| 19 এপ্রিল 2024
Categories
অনুবাদ অনুবাদিত কবিতা

অনুবাদ কবিতা: দেহ ঘর । রুপি কৌর । অনুবাদক: সায়মা মনি

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট

কবি পরিচিতি
রুপি কৌর একজন কবি, শিল্পী।একুশ বছর বয়সে যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন একাধারে লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন।”মিল্ক এ্যান্ড হানি” নামের নিজের বই নিজে প্রকাশ করেছেন।এর পর “দ্যা সান এ্যান্ড হার ফ্লাওয়ারস” প্রকাশিত হয় এবং এই বই দুটি আট মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় আর চল্লিশটির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়।”হোম বডি” যার বাংলা নামকরণ করেছি “দেহঘর” এটি তার তৃতীয় বই।রুপির কাজে ভালোবাসা, প্রেম, ক্ষতি, হারানোর অনুভুতি, আতঙ্ক, নারীবাদ, অভিবাসীদের যন্ত্রনা এই সব বিষয়গুলো বেশি ছুঁয়ে যায়।তিনি মঞ্চে তার কবিতা পাঠ করেন যা এক অনবদ্য উপস্থাপনার রূপ নেয়। উল্লেখ্য যে তার প্রথম বই “মিল্ক এন্ড হানি” আড়াই মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং পঁচিশটির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।নিউইয়র্ক টাইমসে সাতাত্তর সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক বেস্ট সেলার হিসেবে ছিল।তার তৃতীয় বই “হোমবডি” তথা “দেহঘর“২০২০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়।
রুপি কৌর ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং খুব অল্প বয়সেই তার পরিবারের সাথে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।তিনি প্রথম তার কবিতা পাঠ করেন মঞ্চে ২০০৯ সালে এবং তারপর ইন্সটাগ্রামে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন।অতঃপর উপরে উল্লেখিত তিনটি কাব্য সমগ্র দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে প্রবেশ করেন।কৌরের কবিতায় সহজ শব্দের ব্যবহার সহজবোধ্যতা খুব সহজে মন কাড়ে।তার শৈশব আর তার ব্যক্তিগত জীবন তার কবিতার অনুপ্রেরণার উৎস। কবিতার সাথে তার নিজ হাতে আঁকা স্কেচ কবিতাকে বুঝতে সাহায্য করে।কবিতার সহজ সরল ভাষার আড়ালে গভীর দর্শন ও জীবনবোধে আমরা সহজেই আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।


 

অধ্যায় ১
মন


আমি আমার জীবনের অন্ধকারতম ঘরে আছি


আমি কেমন করে আমার মনকে
আমার ত্বকের তলে রাখি
আমি খুব ইন্দ্রিয়প্রবন

১০
আমার মন ছুটে চলছে অন্ধকার কোনার দিকে
আর ফিরে আসছে যুক্তি নিয়ে যে
আমি কেন যথেষ্ট নই

১২
যখন আমি শান্ত হবো
আমরা যৌন অত্যাচার সম্পর্কে বলতে পারবো
আর তারা
চিৎকার করে মিথ্যাবাদী বলা বন্ধ করবে

১৩
হতাশা নিঃশব্দ
এটি আসছে তুমি কখনো শুনতে পাবেনা
আর হঠাৎ এটা হয়ে ওঠে
চিৎকার ধ্বনি তোমার মাথায়

১৪
আমার মন
আমার দেহ
আর আমি
সবাই এক জায়গায় থাকি
কিন্তু মনে হয় যেন আমরা
সম্পুর্নভাবে ভিন্ন তিনটি লোক

—বিচ্ছিন্ন

 

 

 

১৫
যখন অন্য সবাই
তাদের যাপিত জীবনের রঙে ছিলো
বিষন্নতা আমাকে হিমায়িত হতাশ করে রেখেছিলো

১৬
কোনোকিছুই চিরকাল টিকে থাকেনা
সেটাই তোমার থেকে যাওয়ার কারন হোক
এমনকি এই অসুস্থ জটিল দুর্দশাও
টিকবেনা

–আশা

১৭
আমি এর বেশি আর কোনকিছুই কখনো জানিনি
নিঃশব্দ তীব্র উদ্বেগের চেয়ে

১৮
যদি তুমি মেনে নিতে পারতে
নিখুঁত হওয়া যে অসম্ভব তা
কে তোমাকে আটকাতো ঘোর হওয়া থেকে

১৯
তুমি একাকী
তবে তুমি নিঃসঙ্গ নও

—একটা পার্থক্য আছে

২০
মনে হয় যেন আমি আমার জীবনকে দেখতে পাচ্ছি টেলিভিশনের ঝাপসা পর্দায়। নিজেকে এই পৃথিবী থেকে অনেক দূরের কেউ মনে হচ্ছে।প্রায় বিদেশি কেউ এই দেহে ঢুকে পড়েছে মনে হচ্ছে।যেন প্রত্যেকটা সুখ স্মৃতি আমার মনের বাটি থেকে পরিষ্কার করে মুছে ফেলা হয়েছে।আমি চোখ বন্ধ করি আর আমি মনে করতে পারিনা সুখের অনুভুতি কেমন হয়।আমার বুক খসে পড়ে পাকস্থলীতে আটকে পড়ে যখন মনে পড়ে যে আমাকে সকালে উঠতে হবে আর ভান করতে হবে যে আমি আবার আগের মতো ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিনা।আমি পৌঁছুতে চাই আর দ্রব্য সামগ্রী স্পর্শ করতে চাই।এগুলোও আমাকে ছুঁয়েছে এমন অনুভব করতে চাই।আমি বেঁচে উঠতে চাই।আমি আমার জীবনের অপরিহার্যতা ফিরে পেতে চাই।

 


আরো পড়ুন: অনুবাদ কবিতা: শ্যারন ওল্ডসের পাঁচটি কবিতা । সায়মা মনি


২১
শোষণ থাকেনা শুধু
প্রেমের সম্পর্কে
শোষণ থাকতে পারে
বন্ধুত্বেও

২৫
টিকে থাকার অপরিহার্যতা
আমার ভেতরে একটা আগুন জ্বালিয়ে দেয়

২৭
আমি বিশ্বাস করছি অনিশ্চয়তাকে
আর বিশ্বাস করছি আমি পারবো
সঠিক আর ভালো কোথাও
শেষ করতে

 

২৮
এর মধ্যে কোথাও কোন ভুল নেই তোমার
এটাই বেড়ে ওঠা
এটাই পরিবর্তনশীলতা
তোমার নিজের প্রতিরক্ষা
বিশৃঙ্খলায় হারিয়ে যাওয়া
নির্দিষ্ট করে ওঠা
ব্যবহৃত বোধ করা
অযত্নে পড়ে থাকা
আশা হারিয়ে ফেলা
জ্বলতে থাকা
এই তো ভয় পাওয়া
এটাই পদ্ধতি
এভাবেই টিকে থাকা
এভাবেই বেঁচে ওঠা

—- যাত্রা

২৯
তুমি সবকিছু হারিয়ে ফেলো
যখন তুমি নিজেকে ভালোবাসতে না পারো

— আর যখন তা পারো তখন সবকিছু পেয়ে যাও

৩০
আমার নিকৃষ্ট দিনগুলোই আমি নই
আমার সাথে যা যা ঘটেছে তা আমি নই

—স্মরণিকা

৩২
হয় আমি অতি রোমাঞ্চিত করছি অতীতকে
নয় আমি দুশ্চিন্তায় ব্যস্ত আছি ভবিষ্যত নিয়ে
আশ্চর্যের কিছু তো নয়
আমি বেঁচে আছি কিনা বুঝিনা
আমি বাঁচিনা
শুধুমাত্র বাস্তব মুহুর্তের মধ্যে

—-বর্তমান

 

 

৩৩
উদ্বিগ্ন থাকলে মনে হয় যেন আমি ঝুলছি
দালানের এক পাশ দিয়ে
আর আমার হাত পিছলে যাবে
যে কোন মুহুর্তে

৩৪
কি করে আমি হতে পারি এমন
নিজের প্রতি এত নিষ্ঠুর
যখন আমি যথাসাধ্য ভালো করার চেষ্টা করছি

——ভদ্র হও

৩৫
তোমার মেজাজ ঠিক করার করনীয় তালিকাঃ
ক) কাঁদো। হাঁটো। লেখো। চিৎকার করো। নাচো তোমার সমস্ত শরীর জুড়ে।
খ) যদি তারপরেও তুমি তখনও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে চক্কর খেতে থাকো
নিজেকে জিজ্ঞেস করো কাদায় ডুবে যাচ্ছো কিনা
গ) যদি নঞর্থক উত্তর আসে
ঘ) তবে পরিত্রান হলো নিঃশ্বাস নেয়ায়
ঙ) চায়ে চুমুক দাও আর অনুভব করো তোমার স্থির স্নায়ুতন্ত্র
চ) তুমি তোমার জীবনের নায়ক
ছ) এই অনুভুতির তোমার জীবনের ওপর জোর নেই
জ) এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড তোমাকে প্রস্তুত করেছে তা আযত্তে আনতে
ঝ) যত অন্ধকারই হোক না কেন, কিছু যায় আসেনা
আলো সবসময়ই তার পথে আছে
ঞ) তুমি আলো
ট) তুমি নিজে পিছন দিকে হেঁটে যাও যেখানে ভালোবাসা বাস করে

 

 

৩৬
আমি ভেঙে যাইনি
হতাশায়
আমি আমার ক্ষুদ্রতর সংস্করণ নই
উদ্বেগের কারনে
আমি একজন সম্পুর্ন
পরিপুর্ণ
আর জটিল ব্যাক্তি

——- সম্পুর্ন

৩৭
আমি অন্ধকারের বাইরে থেকে নিজেকে ভালোবাসছি

 

৩৮
আমি শ্বাস নিচ্ছি, তাই না
ওটাই একটা চিহ্ন যে
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আমার পক্ষে
এতদূর যদি আমি তৈরি করতে পারি
আমি এটা সবদিক দিয়ে তৈরি করতে পারি

৩৯
ভাবো আমরা কি কি অর্জন করতে পারতাম যদি
আমাদের শক্তি খরচ করতে না হতো
নিজেদের রক্ষা করতে
সমাজের ধর্ষক সমস্যা থেকে

৪০
আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যায় করে ফেলেছি
আমাদের দুজনের স্পর্শে
ত্বক থেকে ত্বকে
আমাদের একত্রিত রাত্রি
আর কিছু আমাদের দিনে
তুমি আমাকে বহন করেছ যখন আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রত্যাখ্যান করেছে
যখন আমি এত অসুস্থ যে আমি নড়াচড়া করতে অক্ষম
একবারও ক্লান্ত হওনি আমার ভার নিতে
তুমি একবারও অভিযোগ করোনি
তুমি আমার সব স্বপ্নগুলোর সাক্ষী
আমার যৌনতা
আমার লেখা
আমার কান্না
আমার জীবনের প্রতিটা বিপজ্জনক কাজের
যা তোমার সাথে ঘটেছে
আমরা হাসতে হাসতে হাঁটু গেঁড়ে বসেছি
আর যখন আমি বোকা কাউকে বিশ্বাস করার মতো বোকামি করেছি
তোমার চেয়ে বেশি কারো সাথে প্রেম করেছি
দিনগুলো বাকি রেখেছি শুধু
খালি হাতে ফিরে আসার জন্য
তুমি সবসময় আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছো
যখন নিদ্রা আমাকে ছেড়ে গেছে
আমরা দুজন একসাথে জেগে থাকি
তুমি আমার জীবনের আলিঙ্গন
আমার অন্য সত্ত্বা
আমি তোমার চেয়েও বেশি করে কিশোরী থেকে নারীর কাছে গিয়েছি
আর শেষে
এটা তুমিই হবে – পুরনো বন্ধু
আমাকে মৃত্যুর কাছে পুর্ণ বিশ্রামের জন্য পাঠাবে
—– বিছানার চাইতে অন্তরঙ্গ কোন জায়গা হয়না

৪১
তুমি হারিয়ে ফেলোনি
সুখ এখানে সবসময় আছে

—— তুমি শুধু দৃষ্টভঙ্গি হারিয়ে ফেলেছো

৪২
আমরা যার ভেতর দিয়ে বাঁচি
আমাদের ভেতর তা বাঁচে

৪৩
আমি আমার জীবনের বলি নই
আমি যার ভেতর দিয়ে গেছি
তা আমার ভেতর থেকে একটা যোদ্ধাকে টেনে তুলেছে
আর এই তার হয়ে ওঠা আমার জন্য বিরাট সম্মানের

৪৪
আমার জীবনের ভালবাসার জন্য
আমি আশান্বিত থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি
আমি প্রতিদিন সকালে শুভেচ্ছা জানাতে থাকবো
একটা “আমি করবো” মনোভাব নিয়ে
যখন মনে হয় যেন “আমি পারিনা”
“আমি করবো
আমি করবো
আমি করবো”
দেখা একটা দিনের সাথে যা আমাকে গলিয়ে ফেলবে
আমি সরে যাবো আর দুঃখ যাবে
আমার কাঁধ থেকে সরে
আনন্দকে ঠাঁই করে দিতে
আমি রঙে পরিপুর্ণ হবো
আমি আবার আকাশ ছুঁয়ে ফেলবো

৪৫
আমি একটি কুচকাওয়াজ চাই
আমি চাই সঙ্গীত
আমি চাই মিঠাই
আমি চাই যন্ত্র সঙ্গীতজ্ঞদের কুচকাওয়াজ
একবারের জন্য নৈঃশব্দে বেঁচে উঠতে
আমি চাই দাঁড়িয়ে একটি প্রনাম করতে
তাদের প্রত্যেকের জন্য যারা
জেগে ওঠে আর সুর্যের দিকে হাঁটে
যখন একটি ছায়া
তাদেরকে ভেতর থেকে পেছন দিয়ে টেনে ধরে রাখে

৪৬
আমাদের কষ্ট হলো আমাদের আনন্দের দিকের দরজা

৪৭
হতাশ হতে হতে আমি ক্লান্ত
ঘরের মধ্যে যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে
আমি বিধ্বস্ত সেই স্পৃহা দ্বারা যা প্রয়োজন হয়
আমার নিজেকে ঘৃণা করতে

——- আমি ঘৃণা কমিয়ে রাখছি

 

 

 

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত