখ ? এত কাঁদছে !

রোদ লুকিয়ে পড়ছে ক্রমশ এক গলা জলে
ভেজা জামাকাপড় আরও চুপচুপে

জ্ঞানী বায়স 

কাক-স্কুলটি প্রাথমিক আর ছোটই
এখানে ছাত্রদের বিনিময় প্রথার মূলনীতি শেখান হয়
শিক্ষা শেষে একেকজন তার আধো অন্ধকার জীবন ছেড়ে বেরিয়ে আসে
যে কোন মিষ্টি জিনিসকে ঠেলে ফেলার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে
ধ্বসা রোগের হাত থেকে বাঁচতে শিখে যায় ওরা। 
পূর্বপুরুষের স্পর্ধিত দম্ভকে অস্বীকার করে
ওরা এবার আমার সামনের রাস্তায় নেমে আসে।
যতবারই ওদের সঙ্গে আমার দেখা হয়
আরও বেশি ভালবেসে ফেলি ওদের 

বক

যেখানে যেখানে বক উড়ে যায়
এক কানা ভাঙা শহরের সম্পদ নিয়ে গিয়ে বসে
প্রাকৃতিক ভাবে ওকে অপ্রকৃতিস্থ মনে হয়
এত আশ্চর্য আর অন্যরকম ও
ওর অদ্ভুত স্বভাবের জন্যই যেন নমনীয় আর সুন্দর হয়ে উঠেছে
একটি নাটকের দৃশ্যর মত
পায়চারী করতে করতে ও যেন যা খুশি করতে পারে
ডিমের ওপর বসে পড়তে পারে
নিজের পিঠে নিজের ঠোঁট গুঁজে দিতে পারে –
দর্শকরা ওর আত্মস্থ বিভঙ্গে মুগ্ধ না হয়ে পারে না
ওরা ভাবে এদের শারীরিক বৈশিষ্ঠ আরও কম সুন্দর হতে পারত
ঘাড়ের সহজ কমনীয়তা আরও কিছুটা কম হওয়া উচিত ছিল
ওদের বদ্ধমূল ধারণা –
নরম তুলোর মত ল্যাকপেকে ধূসর শরীরের এই প্রাণীরা
ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি পেয়েছে। 


পষ্ট কথা

দেখো বাপু, আমায় বেশি ঘাঁটিও না। আমার মুখে মিষ্টি কথা বেরোয় না। রাখঢাক, গুড়গুড় আমার পোষায় না। পষ্ট কথায় কষ্ট নেই আমার। না পারলে ‘না’ বলে দেবো। ‘না’ বলতে আমি ঘাবড়াই না। ‘না’ বলা একটা আর্ট, মানো চাই না মানো। আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে অনেক কিছু একসাথে রয়েছে, এই যেমন ধর, সত্যি মিথ্যে, ভালো মন্দ, দ্বিধা দ্বন্দ্ব, আলো কালো… এরকম কন্ট্রাডিকশন নিয়ে আমারা চলি তো, নাকি? একদম সিধে হয়ে, সোজা স্ট্রেটলাইনের মত কাউকে দেখেছ? দেখতে পাবে না। আর যদি পাও, জানবে সে ভাণ করছে। ভেতরে ভেতরে সে হয়ত গুঁড়িয়ে গেছে এদ্দিনে। আর আমিও কি নিজের পুরোটা প্রকাশ করতে পারি হাটের মাঝে? ধর, খুব ঝারি খেয়েছি, কেস খেয়েছি, আর যা যা খাওয়ার সব কিছুই খেয়েছি, হুহু করে কান্না পাচ্ছে, চোখে জলটল একদম রেডি, ব্যাকগ্রাউন্ডের বেহালা পর্যন্ত ছড় তুলে রেডি, তবু কিন্তু আমি কাঁদলাম না। ঢক করে জলটা গিলে নিলুম, তিতকুটে মুখটায় একটু হাসি হাসি ভাব আনবার চেষ্টা করে ফেল মারলুম, আর তোমাদের প্রশ্নের উত্তরে দাঁত দেখিয়ে বললুম, ‘ভালো আছি’। তা যে পষ্ট কথা বলব বলে এসেছিনু, সেটাই আগে শোনো কান খুলে। আমি বলব, আর কেউ শুনবে না, অন্যদিকে মন দিয়ে বসে থাকবে, এমন হতে পারে না। অন্তত আমি হতে দেবো না। আমার কথা তোমায় শুনতেই হবে। এরপর মানা, না মানা- তোমার ব্যাপার। 
তা দেখো, যে পষ্ট কথা বলতে এলাম, তা না বলেই অবান্তর বকে যাচ্ছি। এদিকে আমার বাজারে দুর্নাম- আমি নাকি বোবা, কথাই বলি না কারুর সঙ্গে! বোঝো অবস্থা! আরে বাবা, বোবাই যদি হতুম, তাহলে কী আর পষ্ট কথা বলতে আসতুম! চুপ করে থেকে গেলেই হত। তা আবার চুপ করলেই যে কথা বলা হয় না, তাও তো নয়। ওই যে বলে না, মুখ ফোটে না তো বুক ফোটে। মুখে কুলুপ লাগিয়ে বসে থাকলাম, আর আমার চোখ হাজার কথা বলে গেল, আমার মনে হাজার পাতা লেখা হয়ে গেল, এও তো সত্যি। তাহলে বোবার থিওরি মিলল না এখানে। এরপরও যদি কেউ বোবা বলে আমায় আমার কাঁচকলা। আমি তো একা একাই বকে বকে মাথা ধরিয়ে ফেললাম, মুখ ব্যথা হয়ে গেল। আর শ্রোতা, হ্যাঁ সেও আছে বই কি! আমি আগেই বলেছি, আমি বলব, আর কেউ শুনবে না, সেটি হচ্ছে না বাপ! ধর, যেখন যেখানে আমি বসে বকতে থাকলাম, সেই বসার জায়গাটি, সে চেয়ার হতে পারে, সোফা হতে পারে, কমোড হতে পারে, সেই আমার প্রথম শ্রোতা। কী!! ওরকম খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসো না দাঁত বের করে। খুব বিশ্রী দেখায় তোমার ওই হলুদ ছোপ লাগা দাঁতে। ঠিক বলদের মত দেখায়। হ্যাঁ, ওরাও শোনে। তুমি একটি অনুভূতিহীন মানব প্রজাতি, তাই বোঝো না। আর এরপরের শ্রোতা হল, আমার সামনে যে বা যারা আছে। যেমন ধর, টেবিল, বই, মনিটর, উল্টোদিকের চেয়ার, দেয়াল… এরা। এরা কিন্তু সত্যিই খুব সিরিয়াস শ্রোতা। একটুও ভুল বলার উপায় নেই। ঠিক হাতেনাতে ধরিয়ে দেবে ভুলগুলো। তবু কি রাগ হয় না? খুব হয়। মনে হয়, মেরে ফাটিয়ে দিই দেওয়ালটা। আছাড় মেরে ভেঙে দিই চেয়ার-টেবিল। আর সবচেয়ে বেশি রাগ ধরে এই মনিটরের ওপর। ব্যাটা হাড় শয়তান, অথচ মুখ দেখলে মনে হয়, ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না! যেন ঘাড় পেতে দিয়েছে, আমি যা লিখব, তাই সই! অথচ ইচ্ছে করলেই ওরা একটু মুখ খুলতে পারত, প্রতিবাদ-টাদ করতে পারত। আমিও একটু চার্জ হতুম।
দেখো দেখি, আবার ধান ভানতে শিবের গাজন গেয়ে ফেলছি। এবার বলেই ফেলি আমার পষ্ট কথাটা। তবে আগে এক গ্লাস জল দাও, বকে বকে গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেছে। আর হ্যাঁ অতিথিকে শুধু জল দেওয়ার অনাচার নিশ্চই তুমি করবে না। নিয়ে এসো যা হোক, প্রাণ জুড়োই। অনেক আশীর্বাদ পাবে। আশীর্বাদ মানে বোঝো তো? ধর, তুমি এক থালা মিষ্টি নিয়ে এলে, সঙ্গে ঠান্ডা জল বা শরবৎ নিয়ে এলে, আমার খিদে তেষ্টা মিটল, শান্তি এলো, আমি তখন তোমায় বললাম, খুব ভালো হোক তোমার, অক্ষয় আয়ু হোক, সুখে শান্তিতে জীবন কাটুক তোমার। তুমিও বেশ গদগদ হয়ে উঠলে, ভাবলে না জানি কী পূণ্যটাই না করলে! আদপে এসব হবে তো? এই যে তোমার ভাইয়ের সাথে লাঠালাঠি, কেসকাছারি, সব মিটে গিয়ে তোমরা দুভাইয়ে আবার গলা জড়িয়ে ঘুড়বে ভাবছ? সে গুড়ে বালি। আবার যদি ভাব, তোমার ছেলেটার ভালো চাকরি হবে, মেয়েটার জম্পেশ পাত্র মিলবে, ভাবতে থাক এমন সুখের ভাবনা। ভাবতে ভাবতে দেখবে হয়ত, তোমার ছেলেটা বেকার ঘুরতে ঘুরতে বুড়িয়ে যাচ্ছে, মেয়েটার শ্বশুরবাড়িতে নিত্য অশান্তি- আশীর্বাদটাদে কিছু হয় না রে ভাই। ওসব মুখের কথা। সাময়িক তৃপ্তি দিতে পারে তোমায়, এই যা। আর আমি? আশীর্বাদ করেই তৃপ্ত। যেন বিরাট একখান দানটান করে ফেলেছি! আসলে এসব ফোকটের লেকচার মেরে নিজেকে একটু উদার, মহৎ, এসব ভেবে নিয়ে খুশি হই আর কী! আমি যে কি চিজ, তুমি কী করে বুঝবে আর আমার মুখ দেখে বা কথা শুনে! তা বলি, জল নিয়ে এলে? 
হ্যাঁ, এইবার বেশ শান্তি পেলাম গো। দাঁড়াও, এবার একটু জিরিয়ে নিই। শরীরটা কেমন এলিয়ে যাচ্ছে। হাআআআআই…… আমি একটু গড়িয়ে নিই, বুঝলে? তুমি ততক্ষণ নিজেও একটু গড়িয়ে নাও। ও! তোমার তো আবার স্নানখাওয়া হয় নি। সেরে নাও, আমি নাহয় তারপরই বলব পষ্ট কথাটা। আমি হলুম গিয়ে ‘খেতে পেলে শুতে চাওয়া’ পাবলিক। কিছুটা নিশ্চই বুঝেছ আমায় এতক্ষণে। তোমার চানখাওয়ার খেয়াল না করেই নিজের পেটটি ভরালাম আগে। রাগ হলেও তুমি মুখে কিছু বলতে পারছ না আমায়। যতই হোক, অতিথি নারায়ণ কিনা! ধুর যাক গে যাক!! এদের বাড়ির এসিটা খুব ঠান্ডা হয় দেখছি, শীত শীত করছে যে! আর আমার বাড়ির এসিতে ঠান্ডাই হয় না ঘর। একেই বলে কপাল! যার সয়, তার সব সয়। এদের জলটাও বেশ ঠান্ডা, আর মিষ্টিগুলোও ঘ্যামা। এদের সব ভালো। মানুষগুলোও ভালো, তবে একটু অধৈর্য, এই যা। একটু যে বসে কারুর কথা শুনবে, তার বেলায় নেই। নেহাত আমার হাত থেকে ছাড়ান পেলো না, তাই শুনছে। নাওয়াখাওয়া সারা হলে আবার শুরু করব। শুনবে না মানে! শুনিয়েই ছাড়ব! 
হ্যাঁ, যা বলছিলাম, এইবার শোনো। ভাতঘুমটা নাহয় আজ তোলা থাক। এই ভাতঘুম দিয়ে দিয়ে কেমন মুটিয়েছো দেখেছ? আয়না দেখ তো রোজ? দেখবে, রোজ আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখবে। জানো তো, মানুষ নিজেকেই সব থেকে কম দেখে। আরে নিজেকে দেখাটা সবচেয়ে জরুরী। নিজেকে চেনাটাও তাই। তুমি কি লক্ষ্য করেছ, তোমার বাঁ ভুরুর ওপরের হাড়টা কেমন ঠেলে উঠছে আজকাল? দেখো নি তো! আমি জানতাম। দেখা মানে দায়সারা ভাবে দেখার কথা বলি নি কিন্তু। দেখতে হবে এক্সরের মত চোখ দিয়ে। এই যেমন আমি এও দেখছি, তুমি কেমন ঘাবড়ে গেছ উঁচু হাড়ের কথা শুনে। আরে কথায় কথায় এত ঘাবড়ালে চলে? যা হয়েছে, হতে দাও। মেনে নিতে শেখো, বুঝলে? যত বেশি মানবে, তত হজম ক্ষমতাও বাড়বে। প্রথম প্রথম এক টুকরো বালিপাথর খেয়ে দেখ, হজম হচ্ছে নাকি। যদি দেখো সাবড়ে দিয়েছো, তাহলে পেরেক থেকে হাতুড়ি পর্যন্ত ট্রাই করতে থাকো। দেখবে কেমন বেমালুম একে একে সব হজম করে ফেলছ! কিন্তু প্লাস পয়েন্ট হল, এক্ষেত্রে তুমি মোটাবে না। শুকিয়ে যেতে যেতে স্লিম থেকে জিরো ফিগারও হয়ে যেতে পার। তোমার ভলিউম পর্যন্ত কমতে থাকবে, আর কী চাও! কেমন ঘাবড়ে দিলুম! বেশ লাগে কিন্তু অন্যকে ঘাবড়াতে দেখলে। আমার হাড়ের ভেতরে যে ঠকঠকানি টের পাই সারাদিন, অন্যেরও যদি তাই হয়, আত্মপ্রসাদ লাভ হবে না? ‘দেখ ব্যাটা কেমন লাগে!’ 
হ্যাঁ, এবার মেন পয়েন্টে আসি। মানে সেই পষ্ট কথায় আর কি। এই দেখো কেমন বিকেলের মিঠে ছায়া ঘরের মধ্যে এসে গেছে। এখনই আলো জ্বেলো না। আধো ছায়া, আধো আলো, বেশ লাগছে। কী বল? না না, কোন কবিত্ব করব না, আসলে এই রকম আলোছায়ায় সবটুকু কি স্পষ্ট হয়? তেমনি আমার পষ্ট কথা সবসময়ে বলা যায় না, বোঝানো যায় না। আমি বুঝতে পারিনা, পষ্ট কথা তখন কোন দিকে চলে যাচ্ছে, তোমার দিকে না আমার! না হে হেঁয়ালি না, এরকমই মনে হয়। যাক, কিছুক্ষণ যাক নাহয়। সন্ধ্যে নামুক, শাঁখ বাজে এই বাড়িতে? তুলসিতলা নেই নিশ্চই। তা না থাক, আজকাল আর কোন বাড়িতে থাকে ওসব। শাঁখ বাজলেই কোথায় যেন একটা কম্পন টের পাওয়া যায়। পিঁপড়ের লাইনটা ভেঙে যায়, ছত্রভঙ্গ হতে দেখি ওদের। কোন দিকে যাবে ওরা ঠাওর করতে পারে না কয়েক মুহূর্ত। একেকটা শ্রমিক পিঁপড়ের একেকটা লাইন তৈরি হবে কি আবার? নাকি সবাই একসাথে জড় হবে ফের? এসব দেখতে দেখতে হাই উঠছে খুব। একটু চা হবে? চা-টা খেয়েই পষ্ট কথা নিয়ে পড়ব, কথা দিলাম।
বেশ ভালো চা খেলাম কিন্তু। লিফ আর সিটিসির ব্লেন্ডটা দারুন হয়েছে। যে করেছে তাকে তারিফ করতেই হচ্ছে। ফ্লেবারটা যেমন পাওয়া যাচ্ছে, আবার পাতলা ট্যালট্যালও করছে না। ফ্লেবার আর লিকারের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে এই চা। ঠিক যেমন আমার পষ্ট কথা আমার হয়েও আমার হল না। কীভাবে সেটাই বলব এবার। আগে পষ্ট কথাটা বলি তবে শোন। ‘আমি খুব ভালো, আমি যুধিষ্ঠির টাইপের সত্যবাদী, আমি কাউকে আঘাত করতে পারি না, আমার মধ্যে শুধু আলো আর আলো, দয়ার সাগর টাইপের করুণাসিন্ধু, ঈশ্বরের মত উদার(আদৌ ঈশ্বর কি উদার?) ও মহৎ, আমার গুনে নুন দেওয়ার যায়গা নেই, রূপেও আমি মালক্ষ্মী। আমার মত চিজ পৃথিবীতে মেলা ভার। আর তুমি বা তোমরা অত্যন্ত বাজে লোক, ঘুম ভেঙেই মিথ্যে বলতে শুরু কর, খুব নিষ্ঠুর আর প্রতিহিংসাপরায়ণ তোমরা। শয়তানের কারখানা আছে তোমার পেটে।‘ – তা এইবার বল দেখি, কেমন গা চিড়বিড় করছে আমার পষ্ট কথা শুনে! আমার নাকে চারটে ঘুষি নেমে আসতে পারে এখুনি, আমার সাড়ে একত্রিশ পাটি (আধখানা পোকায় খেয়েছে) এক্ষুনি মাটিতে খসে পড়তে পারে টপাটপ। খুব স্বাভাবিক রিঅ্যাকশন এটাই। আমি ভালো আর তুমি খারাপ, এটা কোন মানার কথা হল! আরে বাবা আমি যদি সত্যিই ভালো হতুম, তাহলে তোমায় খারাপ বলতে পারতুম?
দেখো বাপু, রাত হয়েছে, রাতের খাবার আমি এখানে খাবো না, নিশ্চিন্তে থাকো। আর কচকচিতেও যাবো না বিশেষ। আমি যে জায়গাতে আছি, সেটাই ক্লিয়ার করি আগে। ওই যে বললাম, আমি ভালো, সত্যিই কিন্তু আমি ভালো। মানো চাই না মানো। আর আগেই বলেছি, যুধিষ্ঠিরের মত সত্যি বলি, অতএব আমার একটি ইতি গজ আছে। আমার আলোতেও মেঘ করে, ঝড় ওঠে, বৃষ্টি হয়, অন্ধকার নামে। কিন্তু আবার আলো পড়লে, অন্ধকার ভুলে যাই, এই যা। উদার আমি ততক্ষণই, যতক্ষণ না আমার স্বার্থে বাজছে। মহত্বের ক্ষেত্রেও তাই। এবার আসি রূপ-গুনের কথায়। রূপ যা পেয়েছি, ঘষেমেজে বাড়িয়েছি তার কয়েকগুণ, আর গুন তো কষ্টার্জিত অনুশীলনের ফসল। এইবার নিশ্চই রাগ কমেছে তোমার। আমার পিঠ বাঁচানোর জন্য একথা বলছি না কিন্তু। এবার তোমার কথায় আসি। তুমি তো খারাপই। আমি আর তোমার ভালোটুকু দেখতে পেলাম কই! তোমার মিথ্যেগুলো কানে বাজে বলে মনে থেকে যায়, আর তার ফাঁকে বলা সত্যিগুলোকে ভুলে যাই বেমালুম। তোমার আবেগের প্রকাশ কম বলে তোমাকে নিষ্ঠুর ভাবি, তোমার গোপনে করা দানগুলোর খবর যখন অনেক পরে জানতে পারি, খুব লজ্জা পাই। তোমার মুখ টিপে থাকাকে ভাবি অহংকার, আর আমার মিউমিউকে বলি বিনয়। 
আসি গো বন্ধু, দরজা দিয়ে দাও এবার চাবিটাবি এঁটে। চোর ছ্যাঁচড়ের বড্ড উপদ্রব আজকাল। আমিও চলি আমার ডেরায়। ভোজং যত্রতত্র হলেও শয়নং নিজের কুটিরে না হলে ঘুম আসে না। নিজের বালিশটি আমার চাইই চাই। সত্যি বলতে কি, ওই ঘুমটুকু ছাড়া আমাদের নিজেদের কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। দুদিকের ঢেউ খেতে খেতে, একবার এপার থেকে ফিরে আসি, একবার ওপার থেকে, মাঝখানে ভেসে থাকাই যে জীবন কালীদা! 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত