| 20 এপ্রিল 2024
Categories
ইতিহাস

ভারতবর্ষে সেতু নির্মাণের ইতিহাস । সুদীপ্ত পাল

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

সুলতানি যুগের সূচনার ফলে ভারতের বাস্তুশিল্পে অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয়। ভারতে বড় আকারের সেতু নির্মাণ শুরু হয়। তার আগে ম্যাসনরি ব্রিজের উদাহরণ ভারতে খুব বেশি টিকে নেই। ম্যাসনরি ব্রিজ মানে ইট, পাথর দিয়ে গাঁথুনি দিয়ে তৈরি সেতু। একেবারে টিকে নেই তা নয়, একটা রয়েছে – আর সেখান থেকে অনুমান করা যায় এরকম সেতু একাধিক ছিল, কিন্তু হিন্দু শিল্পে সেতু নির্মাণ যেহেতু প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ (true arch) ব্যবহার করে হত না তাই তাদের স্থায়িত্ব প্রকৃত খিলানের সেতুর তুলনায় কম হত – তাই খুব বেশি টিকে নেই। ভারতবর্ষে সুলতানি যুগের আগে ট্রু আর্চের প্রযুক্তি ছিল না। প্রাচীন ও আদিমধ্য যুগের হিন্দু মন্দিরে যে আর্চ জাতীয় তোরণ বা প্রবেশদ্বার আমরা দেখি সেগুলো প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ নয়। সেগুলো কর্বেল আর্চ (corbel arch)। কর্বেল আর্চের ইটগুলো আনুভূমিক হয়, ট্রু আর্চের ইটগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে সাজানো – এমনভাবে যাতে ইটগুলি থেকে সরলরেখা টানলে তারা একটি বিন্দুতে এসে মিলিত হয়।

কর্বেল আর্চের প্রযুক্তি দিয়ে বড় আকারের তোরণ বা সেতু বানানো কঠিন, বা বানালেও টেকা কঠিন। ভারবহনের ক্ষমতা, কম অবলম্বনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে বড় ফাঁকওয়ালা তোরণ বানাবার ক্ষমতা – ট্রু আর্চ বা প্রকৃত খিলানেই বেশি; তাই প্রকৃত খিলানের আবিষ্কারের পরেই রোমান সাম্রাজ্যে ব্রিজ তৈরির চল বড় আকারে শুরু হয়েছিল। যাই হোক, আমি শুরু করব কর্বেল আর্চ এবং প্রাক-সুলতানি যুগ দিয়েই। আর দেখব এক সেতুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া একটি প্রেমকাহিনীও।

আদিমধ্য যুগ-

১) অঠরনলা বা আঠারোনালা সেতু (উড়িষ্যার পুরীর কাছে মুসা নদীর উপর): মূল সেতুটি ত্রয়োদশ শতকে গঙ্গরাজা ভানুদেবের বা দ্বিতীয় নরসিংহদেবের তৈরি। পরে আরও সংস্কার হয়েছে। দ্বাদশ শতকে নির্মিত বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরে ভক্তদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এটি তৈরি হয়। লোকশ্রুতি আছে এই সেতুর উপর দিয়েই শ্রীচৈতন্য পুরীতে প্রবেশ করেন। ২৮০ ফুট লম্বা, ৩৬ ফুট চওড়া এই সেতু ল্যাটেরাইটের ইট দিয়ে তৈরি। এটি কর্বেল আর্চ ব্যবহার করে তৈরি। এটি সুলতানি যুগের সমসাময়িক হলেও এটিকে আদিমধ্য যুগে রাখছি, কারণ প্রযুক্তিগতভাবে এটি কর্বেল আর্চের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি, নির্মাণকারী রাজারাও হিন্দু, এবং দিল্লি সুলতানাত তখনও উড়িষ্যায় পৌঁছয়নি। পরে মারাঠাদের সময় আরও সংস্কার হয়, এবং আরও পরে মোটরগাড়ি চলার রাস্তাও এর উপরে তৈরি হয়। এখন ভারী যান চলাচল নিষেধ। ১৮টি কর্বেল আর্চের তলা দিয়ে মুসা নদী আঠেরো ভাগ হয়ে গেছে অর্থাৎ ১৮টি নালা তৈরি হয়েছে- তাই এর নাম অঠরনলা বা আঠারোনালা।

অঠরনলা বা আঠারোনালা সেতু (উড়িষ্যা)

এছাড়া লোকশ্রুতি আছে রাজা জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণের বাধা দূর করতে আঠেরো পুত্রের বলি দিয়েছিলেন – তাই এই নাম। আবার গীতার আঠেরো অধ্যায়ের জন্যও বৈষ্ণবদের কাছে আঠেরোর গুরুত্ব আছে- এরকমও বলা হয়। ব্রিজের কিছু কিছু থামে – মকরপ্রণাল এবং উদ্যোতসিংহ জাতীয় হিন্দু মন্দিরের আইকোনোগ্রাফি আছে – তবে এগুলো অন্য জায়গা থেকে, সম্ভবত কোনও মন্দির থেকে জোগাড় করে এনে বসানো বলে মনে হয়।

সেতুটি অষ্টাদশ শতকে মারাঠাদের তৈরি, নাকি ত্রয়োদশ শতকে গঙ্গদের তৈরি সেটা নিয়ে নানা সংশয় আছে। তবে উড়িষ্যার লোকশ্রুতিতে এই সেতুর অস্তিত্ব জগন্নাথ মন্দিরের মতই প্রাচীন। আর তাছাড়া কর্বেল আর্চের প্রযুক্তি দেখে আন্দাজ করা যায়- মারাঠারা পুরনো সেতুরই পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার করেছিল; কারণ মারাঠা আমলে তৈরি হয়ে থাকলে ট্রু আর্চ ব্যবহার হত। এর কারণ ততদিনে শুধু মুসলিম বাস্তুশিল্প নয়, য়ুরোপীয় বাস্তুশিল্পও ভারতে এসে গেছে।

ভারবহন ক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব ট্রু আর্চের থেকে কম হওয়ায় এই ধরনের সেতু আজ বিশেষ টিকে নেই, তবে অঠরনলা টিকে থাকার কারণ হতে পারে সপ্তদশ শতকে মারাঠাদের হাতে সংস্কার এবং জগন্নাথ মন্দিরের উপস্থিতির জন্য ধারাবাহিক রক্ষণাবেক্ষণ।

উড়িষ্যার জাজপুরে একই নামের আরেকটি সেতু – একইরকম দেখতে, একই প্রযুক্তির – পাওয়া যায়। জাজপুরের এই সেতুটি তেঁতুলিমালা ব্রিজ নামেও পরিচিত।

অঠরনলা বা আঠারোনালা সেতু (উড়িষ্যা)- উদ্যত সিংহ আইকোনোগ্রাফি

সুলতানি যুগ-

২) খিজর খাঁ নির্মিত গম্ভীরি নদীর পুল, চিতোর: এবার এল প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ। এই ব্যাপারে সবচেয়ে পুরনো উল্লেখনীয় উদাহরণ হল এইটি। আলাউদ্দিন খিলজির পুত্র খিজর খাঁ চিতোর দখলের পর ১৩০৩ নাগাদ সেতুটি বানান। বেশ বড় ব্রিজ, দশখানি ট্রু আর্চ ব্যবহার করে তৈরি। দশ মিটার চওড়া, ১৩০ মিটার লম্বা। ৭০০ বছর আগে আক্ষরিক অর্থেই গাড়ি-ঘোড়া চলত এর উপর দিয়ে, এখন মোটরগাড়ি চলে। বেশ শক্তপোক্ত ব্রিজ বোঝাই যাচ্ছে। তবে এই সেতুর ইট-পাথর আশেপাশের অনেক স্থাপত্যের ধ্বংসস্তূপ থেকে বা তাদের ধ্বংস করে সংগ্রহ করা হয়েছে- পাথরের উপর বিভিন্ন ফুল-পাতা ইত্যাদি দেখা যায়। থামের জলের নিচের অংশে তেজ সিংহ আর সমর সিংহের ত্রয়োদশ শতকের শিলালেখ আছে। সেগুলিও একইভাবে সংগ্রহ করা নেহাত পাথর হিসাবে।

অঠরনলা আর এই ব্রিজটির খিলানগুলো ছবিতে ভালো করে দেখলে কর্বেল আর্চ আর ট্রু আর্চেরফারাক বুঝতে পারবেন। প্রথমটার ইটগুলো আনুভূমিক। দ্বিতীয়টার ইটগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে সাজানো- এমনভাবে যাতে ইটগুলি থেকে সরলরেখা টানলে তারা একটি বিন্দুতে এসে মিলিত হয়। অভিকর্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি দু’ক্ষেত্রে দুরকম।

খিজরখাঁ নির্মিত গম্ভীরি নদীর পুল, চিতোর

৩) ওয়জিরাবাদ ব্রিজ: এটি চতুর্দশ শতকের শেষার্ধে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে তৈরি। দিল্লির ওয়জিরাবাদে অবস্থিত। নয়টি প্রকৃত খিলান ব্যবহার করে তৈরি শক্তপোক্ত এই সেতুর নিচ দিয়ে যমুনার একটি বড়সড় শাখা যেত, কিন্তু সেটি নালায় পরিণত হয়েছে। এখনও এর উপর দিয়ে মোটরগাড়ি যায়।

৪) বুক্কর অ্যাকুইডাক্ট: এটি অবশ্য ব্রিজ নয়; এটি অ্যাকুইডাক্ট বা জল পরিবহনের সেতু। চতুর্দশ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা বুক্করায়ের তৈরি। এটি কর্ণাটকের হাম্পিতে অবস্থিত। হাম্পিতে এরকম বেশ কিছু অ্যাকুইডাক্ট এখনও টিকে আছে, যদিও জল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয় না; তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এটি। এটি কিন্তু খিলান ব্যবহার করে নয়, হিন্দু পদ্ধতি অর্থাৎ পোস্ট এ্যান্ডলিন্টেল ও কর্বেল আর্চ ব্যবহার করে তৈরি।

বুক্কর অ্যাকুইডাক্ট

এবার মুঘল যুগ-

৫) আকবরের শাহী পুল (জৌনপুর, গোমতী নদী): তৈরির সময়কাল সন ১৫৬৭; এখনও মোটরগাড়ি যায়। চওড়া নদীর উপর তৈরি দশ খিলানের এই সেতু দৃশ্যগতভাবেও সুন্দর।

আকবরের শাহী পুল- জৌনপুর

৬) আটপুলা (লোদি গার্ডেন, দিল্লি): আকবরের আমলে তৈরি। ছোট্ট নালার উপর সাতটি খিলান- অর্থাৎ আটটি থাম বা পোল নিয়ে তৈরি বলে ঐ নাম।

৭) কুতুবশাহী সুলতানদের “পুরানাপুল” (হায়দরাবাদ- মুসি নদীর উপরে ব্রিজ): তৈরির সময়কাল সন ১৫৭৮। এটি ৬০০ ফুট লম্বা, ৩৫ ফুট চওড়া, ৫৪ ফুট উচ্চতা। বাইশটি খিলান নিয়ে তৈরি। আগে গাড়ি যেত, এখন পদাতিকদের জন্য খোলা।

বেশ চিত্তাকর্ষক কাহিনী আছে এই পুল নিয়ে। গোলকোণ্ডার রাজপুত্র মহম্মদ কুলি কুতুব শা,  যিনি উর্দু, দখনি ও তেলুগু ভাষায় পারদর্শী বড়মাপের এক কবিও ছিলেন, তাঁর প্রেমকাহিনী জুড়ে আছে এই পুলের সাথে। তিনি বয়সে বড় এক হিন্দু বেশ্যার প্রেমে পড়েছিলেন- তার নাম ভাগমতী। ভাগমতীর গ্রাম মুসি নদীর ওপারে, তাই মাঝেমাঝেই তিনি পারি দিতেন নদীর ওপারে। তাই ছেলের সুবিধার জন্য তাঁর বাবা সুলতান ইব্রাহিম বানিয়ে দিলেন এই পুল। তাই এই পুলের নাম পেয়ারানাপুল বা ভালবাসার সেতু; আর সেই নামই পরে হয়ে গেল পুরানাপুল। পুলের পাশে নূতন শহরও গড়ে উঠল। সমসাময়িক ইতিহাসকার ফিরিশতা ও আকবরের দক্ষিণস্থিত প্রতিনিধি আবুল ফৈজি- এরা দুজনেই এই প্রেমকাহিনী নথিভুক্ত করেছেন। ফিরিশতা বলেছেন ভাগমতীর নামে নূতন শহরের নামকরণ করা হয় ভাগনগর। বিয়ের পরে ভাগমতী ইসলাম গ্রহণ করে নাম নেন হায়দর মহল, তাই শহরের নূতন নাম হল হায়দরাবাদ। মনে রাখতে হবে কুতুবশাহী বংশের রাজধানী ছিল গোলকোণ্ডা যেটি হায়দরাবাদ থেকে সামান্য দূরে। হায়দরাবাদ গোলকোণ্ডার পরে ষোড়শ শতকের শেষে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

যাই হোক, ফিরিশতার বর্ণনা অনুযায়ী ভাগনগরের নূতন নাম হল হায়দরাবাদ। এছাড়া ভাগ্যনগর নামটিরও মৌখিক ব্যবহার ছিল। এখনকার হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল তাই হায়দরাবাদের নাম দিতে চায় ভাগ্যনগর – এক কাল্পনিক ভাগ্যলক্ষ্মী দেবীকে টেনে এনে- এটা তাদের নির্বাচনী এজেন্ডাও ছিল! তবে ফিরিশতার কাহিনীকে অনেকে অস্বীকার করে। অনেকের দাবী শহরে অনেক বাগান ছিল বলে শহরের আর এক নাম বাগনগর ছিল। দক্ষিণ ভারতের উচ্চারণে অল্পপ্রাণ আর মহাপ্রাণ বর্ণের পার্থক্য সামান্যই – তাই ব আর ভ-এর পার্থক্য কম।

এই প্রেমকাহিনী সত্যি হতেই পারে। তবে এই প্রেমের সাথে পুল নির্মাণের সম্পর্ক ছিল কি না, সেই নিয়ে সংশয় আছে। কারণ পুল নির্মাণ যখন শুরু হয় তখন মহম্মদ কুলি কুতুব শাহের বয়স মাত্র দশ বছর। আর দশ বছর বয়সে প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা কতটা সত্যি জানা নেই। তবে মানুষ লোকশ্রুতিতে অনেক সুন্দর স্থাপত্যকেই কোনও না কোনও প্রেমকাহিনীর সাথে জুড়ে দিতে ভালবাসে।

কুতুবশাহী সুলতানদের “পুরানাপুল”- হায়দরাবাদ

৮) জাহাঙ্গিরের আমলে (সপ্তদশ শতক) অনেকগুলি পুল তৈরি হয়। ফতেগড় সাহেবের নিকটবর্তী ব্রিজ, গ্রান্ড ট্রাংক রোড, পাঞ্জাবের খ্বাজা সরাই ব্রিজ, ফরিদাবাদের বুধিয়াওয়ালা নালার উপরে, হরিয়ানা-মধ্যপ্রদেশের মোরেনার নিকটবর্তী নূরাবাদ ব্রিজ (নূরাবাদ শহরটি নূরজাহানের নামে) ও দিল্লির বারাপুলা ব্রিজ।

এবার চলুন কাশ্মীর-

৯) উট কদল ব্রিজ- (সপ্তদশ শতকে কাশ্মীরের শ্রীনগরে ডাল লেকের উপর মুঘল আমলের নির্মিত): এই ব্রিজটি অনেকটাই ভেঙে গেছে, তাই একটা অদ্ভুত অপার্থিব দৃশ্যকল্প, যেটা পাহাড়, জঙ্গল আর হ্রদের জন্য আরওই গা ছমছমে দেখায়। উটের কুঁজের মত দেখতে, তাই ঐ নাম।

উট কদল ব্রিজ- কাশ্মীরের শ্রীনগরে

এবার চলুন আসাম, দেখব বাঙালিদের কাজও-

১০) দরিকাশিলসাকো (দরিকাশিলা নির্মিত সাঁকো বা স্টোনব্রিজ): শিবসাগর জেলায় আহোমরাজা প্রতাপসিংহের আমলে ১৬০৩ থেকে ১৬৪১এর মধ্যে তৈরি, ১০৯ ফুট লম্বা, ১৮ ফুট উঁচু, ১৩ ফুট চওড়া এই ব্রিজটি। dressed stone block-এর থামের উপর ইটের তৈরি আর্চ, আর চুন-সুড়কির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি এটি। সেতুর উপরিভাগ সামান্য অর্ধবৃত্তাকার। এখন আর গাড়ি যায় না, এর আশেপাশে অন্যদুটি নূতন ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলে। শিল মানে শিলা, সাকো মানে সাঁকো।

১১) নামদাংশিলরসাকো (আপার আসামের নামদাংস্টোন ব্রিজ বা শিলানির্মিত সাঁকো): এখনকার হিসাবে এটা অবশ্য নেহাতই কালভার্ট। ৬০ মিটার লম্বা, ৬.৫ মিটার চওড়া, ১.৭ মিটার উঁচু। তৈরি হয়েছে ১৭০৩ সালে, তৈরি করিয়েছেন অহোম রাজা রুদ্র সিংহ। বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া কারিগরেরা একটি পাথর থেকে কুঁদে তৈরি করেছিল এই সেতু। হ্যাঁ, এটি একটি মাত্র পাথরে তৈরি মনোলিথিক সেতু! এটি এখন ন্যাশানাল হাইওয়ে -২ এর অংশ। এখনো এর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে।

দরিকা আর নামদাংএর মত দশটি শিলাসাঁকো আহোম রাজারা তৈরি করেছিলেন।

নামদাংশিলরসাকো

এবার আসব বাংলায়-

১২) বাংলার তিনটি উল্লেখযোগ্য মুঘল আমলের সেতু হল- বাড়িউড়া প্রাচীন পুল বা হাতিরপুল, আকবরের দেওয়ান শাহবাজ খানের তৈরি, সময়কাল ১৬৫০ সাল। পানাম ব্রিজ, সোনারগাঁ – তৈরি হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। মুন্সীগঞ্জের পুলঘাটায় সপ্তদশ শতকে তৈরি হয় মিরকাদিম ব্রিজ, যা এখনও হাল্কা যান চলাচলের উপযোগী।

শেষের দুটির বিশেষত্ব হল এরা তিনটি আর্চ নিয়ে তৈরি, এবং মাঝের আর্চটা অনেক বেশি বড়, যার ফলে ব্রিজগুলো অর্ধচন্দ্রাকৃতি। এই আকারের ফলে মাঝখান দিয়ে সহজে নৌকা যেতে পারে আর সেতুর ভারবহনেরও সুবিধা হয়।

আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ। আমরা অনেকেই ভাবি বড় আকারের সেতুনির্মাণ ইংরেজ আমলে শুরু হয়। সে ধারণা যে ভুল তার প্রমাণ এই ব্রিজগুলি। অস্বীকার করা যায় না যে রোমান প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই ব্রিজগুলির বেশীরভাগই তৈরি, তবে সেই প্রযুক্তিগুলির ভারতে প্রবেশ তুর্কী শাসকদের হাত ধরে, সুলতানি যুগে, অর্থাৎ ইংরেজ আমলের অনেক শতাব্দী আগে।

মীরকাদিম পুল, বাংলাদেশ।

 

তথ্যসূত্র:

O. M. Starza, ‘The Jagannatha Temple at Puri: Its Architecture, Art, and Cult’

http://ignca.nic.in/asi_reports/orpuri103.pdf

গম্ভীরি নদীর পুলের সাইনবোর্ড

http://www.willylogan.com/?p=1168

https://en.wikipedia.org/wiki/Purana_pul

http://www.assaminfo.com/tourist-places/25/namdang-stone-bridge.htm

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত