আজ ২ জুলাই কবি হিন্দোল ভট্টাচার্যের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
কুয়াশাযাপন
১
আমি তাকে দেখতে পাই, সে আমায় শোনে কি জানি না
গুটিসুটি চা-দোকানে শেষ রাতের আগুন তার মুখ
কুকুরের ভয়াবহ কান্না শুনে সঙ্গমকালীন
চাঁদ উঁকিঝুঁকি মারে পড়শিদের জানলার ভিতর ।
সে খুব লজ্জার গায়ে গা মিলিয়ে থাকে সারারাত …
আমি তাকে দেখতে পাই, সে আমাকে দেখে কি ? জানি না ।
অসহায় নৈশ মুখে নাইটগার্ড হুইসিল বাজায়
২
বড় বেপরোয়া আছ, বুক চিরে আছ এ রাস্তার ।
কলকাতা বড় বেশি অন্ধকারে ঝিলমিল এখন, –
পা, না মাথাই টলছে ? মৃত্যুতে দুঃখ ভাসিও না
হাড়ের ভেতর থেকে শিরশিরে ব্যথার মত মা
আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে বলো, ভিজে সোয়েটারে
দাঁড়িয়ে রয়েছি আজ, পা রাখার জায়গা আছে বলে ।
ঘুরে যে দাঁড়াব, তার চোখে আশাবাদী ভালবাসা
শিকারী ভীষণ, তাকে দূরে ঠেলে রাখা ঠিক নয় !
কলকাতা বসন্ত হল, তার শীত, হেমন্ত হল সবে …
নিজস্ব প্রতিনিধি
জলের গভীর লিখি। লিখি এ জীবন দুঃখময়।
মনের ভিতরে শব্দ
রাত নটায় শাটার নামানোর;
প্যাডেল ঘোরায় রিক্সা, এ পাড়া, ও পাড়া।
তোমার চোখের মধ্যে দেখি মফস্বল পাড়া
বড় বেশি একলা হয়ে আছে।
রাতের গভীরে শুনি কারা কারা হেঁটে যায়
সেই সব পথে। তারা, কড়াও নাড়ে না।
তুমি শ্বাস নাও, শ্বাস ফেলো-
যেন একবুক
আশাবাদ নিয়ে তুমি ডুব-সাঁতারে পেরোচ্ছ শহর
আর পিছু পিছু আসছে
ধর্ম, দল, নির্বাচন, রাতের বাজার।
আমাদের মাঝখানে শুয়ে থাকে নির্বিকার খবর কাগজ।
প্রতিরক্ষা
একটি অসহায় বেশ্যা ঘরবদল করে প্রতি রাতে;
তাকে ভোগ করে রোজ কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী, কবি ও ভিক্ষুক।
তার মুখে জমে থাকে দুঃখ আর খিদে,-
আর দ্যাখো গলির মুখটায়
বেগুনি-সবুজ-নীল রঙ মাখা মুখ ঘাপটি মেরে
তোমায় রূপের দেশে নিয়ে যাবে বলে মৃদু দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ওকে চিনে রেখো; লোকে রাজনীতি ব’লে ডাকে
আসলে দালাল। খায় সকলের দেহ।
কখনও ঘরের মধ্যে ঢুকিও না, ঘর ভেঙে যাবে।
খুব খিদে পেলে খেও নিজেকেই, একটু একটু করে।
প্রেমের কবিতা
যে কাব্য আঁধার নয়, তাকে আমি সন্দেহের চোখে
সেই কবে বাতিল করেছি;
এত আলো কোথা থেকে পাও? বলে, রাতের মাতাল।
আমিও বুঝি না তাকে, দুজনেই অবিশ্বাস করি।
ত্রিফলা ল্যাম্পের নীচে রক্তহীন সাদা আলো পড়ে থাকে,-
বড় বেওয়ারিশ।
দেখি অন্নপূর্ণা তাঁর শেষ রাতের ভাত বেড়ে
খাওয়াচ্ছেন পাগল স্বামীকে।
কীভাবে দরদর করে ঘেমে যায় প্রেম, জানে তারা।
হায় রাত্রি এসো ঘুম পাড়াও লেখার মধ্যে
লিরিকাল হও।
জীবন খসখস করে পোকা কাটা পুরনো পাতায়।
এত রাতে তাকে আর বিরক্ত কোর না…
শ্রাবণভাষা
ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ, তোমাকে কীভাবে বলি
তোমার দিকেই আমি ক্রমশ শ্রাবণ!
শব্দে শব্দে মেঘ করে আসে…
ভিজে মাটির উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
একবুক শ্বাস
আমার প্রেমের মত ওঠে নামে, শান্ত সোঁদা মাটির ভাষায়
২.
আকাশে কান্নার মুখ ভার
নিচু মেঘ জানে না সে কীভাবে আষাঢ়
যেমন আমার মন
যেমন তোমার মন
ভীষণ একাকী…
আকাশে কান্নার মুখ ভার
৩.
যাব না কোথাও, এই শহরে মেঘের তাবু থেকে…
বলব না আমাকে নাও
আলো যত কমে আসে, আমারও বয়স ক্লান্ত হয়
এস তুমি আমাকে ভেজাও
অনেক মৃত্যুর গল্পে পুনরুজ্জীবনের কথা থাকে
শ্রাবণ, ভাসাও
বৃষ্টির ফোঁটা নিচে বুড়ো পাতা শেষ কয়েকদিন
যেমন ছটফট করতে থাকে
