মুঘল সৈনিকদের নাক কেটে দিয়েছিলেন তিনি

Reading Time: 2 minutes

১৬ শতকে গড়ওয়াল নামের রাজ্য ছিল, বর্তমানে এটি উত্তরাখণ্ডের তেহরি গড়ওয়াল নামে পরিচিত। মহিপতি শাহ ছিলেন এই রাজ্যের শাসক। রাজা তাঁর প্রচণ্ড সাহসিকতা এবং যে কোনও আক্রমণের কঠোর প্রতিরোধের জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৬২৮ সালে ​​শাহজাহানের আগ্রায় অভিষেক হলে উত্তর ভারত জুড়ে সমস্ত শাসকরা নতুন সম্রাটের কাছে ব্যক্তিগত সফরে যান। কিন্তু গড়ওয়ালের রাজা এই অনুষ্ঠানে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা সম্রাটকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। শাহজাহানের সাথে যুদ্ধে অসুস্থ রাজা মহিপতি শাহ মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিলেন এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত রাজত্বকাল ১৬৩১ সালে শেষ হয়েছিল।

যদিও মুঘলদের সাথে রাজ্যের দ্বন্দ আরো ঘনীভূত হচ্ছিল। মহিপতি শাহের পুত্র পৃথ্বিপতি শাহ সাত বছর বয়সে রাজত্ব শুরু করেন কিন্তু ছেলে খুব ছোট হওয়ায় রানী কর্ণবতী রাজত্ব পরিচালনা করতেন। দিল্লির মুঘল সম্রাট এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৬৪০ সালে রাজাহীন রাজ্যে আক্রমণ করার আদেশ দেন। তাঁর সেনাপতি নাজবত খান তিরিশ হাজার লোক সহ গড়ওয়াল রাজ্যের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

কিন্তু বিচক্ষণ রাণী কর্ণবতী নাজবতের সেনার সাথে লড়াই করার বদলে কূটনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করেন।তিনি তাদের বিনা বাধায় রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন। যখন মুঘলদের বিশাল সেনা লক্ষ্মণঝোলা নামের একটি জায়গায় পৌঁছায় তখন চারদিক থেকে রাণী কর্ণবতীর সেনারা তাদের ঘেরাটোপে বন্দি করে ফেলে। নাজবত খানের সেনাদের তখন উভয় সংকট তারা না এগোতে পারছে না পিছু হাটতে। তাদের এই পাহাড়ি এলাকা সম্পর্কে তাদের খুব বেশি ধারণাও ছিল না। ভূখন্ড সম্পর্কে অজ্ঞানতা ও খাদ্য সরবরাহ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কারণে সৈন্যরা মনোবল হারাচ্ছিল।

ফলত, মুঘল সেনাবাহিনী রাণীর পাকা বুদ্ধির শিকার হয়। রানী মুঘল সৈনিকদের প্রাণে না মারার পরিবর্তে নাক কাটার শর্ত দেন। নাজবতের সৈনিকদের একদিকে জীবন অন্য দিক ছিল তাদের নাক। নাজবত ও তার সৈনিকরা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় নিজেদের নাক কাটতে।এতে শাহজাহান ভীষণ লজ্জিত বোধ করেন।

এরপর রানী কর্ণবতী মুঘল দরবারে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেন যে তিনি যাদের নাক কেটে ফেলতে পারেন তিনি তাদের মাথাও কেটে ফেলতে পারেন। ক্ষিপ্ত সুলতান,শাহজাহান তার ছেলে ওরঙ্গজেবকেও পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তাতেও সুবিধা হয়নি। এরপর আর মুঘলরা কোনোদিন কর্ণবতীর রাজ্য আক্রমণের চিন্তা‌ও করেনি।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>