| 25 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

ইতিহাস : অজানা কথায় বাঙালি খাদ্য । সাইফুর রহমান

আনুমানিক পঠনকাল: 14 মিনিট

প্রাচীন যুগের কবি কালিদাস বলেছেন ‘আশ্বাস : পিশাচো হপি ভোজনেন’। অর্থাৎ পিশাচকেও ভোজন দ্বারা বাগে আনা যায়। কথাটা হাস্যরসাত্মক হলেও বাস্তব সত্যের খুব কাছাকাছি। পরবর্তীকালেও বহু কবি এবং লেখক সুযোগ পেলেই সুখাদ্যের ব্যাখ্যায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছেন। গৃহিণী যদি সু-রাঁধুনী হন তাহলে কর্তার মান ভাঙাতে বেশি অনুনয় করতে হয় না। প্রাচীনকালে রন্ধন শৈলীকে চৌষট্টি কলার অন্যতম কলা বলে গণ্য করা হতো। বস্তুত রন্ধন শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ সুকুমার কলা বলে গণ্য করা হতো। আদিম মানুষ সব খাদ্য কাঁচা খেতে অভ্যস্ত ছিল। আমিষ নিরামিষ সবই কাঁচা খেত। যেই আগুন আবিষ্কৃত হল অমনি কাঁচা ছেড়ে ঝলসে খেতে শুরু করল। ক্রমশ মানুষের রুচি বদলাতে লাগল। কাঁচা খাওয়ার বদলে রেঁধে খাওয়ার রীতি শুরু হল এবং সেদিন থেকে রান্নার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হল এবং সব আবিষ্কারের মতো রান্নার নতুন নতুন পদ আবিষ্কার হতে থাকল। রন্ধনশিল্পীরা ক্রমশ খাদ্যের নানা রকম পদ সৃষ্টিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।

বৈদিক সংস্কৃতে ভোজন শব্দের দুটি অর্থ ছিল। সে সময় ভোজন অর্থে সুখানুভূতি এবং খাদ্য দুটোই বোঝান হতো। ভোজনে জৈবিক প্রয়োজন ছাড়াও যে একটা তৃপ্তি বা আনন্দের অনুভূতি আছে সেটা তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্যই বোধকরি সর্বস্তরের মানুষ কমবেশি সুখাদ্যের অনুরাগী। অনেকে আছেন যারা হয়তো ভোজনবিলাসী নন কিন্তু ভোজন রসিক, পরিমাণে খান অল্প কিন্তু যেটুকু খান সেটা হতে হয় স্বাদু ও পরিতৃপ্তিদায়ক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেমন্তবালা দেবীর মেয়ে বাসন্তীকে লিখেছেন- ‘আমাকে পেটুক বলে যদি কল্পনা কর তাহলে ভুল করবে। আমি যতটা খাই তার চেয়ে গুণ গাই বেশি।’ কবি নিজে নতুন নতুন রান্না আবিষ্কার করতেন। তিনি রান্নায় ব্যস্ত পত্নীর পাশে মোড়া নিয়ে বসে নতুন রান্নার ফরমাস করতেন, নানারকমভাবে রান্না করার নতুন পদ্ধতি শেখাতেন স্ত্রীকে। তবে একথা মানতেই হয় যে ভোজনবীরের সংখ্যাও আমাদের সমাজে নেহায়েত কম নয়। কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘মধ্যযুগের বাঙ্গালা’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘নবাবী আমলে বড়িশা-বেহালার সাবর্ণ চৌধুরী জমিদার রাজস্ব বাকির দায়ে বন্দিভূত হইয়া গোটা একটা খাসি রাঁধিয়া একাকী নিঃশেষ করায় বাকি খাজনা হইতে রেহাই পাইয়াছিলেন।’ রাজা রামমোহন রায়ও নাকি একা একটি আস্ত পাঁঠা খেতে পারতেন। রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিস্ময়কর উদাহরণ ইউরোপেও আছে। ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগোও নাকি এক বসায় একটি ষাঁড়ের অর্ধেক ভোজন করতে পারতেন।

প্রাচীন ইউরোপে বিশেষ করে রোমান ও গ্রিকদের আহার-বিহার ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানা যায়। ভোজনবিলাসী হিসেবে প্রাচীন রোমান ও গ্রিকদের খ্যাতি ইতিহাসের পাতায় পাতায়। তাদের প্রথম স্মরণীয় রান্নার বইয়ের লেখক অ্যাপিকিয়াস ছিলেন খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের শৌখিন খাদ্য রসিক। তিনি লিখেছেন খাওয়া-দাওয়ার ওপর চমৎকার একটি বই। মহাকবি হোমারের লেখায় পাওয়া যায় প্রতিটি ভোজের সযত্ন ও সবিস্তার বর্ণনা। এছাড়া প্রাচীন ইতিহাসবিদ হেরোডটাসও সেই সময়ের মানুষদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে লিখে গেছেন বিস্তর। অপরদিকে মহাভারতের দ্রৌপদিকে একবারের জন্যও রন্ধনশালায় দেখতে পাওয়া যায় না। রামায়ণে সীতা রামের সঙ্গে ১৪ বছর দণ্ডকারণ্যে বনবাসে কাটালেও একদিনের জন্যও সীতাকে রান্না করতে দেখা যায় না। সবসময় রামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষ্মণকেই খাবারের জোগাড়যন্ত্র করতে দেখা যায়। এজন্যই বোধহয় বুদ্ধদেব বসু তার ‘ভোজনশিল্পী বাঙালি’ গ্রন্থে আক্ষেপ করে লিখেছেন- ‘বনবাসী রাম-লক্ষ্মণকে আমরা মাঝে-মাঝেই দেখি মৃগয়া-হত রাশি-রাশি পশু নিয়ে বাড়ি ফিরতে- গোসাপ, বুনো শুয়োর, নানা জাতের হরিণ; পুঁথিতে এও পড়া যায় যে তিনজনেরই প্রিয় খাদ্য ছিল শল্যপক মাংস- যাকে আমরা আজকাল বলি শিক-কাবাব; কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যবশত আর কোনো তথ্য জোগানো হয়নি। মৃত পশুর ছাল-চামড়া কে ছাড়াতো, কে কাটতো টুকরো ক’রে, কে ধরাতো উনুন, শিকে বিঁধে আগুনে ঝলসাবার ভার থাকত কার ওপর, কোন ধরনের পানীয়ের সঙ্গে সেই ‘অগ্নিতপ্ত পবিত্র’ মাংস কণ্ঠনালি দিয়ে নামিয়ে দেয়া হ’তো, সঙ্গে থাকত কোন কোন ফল অথবা সবজি- এই সবই স্রেফ আমাদের কল্পনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

তারপরও বলতে হয় বৈদিক ও পৌরাণিক সময়ে বাংলার খাবার বা খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে গেলে সেই রামায়ণ, মহাভারত, ঋগবেদ ছাড়াও আমাদের দ্বারস্থ হতে হয় সেই সময়ে বিভিন্ন পুঁথি, পুরাণ ও সাহিত্য সম্ভারগুলোতে। যেমন- ১। কালিদাসের- শকুন্তলা, (কালিদাসের জন্ম খ্রিস্টীয় চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দীতে। কালিদাস সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সভাকবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তবে রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য নামেই বেশি পরিচিত)। ২। অজ্ঞাত লেখকের লেখা- প্রাকৃত পৈঙ্গল (প্রাকৃত পৈঙ্গল প্রাকৃত ছন্দের একটি গ্রন্থ আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি এটি রচিত হয়)। ৩। কবি শ্রীহর্ষের- নৈষধচরিত (আনুমানিক রচনাকাল খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক। শ্রীহর্ষ- কান্যকুজ্বের রাজা বিজয়চন্দ্র বা জয়চন্দ্রের সভাকবি ছিলেন এবং তিনি বাঙালি ছিলেন বলে অনুমান)। ৪। কবি ভবদেব ভট্টের- প্রায়শ্চিত্তপ্রকরণ, বহর্দ্বমপূরাণ (কবি ভবদেবভট্ট রাজা হরিবর্মনের মন্ত্রী ছিলেন। হরিবর্মনের রাজ্যকাল ১০৭৩ থেকে ১১১৯ খ্রিস্টাব্দ)। ৫। আবুল ফজলের- আইন-ই-আকবরি (আবুল ফজল সম্রাট আকবরের নবরত্নের এক রত্ন, তার সময়কাল, ১৫৫১-১৬০২)।

মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যগুলো থেকেও বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের বহু উপাদান পাওয়া যায়। বিশেষ করে মানিক দত্তের- চণ্ডীমঙ্গল (আনুমানিক রচনাকাল ১৪৫০-১৪৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লেখা)। খ্রিস্টীয় পনেরো শতকের শেষ দিকে লেখা বিজয়গুপ্তের- মনসামঙ্গল। কবিকঙ্কনা মুকুন্দের- চণ্ডীকাব্য (আনুমানিক রচনাকাল ১৬০০ খ্রি.)। নারায়ণ দেবের- পদ্মপুরাণ (আনুমানিক রচনাকাল ১৬০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ভারতবর্ষে বিশেষ করে বাংলায় যেসব বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন যেমন- হিউয়েন সাঙ, মানুচি, মানরিক, ইবনেবতুতা এদের লিখিত গ্রন্থ থেকেও বাংলা তথা ভারতবর্ষের খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য পাওয়া যায়।

সেই প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের মূল কাঠামোটি মোটামুটিভাবে ঠিক থাকলেও সময়ের ব্যবধানে ভারতবর্ষে তথা এ বঙ্গে নানা জাতিগোষ্ঠীর আগমন ও ঔপনিবেসিক আমলে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে প্রতিনিয়তই যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সব অনুষঙ্গ। প্রাচীনকালে বাঙালির খাওয়া-দাওয়া প্রসঙ্গে বিখ্যাত লেখক নীহাররঞ্জন রায় তার বাঙালির ইতিহাস বইটিতে লিখেছেন- ‘ইতিহাসের উষাকাল হইতেই ধান যে-দেশের প্রথম ও প্রধান উৎপন্ন বস্তু, সে-দেশে প্রধান খাদ্যই হইবে ভাত তাহাতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই। ভাত-ভক্ষণের এই অভ্যাস ও সংস্কার অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি-অস্ট্রেলীয় জনগোষ্ঠীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির দান। উচ্চকোটির লোক হইতে আরম্ভ করিয়া নিুতম কোটির লোক পর্যন্ত সকলেরই প্রধান ভোজ্যবস্তু ভাত। ভাত রাঁধার প্রক্রিয়ার তারতম্য তো ছিলই, কিন্তু তাহার কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নাই বলিলেই চলে। উচ্চকোটির বিবাহভোজে যে-অন্ন পরিবেশন করা হইত সে-অন্নের কিছু কবি শ্রীহর্ষের বিবরণ নৈষধচরিতে দময়ন্তীর বিবাহভোজের বর্ণনায় পাওয়া যায়। গরম ধূমায়িত ভাত ঘৃত সহযোগে ভক্ষণ করাটাই ছিল বোধ হয় সাধারণ রীতি। নৈষধচরিতের বর্ণনা বিস্তৃততর : পরিবেশিত অন্ন হইতে ধূম উঠিতেছে, তাহার প্রত্যেকটি কণা অভগ্ন, একটি হইতে আর একটি বিচ্ছিন্ন (ঝরঝরে ভাত), সে-অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু ও শুভ্রবর্ণ, সরু এবং সৌরভময়। দুগ্ধ ও অন্নপক্ক পায়েসও উচ্চকোটির লোকেদের এবং সামাজিক ভোজে অন্যতম প্রিয় ভক্ষ ছিল।

বাঙালির মাছ ও মাংস খাওয়া সম্পর্কে নীহাররঞ্জন লিখেছেন- ‘বারিবহুল, নদনদী-খালবিল বহুল, প্রশান্ত-সভ্যতাপ্রভাবিত এবং আদি-অস্ট্রেলীয়মূল বাঙলায় মৎস্য অন্যতম প্রধান খাদ্যবস্তু রূপে পরিগণিত হইবে, ইহা কিছু আশ্চর্য নয়। চীন, জাপান, ব্রহ্মদেশ, পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের আহার্য তালিকার দিকে তাকাইলেই বুঝা যায়, বাংলাদেশ এই হিসাবে কোন্ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সর্বত্রই এই তালিকায় ভাত ও মাছই প্রধান খাদ্যবস্তু। বাংলাদেশের এই মৎস্যপ্রীতি আর্যসভ্যতা ও সংস্কৃতি কোনোদিনই প্রীতির চক্ষে দেখিত না, আজও দেখে না : অবজ্ঞার দৃষ্টিটাই বরং সুস্পষ্ট। মাংসের প্রতিও বাঙালীর বিরাগ কোনোদিনই ছিল না।

মাংসের মধ্যে হরিণের মাংস খুবই প্রিয় ছিল, বিশেষভাবে শবর, পুলিন্দ প্রভৃতি শিকারজীবী লোকেদের মধ্যে এবং সমাজের অভিজাত স্তরে। ছাগ মাংসও বহুল প্রচলিত ছিল সমাজের সকল স্তরেই। কোনও কোনও প্রান্তে ও লোকস্তরে, বিশেষভাবে আদিবাসী কোমে বোধ হয় শুক্নো মাংস খাওয়াও প্রচলিত ছিল, কিন্তু কবি ভবদেব-ভট্ট কোনও অবস্থাতেই শুক্নো মাংস খাওয়া অনুমোদন করেন নাই, বরং নিষিদ্ধই বলিয়াছেন। কিন্তু মাছই হোক্ আর মাংসই হোক্, অথবা নিরামিষই হোক্, বাঙালির রান্নার প্রক্রিয়া যে ছিল জটিল এবং নানা উপাদানবহুল তাহা নৈষধচরিতের ভোজের বিবরণেই সুস্পষ্ট।

বাঙালির তরিতরকারি খাওয়া সম্পর্কে তিনি লিখেছেন- যে-সব উদ্ভিদ্ তরকারি আজও আমরা ব্যবহার করি, তাহার অধিকাংশই, যেমন- বেগুন, লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গে, কাঁকরুল, কচু (কন্দ) প্রভৃতি আদি-অস্ট্রেলীয় অস্ট্রিক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দান। এ-সব তরকারি বাঙালি সুপ্রাচীন কাল হইতেই ব্যবহার করিয়া আসিতেছে, ভাষাতত্ত্বের দিক হইতে এই অনুমান অনৈতিহাসিক নয়। পরবর্তী কালে, বিশেষভাবে মধ্যযুগে, পর্তুগীজদের চেষ্টায় এবং অন্যান্য নানাসূত্রে নানা তরকারি, যেমন- আলু, আমাদের খাদ্যের মধ্যে আসিয়া ঢুকিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু আদিপর্বে তাহাদের অস্তিত্ব ছিল না। নানাপ্রকারের শাক খাওয়ার অভ্যাসও বাঙালির সুপ্রাচীন।

নীহাররঞ্জন মশাই শুধু আলুর কথাই উল্লেখ করেছেন। আসলে খ্রিস্টীয় ১৫০০ শতকে পুর্তগীজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা ও বিশেষ করে পুর্তগীজ, ইংরেজ ও ফরাসিদের হাত ধরে বাঙালির হেঁসেলে ঢুকে পড়েছিল অনেক কিছুই। ভারতের জলপথ আবিষ্কারের সময় ভাস্কো দ্য গামা ভারতে নিয়ে এসেছিলেন বহু জিনিসপত্র। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাঁচামরিচ। এছাড়াও কামরাঙ্গা, আনারস ও আলু উল্লেখযোগ্য। তবে তিনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে এসেছিলেন ভারতবর্ষে; সেটা হল জার্মানির বিজ্ঞানী গোটেনবার্গ কর্তৃক সদ্য আবিষ্কৃত ছাপাখানা মেশিন। যা পরবর্তীকালে আমাদের সাহিত্য মুদ্রণে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, কাঁচামরিচ, আলু, আনারস, কামরাঙ্গা প্রভৃতি জিনিসগুলো আদৌ ইউরোপিয়ান ছিল না। ভাস্কো দ্য গামার ছ’বছর পূর্বে ভারতে যাওয়ার জলপথ আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন খ্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে) তিনি ভুল করে ভারতের পরিবর্তে আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা। তো সেই আমেরিকা থেকেই তিনি নিয়ে এসেছিলেন আলু, মরিচ, তামাক প্রভৃতি জিনিসগুলো। আর সেই জিনিসগুলোই আবার ভাস্কো দ্য গামার হাত ধরে চলে আসে ভারতে। তবে পুর্তগীজরা আমাদের আরও দুটি জিনিস খাওয়া শিখিয়েছিলেন। সে দুটো জিনিস অবশ্য আমাদের দেশেই জন্মাতো। কিন্তু তারপরও সেগুলো আমাদের হেঁসেলে আদরনীয় হয়ে ওঠেনি। প্রথমটি হল- ডাল আর দ্বিতীয়টি হল- সর্ষে। হরেক রকম ও বৈচিত্র্যময় ডাল আমাদের মাটিতে জন্মালেও আমাদের ডাল খাওয়ার অভ্যেস ছিল না। ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙালীর ইতিহাস’ গ্রন্থটিতে পুরো একটি পরিচ্ছেদই লিখেছেন- ‘প্রাচীন বাঙালী কি ডাল খাইত না’ শিরোনামে। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রাচীনকালে উচ্চকোটির লোকজন তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করত। যার নজির আমরা দেখি ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ কাব্যে। সেখানে অজ্ঞাতনামা এক কবির উদ্ধত সেই সুন্দর শ্লোকটি, যার মধ্যে সাধারণ বাঙালির এক সুষম খাদ্যের উল্লেখ করা হয়েছে- ‘ওগ্রভত্তা রম্ভঅপত্তা, গাইকঘিত্তা দুদ্ধসঙ্গুত্তা/মোইণিমচ্ছা ণালিচগচ্ছা, দিজ্জই কন্তা খা পুণবন্তা ॥’ অর্থাৎ কলার পাতায় ফেনসহ গরম ভাত, কিছু গাওয়া ঘি, গরম দুধ, ময়না মাছ, নালিতা শাক (পাটশাক) স্ত্রী পরিবেশন করছে, পুণ্যবান খাচ্ছে। অন্যদিকে নিুবর্গের লোকজন তিল থেকে যে তেল হয় সেটা ব্যবহার করত রান্নার কাজে। তৈল শব্দের উৎপত্তিও সেই তিল শব্দ থেকেই। পরবর্তীকালে পুর্তগীজরা আমাদের সর্ষের তেল খাওয়াও শিখিয়েছিলেন। শুধু যে পুর্তগীজ, ইংরেজ আর ফরাসিরাই ইউরোপ থেকে আমাদের জন্য নানা অনুষঙ্গ এদেশে নিয়ে এসেছিলেন এটা আমার বিশ্বাস হয় না। আমার যতদূর পড়াশোনা তা থেকে আমার বদ্ধমূল ধারণা, চিনা ব্যবসায়ীরা ১১০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দে জলপথে চিন থেকে লিচু, চিচিংগা ও সুমাত্রা থেকে বাতাবিলেবু (জাম্বুরা)সহ সম্ভবত এ ধরনের আরও বহু জিনসিপত্র এই বঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। কারণ মরক্কোর পর্যটক ইবনেবতুতা ভারতবর্ষে কাটিয়েছিলেন ২৯ বছর (১৩২৫-১৩৫৪ সাল পর্যন্ত) তিনি যখন সিলেটে হযরত শাহজালালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন তখন তিনি নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁ নৌবন্দরে অনেক বড় বড় চিনা জাহাজ নোঙর করে থাকতে দেখেছিলেন। তার মানে হল ইউরোপিয়ানরা ভারতের জলপথ আবিষ্কারের অনেক পূর্ব থেকেই জলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। পরবর্তীকালে এ ধরনেরই একটি জাহাজে চড়ে ইবনেবতুতা সুমাত্রা হয়ে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। লিচু ও চিচিংগা নাম দুটো দেখলেই কিন্তু বোঝা যায় যে এগুলো চীন থেকে এসেছে। যেমন লাইচি শব্দ থেকে বাংলায় লিচু আর চীনা ভাষায় চিচিংগা শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বহুবর্ণের সাপ’। চিচিংগা সবজিটির দিকে তাকালেই কিন্তু শব্দটির যথার্থতা ধরা পড়ে। ধনী আর গরিবের খাদ্যাভ্যাসের সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় পর্যটক হিউয়েন সাঙ আর মানরিকের লেখা থেকে। সম্ভ্রান্ত ধনীগৃহে সেকালে ভোজ্যদ্রব্যের এত প্রাচুর্য ছিল যে, সেগুলো খেতে বহু সময় লাগত। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে হিউয়েন সাঙ বলেছেন, বাংলাদেশে ভোজের সময় প্রচুর আয়োজন হতো। গৌড়ের এমনই এক মুসলমান বাড়িতে পর্যটক মানরিক নিমন্ত্রিত হয়ে এত ভোজ্যদ্রব্যের প্রাচুর্য লক্ষ্য করেছিলেন যে, সেগুলো খেতে তার তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কিন্তু মানরিক এটাও লক্ষ্য করেছিলেন যে, গরিব লোকেরা ভাত, লবণ, শাক ও অল্প কিছু তরকারির ঝোল খেত। কখনও কখনও দই ও সস্তা মিষ্টি। আমানি (পান্তা ভাতের জল) গরিবদের প্রধান খাদ্য ছিল।

ভোজনরসিক বলে বাঙালির সুখ্যাতি থাকলেও চট করে কোন বিদেশি অনুষঙ্গ নিজ রসুইঘরে ঢোকাবে এতোটা উদার বাঙালি কোন কালেই ছিল না। আর সেজন্যই পুর্তগীজ, ইংরেজ, ফরাসি কিংবা দিনেমাররা ইউরোপ থেকে বহুকিছু নিয়ে এলেও সেগুলোকে নিজের করে নিতে বেশ সময় লেগেছিল বাঙালির। বিশিষ্ট লেখক ও ইতিহাসবিদ শ্রীপান্ত জানাচ্ছেন- ফুলকপির চাষ ভারতে শুরু হয় ১৮৫০ সালে। বাঁধাকপি তার কিছুটা আগে। টমেটো অবশ্য ভারতে আসে আরও কিছুকাল পরে, ১৮৮০ সালে। কিন্তু কলম্বাসের আবিষ্কার সেই গোলআলু ভারতে আসে ১৭৮০ সালে। ১৮৩০ সালের দিকে দেরাদুন পাহাড়ের ঢালে আলুর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। কিন্তু কলকাতার বাজারে গোলআলু বিক্রি হতে শুরু করে তার অনেক আগে থেকেই। তবে বাঙালি সমস্ত সবজির মধ্যে আলুর মাহাত্মটাই বোধকরি সর্বাগ্রে ধরতে পেরেছিল। অন্য বিদেশি সবজিগুলো বাঙালির হেঁসেলে ঢুকতে তারপরও বেশ কিছুদিন সময় নেয়। সে বিষয়ে আমরা জানতে পারি বিখ্যাত লেখক প্রবোধকুমার সান্যালের আত্মজীবনী- ‘বনস্পতির বৈঠক’ গ্রন্থটি থেকে। ১৯২০ সালে বাঙালির ভোজ্যপণ্যের একটি চিত্র এঁকেছেন তার বইয়ে। বইটির প্রথমখণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ‘শীতের দিনে হাঁটা সুবিধে। নির্জন নিরিবিলি গ্রামের পথ, বন-বাগান ক্ষেতখামার ছাড়িয়ে চলেছে সে। মাঝে মাঝে খড়ের গাড়ি, তার পিছু পিছু যাচ্ছে গাড়ি গাড়ি ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন আর মুলো। টমেটোর নাম ছিল বিলেতি বেগুন, তার সঙ্গে বীট, গাজর, সয়াবিন, লেটুস- এসব কোনটাই কেউ তখন খেত না! বাজারেও তাই ওসব আসত না। ওসব গাড়ি যেত ইংরেজদের হগসাহেবের বাজারে।’

টমেটো আর মরিচ নিয়ে দু’চার কথা না বললেই নয়। টমেটো আবিষ্কার হয়েছিল আমেরিকার মেক্সিকোতে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা ও অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষদের সঙ্গে টমেটোর সম্পর্ক খ্রিস্টের জন্মেরও ৫০০ বছর আগ থেকে। হার্নেন কোর্তেজ নামে স্পেনদেশীয় এক সৈন্যদলের সর্দার একদল সৈন্য নিয়ে ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার অ্যাজটেক সাম্রাজ্য আক্রমণ করে তার পতন ঘটিয়েছিলেন। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে স্পেনে টমেটো নিয়ে আসার কৃতিত্ব এ কোর্তেজেরই। মন্তেজুমা নগর লুট করার সময় সেখানকার এক বাগানে সে টমেটো আবিষ্কার করেছিল।

ইউরোপে প্রথমদিকে টমেটো খাওয়া একেবারে বারণ ছিল। বাগানে গাছ লাগানো হতো বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। সেই জমানায় সুন্দর দেখতে গাছের প্রতি ইউরোপবাসীদের এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেলাদোনা আর ম্যানড্রেক গাছের কথা। এই দুই গাছ নিয়ে উপকথাগুলো ছিল সাংঘাতিক। বিশ্বাস ছিল, এসব গাছ বিষাক্ত, আর ডাইনিরা তা বশীকরণের জন্য ব্যবহার করে। ওই সৌন্দর্যের জন্যই মানুষ টমেটোকেও ভয় পেত। বলত, নেকড়ে-মানুষ টমেটো খেতে ভালোবাসে। তার ওপরে টকটকে রং। ভাবত, টমেটোর সঙ্গে নিশ্চয়ই রক্তক্ষয়ের সম্পর্ক আছে। প্রাচীনকাল থেকে রেনেসাঁর পূর্ব পর্যন্ত ইউরোপের মানুষ ভীষণ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। মাথা ব্যথার যন্ত্রণা কমাতে শেয়ালের অণ্ডকোষ কপালে বাঁধত, মৃগীরোগ সারাতে গাধার কলিজা কাঁচা চিবিয়ে খেত। তবে মধ্যবিত্তের রান্নাঘরে আর খাবার টেবিলে টমেটো জায়গা পায় বিশ্ব ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে।

ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের কোণে কোণে তখন বুর্জোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে লড়াই চলছে। রিপাবলিকের প্রতি আনুগত্য দেখাতে মানুষ লাল টুপি পরছে। বুর্জোয়াদের মুন্ডু কাটার পণ করেছে এ রিপাবলিকানরা। প্রাণ বাজি রেখে বিপ্লবের পতাকা নিয়ে দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছে তারা। কত সময়ই খাওয়া জোটে না তাদের। সেই সময় এক রিপাবলিক-সমর্থক বাবুর্চি তাদের পরামর্শ দেন, প্রচুর টমেটো খাও। তাতে বুর্জোয়াদের বদরক্ত ধ্বংস হবে, বিপ্লবের প্রতি শ্রদ্ধাও দেখান যাবে। আসলে এ বাবুর্চি টমেটোর গুণাগুণ নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। আর জানতেন, খাবারের স্বর্গরাজ্য ফ্রান্স একবার টমেটোকে ঘরে তুললে তার জন্য বাকি ইউরোপের হেঁসেলের দরজা খুলে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এরপর ধীরে ধীরে টমেটো সব পৃথিবী জয় করে নিল।

আর কাঁচামরিচ সম্পর্কে বলতে হয়- মরিচের এ ভারতবিজয়ের পুরো কৃতিত্ব দাবি করতে পারে কিন্তু শুধু পর্তুগীজরাই। কারণ ওদের হাত ধরেই তো মরিচ এদেশে পৌঁছেছিল। পর্তুগীজরা শুধু এ দেশের লোককে মরিচের স্বাদ চাখিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি। পর্তুগীজ যাজকরা ১৫৪২-এ জাপানে আসেন। সঙ্গে আসে মরিচ। তারপর কোরিয়া পর্যন্ত পৌঁছে যান তারা। বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী পর্তুগীজরা আঁচ করেছিল যে, আগামীদিনে লঙ্কা গোলমরিচকে কোণঠাসা করে দেবে। সারা বিশ্বের রান্নাঘর কুক্ষিগত করবে। অন্যরা জেগে ওঠার আগে যতটা সম্ভব ব্যবসা করে নিয়েছিল তারা। কারণ তারা জানত, মরিচ ফলানো খুব সহজ, তাই একবার জানাজানি হয়ে গেলে মরিচের ব্যবসা আর কিছুতেই নিজেদের হাতে আটকে রাখা যাবে না।

এই বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর সময় মরিচের গতিপথটা বড়ই ভারত-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। তাতেই ইউরোপের লোকে ভুলতে শুরু করে যে মরিচের আদি দেশ মধ্য আমেরিকা। আর ওদের মনে বরং এই ধারণা মজবুত হয়- ভারতবর্ষই লঙ্কার মাতৃভূমি। ওদিকে, ইউরোপের কিছু অংশে, যেমন হাঙ্গেরিতে, লঙ্কা বা পাপরিকা গিয়েছিল তুর্কিদের মারফত। রুমানিয়া হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশগুলোতেও মরিচ বা পাপরিকা একসময় ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যার ছিটেফোঁটা নজির আমরা দেখতে পাই আইরিশ লেখক ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত ক্লাসিক উপন্যাস- ‘ড্রাকুলা’তে (১৮৯৭)। বইটা দু’বার পড়েছি। এক-কৈশোরে, দ্বিতীয়বার-যৌবনে। একজন উপন্যাসিক কী অসাধারণভাবে গল্প বলে সেটা জানতে হলে নতুন লেখকদের অবশ্যই উপন্যাসটি পড়া উচিত। তো সেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ড্রাকুলা যখন ডিমিটার নামক একটি রাশিয়ান জাহাজে চড়ে ইংল্যান্ডে যাচ্ছিলেন, সেই জাহাজের প্রধান বাবুর্চির নাম ছিল- ভিক্টর। তার এক তরুণ সহযোগী পিয়োতর ছদ্মনামে ভিক্টরের ফাইফরমাস খাটত। তো ভিক্টর পিয়োতর কে যে খাবারই খাওয়াতো না কেন সে খেয়েই বলে উঠতো- এটাতে একটু পেপেরিকা দিলে স্বাদ ভালো হতো। এমনকি মদ কিংবা ধূমপানের সময়ও বলতো এর সঙ্গে একটু মরিচ হলে ভালো হতো না। সে যাক, অন্যদিকে তুরস্কে, লঙ্কা পৌঁছেছিল ভারতবর্ষ থেকে আরব বণিকদের হাত ঘুরে সেই পারস্য দেশ হয়ে। পর্তুগীজদের এই ব্যবসাবুদ্ধি দারুণ সফল হয়। কারণ ভারতবর্ষ ছিল সত্যিই সোনার দেশ। সেখানে গোলমরিচ আর লঙ্কা দুই-ই পাওয়া যেত। ইউরোপের যেসব দেশে মরিচের প্রচলন তখনও হয়নি, তাদের গোলমরিচ জোগান দিত তারা। আর বাকি দেশগুলোতে পাঠাত মরিচ।

ভারতের গোয়া প্রদেশ থেকে উত্তর ভারত, মধ্য ভারত এরপর বঙ্গদেশে লঙ্কা আসতে যে কত দেরি করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজল লিখিত বই আইন-ই-আকবরি থেকে।

ষোলো শতকের শেষ দিকে উত্তর ভারতে বসে লেখা ‘আইন-ই-আকবরি’-তে চল্লিশটা পদের রান্নার বিবরণ দেয়া আছে। কিন্তু তার কোনোটাতেই মরিচের নামগন্ধ নেই। সব পদেই গোলমরিচের ব্যবহারের কথা লেখা। অন্য দিকে, দক্ষিণ ভারতের প্রবাদপ্রতিম চারণকবি পুরন্দরদাস (১৪৮৪-১৫৬৪) লঙ্কার ভালোবাসায় গান পর্যন্ত লিখেছেন। ‘তোমায় আমি প্রথম দেখি সবুজ- অভিজ্ঞতা তোমায় রাঙা করেছে হে সুন্দরী! তুমি সুস্বাদু কিন্তু পরিমিতি মাপা। হে গরিবদের মসিহা, তোমায় পেলে বিট্ঠল ভগবানকেও ভুলতে বসি।’

অনেক অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মনে এটা আসতেই পারে যে, মাছ, মাংস ও বহুরকম ব্যঞ্জনে বাঙালি কি ধরনের মসলা ব্যবহার করত। এ প্রসঙ্গে বলা যায় নিুকোটির লোকজন তাদের রান্নার কাজে সাধারণ মসলারই ব্যবহার করতেন। প্রাচীনকালে মরিচ তো ভারতবর্ষে ছিলই না। সে কথা আগেই বলেছি। এই বঙ্গে ১৬০০ সাল নাগাদ তরকারিতে মরিচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতে মরিচ আসার আগে ঝালের জন্য গোলমরিচ ও আদা ব্যবহৃত হতো। অন্যান্য মসলা যেমন ধনে, জিরা এগুলো তো ছিলই আরও ব্যবহৃত হতো হলুদ। তবে হলুদের ব্যবহার আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় প্রথম শুরু হয় তারপর ধীরে ধীরে ব্যঞ্জনে হলুদ ব্যবহৃত হতে থাকে। গরিব মানুষ সাধারণ মসলা ব্যবহার করলেও উচ্চকোটির মানুষ কিন্তু তাদের রান্নায় ব্যবহার করতেন শতেক রকম মসলা। আবুল ফজল লিখেছেন- প্রথমত, ঘিয়ের মাত্রাহীন ব্যবহার। ঘি আসত নাকি হিসার থেকে। প্রতিদিন মন মন ঘি খরচ হয়েছে আকবরের রন্ধনশালায়। দ্বিতীয়ত, মসলার ব্যবহার। এমন কোনোও মসলার নাম খুঁজে পাওয়া শক্ত যা মুঘল রন্ধনশালায় ব্যবহার করা হয়নি। উচ্চশ্রেণির নানা ধরনের চাল আসত নিকট দূরের নানা এলাকা থেকে। মাংস ও ফল ফলারিও তা-ই। ফলের জন্য কাশ্মীর, আফগানিস্তানেও হানা দিতে কসুর করতেন না, রন্ধনশালার অধ্যক্ষরা। তাদের প্রধানকে বলা হতো- মির বাকওয়াল (Mir Bakwal)। পাচকরা ছিল নানা দেশের ওস্তাদ। তাদের প্রধানকে বলা হতো ‘মির বাবুর্চি’। তিনি মান্য ব্যক্তি। তাকে সম্বোধন করা হতো ‘হাকিম হুনান’ (Hakim Hunnan) বলে। পাঠক জেনে অবাক হবেন যে প্রাচীনকাল থেকেই সনাতন ধর্মের মানুষদের কাছে পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। হিন্দুরা মনে করত পেঁয়াজ ও রসুন ম্লেচ্ছদের খাবার। পেঁয়াজ, রসুনের পরিবর্তে ব্যবহৃত হতো হিং। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে রচিত রামায়ণে আমরা দেখি হিং দিয়ে আগুনে ঝলসে খাওয়া হচ্ছে সবরকম মাংস। আবার এর ঠিক দুই হাজার বছর পরে অর্থাৎ ১৬০০ সালে বিজয়গুপ্তের লেখা মনসামঙ্গলে কবি লিখেছেন- রন্ধন রান্ধিয়া সোনাই করিল ভাগ ভাগ/হিঙ্গ মরিচে রাঁধিলে শ্বেত সরিষার শাগ।

লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য আমাদের জানাচ্ছেন যে হিংয়ের আদিবাড়ি হল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালার পাদদেশে। আজও সেরা হিং সেখানেই পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের এই হিং-ই একসময় বিশ্ব জয় করেছিল। কিন্তু কী করে!

আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী ভারতে আসার পথে ওদের সঙ্গে আনা সিলফিয়াম প্রায় শেষ। সিলফিয়ামের কথা বিশদভাবে জানা যায় খ্রিস্টীয় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় শতকে জন্ম নেয়া বিখ্যাত গ্রিক চিকিৎসক সোরানাস ইফিসাসের লিখিত গ্রন্থ থেকে। প্রাচীন গ্রিসে বহু কাজে ব্যবহৃত হতো এ সিলফিয়াম। সিলফিয়াম নাকি ছিল সেসময় জন্মনিয়ন্ত্রণের অব্যর্থ ওষুধ। এছাড়াও আরও বহু কারণে ব্যবহৃত হতো এ সিলফিয়াম। অনেকটা চিনা জিনসেংর মতো। ধীরে ধীরে এ খবর পৌঁছাল রোমানদের কাছে। তারাও ইচ্ছা মতো খাওয়া শুরু করল সিলফিয়াম। হিং প্রথম ইউরোপীয় মঞ্চে ঢুকেছিল এ সিলফিয়ামের প্রক্সি দিতে। সিলফিয়াম মৌরির মতো দেখতে এক মসলা। রান্না থেকে চিকিৎসা, সব কিছুতেই কাজে লাগত। মাছ-মাংস খাওয়া হতো সিল্ফিয়াম মাখিয়ে, আবার হজমের ওষুধ বা অন্য অসুখেও ব্যবহার চলত। সিলফিয়াম চাষ হতো শুধু আফ্রিকার ও গ্রিসের কিছু অঞ্চলে। জন্মাত অল্প। খ্রিস্টের জন্মের আগে অনেক শতক ধরেই গ্রিকরা ভেবেচিন্তে এর ব্যবহার করত। কিন্তু আমোদপ্রিয় রোমানদের হাতে পড়ে সিফিয়াম ফুরোল। লাগাম-ছাড়া ব্যবহারের ফলে একদিন তা বিলুপ্ত হয়ে গেল। গল্পে আছে যে শেষ সিল্ফিয়ামটুকু নাকি খেয়েছিলেন সম্রাট নিরো এবং সেটা কোনো দরকার ছাড়াই।

সিল্ফিয়াম না মাখিয়ে মাংস খাওয়া সেসময় ছিল প্রায় আত্মহত্যার শামিল। কারণ মাংসের বোঁটকা গন্ধে যদি বমি করেও প্রাণ বেঁচে যায়, হজমের গোলমালে আর পেটের অসুখে প্রাণ যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। ভারতের একেবারে কাছে এসে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে। সেনারা যখন দেশে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছে, ঠিক তখনই তারা লক্ষ্য করল যে সেখানকার মানুষ মাংসে হিং মেখে ঝলসে খায়। আর হিং জন্মেও হিন্দুকুশের পাদদেশে। এ সৈন্যরাই ফেরার সময় দেশবাসীর জন্য হিং নিয়ে গিয়েছিল। এভাবে মহাবীর ও পরাক্রমশালী আলেকজান্ডার ও তার সৈন্য বাহিনীর হাত ধরে হিং ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বে।

বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে কোনো তরকারিতে ঝোল খাওয়া। কলকাতার এ সময়ের জনপ্রিয় লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী আমাকে একবার একটি রেস্তোরাঁতে নিয়ে গিয়েছিলেন নাম ‘ঝালে ঝোলে অম্বলে’। মনে আছে বেশ খেয়েছিলাম সেদিন। যা হোক, অনেকে হয়তো বলে উঠবেন- এ আবার কি কথা! তরকারি হবে অথচ ঝোল হবে না, এ কি হয়! জি জনাব সত্যি বলছি। প্রাচীনকালে কোন ব্যঞ্জনেই ঝোল খাওয়া হতো না। রামায়ণ, মহাভারতে শতরকম মাছ, মাংস হিং দিয়ে যে ঝলসে খাওয়া হতো সে কথা তো আগেই বলেছি। এছাড়া মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতার লেখাতেও ঝোল খাওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। তিনি লিখেছেন- মুসলিম ধনাঢ্যদের ভাত ও রুটি ছাড়াও পরিবেশিত হতো রোস্টেড বা ঝলসানো মাংস, মুরগির মাংস। রুটির মধ্যে ‘সামসুক’ নামেও একটি রুটির উল্লেখ করেছেন তিনি। সেটি গোলাকার, কিন্তু ভেতরে থাকত সুমিষ্ট প্রলেহ। একবার মহম্মদ বিন তুঘলক এক বড় খানার আয়োজন করেন একজন মান্য কাজির সম্মানে। খাদ্য ছিল রুটি, মস্ত মস্ত খণ্ড করে ঝলসানো ভেড়ার মাংস, ঘিয়ে চোবানো গোলাকার পিঠে, বাদাম এবং মধু। মাংসে নাকি তিল তেলের মিশ্রণ ব্যবহার করা হতো এবং পরিবেশন করা হতো চিনামাটির পাত্রে। তারপর ‘হাসমি’ এবং ‘আল কুহিরিয়া’ নামে পুডিং। শরবত দিয়ে আরম্ভ ও পান সুপারি দিয়ে সমাপ্তি।

ঝোল খাওয়ার প্রথম নজির মেলে চৈতন্য চরিতামৃত, ধর্মমঙ্গল ও মনসামঙ্গল কাব্যে। কবি নারায়ণদেব লিখেছেন- ভাজিয়া তুলিল কথ চিথলের কোল/মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল। ধারণা করা হয় ১৫০০ সাল নাগাদ বাঙালি তরকারিতে ঝোল খাওয়া শুরু করে।

ঝোল সম্পর্কে বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন- পূর্ববাংলার গোয়ালন্দ, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরে জাহাজের খলাসীরা যে মুরগির ঝোল রান্না করে সে রকম ঝোল ভু-ভারতে আর কেউ রাঁধতে পারে না। সেজন্যই বোধকরি স্বামী বিবেকানন্দ বাংলাদেশের ঝোলের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। কোনো এক সূর্য গ্রহণের দিনে স্বামীজী তার এক শিষ্য বলরাম বসুর বাড়িতে শিষ্যের হাতে সেবা গ্রহণে উৎসাহী হয়েছেন। স্বামীজী পূর্ববঙ্গজ শিষ্যের হাতে পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে রান্না খেতে চাইলেন। যোগীন মা রান্নার কাজে সাহায্য করছিলেন। স্বামীজী মাঝে মাঝে রান্না ঘরে এসে রান্নার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন। কখনও বলছিলেন, ‘দেখিস মাছের ‘জুল’ যেন ঠিক বাংলাদেশি ধরনের হয়।’ ভাত, মুগ ডাল, কই মাছের ঝোল, মাছের টক ও মাছের সুক্তুনি রান্না হতে না হতেই স্বামীজী খেতে বসে গেলেন। তিনি মাছের সুক্তুনি খেয়ে খুশি হলেন, মাছের ‘জুল’-কে ঝাল বললেন। মাছের টক খেয়ে বলেন, ‘এটা ঠিক বর্দ্ধমানী ধরনের হয়েছে।’ দই, সন্দেশ দিয়ে তিনি আহার শেষ করলেন। আহার শেষে তামাক টানতে টানতে বল্লেন, ‘যে ভাল রাঁধতে পারে না, সে ভাল সাধু হ’তে পারে না-মন শুদ্ধ না হ’লে ভাল সুস্বাদু রান্না হয় না।’

আমি আগেই বলেছি বাঙালি ভোজনরসিক হলেও বিদেশি অনুপান সহজে নিজের রসুইঘরে ঢুকতে দেবে সে জাতি বাঙালি নয়। বেশিরভাগ বাঙালিই প্রথাগত খাদ্যের বাইরে সহজে যেতে চায় না। এজন্য দেখা যায় বাঙালি যখনই ভিন্ন কোন দেশে ভ্রমণে যায় কোন মতে বাক্সপেট্রাগুলো হোটেলে রেখে প্রথমে দৌড়ায় শপিংয়ে। শপিং শেষে খোঁজে বাঙালি রেস্তোরাঁ। কব্জি ডুবিয়ে ডাল-ভাত খাবে। গুটি কয়েক বাঙালিকেই পাওয়া যায় যারা নতুন দেশের হরেকরকম খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে উদগ্রিব থাকে। আমি নিজে সর্বভূক। সাপ-ব্যাঙ বাদে হালাল জিনিস সবই খাই। আমার দু’বন্ধু আছে- রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মীর হেলাল ও খ্যাতনামা আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান একত্রে সবাই আমাদের ‘মানিক ত্রয়ী’ বলে সম্বোধন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের তিনজনেরই একসঙ্গে বিদেশে যাওয়া হয়। আমরা সামুক, ঝিনুক, স্কুইড (খুদে অক্টোপাসের মতো দেখতে হলেও অক্টোপাস নয়) গোগ্রাসে খাই এবং এগুলো সবসময়ই আমাদের অতি প্রিয় খাবার। বন্ধু হেলালকে এই তো বছর পাঁচেক আগেও দেখেছি এক বসায় মাঝারি সাইজের পাঁচপ্লেট ওয়েস্টার ও পাঁচপ্লেট স্কুইড একসঙ্গে খেয়ে উঠত।

বিশিষ্ট লেখক ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী বাদুড়ের মাংস খেতে খুব ভালোবাসতেন। তার ‘দেশে দেশে মোর ডিশ আছে’ প্রবন্ধে লিখেছেন- বাদুড়ের মাংস খাওয়া চলে কিনা এ নিয়ে একবার প্রচুর বিতর্ক হল। প্রচলিত বিশ্বাস, বাদুড় মাথা নিচে করে গাছে ঝোলে। তাহলে নিশ্চয়ই মুখ দিয়ে মলত্যাগ করে। এই রকম নোংরা জীবের মাংস খাবার প্রশ্ন ওঠে না। দা দিয়ে মৃত বাদুড়ের দেহ ব্যবচ্ছেদ করে দেখা গেল এটা একেবারেই ভুল ধারণা। বরং বলা চলে বাদুড়ের মতো মাংস হয় না, কারণ এত পরিষ্কার খাদ্যাভ্যাস অনেক পাখিরই নেই। যেমন মুরগি তো ময়লা ঠুকরে খেয়ে বেড়ায়। বাদুড় গাছপাকা ফলটি ছাড়া কিছুই খায় না। এরপর বাড়িতে চলল শিকার করে বাদুড় খাবার ধুম।

কৃতিকান্ত লাহিড়ী মশাইয়ের বাদুড়ের মাংস খাওয়া শুনে যেসব পাঠক চোখ বড় বড় করছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি- ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে দৈনিক কালেরকণ্ঠে একটি খবর বেশ ফলাও করে ছাপা হয়েছিল- বাদুড়ের মাংস খাচ্ছে যশোরের বাদুড় গ্রামের মানুষরা! খবরে জানা যায় যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিডাঙ্গা গ্রামের একটি প্রাচীন বটগাছের আশপাশে শিকারিরা ফাদ পেতে বাদুড় শিকার করে সমস্ত বাদুড় খেয়ে উজাড় করে দিয়েছে।

পৃথিবীজুড়েই মানুষের উদ্ভট, নিকৃষ্ট ও রুচিহীন খাদ্য খেতে দেখা যায় এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। দু’জন লেখকের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে- ‘ওল্ডম্যান এন্ড দ্য সি’ এর লেখক নোবেল বিজয়ী অর্নেষ্ট হেমিংওয়ে ছোটবেলায় কাঠবিড়ালি শিকার করে খেতেন বলে পরিণিত বয়সেও সে অভ্যেস ত্যাগ করতে পারেনি। অন্যদিকে আরেক নোবেল জয়ী লেখক ভ্লাদিমির নভোকভ নাকি প্রজাপতি খেতে পছন্দ করতেন। হরোপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সময় মানুষ কুমিরের মাংস খেত। সিন্ধু সভ্যতার অনেক পরে রামায়ণের যুগে ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়দের ক্ষেত্রে কুমিরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রামায়ণে দেখা যায় সজারু, গোসাপ, গন্ডার প্রভৃতি পশু খাওয়ার প্রচলন সেসময় ছিল। সে সময় বাঘ, সিংহ এমনকি হাতির মাংসও খাওয়া হতো। এ তথ্য পাওয়া যায় ভ্রমণপিপাসু গ্রিক দার্শনিক আপোলেনিউসের ভারত-ভ্রমণের বিবরণে। সেই বিবরণে আছে আরেক ভ্রমণপিপাসু গ্রিক দার্শনিক ডামিসের দেয়া তক্ষশীলা রাজপ্রাসাদের ভোজসভার বিবরণ। সেখানে শুধু বাঘের পেছনের অংশই (tiger loins) নয়, ছিল সেখানে সিংহ, ছাগল আর স্ত্রী শূকরের মাংস। তাছাড়াও ছিল মাছ ও পাখির মাংস। কেননা খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের প্রথমার্ধে প্রাচীন ভারতে বাঘের পেছনের অংশের (tigerloin) সুস্বাদু রান্না করা হতো। তারা ময়ূরের মাংস কি খেত? সুশ্রুত বলেছেন- ময়ূরের মাংস মেধাবর্ধক। চণ্ডাশোক, ধর্মাশোক হওয়ার পর রাজবাড়ির জন্য একটি মাত্র ময়ূর হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিলেন।

কৃতজ্ঞতা: যুগান্তর 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত